বাংলা সিনেমায় আমার অভিজ্ঞতা -১ম কিস্তি
(১ম অংশের পর)
ব্যাংকক ট্যুর আমার কাছে খুব এনজয়েবল ছিল।কারন এটাই ছিল আমার প্রথম ব্যাংকক ভ্রমন।পরে আরো অনেকবার সেখানে গেছি,কিন্তু প্রথম বারের মত এত ভালো লাগেনি।সাথে ছিলেন ময়ূরী আপা আর রেজাউল করিম মিলন ভাই।রেজাউল করিম মিলন ভাই এর সাথে ময়ূরী আপার রিলেশান ছিল এবং উনারা লিভ টুগেদার করতেন।পরে ২০০৯ সালের দিকে তারা বিয়ে করেছিলেন।মিলন ভাই পরবর্তী সময়ে টাংগাইল এর ভূঞাপুর উপজেলা থেকে উপজেলা ভাইস চেয়্যারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে মিলন ভাই মারা গেছেন।উনি চলে গেছেন,কিন্তু উনার স্মৃতি রয়ে গেছে।
যাই হোক,ব্যাংকক থেকে ফিরে আমি আমার নতুন ছবির কাজ শুরু করি।তবে এই বার একটি নয়,দুটি ছবির কাজ একত্রে নিয়েছিলাম,একই প্রযোজকের।"লাগাও বাজি" এবং "সাবধান সন্ত্রাসী"।"লাগাও বাজি" ছবিটি ব্যাবসা করতে পারলেও সাবধান সন্ত্রাসী ছবিটি ব্যাবসা করতে পারেনি তেমন।লাগাও বাজি ছবিতে নায়িকা ছিলেন যথারীতি ময়ূরী আপা এবং নায়ক ছিলেন মেহেদী হাসান।আর সাবধান সন্ত্রাসী ছবিতে নায়ক নায়িকা হিসেবে নিয়েছিলাম অমিত হাসান এবং একা কে।যদিও আমি নায়িকা হিসেবে পলিকে নিতে চাইছিলাম,কিন্তু প্রযোজক এর ইচ্ছায় একা কে নিতে হয়েছিল।
লাগাও বাজি ছবিটি মুলতঃ একটি মারদাংগা টাইপের ছবি।এই ছবিতে একটি আইটেম গান ছিল,যেটাতে নাসরিন পারফর্ম করেছিলেন,গানটি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল সেই সময়ে।আরেকটি বিষয় হচ্ছে,একি সাথে শুরু হলেও লাগাও বাজি ছবিটির শুটিং অনেক দেরিতে শেষ হয়েছিল।প্রায় নয় মাস পর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রোজার ঈদে মুক্তি পায় এবং বেশ ব্যাবসা সফল হয়।এখন যেমন অনেক দিন পর পর একটি করে ছবি মুক্তি পায়,তখন এমন ছিল না।প্রতি মাসে কমপক্ষে ৬-৭ টি,বা তারও বেশি ছবি মুক্তি পেত।প্রতিযোগিতায় টিকে থাকাটা খুব একটা সহজ ছিল না সেই সময়।
লাগাও বাজি ছবির শুটিং হয়েছে উত্তরা,গাজিপুরের ভাওয়াল অঞ্চল,মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুর আলেকজান্ডার এর এলাকায়,এবং একটি সিন ধারন করা হয়েছিল ময়ূরী আপার মগবাজারের ফ্লাটে।আমরা শুটিং এর ফাকে অবসর সময়ে যেসব জায়গায় আড্ডা দিতাম,ময়ূরী আপার মগবাজারের বাসা তার মধ্যে অন্যতম।এই বাসাতে এমন অনেক ঘটনা আছে,যা আজীবন স্মরনীয় হয়ে থাকবে।এই বাসাতেই আমার পরিচালিত সবচেয়ে ব্যাবসাসফল ছবি "সেভেন মার্ডার " ছবির পরিকল্পনা করি।যদিও ময়ূরী আপা এই ছবিতে ছিলেন না,কিন্তু তিনি অনেক ভাবে এই ছবিতে আমাকে সাহায্য করেছেন।সেভেন মার্ডার ছবিটি আমার অন্যান্য ছবি থেকে একটু বড় বাজেটের ছিল এবং প্রায় দেড় মাসের ও বেশি সময়ে দেশের বিভিন্ন হলে একনাগাড়ে চলেছে।
এবার সাবধান সন্ত্রাসী ছবির কথায় আসি।সাবধান সন্ত্রাসী ছবিতে প্রধান নায়ক নায়িকা হিসেবে ছিলেন অমিত হাসান আর একা।পাশাপাশি সোহেল(পিচ্চি সোহেল) এবং ঝুমকা ছিল সাইড নায়ক নায়িকা হিসেবে।মিজু আহমেদ ভাই এবং সিবা শানু ভিলেনের চরিত্র চিত্রায়ন করেছেন।খুব মজা করে শুটিং শেষ করলেও ছবিটি ফ্লপ হয়েছিল।কিন্তু এই ছবির "তুমি বন্ধু,তুমি শত্রু,তুমি প্রিয়তমা আমার এই জীবনে" গানটি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল।অমিত হাসান ও একার অংশগ্রহনে গানটির চিত্রায়ন হয়েছে কক্সবাজার,সুন্দরবন,রাঙামাটি সহ বিভিন্ন লোকেশনে।
২০০৬ সালে আমি এই দুটি ছবির কাজ করলেও ২০০৭ সালে প্রায় পাচটি ছবির কাজ করেছি।তার মধ্যে সেভেন মার্ডার অন্যতম একটি ছবি।সেভেন মার্ডার ছবিতে ময়ূরী আপার অভিনয় করার কথা থাকলেও শিডিওল জটিলতায় শেষ পর্যন্ত তিনি করতে পারেন নি।মুনমুন এর ও একি অবস্থা।শেষ পর্যন্ত ঝুমকা,পলি,নাসরিন সহ অন্য নবাগত নায়িকা দের নিয়ে শুটিং শেষ করেছিলাম।মজার ব্যাপার হচ্ছে,এই ছবিতে নায়িকা সাত জন থাকলেও নায়ক একজন ই।সোহেল এর প্রধান চরিত্রে ছিল।মিজু আহমদ,ইলিয়াস কোবরা,কাবিলা,ডন সহ আরো অনেক ভিলেন অভিনয় করেছিল এই ছবিতে।এই ছবির সবকটি গান খুব জনপ্রিয় হয়েছিল।
(চলবে)