somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: কুশলী ও রূপমাধুরী

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ ভোর ৬:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিকল একটি এক্স-রে মেশিন নিয়ে গবেষণা করে দেখছে কুশলী ভূত। সে শুনেছে এই যন্ত্রটির মাধ্যমে মানুষ অশরীরী যে কোনো কিছুর ছবি তুলতে পারে।

কুশলী ভূতের স্ত্রী রূপমাধুরী বলছে, তুমি যদি গবেষণাই করবে তাহলে একটি সক্রিয় এক্স-রে মেশিনই যোগাড় করো। এই বিকল মেশিন তোমাকে কোনো সাহায্যই করবে না। রূপমাধুরীর কথা শুনে কুশলী ভূত তার গবেষণাই বন্ধ করে দেয়।

রূপমাধুরী তাঁর স্বামী কুশলী ভূতকে বলে, মানুষের চেয়ে বড় ভূত পৃথিবীতে আর নেই। আমরা সারাজীবন জঙ্গলে থেকেও কাঠ থেকে একটি ক্রিকেট ব্যাট বানাতে পারি না। আর মানুষ ক্রিকেট ব্যাট থেকে ফার্নিচার...কী না বানাতে পারে।

কুশলী ভূত বলে, মানুষ এভাবে গাছপালা শেষ করে খাট আর ব্যাট বানাতে থাকলে আমরা আর বাস করারই জায়গাই পাবো না। অস্বস্তিতে সারাক্ষণই সময় কাটাতে হবে।

রূপমাধুরী বলে, আমরা ভূতেরা একটি ফুটবল বানাতে পারি না। চলন্ত একটি ট্রেন থামাতে পারি না। কী পারি আমরা?

কুশলী ভূত বলে, আমরা চাইলে চলন্ত একটি ট্রেনকে ফেলে দিতে পারি এবং বায়ুর সঙ্গে মিশে ফুটবলের ভিতরেও ঢুকে যেতে পারি। রূপমাধুরী বলে, ফুটবলের ভিতরে ঢুকে কী করবে তুমি? মানুষের লাথি খাবে?

কুশলী এবার রেগে বলে, এতোই যদি মানববন্দনা তোমার, তাহলে একজন মানুষকেই বিয়ে করে ফেলো। রূপমাধুরী বলে, মানুষকে বিয়ে করার কথা ভাবছি না আমি। বরং ভাবছি ভূত সমাজের অক্ষমতা নিয়ে।

কুশলী বলে, গতোকালও চলন্ত বাসে এক তরুণীকে ধর্ষণ করেছে মানুষ। এই হলো মানুষ। মানবসমাজের পুরুষ। আইয়ামে জাহেলিয়াতের অন্ধকার এখনও তাদের ঘিরে রেখেছে। শান্তির ধর্ম ইসলাম প্রচার নিয়ে এখনো পৃথিবীতে কতো অশান্তি লেগে আছে। আমি তো মানব সমাজের কোনো কৃতিত্বই দেখতে পাচ্ছি না।

রূপমাধুরী বলে, তাহলে তুমি বানাও তো একটি এক্স-রে মেশিন। দেখি তোমার কেমন মেধা। আমার তো মনে হয় পৃথিবীর সেরা ভূতই হলো মানুষ।

কুশলী বলে, তোমার এমন মনে হওয়ার কারণ কী! রূপমাধুরী বলে, মানুষের তৈরি একটি মহাকাশযান মহাকাশে মিলিয়ন বিলিয়ন মাইল পরিভ্রমণ করতে পারে। অথচ তুমি আমি আমরা একটি এক্স-রে মেশিনও বানাতে পারি না। দুঃসাহসিক ঘটনাগুলো তো মানুষই ঘটাতে পারছে।

কুশলী বলে, মানুষ আবার এতোটাই বীর নয়। কারণ তারা পৃথিবীর উষ্ণতা কমাতে পারবে না। তারা কখনোই পারবে না সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কমাতে। যুদ্ধ-দাঙ্গা আর উষ্ণায়নের কবলে পড়ে একদিন উদ্ধাস্তু হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে মানুষ নিজেই। রূপমাধুরী বলে, তাহলে তুমি ওই নষ্ট এক্স-রে মেশিন নিয়ে ব্যস্ত হলে কেন?

কুশলী ভূত বলে, আমি জানি যে, হসপিটালে এই মেশিনের সাহায্যে রোগ নির্ণয় করা হয়। কিন্তু আমার পরিচিত কোনো এক হসপিটালের মহিলা আলট্রাসনোগ্রাফিস্ট পল্লবী দাস বললো, ওরা নাকি এই যন্ত্রে ভূতেদেরও ছবি তুলতে পারে। তখন তার কাছে এমন একটি মেশিন কিনতে চাইলাম আমি। সে এর জন্য কয়েক লাখ টাকা চাইলো। বড় কষ্টেই আমি তাকে সেই টাকার ব্যবস্থা করে দেই। সে আমাকে এতো টাকার বিনিময়ে দিলো একটি নষ্ট মেশিন। আর এই মেশিনটি কোনো কাজই করছে না বলে তাকে আমি মেশিনটি ফেরত দিতে চাইলাম। সে বললো, মেশিন ফেরত নেওয়ার কিংবা টাকা ফেরত দেওয়ার কোনো নিয়ম বা শর্ত আগে দেওয়া হয়নি। এমনকি সে আরও বললো, সচল নয় বরং অচল এক্স-রে মেশিনেই ভূতেদের ছবি তোলা যায়। তাও আবার সবাই কাজটা পারে না। কোনো কোনো এসট্রোলোজারই নাকি পারে সেটা। তার পরিচিত বাদল শাস্ত্রী নাকি সেটা পারতেন। কিন্তু শাস্ত্রীজী মারা গেছেন। এখন আর এ কাজটা কে কে পারেন, তার খোঁজ রাখছেন পল্লবী দাস।

কুশলীর মুখে এতো সব শুনে রূপমাধুরী বললো, হায় কুশলী, তুমি যে এতো বেকুব আগে বুঝিনি। একজন মূর্খ আলট্রাসনোগ্রাফিস্ট তোমাকে এভাবে গোয়াইনঘাটের সিটিং বিলের জল খাওয়ালো!

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:২২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×