somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আশরাফ আল দীন
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ৩০ বছর চাকরি করেছি; অবসর নিয়েছি কর্নেল পদবীতে ২০০৬ সালে। এরপর এযাবৎ প্রিন্সিপাল হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে; এখন অর্কিড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা-তে। ‘স্কুল সাইকোলোজি’ নিয়েও কাজ করছি।

জনমতের গণতন্ত্রঃ একটি প্রস্তাব

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পটভূমিঃ
বাংলাদেশের, গণতান্ত্রিক অধিকার-বিবর্জিত পুলিশ ও মামলা-তাড়িত, রাজনৈতিক অঙ্গনে এবং নতজানু ও মতলববাজ সাংবাদিকদের প্রভাবাধীন মিডিয়াতে যে বিষয়টা খুব বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে তা হলো, একাদশতম জাতীয় নির্বাচন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে সাথে নিয়ে গঠিত হয়েছে ঐক্যফ্রন্ট, নাম-সর্বস্বরা করেছে যুক্তফ্রন্ট, আর সাইনবোর্ড-সর্বস্ব বামদলগুলোও জোটবদ্ধ হচ্ছে। তামাশার মতো শোনালেও, খবর এসেছে যে এরশাদের জাতীয় পার্টি যোগ দিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলে। ঘটা করে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর দল যোগ দিয়েছে ঐক্যফ্রন্টে। হবে না হবে না করে করেও সংলাপ শুরু হয়েছে। সরকারের একগুঁয়ে মনোভাব প্রকাশ করে ত্রি-মুখী বক্তব্য আর বিরোধী দল/জোটগুলোর আশাবাদ ও আন্দোলনের যুগপৎ ঘোষণাকে ঘিরে জনগণ রয়েছে আশা-হতাশার দোলাচালে!
অন্যদিকে, অত্যন্ত সফলভাবে একনায়কসুলভ সরকার প্রচন্ড এক ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করে রেখেছে সারা দেশে। অনেকগুলো মামলা নিয়ে পালিয়ে বেড়ানো লক্ষ লক্ষ বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মী আরো অসংখ্য গায়েবী-মামলার শিকার হচ্ছে নতুন করে, যাতে এদের কেউ নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ফিরে যেতে না পারে অন্ততঃ আগামী এক বছরেও, নির্বাচন হোক বা না হোক! পত্রিকার খবরে দেখা যাচ্ছে, প্রায় প্রতিদিনই অসংখ্য বিএনপি-জামাতের নেতা-কর্মীকে জেলে ভরা হচ্ছে! ‘নির্বাচন’ যেন আনন্দ নয়, ‘আজাবের সংবাদ!’ কিন্তু, তা হবে কেন? রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশ বাংলাদেশে এসন তো হওয়ার কথা ছিলো না!

জোট গঠনের দর্শনঃ
সম্প্রতি প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও সমাজ চিন্তক প্রফেসর এবনে গোলাম সামাদ লিখেছেন, ‘প্রশ্ন উঠেছে, জোট গড়া হচ্ছে কেন? দেশের স্বার্থে না দলের স্বার্থে? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিলেতে কনজারভেটিভ ও লেবার পার্টি জোট গড়েছিল। গঠন করেছিল জোট সরকার। লক্ষ্য ছিল যুদ্ধে জার্মানি, ইতালি ও জাপানকে পরাজিত করা। এর মূলে ছিল দেশের স্বার্থ; কোনো বিশেষ দলের স্বার্থ নয়। কিন্তু আমাদের দেশে জোট গড়া হচ্ছে মূলত দলের স্বার্থে, দেশের স্বার্থ ভেবে নয়। এটাও দেশের রাজনীতিতে সৃষ্টি করছে জট। (নয়া দিগন্ত, ৮.৯.১৮) আমাদের দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি, তাদের কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল যথাক্রমে ১৪ দল ও ২০ দলীয় জোট। কার স্বার্থে এসব নতুন জোট অথবা পুরানো জোটগুলোর বাঁক বদল? জাতীয় কোন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে যে এসব জোট গঠিত হয়নি তা হলফ করে বলা যায়। ক্ষমতার সুস্বাদু ‘মুরগি মোসাল্লাম’টাকে ভাগবাটোয়ারা করে খাওয়ার জন্যই এটা হয়েছে বলে মনে করেন অনেকেই। এসব বাস্তবতার প্রেক্ষিতে এদেশের প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের মনের কোণে উঁকি দিচ্ছে ‘নতুন কোনো আশার কথা’ শোনার বাসনা। তাই, আমরা কি চিন্তা করতে পারি নতুন কোনো রাজনৈতিক পদ্ধতির কথা?

বিবেচনার বিষয়ঃ
আমি বলছি আমাদের জাতীয় নির্বাচনে ভোটের কথা। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ভোট যদি বিশুদ্ধভাবে হয় তবেই না রাজনীতি ও জাতীয় উন্নতির কথা! তা না হলে তো সবই গুড়েবালি! আমরা কি এটুকু নিশ্চয়তা জাতিকে দিতে পারি যে, আমরা একটি পরিচ্ছন্ন নির্বাচন করব, যাতে কোনো প্রকার মাস্তানি, দলীয় আধিপত্য অথবা স্বেচ্ছাচারিতার কারণে, গণতন্ত্রের প্রাণতুল্য ‘জনগণের ভোটাধিকার’ নষ্ট হবে না? ভোটের নামে নানা ছলচাতুরী করে, মিথ্যাচার ও ধাপ্পাবাজির আশ্রয় নিয়ে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে, বুটের নিচে গণতন্ত্রকে মাড়াতে মাড়াতে ক্ষমতা যে দখল করা যায় এবং পুরো পাঁচ বছর (বা প্রয়োজনে আরো বেশি সময়) তা উপভোগও করা যায়, কিন্তু দেশে-বিদেশে কোথাও স্বীকৃতি পাওয়া যায় না, এ কথা বর্তমান সরকার হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। তারা যদি আবারো একই পথে হাঁটেন এবং ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চান, তা তারা হয়তো পারবেন। তবে এতে স্বাধীন বাংলাদেশের মর্যাদার ওপর যে বিরাট আঘাত আসবে এবং রাষ্ট্রটাকে একটি বিস্ফোরণোন্মুখ বিসুভিয়াসের শিখরে বসিয়ে দেয়া হবে, এ কথা বোঝার জন্য ‘রকেট সাইন্টিস্ট’ হওয়ার দরকার নেই। অন্যদিকে, তা হবে লখো শহীদের রক্তের প্রতি চরম অবিচার এবং এক অনিশ্চিত যাত্রার দ্বার উন্মোচন মাত্র। দেশপ্রেমিক যে কোন রাজনৈতিক দল, এমনকি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও, এই কথাগুলো বুঝে নিয়ে সঠিক এবং বিতর্কহীন নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করবে আশা নিয়েই পরের কথাগুলো বলছি।

আমাদের আসল প্রয়োজন হচ্ছে জনমতকে সম্মান করা এবং গুরুত্ব দেয়া। ‘জনমত’ মানেই ‘গণতন্ত্র’। জনমতকে সম্মান করা মানেই গণতন্ত্রকে নিজেদের মধ্যে পূর্ণ মাত্রায় প্রতিষ্ঠা করা। জনমতকে সঠিকভাবে গুরুত্ব দিয়ে গণতন্ত্রকে পূর্ণ মাত্রায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমাদের প্রচলিত ‘জনমত যাচাই ও ক্ষমতা বদলের পদ্ধতি’ পরিবর্তন করতে হবে। কারণ, বর্তমান নিয়মানুযায়ী যে দলই সরকারে থাকে তাদের অধীনে থাকে সামরিক, আধা-সামরিক ও পুলিশ বাহিনী। দলীয় ক্যাডারদের কথা না’ই বল্লাম! সরকার তৎপর থাকে নানা বাহানায় ও উপায়ে নির্বাচন কমিশনসহ সকল রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে, এমন কি বিচারালয়কেও, কুক্ষিগত করে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করতে। একাজে বাধা দেয়ার বা মনিটর করার কেউ নেই। তা’ই স্বাধীনতার সুরক্ষা ও গণতন্ত্রের সাফল্যের স্বার্থে আমাদের উচিত বর্তমান পদ্ধতির পরিবর্তন করা।

প্রস্তাবনাঃ
উপরোক্ত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে, আমাদের প্রস্তাব অত্যন্ত সহজ এবং সুস্পষ্ট। প্রস্তাবগুলো নিন্মরূপঃ

এক. সারা দেশে একযোগে ‘এক ব্যক্তি এক ভোট’ নীতির ভিত্তিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
দুই. ভোট হবে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ওপর, কোনো ব্যক্তির ওপর নয়। উদ্দেশ্য প্রত্যেকটি দলের সমর্থক সংখ্যা যাচাই করা। তাই কোন জোট নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
তিন. প্রাথমিক ভোটে যেসব দল প্রদত্ত মোট ভোটের দশ (বা পনের বা বিশ) শতাংশের কম ভোট পাবে, তাদের বাদ দিয়ে বাকি (অর্থাৎ প্রধান) দলগুলোকে নিয়ে দ্বিতীয় দফা জনমত জরিপের ভোট গ্রহণ করা হবে।
চার. প্রধান দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হিসাব অনুপাতে সংসদের আসনসংখ্যা এবং মন্ত্রিপরিষদের সদস্য সংখ্যা প্রত্যেকটি দলের জন্য বরাদ্দ করা হবে।
পাঁচ. সংশ্লিষ্ট দল নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রীদের তালিকা দাখিল করবে।
ছয়. সংসদ প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবে, তবে প্রধানমন্ত্রী যে দলের হবেন সেই দল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রার্থী দিতে পারবে না।
সাত. নির্বাচন অর্থাৎ ভোট অনুষ্ঠানকে সব সন্দেহ ও জালিয়াতির ঊর্ধ্বে রাখার জন্য জাতীয় সংসদ নিজস্ব পদ্ধতি বের করবে। তা অরাজনৈতিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারও হতে পারে।

উপসংহারঃ
বিশ্বের অনেক দেশেই এ ধরনের পদ্ধতি চালু আছে। ইউরোপের কলহপ্রিয় ও, ভাষা বা গোত্রীয় ভিত্তিতে, বহুধা বিভক্ত রাষ্ট্রগুলো অনেক দিন ধরে এর সুফল ভোগ করছে। অন্যদিকে, স্বাধীনতা লাভের পর প্রায় অর্ধ-শতাব্দীর অভিজ্ঞতায় আমরা দেখতে পাচ্ছি, নানা কারণে আমাদের দেশে বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতি সুফল বয়ে আনছে না।
আসুন না, আমরাও সভ্য জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারে পরিচিত হওয়ার জন্য নিজেদের কুৎসিত দিকগুলোকে মোচন করার প্রচেষ্টায় সঙ্ঘবদ্ধ হই। বিভক্তি নয়, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই।

আশরাফ আল দীনঃ শিক্ষাবিদ, গবেষক ও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা
[email protected]
#নির্বাচন #গণতন্ত্র #election #democracy #bangladesh
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×