আমাদের চতুর্দিকের দৃশ্যমান জগৎটুকু দেখলেই বুঝতে পারি, আমরা কত ক্ষুদ্র জীব! তবে, আমরা যত ক্ষুদ্রই হই না কেন, মহান আল্লাহ্, যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তাঁর বিশালতার শেষ নেই! এই বিশালতা এমন যে, একে পরিমাপ করা যে কারো জন্যেই জটিলভাবে কঠিন, সাধ্যাতীত! তারপরও, মানুষকে আল্লাহ যে মেধা দিয়েছেন, হৃদয় দিয়েছেন এবং “স্বাধীনভাবে চিন্তা করা”র সক্ষমতা দিয়েছেন, তার একটি স্বাভাবিক দাবী হচ্ছেঃ মানুষ আল্লাহর বিশালতা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে! এই চিন্তার যত গভীরে সে যেতে পারবে, তার স্বত্তা তত বেশী অবনত হতে পারবে আল্লাহর কাছে। বান্দার “সেজদা” হবে অর্থময়!
আল্লাহর বিশালতা- সে এক অন্তহীন পারাবার! অবশ্য, সেই বিশালতায় সাঁতরে বেড়ানোর, কখনো কখনো হারিয়ে যাওয়ার, মধ্যে এক অনির্বচনীয় আনন্দ আছে। আল্লাহই এই বোধ সৃষ্টি করেছেন! এটাকেই হয়তো সূফী সাধকরা “খোদাকে পাওয়া”র অভিধায় ভূষিত করেন। এই আনন্দময়তার শেষ ধাপে গিয়ে জীবন-মৃত্যু একাকার হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক!
তাহলে, আমাদের মত সাধারণ মানুষের কী হবে? এখানে হতাশার কিছু নেই। বলা হয়েছে, প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে আল্লাহর অস্থিত্ব আছে, আল্লাহর একটি জায়গা আছে। প্রতিটি মানুষেরই আল্লাহর সাথে এক প্রকার সম্পর্ক আছে। বিশালত্বের সাথে ক্ষুদ্রত্বের এক অসাধারণ অঙ্গাঅঙ্গিতা! তাই আপন সক্ষমতা অনুযায়ী প্রতিটি মানুষই আল্লাহকে অনুভব করে, আল্লাহকে পায়!
আবার, বাস্তবতা হলোঃ মানুষের চিন্তা ও চেতনার পরিধি ভীষণভাবে সীমাবদ্ধ! ক্ষুদ্রত্বে সে বৃত্তবন্দী হয়ে থাকবে, এটাই যেন স্বাভাবিকতা! তাই, জীবনের প্রতি আমাদের সীমাহীন ভালবাসা, আর মৃত্যুকে আমাদের ভীষণ ভয়! কারণ, মৃত্যু নামের পর্দা সরে যাওয়ার পর যে পথ-পরিক্রমা তার অনিবার্যতা সম্পর্কে জানার পরও অনিশ্চয়তার ভয় আমাদের ঘিরে রাখে! অথচ, আল্লাহর রসুল হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম নিশ্চিত করছেন যে, প্রতিটি মানুষের জীবন-পরিক্রমার এক অতি ক্ষুদ্র অংশ হলো পৃথিবীর জীবন! এর আগে ও পরের অনিবার্য অংশ হচ্ছে সুদীর্ঘ পথ-পরিক্রমা। সেখানকার চলাটাও আল্লাহর বেঁধে দেয়া নিয়মেই চলে। সেই জীবনের পরতে পরতে রয়েছে আল্লাহর রহমত, আমাদের প্রতি দয়া আর অকল্পনীয় সব বিস্ময়! তবে, নিশ্চিতভাবেই তা আছে।
সেদিকপানে দৃষ্টি রাখলে আর এসব কথা ভাবলে, এই জীবনজুড়ে যেসব হীন আচরণ আমাদের গ্লানিযুক্ত করে, হিংসা-বিদ্বেষ-অপকর্মের মতো অর্থহীন কাজ যা আমাদের প্রচন্ড ব্যস্ত রাখে এবং সময়ের অপচয় নিশ্চিত করে - ইত্যাদি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে।
আমাদের জীবনের লক্ষ্যই তো কৃতকার্যতা/ সফলতা, যা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমেই কেবল সম্ভব!
আশরাফ আল দীন।।মিরপুর, ঢাকা।
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:১৩