তাড়াহুড়োর নামাজ নামাজ নয়! এই হাদীসের আলোকে আমাদের জামাতে নামাজগুলো কতটুকু সঠিক হচ্ছে? প্রশ্নটা ক’দিন থেকে বেশ তাড়া করে ফিরছে আমাকে! হতে পারে আমার জ্ঞানের স্বল্পতা! তবু, পাঠকদের সাথে শেয়ার করতে দোষ কি?
অনেকদিন বিরতের পর, ২০১৭ সালের শেষ দিকে এক শুক্রবারে জুম্মার নামাজ আদায় করলাম আমাদের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে। পরদিন আছর-মগরেবও ওখানেই পড়লাম। আমার মন আমাকেই প্রশ্ন করলোঃ ‘এটাই যদি তাড়াহুড়োর জামাতে-নামাজ না হয় তাহলে “তাড়াহুড়োর নামাজ” কোনটা? জামাতবদ্ধভাবে এরচেয়ে তাড়াহুড়ো করে নামাজ আদায় করা যায় কি?’ আমার মনে বদ্ধমূল ধারণা হলোঃ ‘এটাই তাড়াহুড়োর নামাজ।’ অথচ, আল্লাহর রসুল (সঃ) স্পষ্ট করেই বলেছেন, “তাড়াহুড়োর নামাজ নামাজ নয়।” কি দুঃখজনক ঘটনা!
ব্যাখ্যা করছি। বায়তুল মোকাররমে আমি এর আগে বহুবার নামাজ পড়েছি। কিন্তু সেদিন কেমন জানি ব্যতিক্রম মনে হলো। সত্যি বলতে কি, মনে বড্ড ব্যাথা পেলাম। জুম্মার নামাজে ঈমাম সাহেব প্রথম রাকায়াতে পড়লেন সুরা এখলাস আর ২য় রাকায়াতে পড়লেন সুরা কাওসার। রুকু থেকে পিঠ সোজা করার জন্যে দাঁড়ালেন মাত্র, অবস্থানকাল এক সেকেন্ডের বেশী নয়! একইভাবে, দুই সেজদার মাঝখানে বসলেন না এক সেকেন্ডের বেশী, যার ফলে আমাদের মতো ষাটোর্ধ বা খানিকটা ভারী শরীরের ব্যক্তিদের ঈমামকে বৈঠকে পাওয়া কঠিন! জুম্মার দুই রাকায়াত নামাজ শেষ করতে সময় নিলেন বড়জোর ৪ বা ৫ মিনিট। কিন্তু এরপর প্রায় ৩৫ মিনিট ধরে মোনাজাত করলেন! মোনাজাতের আগে নানা জনের নাম ধরে দোয়ার ফিরিস্তি বর্ণনা করলেন ৫ মিনিটের বেশী সময় ধরে! এটা কি আল্লাহর রসুলের (সঃ) নামাজ?
জামাত বিশাল হলে ক্বেরায়াতকে সংক্ষিপ্ত করার কথা জানি কিন্তু নামাজকে তাড়াহুড়োর অনুমতি দিয়েছেন কি আল্লাহর রসুল (সঃ)? পরদিন, আছর এবং মগরেবেও দেখলাম একই ধরণের তাড়াহুড়ো! কোন সুস্থিরতা নেই, মনযোগ দেয়ার উপায় নেই, সেজদায় আল্লাহর কাছাকাছি গিয়েও মন স্থিত করার উপায় নেই! ‘কোন সময় ঈমামকে অনুসরণ করা থেকে ছিটকে পড়ি’- এমন টেনশন নিয়েই নামাজ শেষ করলাম!
শুধু আমাদের জাতীয় মসজিদে নয়, প্রায় সর্বত্রই এভাবে নামাজ পড়তে বাধ্য হচ্ছি আমরা! সুরা ফাতেহা পড়ার পর কোন বিরতি না দিয়ে একই নিঃশ্বাসেই শুরু করা হচ্ছে অন্য সুরা! যে সব রাকায়াতে অনুচ্চ স্বরে সুরা ফাতিহা পড়া হয় তাতে কোন কোন ঈমাম কত তড়াতাড়ি সুরা ফাতিহা পড়েন যে, কোন মুক্তাদী পড়তে চাইলে অর্ধেকটাও শেষ করতে পারেনা? তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে একপ্রকার কষ্ট করেই নামাজ পড়াচ্ছেন ঈমাম সাহেবানরা। আমার প্রশ্ন হচ্ছেঃ এ কেমন নামাজ? এটা কি আল্লার রসুল (সঃ) এর শেখানো নামাজের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ? আল্লাহর রসুল (সঃ) রুকুর পর কতক্ষণ দাঁড়াতেন? তিনি কতক্ষণ বসতেন দুই সেজদার মাঝখানে?
‘দায়সারা কাজ’ বলে একটা কথা আছে এবং তা চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য! ঈমামরাও চাকরিই করছেন! তাই, করো করো মধ্যে এই প্রবণতা থাকতেই পারে! কিন্তু যাঁরা অভ্যাসবশতঃ অথবা সিরিয়াস না হওয়ার কারণেই এভাবে তাড়াহুড়োর নামাজ পড়াচ্ছেন তাঁদের কে বলবে নামাজগুলোকে সঠিক করতে?
আমার জন্যে তো তা ‘দায়সারা’ও নয়, রুটিনমাফিক হাজিরা দেয়াও নয় - আমার জন্যে তা ইবাদত! সুতরাং সার্বিক আন্তরিকতা নিয়ে সবার সহযোগিতা নিয়ে ‘আমার নামাজ’কে অবশ্যই সঠিক করতে হবে! আল্লাহ! একাজকে তুমি আমাদের জন্যে সহজ করে দাও!
(This was written in 2017)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩১