গৌতম বুদ্ধ তখন বেশ বৃদ্ধ। সে সময় তার শিষ্যত্ব গ্রহন করল এক ধূর্ত চালবাজ লোক। সে মনে মনে ভাবল, বুদ্ধ তো কয়েক বছর পরেই মারা যাবে। তার আগেই এই বেটার কাছ থকে কিছু জিনিষ শিখেটিখে নিয়ে বুদ্ধ মরার সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে বুদ্ধের অবতার বলে ঘোষণা করবে। আর ব্যাস, একবার লোকে অবতার ভাব্লেই তো কেল্লা ফতে। সারা জীবন পায়ের উপর পা তুলে শুইয়ে শুইয়ে কাটিয়ে দেয়া যাবে।
পরিকল্পনা মোতাবেক সে কাজ শুরু করল। সারাদিন বুদ্ধের সেবাযত্ন করে। বুদ্ধকে দেখায় যে সে খুবি ভালো নিবেদিত শিষ্য। কিন্তু বুদ্ধ তার ভণ্ডামি ধরে ফেলে। তারপরও তাকে কিছু বলে না।
এদিকে একে একে বছর পার হয় কিন্তু তার আধ্যাত্মিক শক্তি, ধ্যানের ক্ষমতা এসব কিছুই লাভ হয়না। ভণ্ড শিষ্য বুঝতে পারে যে তার নিয়ত ভালো নয় বলে সে এসব কিছুই লাভ করতে পারবেনা। এটা বুঝতে পেরে তো সে মহা ক্ষুদ্ধ হয়ে গেলো। রেগেমেগে আগুন । সিদ্ধান্ত নিল যে এটার প্রতিশোধ সে নিবেই নিবে।
একদিন সকালবেলা, বুদ্ধ তখন একা বসে ধ্যান করছেন। ভণ্ডশিষ্য গেলো তার কাছে। গিয়েই বুদ্ধকে প্রচণ্ড গালাগালি। বলছে, বেটা বুড়া এতদিন তোমার কাছে থাকলাম। কিছুই শিখতে পারলাম না। তুমিই বেটা ভণ্ড, প্রতারক ......... ইত্যাদি ইত্যাদি। বুদ্ধ চুপচাপ শুনছেন।
এদিকে গালাগালির স্টক কিন্তু অনেক কম। গালি দিতে দিতে গালির স্টক শেষ হয়ে গেলো। ভণ্ডশিষ্য যখন থামল এবার বুদ্ধ মুখ খুলেন এবং অত্যন্ত শান্ত গলায় বললেন, "আমি কি তোমাকে কোন প্রশ্ন করতে পারি?"। এদিকে তার মেজাজ তখন খারাপ। রাগি রাগি গলায় বলল, “কি বলবেন বলেন”। বুদ্ধ প্রশ্ন করলেন, “ধরো তোমার কিছু জিনিষ তুমি কাওকে দিতে চাচ্ছ, সে যদি সেটা না নেয় তাহলে জিনিসটা কার কাছে থাকল?” ক্ষ্যাপা শিষ্য জবাব দিল, “আরে এতদিন ধরে ধ্যান ফ্যান করছেন আর এটাই জানেননা? আমার জিনিষ আমি যাকে দিতে চাচ্ছি সে যদি না নেয় তাহলে জিনিসটা আমারি থাকবে।” বুদ্ধ আবার জিজ্ঞেশ করলেন, “তোমার জিনিষ তুমি যাকে দিতে চাচ্ছ সে না নিলে তোমারি থাকবে?” ভণ্ডশিষ্য উত্তর দিল, “হ্যাঁ, আমারি থাকবে”। এবার বুদ্ধ একটু হেসে বললেন, “তাহলে এতক্ষন তুমি আমাকে যা কিছু উপহার দিয়েছ (অর্থাৎ যা কিছু গালাগালি করল) তার কিছুই আমি নিলাম না।”
--------------------------------------------------
গল্পটা সংগৃহীত আর আমাদের কম বেশি সবারি জানা। তারপর আবারো সবাই কে আরেকবার মনে করিয়ে দেয়ার কারন আছে। ইদানিং ব্লগে আস্তিকতা আর নাস্তিকতা, ধর্ম, এসব নিয়ে অনেক জলঘোলা হচ্ছে। প্রত্যেকে একে অপরকে গালাগালি দিচ্ছি , তর্কে জড়িয়ে পড়ছি। আসলে এসব করে আমরা আমাদের বিশ্বাসটাকেই ঠুনকো করে ফেলছি। আমরা যেন নিজেদের বিশ্বাসটাকেই বিশ্বাস করতে পারছিনা। আমরা তর্কে জড়িয়ে প্রমান করে দিচ্ছি যে আমাদের বিশ্বাসটা কত দুর্বল। তা না হলে অন্য কেউ আপনার আমার স্রষ্টা নিয়ে গালি দিলে বা ভুল কোন কিছু বললে এত রেগে যাবার কারন কি? আসলে উনি বললেও স্রষ্টা আছেন, না বললেও আছেন। আর যদি কেউ কিছু বলেও তাহলে উপরের গল্পের মত আপনি তার উপহার(!) গ্রহন না করলেই তো হল। আমাদের কাজ হউয়া উচিত প্রত্যেকের বিশ্বাসকে সম্মান দেখানো। নিজে যে ধর্মেরই হই না কেন অন্নের ধর্মে কে যেন গালি না দেই। থাকিনা যে যার বিশ্বাস নিয়ে!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:১৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



