somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাসের পাঠশালায়: পর্ব-২৮ | অটোনিয়ান সাম্রাজ্যের ইতিহাস (৯৬২-১০২৪ সাল)

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


৪৭৬ সালে হাজার বছরের পুরনো রোমান সভ্যতার পতনের পর পশ্চিম ইউরোপে যে অন্ধকার নেমে এসেছিল তা দূরীভূত করার আশা নিয়ে ৮০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য’। ৮০০ সালের ডিসেম্বর মাসে রোম নগরীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রোমের পোপ তৃতীয় লিও মহান ফ্রাংক সম্রাট শার্লামেনের মাথায় তোলে দিয়েছিলেন ‘পবিত্র রোমান সম্রাটের’ মুকুট। এভাবে ফ্রাংক সাম্রাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার বহনকারি এক নব্য সাম্রাজ্য হিসেবে পোপীয় স্বীকৃতি লাভ করেছিল। ইতিহাসে এ নব্য সাম্রাজ্য ‘পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য’ হিসেবে পরিচিতি পায়।

এভাবে ৪৭৬ সালে হারিয়ে যাওয়া পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের নবজন্ম হয়েছিল। অবশ্য পোপীয় স্বীকৃতির এই ধারা সবসময় সঠিকভাবে বজায় থাকেনি এবং এর কার্যকারিতাও ছিল সামান্যই। তাই শার্লামেনের অভিষেক পরবর্তী ফ্রাংক সাম্রাজ্য সভ্যতার ইতিহাসে ‘পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য’ হিসেবে যতটা না পরিচিত তার চেয়ে বেশি পরিচিতি পায় ‘ক্যারোলিঞ্জিয়ান সাম্রাজ্য’ হিসেবেই। এ সাম্রাজ্য টিকেছিল ৮৮৮ সাল পর্যন্ত। ৮৮৮ সালের পর পশ্চিম ইউরোপে ব্যাপক রাজনৈতিক ভাঙ্গন দেখা দিলেও ‘পবিত্র রোমান সম্রাটের’ উপাধী প্রদানের ধারা আরও কিছুদিন বজায় থাকে। অবশেষে ৯২৪ সালে এ ধারাও বন্ধ হয়ে যায়। ৯২৪ সাল থেকে ৯৬২ সাল পর্যন্ত পশ্চিম ইউরোপে কোন ‘পবিত্র রোমান সম্রাট’ ছিলেন না। ৯৬২ সালে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। ৯৬২ সালে জার্মানি ও ইতালিজুড়ে প্রতিষ্ঠিত অটোনিয়ান সাম্রাজ্য পোপীয়ভাবে ‘পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য’ হিসেবে স্বীকৃত হয়।

ক্যারোলিঞ্জিয়ান সাম্রাজ্যের পতনের ৭৪ বছর পর এবং ‘পবিত্র রোমান সম্রাটের’ উপাধী প্রদানের ধারা বন্ধ হওয়ার ৩৮ বছর পর ‘পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে অটোনিয়ান সাম্রাজ্য। অটোনিয়ান সাম্রাজ্যের উত্থানের বহুদিন পূর্বে পশ্চিম ইউরোপে ‘ফ্রান্সিয়া’ নামটির বেশ প্রাধান্য ছিল। অটোনিয়ান সাম্রাজ্যের উত্থানের পর্বে ‘জার্মানি’ নামটিও বেশ প্রাধান্য লাভ করে। অতীতে ফ্রাংকদের উত্থানের যুগে ফ্রাংকদের অধীনস্ত এলাকাকে ফ্রান্সিয়া বলা হতো। সে অর্থে পশ্চিম ইউরোপজুড়ে বিস্তৃত ক্যারোলিঞ্জিয়ান সাম্রাজ্যের বিশাল এলাকাকে ফ্রান্সিয়া বলা হতো।


চিত্র: মধ্যযুগের গ্রাম

৮৪০ সালে ক্যারোলিঞ্জিয়ান সম্রাট লুইস দ্য পায়াসের মৃত্যুর পর তাঁর তিন পুত্রের মধ্যে গৃহযুদ্ধ বেধে যায়। তিন বছর লড়াইয়ের পর ৮৪৩ সালে তিন ভাইয়ের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। এ চুক্তি ভার্দুন চুক্তি (ট্রিটি অভ ভার্দুন) নামে পরিচিত। ভার্দুন চুক্তির ভিত্তিতে ফ্রাংক সাম্রাজ্যকে তিনটি অংশে ভাগ করে ফেলা হয়। ভাগাভাগিতে চার্লস দ্য ব্যাল্ড পান পশ্চিম ফ্রান্সিয়া; লুইস দ্য জার্মান লাভ করেন পূর্ব ফ্রান্সিয়া এবং ১ম লোথার পান মধ্য ফ্রান্সিয়া।

রন নদীর পশ্চিমে ছিল পশ্চিম ফ্রান্সিয়া, রাইন নদীর পূর্বে ছিল পূর্ব ফ্রান্সিয়া এবং এ দুটি রাজ্যের মাঝখানে ছিল মধ্য ফ্রান্সিয়া। কিন্তু পশ্চিম ইউরোপ খুব বেশিদিন ধরে কেবল এ তিনটি অংশেই বিভক্ত থাকেনি। বিভিন্ন সময়ে পশ্চিম ইউরোপ বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত হয় এবং এসব আঞ্চলিক নামের বেশ প্রাধান্যও সৃষ্টি হয়। ৮৮৮ সালে ক্যারোলিঞ্জিয়ান সাম্রাজ্য পাঁচ খন্ডে বিভক্ত হয়ে যায়। এর একটি অংশ ছিল ‘ফ্রান্সিয়া’।

তখন ফ্রান্সিয়া নামটি কেবল পশ্চিম ফ্রান্সিয়া অর্থাৎ প্যারিসভিত্তিক অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। কাউন্ট অডো অভ প্যারিস ছিলেন প্যারিসভিত্তিক ফ্রান্সিয়া রাজ্যের প্রথম রাজা। এ অঞ্চলটি বর্তমান ফ্রান্সের অন্তর্গত। অন্যদিকে, ক্যারোলিঞ্জিয়ান সাম্রাজ্যের পতনের পর সাবেক পূর্ব ফ্রান্সিয়ায় প্রাধান্য লাভ করে ‘জার্মানি’ নামটি। তখন করিন্থিয়া, বাভারিয়া ও লোরাইনসহ (লোথারিঞ্জিয়া) জার্মানি অঞ্চলের রাজা ছিলেন আর্নুলফ। তিনি ‘পবিত্র রোমান সম্রাট’ হিসেবেও অভিষিক্ত হয়েছিলেন।

আর্নুলফ ক্যারোলিঞ্জিয়ান রাজবংশের একজন রাজা ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর রাজা হন তাঁর পুত্র লুইস দ্য চাইল্ড। ৯১১ সালে লুইস দ্য চাইল্ড মারা যান। এই মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জার্মানিতে ক্যারোলিঞ্জিয়ান রাজবংশের বিলুপ্তি ঘটে। লুইস দ্য চাইল্ড যখন মারা যান তখন জার্মানিতে সামন্ততন্ত্র যথেষ্ট ভিত্তি লাভ করে। জার্মানিতে অনেকগুলো স্বায়ত্তশাসিত ডাচি ছিল। ডিউকশাসিত এলাকাকে ডাচি বলা হতো।

জার্মানির ডাচিগুলো সামরিকভাবে বেশ শক্তিশালী ছিল। সীমান্ত রক্ষায় ডাচিগুলো গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ভূমিকা রাখত। তবে যথেষ্ট ক্ষমতার অধিকারি হলেও এসব ডাচির ডিউকরা কখনও আর্নুলফ কিংবা লুইস দ্য চাইল্ড এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেননি। ডিউকরা বিভিন্ন সময় ক্যারোলিঞ্জিয়ান শাসকদেরকে সামরিক সহযোগিতা প্রদান করতেন।


চিত্র: মধ্যযুগের জার্মানির একটি দূর্গ

৯১১ সালে লুইস দ্য চাইল্ড এর মৃত্যুর পর এ অবস্থার পরিবর্তন আসে। তাঁর মৃত্যুর পর লোথারিঞ্জিয়ার অভিজাতগণ ফ্রান্সিয়ার রাজা চার্লস দ্য সিম্পলের আনুগত্য প্রদর্শন করায় লোথারিঞ্জিয়া ফ্রান্সিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্ত জার্মান ডাচিগুলো এ পথে যায়নি। ভাইকিং আক্রমণ শক্তভাবে প্রতিহত করার জন্য জার্মান ডিউকরা তাদের নিজেদের মধ্য থেকে কোন একজনকে রাজা নির্বাচিত করে সেই রাজার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু রাজা নির্বাচনের প্রশ্নে সকল জার্মান ডিউক একমত হতে পারেননি।

প্রথমে রাজা নির্বাচিত হন ফ্রাঙ্কোনিয়া ডাচির ডিউক কনরাড। কিন্তু চারটি ডাচি ছাড়া অন্যান্য জার্মান ডাচিগুলো তাঁর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন করেনি। এর কারণ বিদেশী আক্রমণ প্রতিরোধে তাঁর ব্যর্থতা। কনরাড ভাইকিং আক্রমণকারিদের দমনে যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারেননি। লরেন অঞ্চল দখলে তিনি তিনবার ব্যর্থ হন। ম্যাগিয়ার (হাঙ্গেরিয়ান) আক্রমণ প্রতিরোধেও তিনি ব্যর্থতার পরিচয় দেন। অন্যদিকে, তিনি পূর্ব ফ্রান্সিয়া অর্থাৎ জার্মানি অঞ্চলে নিজের প্রাধান্য বিস্তারের প্রচেষ্টা চালান। মোটকথা, কনরাড জার্মান ডাচিগুলোকে নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হন।


চিত্র: হেনরি দ্য ফাউলার

এসব কারণে জার্মান ডিউকরা নিজেদের ডাচিগুলোকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষম ও স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেন এবং স্বায়ত্বশাসন প্রবর্তনের চেষ্টা করেন। ডিউকরা নিজেদের ডাচির অন্তর্গত চার্চগুলোকেও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন। এদিকে স্যাক্সনি ও বাভারিয়ার ডিউক কনরাডের আনুগত্য পুরোপুরি বর্জন করে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এছাড়াও পালাটাইনের কাউন্ট কনরাডকে রাজা হিসেবে মেনে নেননি। ফলে জার্মানিতে অভ্যন্তরীণ সংঘাত চলতে থাকে।

৯১৮ সালে কনরাডের মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর পর জার্মানির ডিউকরা সবাই মিলে স্যাক্সনির ডিউক হেনরিকে জার্মানির রাজা নির্বাচিত করেন। হেনরি অভ স্যাক্সনি পরবর্তীতে হেনরি দ্য ফাউলার নামে পরিচিত হন। তিনি লুইস দ্য পায়াসের বংশধর ছিলেন। তিনি একজন সফল ও বিচক্ষণ শাসক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। তিনি সামন্ততন্ত্রকে মেনে নিয়ে প্রসাশনিক বিকেন্দ্রীকরণ এবং জার্মান ডাচিগুলোর স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের ওপর জোর দিয়েছিলেন।

হেনরি দ্য ফাউলারের জনপ্রিয়তা এবং কর্মতৎপরতার ফলে জার্মানিতে এক নতুন ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্রের সূচনা হয়। নতুন ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্রের জন্ম হওয়ায় এ অঞ্চলের ‘পূর্ব ফ্রান্সিয়া’ নামটির স্থলে ‘জার্মানি’ নামটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। হেনরি দ্য ফাউলারকে মধ্যযুগীয় জার্মান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম রাজা ধরা হয়। তিনি স্যাক্সন গোত্রীয় নতুন রাজবংশের সূচনা ঘটান। এ রাজবংশের নাম অটোনিয়ান রাজবংশ। তাঁর জ্যোষ্ঠপুত্র ১ম অটোর নামে এ রাজবংশের নামকরণ করা হয়েছে। হেনরি এ রাজবংশের প্রথম রাজা।


চিত্র: সামন্ততন্ত্রের স্তরবিন্যাস

হেনরি দ্য ফাউলার ৯১২ সালে স্যাক্সনির ডিউক হয়েছিলেন এবং ৯১৯ সালে জার্মানির রাজা হয়েছিলেন। ৯৩৬ সালে তাঁর মৃত্যুর সময় পর্যন্ত তিনি জার্মানির রাজা ছিলেন। হেনরি তাঁর জীবদ্দশায় সফলতার শিখরে পৌঁছাতে পেরেছিলেন। তিনি ডিউকদের হাতে স্বায়ত্বশাসন ছেড়ে দেওয়ার নীতি গ্রহণ করায় ডাচিগুলোতে বিদ্রোহের অবসান হয়। তিনি বাভারিয়া, সোয়াবিয়া প্রভৃতি শক্তিশালী ডাচির আনুগত্য অর্জন করেছিলেন এবং এমনকি লরেনের মতো বিদ্রোহী ডাচির আনুগত্য অর্জনেও সক্ষম হয়েছিলেন।

দেশের নিরাপত্তা সুসংহত করার জন্য তিনি স্যাক্সন সেনাবাহিনীর আমূল সংস্কার করেন এবং জার্মানির পূর্ব সীমান্তে বড় বড় দূর্গ নির্মাণ করে ম্যাগিয়ার (হাঙ্গেরিয়ান) আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষার ব্যবস্থা নেন। এসব দূর্গকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে অনেকগুলো জার্মান শহর গড়ে উঠেছিল। বিশাল বিশাল দূর্গ নির্মাণ ছাড়াও আরেকটি ঐতিহাসিক ঘটনা হেনরির হাতে সম্পন্ন হয়েছিল। সেটি হল ‘নাইট যোদ্ধা’ নামে একটি অশ্বারোহী যোদ্ধা শ্রেণির সৃষ্টি।


চিত্র: মধ্যযুগের নাইট যোদ্ধা

মধ্যযুগের এক আবশ্যকীয় অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছিল বর্ম ও বর্শাধারী এই অশ্বারোহী নাইটরা। মধ্য যুগের ইতিহাস-সাহিত্য ও সমাজজীবনের সর্বত্র এদের গভীর প্রভাব দেখা যায়। মূলত অশ্বারোহী বিদেশী সৈন্যদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য হেনরি দক্ষ অশ্বারোহী বাহিনী গঠন ও নাইট যোদ্ধাদের প্রস্তুত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। তাঁর এসব সামরিক উদ্যোগ সফল হয়েছিল। ৯৩৩ সালে তিনি ম্যাগিয়ার (হাঙ্গেরিয়ান) আক্রমণকারিদেরকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করেন। এছাড়াও ভাইকিং (নর্মান) ও স্লাভ আক্রমণকারিরাও তাঁর পদানত হয়েছিল। এভাবে তিনি জার্মানিকে সুসংহত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

৯৩৬ সালে হেনরি মৃত্যুবরণ করলে জার্মানির সিংহাসনে বসেন তাঁর পুত্র অটো (প্রথম অটো)। তিনি অটো দ্য গ্রেট নামে পরিচিত। অটো দ্য গ্রেট ৯৩৬ সাল থেকে ৯৭৩ সাল পর্যন্ত জার্মানির রাজা ছিলেন। ৯৬২ সালে তিনি ‘পবিত্র রোমান সম্রাট’ হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। ৯৭৩ সালে তাঁর মৃত্যুর সময় পর্যন্ত তিনি ‘পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের’ অধিপতি পদে বহাল ছিলেন। অটো ছিলেন হেনরি দ্য ফাউলার এবং মাটিল্ডার প্রথম পুত্র। তিনিই প্রথম ‘জার্মান’ শাসক যিনি ইতালিরও সম্রাট ছিলেন।


চিত্র: মধ্যযুগীয় ইউরোপের নানা স্তরের মানুষ

৯৩৬ সালে অটো দ্য গ্রেট উত্তরাধিকারসূত্রে স্যাক্সনি ডাচি এবং জার্মানির সিংহাসন লাভ করেন। তাঁর পিতার জীবদ্দশায়ই তিনি সিংহাসনের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। এজন্য সিংহাসনে বসতে তাকে কোন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হতে হয়নি। আখেন শহরের এক বিশাল জনসমাবেশে কলোনের আর্চবিশপ তাঁর মাথায় জার্মানির রাজমুকুট পরিয়ে দিয়েছিলেন। ক্ষমতায় বসার পর অটো তাঁর পিতার মতই সকল জার্মান গোত্রকে একক রাষ্ট্রের অধীনে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ চালিয়ে যান এবং অভিজাততন্ত্রের ওপর রাজার ক্ষমতাকে বিস্তৃত করেন।

শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ ডাচিগুলোর সাথে নিবিঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য অটো দ্য গ্রেট সেসব ডাচির শাসক পরিবারগুলোর সাথে তাঁর পরিবারের সদস্যদের বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের আয়োজন করেন। এভাবে কৌশলগত বিবাহ ও ব্যক্তিগত সমঝোতার মাধ্যমে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ডাচিগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। যেসব ডিউকরা আগে রাজার ‘সমকক্ষ’ বলে বিবেচিত হতেন তাদেরকে তিনি তাঁর রাজকীয় কর্তৃত্বের অধীনে নিয়ে এসে রাজকর্মচারিরূপে পরিচালিত করতে সক্ষম হন।


চিত্র: সম্রাট প্রথম অটো ও তাঁর স্ত্রী এডিথ

জার্মানির ক্যাথলিক চার্চকে অটো তাঁর সহায়ক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিলেন এবং যাজকদেরকে পরোক্ষভাবে তাঁর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছিলেন। এতে চার্চের ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং বিশপরা ডিউকদের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। অটো ক্ষমতায় আসার পর স্লাভরা স্যাক্সনির সীমান্তে আক্রমণ চালায়। এছাড়াও ম্যাগিয়াররা (হাঙ্গেরিয়ান) জার্মানিতে নতুনভাবে আক্রমণ শুরু করে। অটো এসব সংকট মোকাবিলায় সফল হন। ক্ষমতার মাঝামাঝি সময়ে তিনি কিছু ছোটখাটো ডাচির বিদ্রোহও সামাল দেন।

এরপর ৯৫৫ সালে অটো ম্যাগিয়ারদেরকে চূড়ান্ত আঘাত করেন। এ যুদ্ধ লিচফিল্ডের যুদ্ধ নামে পরিচিত। এ যুদ্ধে ম্যাগিয়াররা পরাজিত হওয়ার পর পশ্চিম ইউরোপে তাদের আক্রমণ বন্ধ হয়ে যায়। পৌত্তলিক ম্যাগিয়ারদের বিরুদ্ধে অটো দ্য গ্রেট এর এই বিজয় তাকে একজন খ্রিষ্টান বীরের সম্মান এনে দেয় এবং তিনি খ্রিষ্টধর্মের একজন রক্ষাকর্তার খ্যাতি লাভ করেন। এর ফলে তাঁর রাজত্ব আরও মজবুত হয়। অটো ম্যাগিয়ারদেরকে বিতাড়িত করে পূর্বদিকে বর্তমান পোল্যান্ড এলাকা পর্যন্ত তাঁর রাজ্য সম্প্রসারিত করেছিলেন।


চিত্র: অটোনিয়ান সাম্রাজ্য

সে সময়য় ইতালি ছিল আরেকটি লোভনীয় অঞ্চল। কারণ ইতালিতে তখন একক কোন শাসন ছিল না। ক্রমাগত গৃহযুদ্ধের ফলে ইতালি তখন বহুদাবিভক্ত। উত্তর ইতালিতে ছিল লম্বার্ড রাজ্য। দক্ষিণাঞ্চলেও দুটি লম্বার্ড ডাচি ছিল। দেশটিতে বাইজেন্টাইন প্রভাবও বাড়ছিল। মধ্য ইতালিতে এর আগে যে ‘পোপীয় রাষ্ট্র’ (পেপাল স্টেইট) ছিল তা ইতালীয় ডিউকের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছিল। মধ্য ইতালির পোপীয় রাষ্ট্রে তখন অতীতের মতো পোপের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব আর অবশিষ্ট ছিল না। পোপের মর্যাদা অনেক নীচে নেমে গিয়েছিল তখন।

৯৬১ সালে অটো ইতালি অভিযানে বের হন এবং তাঁর রাজ্যের সীমানা উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে প্রসারিত করেন। ইতালি দখলের পূর্বে তিনি দেশটির উত্তরের বারগান্ডি রাজ্য জয় করেন এবং লম্বার্ডির বিধবা ও সুন্দরী রাণী এডিলেইডকে বিবাহের মাধ্যমে নিজেকে লম্বার্ডির বৈধ রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। এভাবে তিনি নিজেকে ইতালির সম্ভাব্য শাসক হিসেবে অধিকতর গ্রহণযোগ্য করে তোলেন।

৯৬২ সালে তিনি ইতালিতে দ্বিতীয় অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় তিনি মধ্য ইতালির পোপীয় রাষ্ট্রটি উদ্ধার করে দিয়েছিলেন। তখনকার পোপ ছিলেন সপ্তম জন। পোপ অটোকে ‘পবিত্র রোমান সম্রাট’ হিসেবে অভিষিক্ত করতে ইচ্ছুক ছিলেন। অতীতের সম্রাট শার্লামেনের অভিষেক অনুষ্ঠানের মতোই রোম নগরীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পোপ সপ্তম জন অটোর মাথায় ‘পবিত্র রোমান সম্রাটের’ মুকুট তোলে দেন।


চিত্র: মধ্যযুগের ভূমিদাস

এভাবে হারিয়ে যাওয়া ‘পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের’ নবজন্ম হয়। ৯২৪ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ৩৮ বছর পর ৯৬২ সালে অটোর মাধ্যমে ‘পবিত্র রোমান সম্রাট’ উপাধীটি আবার চালু হয়। ‘পবিত্র রোমান সম্রাট’ হিসেবে অটোর অভিষেকের পর ইতালি ও জার্মানি এক অভিন্ন সাম্রাজ্যে পরিণত হয়। এ সাম্রাজ্যের নাম অটোনিয়ান সাম্রাজ্য। সম্রাট হিসেবে অটোর অভিষেকের দিন থেকে এ সাম্রাজ্যের সূচনা হয়।

এর পরবর্তীতে শার্লামেনের সাম্রাজ্যের মতো অটোনিয়ান সাম্রাজ্যও ধীরে ধীরে ‘পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। সম্রাট অটোর বাকী জীবন কেটেছিল উত্তর ইতালিতে। মোট বারো বছর তিনি ইতালিতে কাটিয়েছিলেন। ইতালিতে তাঁর শাসন ধরে রাখার জন্য তাকে বেশ সংগ্রাম করতে হয়েছিল। পোপতন্ত্রের সাথেও একসময় তাঁর বিরোধ দেখা দিয়েছিল। রোমের ওপর যে কোন বাইজেন্টাইন আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য তাকে প্রস্তুত থাকতে হতো।

তবে অটো বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সাথে তাঁর সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে পেরেছিলেন। এ কারণে দক্ষিণ দিকে তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তারের পরিকল্পনা বাদ দিতে হয়েছিল। সম্রাট অটো ইতালিতে তাঁর শাসন চাপিয়ে দেননি এবং কোন দমনমূলক নীতিও গ্রহণ করেননি। লম্বার্ডির বৈধ রাজা হয়েও তিনি সেখানকার সবকিছু আগের মতই রেখে দিয়েছিলেন। বাইজেন্টাইনদের সাথে যুদ্ধ এড়াতে তিনি বাইজেন্টাইন রাজপরিবারের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন করেন।


চিত্র: সম্রাট দ্বিতীয় অটো

সম্রাট অটো বাইজেন্টাইন রাজকন্যা থিওফানোর সাথে তাঁর পুত্র দ্বিতীয় অটোর বিয়ে দিয়েছিলেন। ৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে এ বিয়ে সম্পন্ন হয়েছিল। এর পরের আগস্ট মাসে সম্রাট অটো জার্মানিতে ফিরে আসেন। ৯৭৩ সালে তিনি জার্মানিতে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর ‘পবিত্র রোমান সম্রাটের’ আসনে বসেন তাঁর পুত্র দ্বিতীয় অটো। দ্বিতীয় অটো ৯৭৩ সাল থেকে ৯৮৩ সাল পর্যন্ত অটোনিয়ান সম্রাট ছিলেন।

দ্বিতীয় অটো ছিলেন সম্রাট অটো দ্য গ্রেট এবং রাণী এডিলেইড অভ ইতালি এর কনিষ্ঠ পুত্র। তাঁর ভাইদের মধ্যে একমাত্র তিনিই জীবিত ছিলেন। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী সম্রাট অটো দ্য গ্রেট মৃত্যুর পূর্বেই তাঁর পুত্র দ্বিতীয় অটোকে তাঁর উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান। তাই প্রাথমিকভাবে কোন সমস্যা ছাড়াই দ্বিতীয় অটো সিংহাসনে আরোহণ করেন।

৯৬১ সালে দ্বিতীয় অটো খুব অল্প বয়সেই তাঁর পিতার সাথে জার্মানির যুগ্ম রাজা হয়েছিলেন এবং ৯৬৭ সালে তাঁর পিতা তাকে অটোনিয়ান সাম্রাজ্য তথা ‘পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের’ ‘সহসম্রাট’ ঘোষণা করেছিলেন। এতে তাঁর উত্তরাধিকার লাভের বিষয়টি সুনিশ্চিত হয়েছিল। বাইজেন্টাইন রাজকন্যা থিওফানোর সাথে তাঁর বিবাহের ফলে তিনি বাইজেন্টাইন সমর্থনপুষ্ঠও হয়েছিলেন।

অটো দ্য গ্রেট এর দীর্ঘ ৩৭ বছরের রাজত্বের পর ১৮ বছরের যুবক দ্বিতীয় অটো হলেন ‘পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের’ একচ্ছত্র অধিপতি। দ্বিতীয় অটো তাঁর পিতার নীতি অনুসারেই সাম্রাজ্য পরিচালনা করতে থাকেন। পিতার মতই তিনি জার্মানিতে অটোনিয়ান সাম্রাজ্যের ভিত্তি মজবুত করতে থাকেন এবং বৃহত্তর জার্মানিতে সম্রাটের ভূমিকাকে যথেষ্ট শক্তিশালী পর্যায়ে উন্নীত করেন। তিনি দক্ষিণ ইতালির গভীর পর্যন্ত অটোনিয়ান সাম্রাজ্যের সীমানা প্রসারিত করতে চেষ্টা করেন। পিতার মতো তিনিও ক্যাথলিক চার্চের ওপর গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন।

দ্বিতীয় অটো তাঁর রাজত্বের শুরুতেই কিছু অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হয়েছিলেন। তাঁর রাজত্বের শুরুতে অটোনিয়ান রাজবংশের অন্য কিছু সদস্য তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করে এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। দ্বিতীয় অটো এই বিদ্রোহীদেরকে পরাজিত করেন। বাভারিয়া ও লরেনের ডিউক এ বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। অন্যদিকে ডেনমার্কের রাজা উত্তর দিক থেকে অটোনিয়ান সাম্রাজ্যে আক্রমণ করেন।

দ্বিতীয় অটো দৃঢ়চিত্তে সকল আক্রমণ ও বিদ্রোহ প্রতিহত করেন। তাঁর সাম্রাজ্যের সিংহাসনের ওপর বাভারিয়ানদের উত্তরাধিকারের দাবীকে তিনি স্থায়ীভাবে ঘুচিয়ে দিয়েছিলেন। এর ফলে তাঁর নিজের পুত্রের উত্তরাধিকার লাভের পথ নিশ্চিত ও নিরাপদ হয়েছিল। অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ ও ডেনিশ আক্রমণ প্রতিহত করার পর দ্বিতীয় অটো মনোযোগ দেন ইতালির দিকে। দক্ষিণ ইতালিতে তখন বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত এলাকা ছিল এবং সিসিলি দ্বীপটি আরব মুসলমানদের ফাতেমীয় সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল।

দক্ষিণ ইতালির বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যভুক্ত অঞ্চলটি তখন সিসিলির আরব মুসলমানদের আক্রমণের ঝুঁকিতে ছিল। এ অঞ্চল ছিল দ্বিতীয় অটোর সাম্রাজ্য এবং আরবের ফাতেমীয় সাম্রাজ্যের মধ্যবর্তী এক ধরণের ‘বাফার জোন’। ফাতেমীয়দের আক্রমণের ঝাপটা বাইজেন্টাইনদের ওপর দিয়েই যেতো; দ্বিতীয় অটোকে তা স্পর্শ করত না। কিন্তু বিজয়ের আনন্দে উদ্বেলিত দ্বিতীয় অটো এ সুবিধাটির গুরুত্ব বুঝলেন না। পুরো ইতালি দখলের এক হঠকারী ভাবনা তাকে পেয়ে বসে।


চিত্র: একদল নাইট যোদ্ধা

৯৮০ সালে দ্বিতীয় অটো পুরো ইতালিকে তাঁর নিজের সাম্রাজ্যের অধীনে নিয়ে আসার ব্যাপারে মনোযোগ নিবিষ্ট করেন। তাঁর এই মনোভাব কোন সুফল বয়ে আনেনি। জার্মানির বিজয়ের আনন্দে উৎসাহিত হয়ে তিনি দক্ষিণ ইতালিতে বাইজেন্টাইন ও ফাতেমীয় মুসলমানদের এলাকায় অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথমদিকে সফল হলেও তাঁর এ অভিযানের সমাপ্তি ঘটেছিল শোচনীয় পরজয়ের মধ্য দিয়ে।

অভিযানের প্রথমদিকে তিনি দক্ষিণ ইতালির লম্বার্ডদের স্বাধীন অঞ্চলসমূহকে তাঁর সাম্রাজ্যের অধীনে নিয়ে আসতে পেরেছিলেন। এরপর তিনি দখল করে নেন বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত এলাকাসমূহ। কিন্তু ফাতেমীয়দের এলাকায় তিনি ভয়াবহ প্রতিরোধের সম্মুখীন হন। ফাতেমীয় সৈন্যদের হতে দ্বিতীয় অটোর সেনাবাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। ৯৮২ সালে এ পরাজয়ের ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল।

ফাতেমীয়দের হাতে দ্বিতীয় অটোর এ পরাজয়ের সংবাদ দ্রুত গতিতে সারা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ডেনিশ আক্রমণকারি ও স্লাভ বিদ্রোহীরা উৎসাহিত হয়। ৯৮৩ সালে দ্বিতীয় অটো যখন ফাতেমীয়দের ওপর নতুনভাবে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখন পূর্ব ইউরোপের অটোনীয় সাম্রাজ্যভুক্ত স্লাভরা এক বিশাল অভ্যুত্থান ঘটায়। ইতোপূর্বে এসব স্লাভদের এলাকাসমূহকে অটোনিয়ান সাম্রাজ্যের অধীনে নিয়ে এসেছিলেন অটো দ্য গ্রেট। তিনি তাদেরকে করদানে বাধ্য করে ভূমিদাসে পরিণত করেছিলেন।

দ্বিতীয় অটোর দুর্বলতার সুযোগে এসব স্লাভরা শক্তিশালী অভ্যুত্থান সংঘটিত করে এবং অটোনিয়ান কর্তৃপক্ষকে এলব নদীর পূর্বের প্রধান অঞ্চলগুলো ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য করে। তারা হামবুর্গ শহর লুণ্ঠন করে এবং এলব নদীর পূর্বে জার্মানদের ঘাটিগুলো ধ্বংস করে দেয়। স্লাভদের এই উত্থানের পর প্রায় এক শতাব্দী ধরে পূর্বদিকে জার্মানির সম্প্রসারণ বন্ধ ছিল। দ্বিতীয় অটো তাঁর সাম্রাজ্যকে এসব সংকটের মধ্যে রেখেই হঠাৎ করে মৃত্যুবরণ করেন। যুদ্ধ-বিদ্রোহ ও অশান্তিতে পরিপূর্ণ দশ বছরের শাসনকাল অতিবাহিত করে নিজ সাম্রাজ্যকে এক গভীর সংকটের মধ্যে রেখে তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

৯৮৩ সালের ৭ ডিসেম্বর মাত্র ২৮ বছর বয়সে দ্বিতীয় অটো মৃত্যুবরণ করেন। তিনি এমন এক সময়ে মারা গিয়েছিলেন যখন তাঁর কোন প্রাপ্তবয়স্ক উত্তরাধিকারীও ছিল না। তখন তাঁর পুত্র তৃতীয় অটোর বয়স মাত্র তিন বছর। কিন্তু অন্য কোন উপায় না থাকায় সম্রাটের মৃত্যুর পর তাঁর সিংহাসনের উত্তরাধিকারী নির্বাচন করা হয় তাঁর তিন বছর বয়সী পুত্র তৃতীয় অটোকেই। সম্রাট দ্বিতীয় অটোর মৃত্যুর পরপরই শিশু তৃতীয় অটোকে জার্মানিতে রাজা হিসেবে অভিষিক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ৯৯৬ সালে তৃতীয় অটো ‘পবিত্র রোমান সম্রাট’ হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছিলেন।

তৃতীয় অটো ছিলেন সম্রাট দ্বিতীয় অটো ও রাণী থিওফানোর একমাত্র পুত্র। বাইজেন্টাইন মায়ের কোলে বড় হওয়ায় তিনি ছোটবেলা থেকেই বাইজেন্টাইন ভাবধারার প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। এছাড়াও তাঁর ওপর তাঁর বাইজেন্টাইন শিক্ষক ফিলাগ্যাথাসের প্রভাবও ছিল। তৃতীয় অটোর অন্যান্য শিক্ষকরা তাকে ক্যারোলিঞ্জিয়ান ভাবধারায় আকৃষ্ট করতে চেয়েছিলেন। তাই বালক তৃতীয় অটোর ওপর একটি মিশ্র সংস্কৃতির প্রভাব পড়েছিল। তৃতীয় অটো বাইজেন্টাইন সংস্কৃতি পছন্দ করতেন আবার ক্যারোলিঞ্জিয়ান সম্রাট শার্লামেনকেও তাঁর আদর্শ শাসক মনে করতেন।

৯৮৩ সালে সম্রাট দ্বিতীয় অটোর মৃত্যুর পর তৃতীয় অটোকে রাজসিংহাসন প্রদান করা হলেও তিনি নাবালক হওয়ায় তাঁর অভিভাবক হিসেবে রাজ্য পরিচালনার ভার গ্রহণ করেন রাজমাতা থিওফানো। তিনি তৃতীয় অটোর ‘রিজেন্ট’ হিসেবে শক্ত হাতে রাজ্য পরিচালনা করতে থাকেন। রিজেন্ট মানে হল ‘রাজপ্রতিনিধিস্বরুপ অন্তর্বর্তীকালীন শাসক’। এ অন্তর্বর্তীকালীন শাসকের দায়িত্বকে বলা হয় ‘রিজেন্সি’।


চিত্র: রিজেন্ট থিওফানো

দ্বিতীয় অটোর মৃত্যুর পর যদিও তৃতীয় অটোকে একমাত্র উত্তরাধিকারী মনোনীত করা হয় তবুও তাঁর রিজেন্সির দাবী নিয়ে কিছুটা সংকট দেখা দেয়। তখন বাভারিয়ার ডিউক ছিলেন দ্বিতীয় হেনরি। তিনি ছিলেন তৃতীয় অটোর চাচাত ভাই। দ্বিতীয় হেনরি ৯৮৪ সালে শিশু তৃতীয় অটোর রিজেন্সি লাভের দাবী তোলেন এবং সিংহাসন দখলের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। কিন্তু দ্বিতীয় হেনরির এই দাবী জার্মান অভিজাতদের সমর্থন লাভে ব্যর্থ হয় এবং চাপের মুখে পড়ে তিনি সিংহাসনের দাবী ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।

দ্বিতীয় হেনরি থিওফানোকে তৃতীয় অটোর রিজেন্ট হিসেবে মেনে নেন। থিওফানো ৯৯১ সাল পর্যন্ত তৃতীয় অটোর রিজেন্ট হিসেবে রাজ্য পরিচালনা করেন। সেবছর থিওফানোর মৃত্যু হয়। তৃতীয় অটো তখনও নাবালক ছিলেন। তাই তৃতীয় অটোর নতুন রিজেন্ট হিসেবে রাজ্য পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন তাঁর পিতামহী এডিলেইড অভ ইতালি। এডিলেইড ৯৯৪ সাল পর্যন্ত তৃতীয় অটোর রিজেন্ট ছিলেন।

এরপর ১৪ বছর বয়সী তৃতীয় অটোর হাতে রাজ্য পরিচালনার দায়িত্ব তোলে দেওয়া হয়। ৯৯৬ সালে তৃতীয় অটো ইতালি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে এবং ‘পবিত্র রোমান সম্রাট’ উপাধী লাভের উদ্দেশ্য নিয়ে ইতালির পথে যাত্রা করেন। ৯৮৩ সালে দ্বিতীয় অটোর মৃত্যুর পর ইতালিতে কোন জার্মান নিয়ন্ত্রণ ছিল না। দ্বিতীয় ক্রিসেন্টিয়াসের নেতৃত্বে রোম বিদ্রোহ করেছিল। ফলে পোপতন্ত্রের অবস্থান ছিল জার্মান রিজেন্সির বিরুদ্ধে।

তৃতীয় অটো রোমের ওপর নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে এনে ‘পবিত্র রোমান সম্রাট’ হিসেবে অভিষিক্ত হন এবং তাঁর ভ্রাতৃসম্পর্কীয় পঞ্চম গ্রেগরিকে পোপের পদে বসান। পঞ্চম গ্রেগরি ছিলেন প্রথম জার্মান পোপ। সম্রাট তৃতীয় অটো দ্বিতীয় ক্রিসেন্টিয়াসকে ক্ষমা করে ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সম্রাট রোম ছেড়ে চলে যাওয়ার পরপরই দ্বিতীয় ক্রিসেন্টিয়াস পুনরায় বিদ্রোহ করেন এবং পঞ্চম গ্রেগরিকে সরিয়ে ষোড়শ জনকে পোপের পদে বসান।

এর ফলে তৃতীয় অটো ৯৯৮ সালে আবার ইতালিতে ফিরে আসেন এবং রোমের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পঞ্চম গ্রেগরিকে আবার পোপের পদে বহাল করেন। সেই সাথে দ্বিতীয় ক্রিসেন্টিয়াস ও ষোড়শ জনকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। ৯৯৯ সালে পোপ পঞ্চম গ্রেগরি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর তৃতীয় অটো দ্বিতীয় সিলভেস্টারকে নতুন পোপ হিসেবে নিয়োগ দান করেন। তৃতীয় অটোর এসব কর্মকাণ্ডের ফলে রোমান ক্যাথলিক চার্চের ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ যথেষ্ট দৃঢ়তা লাভ করে।

তৃতীয় অটো তাঁর রাজত্বের শুরুতেই সাম্রাজ্যের পূর্ব সীমান্তে স্লাভদের শক্ত প্রতিরোধের মুখোমুখী হন। ৯৮৩ সালে তাঁর পিতা দ্বিতীয় অটোর মৃত্যুর পর স্লাভরা জার্মানদেরকে এলব নদীর পূর্বের এলাকা ছেড়ে আসতে বাধ্য করেছিল। তৃতীয় অটো তাঁর রাজত্বকালে সাম্রাজ্যের এসব হারানো অঞ্চল পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেন। কিন্তু এক্ষেত্রে তিনি তেমন কোন সফলতা দেখাতে পারেননি। তাই তিনি পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করে সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেন।

১০০০ সালে তৃতীয় অটো পোল্যান্ড, বোহেমিয়া এবং হাঙ্গেরির সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। তাঁর এই উদ্যোগ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব রেখেছিল। সুসম্পর্ক স্থাপনের ফলে এসব দেশে খ্রিষ্টধর্ম প্রচারের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ১০০০ সালে তৃতীয় অটোর পৃষ্ঠপোষকতায় পোল্যান্ডে খ্রিষ্টান মিশনারি কার্যক্রমের প্রসার ঘটে এবং এর ফলে দেশটিতে খ্রিষ্টধর্মের যথেষ্ট প্রভাব সৃষ্টি হয়। এছাড়াও হাঙ্গেরিতে প্রথম খ্রিষ্টান রাজা হিসেবে প্রথম স্টিফেনকে অভিষিক্ত করা হয়।

১০০১ সালে তৃতীয় অটোকে রোমান অভিজাতদের বিদ্রোহ দমনের জন্য তৃতীয়বারের মতো রোমে আসতে হয়। কিন্তু অভিজাতদের সামরিক বাহিনী যথেষ্ট শক্তিশালী হওয়ায় তিনি রোম ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। ১০০২ সালে তিনি রোম পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে নতুন অভিযানে বের হন। কিন্তু তাঁর এ অভিযান সফল হওয়ার পূর্বেই তিনি হঠাৎ করে জ্বরে আক্রান্ত হন এবং জ্বরাক্রান্ত অবস্থায় সিভিটা ক্যাসেলেনার নিকটবর্তী এক দূর্গে মৃত্যুবরণ করেন।


চিত্র: সম্রাট তৃতীয় অটো

সম্রাট তৃতীয় অটো যখন রোম পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে নতুন অভিযানে বের হন তখন বাভারিয়ার ডিউক দ্বিতীয় হেনরি সম্রাটের সমর্থনে তাঁর বাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসেন। কিন্তু সম্রাটের বাহিনীর সাথে তাঁর বাহিনী মিলিত হওয়ার পূর্বেই সম্রাট তৃতীয় অটো আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তৃতীয় অটোর বয়স ছিল মাত্র ২১ বছর। তাঁর কোন স্পষ্ট উত্তরাধিকারী ছিল না। ফলে তাঁর মৃত্যুর পর অটোনিয়ান সাম্রাজ্যে এক রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়।

অবশেষে এই শূন্যতা পূরণ করেন ডিউক দ্বিতীয় হেনরি। দ্বিতীয় হেনরি ছিলেন সম্রাট তৃতীয় অটোর চাচাত ভাই। তৃতীয় অটোর সিংহাসনের অন্যান্য দাবীদারদেরকে পরাজিত করে তিনি জার্মানির নতুন রাজা হিসেবে অভিষিক্ত হন। সম্রাটের মৃত্যুর পরপরই তিনি জার্মানির সিংহাসন অধিকার করলেও ইতালির রাজা হিসেবে তাঁর অভিষেক হয় ১০০৪ সালে। ১০০২ সালের ৯ জুলাই তিনি মাথায় পরেন জার্মানির রাজমুকুট এবং ১০০৪ সালের ১৫ মে পরেন ইতালির রাজমুকুট। ‘পবিত্র রোমান সম্রাট’ হিসেবে তাঁর অভিষেক হয়েছিল ১০১৪ সালে।

দ্বিতীয় হেনরি ছিলেন জার্মান রাজা প্রথম হেনরির প্রপৌত্র এবং অটোনিয়ান রাজবংশের বাভারিয়ান শাখার একজন সদস্য। ৯৯৫ সালে তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে বাভারিয়ার ডিউক হয়েছিলেন। বাভারিয়ান বংশতালিকা অনুযায়ী তিনি ‘চতুর্থ হেনরি’ হিসেবে ডিউক হয়েছিলেন। কিন্তু ‘পবিত্র রোমান সম্রাটের’ তালিকা অনুযায়ী তিনি পরবর্তীতে ‘সম্রাট দ্বিতীয় হেনরি’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। দ্বিতীয় হেনরিকে সেইন্ট হেনরিও বলা হয়।

১০১৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রোমের পোপ অষ্টম বেনেডিক্ট দ্বিতীয় হেনরির মাথায় ‘পবিত্র রোমান সম্রাটের’ মুকুট তোলে দেন। ১০২৪ সালে তাঁর মৃত্যু অবধি তিনি এ পদে বহাল ছিলেন। তিনি ছিলেন অটোনিয়ান রাজবংশের শেষ সম্রাট। তাঁর কোন সন্তান-সন্ততিও ছিল না। ক্ষমতায় আসার পর দ্বিতীয় হেনরি তাঁর পূর্ববর্তী সম্রাটদের মতো কেবল ইতালি নিয়েই ব্যস্ত থাকেননি। তিনি তাঁর রাজত্বের অধিকাংশ সময় ব্যয় করেছেন ইতালির বাইরে আল্পসের উত্তরের ইউরোপীয় অঞ্চলসমূহে।

পোলিশ ডিউক বোলেসোর বিরুদ্ধে কয়েকটি যুদ্ধ পরিচালনায় তাঁর মূল দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল। এর কারণ এই ডিউক অটোনিয়ান নিয়ন্ত্রণ থেকে তাঁর ডাচির আশপাশের কয়েকটি দেশ দখল করে নিয়েছিলেন। তবে দ্বিতীয় হেনরিকে ইতালিতেও কয়েকটি অভিযান চালাতে হয়েছিল। ইতালি উপদ্বীপে অটোনিয়ান সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার জন্য তাকে তিনটি অভিযানে যেতে হয়। দুটি অভিযান ছিল বিদ্রোহ দমনের জন্য এবং একটি অভিযান ছিল দক্ষিণ ইতালিতে বাইজেন্টাইন হুমকি মোকাবিলার জন্য।

দ্বিতীয় হেনরির সময়কালে অটোনিয়ান সাম্রাজ্যজুড়ে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী হয়। ক্যাথলিক চার্চের সাথে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক বন্ধন দৃঢ় করে তিনি তিনি তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানকে শক্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। দ্বিতীয় হেনরি তাঁর রাজকর্মচারী হিসেবে সেক্যুলার ব্যক্তিদের স্থলে ক্যাথলিক ধর্মযাজকদেরকে অধিক হারে নিয়োগ প্রদান করেন। চার্চে ব্যাপক হারে অনুদান প্রদান এবং সাম্রাজ্যজুড়ে নতুন নতুন ডায়োসিস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে হেনরি তাঁর শাসনের ভিতকে মজবুত করেন ধর্মীয় ক্ষেত্রেও তাঁর নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করেন।

দ্বিতীয় হেনরি চার্চের সেবায় এবং মনাস্টেরির সংস্কারে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি চার্চের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। বালক বয়সে তিনি অনেকসময় চার্চে ঘুরে বেড়াতেন। ছোটবেলায় তিনি হিল্ডশেইম ক্যাথেড্রাল স্কুলে পড়ালেখা শিখেছিলেন। তিনি গভীরভাবে খ্রিষ্টধর্মের প্রতি নিবেদিত ছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত ধর্মভীরু চরিত্র এবং খ্রিষ্টধর্মের প্রতি তাঁর গভীর অবদানের কারণে মৃত্যুর পরবর্তীতে একসময় তিনি ‘সেইন্ট’ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছিলেন। ১১৪৬ সালে পোপ তৃতীয় ইউজিন দ্বিতীয় হেনরিকে একজন খ্রিষ্টান ‘সেইন্ট’ হিসেবে ‘ক্যানোনাইজড’ করেন অর্থাৎ সেইন্টের মাহাত্ম্য দান করেন।

জার্মান শাসকদের একমাত্র দ্বিতীয় হেনরিই ‘সেইন্ট’ এর মর্যাদা লাভ করেছিলেন। দ্বিতীয় হেনরির কোন সন্তান না থাকায় ১০২৪ সালে তাঁর মৃত্যুর পর জার্মান অভিজাতরা মিলে দ্বিতীয় কনরাডকে তাঁর উত্তরাধিকারী নির্বাচিত করেন। দ্বিতীয় কনরাড ছিলেন সম্রাট প্রথম অটোর প্র-প্রপৌত্র। দ্বিতীয় কনরাড জার্মানিতে নতুন একটি রাজবংশের গোড়াপত্তন করেছিলেন। এই রাজবংশের নাম স্যালিয়ান রাজবংশ। দ্বিতীয় কনরাড ছিলেন এই রাজবংশের প্রথম সম্রাট।

লেখক: আসিফ আযহার
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, শাবিপ্রবি
ই-মেইল: [email protected]
ওয়েবসাইট: http://www.asifajhar.wordpress.com
ফেসবুক: Asif Ajhar, যোগাযোগ: 01785 066 880

বি.দ্র: রকমারিসহ বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটে লেখকের সবগুলো বই পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে লেখকের নামে সার্চ দিলেই যথেষ্ট।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:২৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×