somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছাত্রলীগ আলাদাভাবে নারী বিদ্বেষী ছিল না

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছাত্রলীগের ইতিহাসে অপরাধের এক কালো অধ্যায় রয়েছে, যা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িয়েছে, নির্মমভাবে মানুষের জীবন নিয়েছে। এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। তবে এটাও ঠিক যে, ছাত্রলীগের বাইরের কিছু গোষ্ঠী বা ব্যক্তি কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের অপকর্মকেও ছাড়িয়ে গেছে। এই সত্য স্বীকার করা মানে ছাত্রলীগের পাপকে কমিয়ে দেখা নয়, বরং বাস্তবতাকে স্বচ্ছভাবে মূল্যায়ন করা।

ছাত্রলীগের অপকর্মের তালিকা দীর্ঘ। তারা দেশের টাকা লুটপাট করেছে, তারা বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে, তাদের অস্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যারা তাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে—তারা যে দলেরই হোক বা যে মতাদর্শেরই হোক—ছাত্রলীগ তাদের নির্মমভাবে দমন করেছে। তাদের কাছে রাজনীতি ছিল ক্ষমতার খেলা, আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার। এই ক্ষমতার দম্ভে তারা যেকোনো বাধাকে নিশ্চিহ্ন করতে উদ্যত ছিল।

তবে একটি বিষয় পরিষ্কার করা দরকার—ছাত্রলীগ আলাদাভাবে নারী বিদ্বেষী ছিল না। তাদের বিদ্বেষ ছিল তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা যেকোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতি, সে নারী হোক বা পুরুষ। যারা তাদের বিরোধিতা করত, তাদের প্রতিই তারা বিষোদগার করত, আক্রমণ চালাত, এমনকি হত্যা পর্যন্ত করত। তাদের এই নৃশংসতা কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণি বা লিঙ্গের প্রতি সীমাবদ্ধ ছিল না। তাদের কাছে বিরোধিতা করাই ছিল সবচেয়ে বড় অপরাধ, এবং তারা সেই বিরোধিতার জবাব দিত নির্মমতার সাথে। এই বাস্তবতা স্বীকার করলেও বলতে হয়, নারী বা কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর প্রতি আলাদাভাবে বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য তাদের সময় বা পরিকল্পনা ছিল না। তাদের লক্ষ্য ছিল শুধু ক্ষমতা ধরে রাখা এবং বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করা।

কিন্তু এখানে আরেকটি গোষ্ঠীর কথা উঠে আসে, যারা ছাত্রলীগের এই অপকর্মের সমালোচনা করলেও নিজেরা আরও ভয়ঙ্কর বিদ্বেষের পথে হেঁটেছে। আপনারা, যারা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কথা বলেন, আপনাদের মধ্যে বিদ্বেষের মাত্রা কখনো কখনো ছাত্রলীগকেও ছাড়িয়ে যায়। আপনারা ভিন্নমতের কাউকে সহ্য করতে পারেন না। ছাত্রলীগ তাদের বিরোধীদের একটি নির্দিষ্ট ট্যাগে—যেমন ‘শিবির’—আটকে রাখত। কিন্তু আপনারা? আপনারা বিরোধীদের শ্রেণিবদ্ধ করেন ‘শাহবাগী’, ‘লীগের দোসর’, ‘নাস্তিক’, ‘র’ এজেন্ট’—এমন বহু ট্যাগ দিয়ে। এই ট্যাগিংয়ের মাধ্যমে আপনারা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে একটি বিষাক্ত পরিবেশ তৈরি করেন, যা ছাত্রলীগের নৃশংসতাকেও অনেক ক্ষেত্রে ছাড়িয়ে যায়।

বাস্তবতা হলো, আপনারা বুদ্ধিভিত্তিক শয়তানিতে ছাত্রলীগের থেকে অনেক এগিয়ে। আব্দুল কাদের যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা ভুল নয়। তার বক্তব্যকে ছাত্রলীগের পাপ লঘু করার প্রচেষ্টা হিসেবে প্রচার করা যায় না। বরং তার বক্তব্যকে ভুল বলে প্রচার করার অর্থ হলো শিবিরের নারী বিদ্বেষের মতো ঘৃণ্য মনোভাবকে লঘু করে দেখানো। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আব্দুল কাদেরের কথা ছিল সত্যের প্রতি একটি সৎ দৃষ্টিভঙ্গি, যা বাস্তবতাকে উন্মোচন করে, কিন্তু তা ছাত্রলীগের অপরাধকে মাফ করে না। বরং এটি আমাদের সবাইকে নিজেদের বিদ্বেষের প্রকৃতি নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৩
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×