আমার উড়ান ছাড়বে ভোর সাড়ে পাঁচটায়।
তিনটের সময় বাসা থেকে রেরুবো।
আমার বাবা-মা কেউ আজ সারা রাত ঘুমোবেন না। বাবা সারাটাক্ষণ টিভির সামনে বসে থাকবেন, ভাব করবেন যেন কিচ্ছু হয়নি। মা শুকনো মুখে আমার আশে পাশে ঘুরবেন, আমাদের একটু ঘুমিয়ে নেবার উপদেশ অগ্রাহ্য করেই।
আমি চলে যাবার পরেও অনেকক্ষণ, অনেকদিন ওঁরা রাতে চমকে চমকে উঠবেন। দুপুরের রান্না করার সময় মা'র মনে পড়বে আমি নেই। কাজ থেকে ফিরে এসে আমার রুমে নক করতে গিয়ে বাবার মনে পড়বে নক করার আর প্রয়োজন নেই।
বিকেলে বন্ধুদের সাথে সময় কাটাই। একসাথে আন্ডারগ্রাউন্ড রক কনসার্টে যাই। বিদায় বেলা ওদের চোখ চিকচিক করে ওঠে। বুকে টেনে নিয়ে বলে, "পৌঁছে ইমেইল করিস।" আমি হাসি।
বাসায় এসে দেখি অনেকেই এসেছে। খালারা বেদনার্ত চোখে দেখে আমাকে দেখে, "কানাডাতে একেবারে থেকে যাবি না তো?" আমি হাসি।
চাচা মাথায় হাত রাখেন, "দেখি, তোকে একটু আদর করে দেই।" আমি হাসি।
খালু সেই কখন এসে চেয়ারে ঠায় বসে আছেন। আমার সাথে এয়ারপোর্টে যাবেন। আমার সাথে কোনো হয়রানি যেন না হয় তা নিশ্চিত করতে। নানু চলে এসেছেন সেই গতকাল। বৃদ্ধা মানুষ। তাঁরও ঘুম হয়না। আগোছালো পায়ে ঘুরে বেড়ান এই ঘর সেই ঘর।
সারাদিন ফোনে কেটেছে অনেক সময়। মামী, ফুপু আর বন্ধুরা যারা আসতে পারেনি। সবার সাথেই গতবাঁধা আলাপ, আর আমার হাসি।
হাসি মুখেই স্যুটকেস সাজাই।
জানি অন্য সব বারের মতো সাবলিল ভাবেই বাড়ি ছাড়বো। এয়ারপোর্টে যখন মা আর চোখের পানি সামলাতে পারবেন না তখনো আমার মুখ থাকবে হাসি হাসি। বাবা যখন ধরা গলায় বলবেন, "টেক কেয়ার!" তখনো।
কিন্তু উড়ানে নিজের সিটে বসার পর, এসব কিছু আমাকে তিলে তিলে মারবে। আমার মুখের আর হাসির ছিটেফোঁটাও থাকবে না। বারে বারে তেষ্টা পারে। আমি জানালা দিয়ে যেন আর কোনোদিন দেখতে পাব না এই ভাবে বাংলাদেশ দেখবো। আমার চোখ জ্বালা করবে। কাঁদতে পারি না বলে নিজের উপর নিজেরই রাগ উঠবে। আমি দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে নিজেই বোঝাবো, "সাত বছর যখন পেরেছি... আর তো মোটে কয়টা দিন... অল্প কয়টা দিন!"
© অমিত আহমেদ
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ১:৫৫