মুহম্মদ জাফর ইকবালকে নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলবেন। কেউ তাঁর লেখার কথা বলবেন। কেউ বলবেন পেশার কথা। কেউ পারিবারিক, কেউ প্রাতিষ্ঠানিক, কেউ আবার তাঁর নেয়া উদ্যোগগুলোর কথা বলবেন। কেউ তাঁকে স্বর্গ উচ্চতায় উঠিয়ে রাখবেন। কেউ তাঁকে নিয়ে কথা বলার মতো মানুষ বলেই মনে করবেন না। তাঁকে নিয়ে সমালোচনা প্রশংসা সব চলবে। কারণ সমকালীন বাংলাদেশে তিনি সবচেয়ে চেনা মানুষদের একজন। বাংলাদেশের মানুষ তাঁর নাম জানে। চেহারা চেনে। কোনো মানুষ এত উপরে উঠে গেলে বিতর্ক এড়াতে পারে না; তাঁকে প্রতি পদে মানুষের ভালোবাসা আর সমালোচনা নিয়ে চলতে হয়।
অস্বীকার করার উপায় নেই; মুহম্মদ জাফর ইকবাল আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে আছেন। শৈশবে "দিপু নাম্বার টু", "হাত কাটা রবিন", "আমার বন্ধু রাশেদ" পড়ে আপ্লুত হয়েছি। এই বইগুলো আমার ছেলেবেলা রঙিন করেছে। কৈশোরে তাঁর সায়েন্স ফিকশন গল্পগুলো, বিশেষ করে "কপোট্রনিক সুখ দুঃখ" বই পড়ে বিস্ময়ে বাকহারা হয়েছি। হতাশ হয়েছি তাঁর উপন্যাসগুলোর দুর্বল বুনোনে। সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে তাঁর কলাম পড়তে ভালো লাগে; ভালো লাগে কলাম জুড়ে তাঁর মুক্তচিন্তা বিচ্ছুরণ। পাঠকদের প্রতি তাঁর সম্মানবোধ। আবার হতাশ হই যখন দেখি এতো জ্ঞানী একজন মানুষের গবেষণায় যেমন সময় দেবার কথা ছিলো তেমন তিনি দিচ্ছেন না। মাথা ঘামাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিতে। তাঁর এসব ব্যক্তিগত ব্যাপারে আমি খুশি কিংবা হতাশ হই, কারণ যেভাবেই হোক তিনি আমাদের কাছের মানুষ হয়ে গেছেন।
একজন মানুষ যখন এভাবে অন্যের জীবনে ঢুকে পড়েন তখন তাঁর মধ্যে যে ক্ষমতাটা জন্মায় সেটা ব্যবহার করে অনেক কিছুই করে ফেলা যায়। একটা ছোট্ট লেখা কথা কিংবা সাক্ষাতকারও আর ছোট থাকেনা। তাই জনপ্রিয় মানুষদের কাছে আমাদের অনেক চাওয়া পাওয়া জমে থাকে। আমাকে যদি এখন জিজ্ঞেস করা হয় আমি বলবো, মুহম্মদ জাফর ইকবালের কাছে আমার সেই চাওয়া পূর্ণ হয়েছে!
বইটা আমি পড়েছি। ছোট্ট বই। খুব সহজ ভাষায় লেখা। মোটেই বিস্তারিত নয়। নতুন প্রজন্মের জন্য এমনই দরকার। তথ্য যা আছে তাও মোটামুটি আগে থেকে জানা। বেশি তথ্য দিয়ে বই ভারী করা হয়নি, একদম যা জানা খুব দরকার, তাই। তবুও বইটা পড়তে গিয়ে আমি বারে বারে শিউরে উঠেছি। আমার গায়ের রোম দাঁড়িয়ে গেছে। আমার মনে হয়েছে এই বই নতুন প্রজন্মের পড়া উচিত। অবশ্যই পড়া উচিত!
জানলাম এই বইয়ের পেছনের মানুষগুলোর ইচ্ছে বইটা যতো বেশি মানুষের হাতে পারা যায় পৌঁছে দেয়া। মুনাফার আশা কারোরই ছিলো না। বইমেলায় তাই দাম খুব কম রাখা হয়েছিলো। বইমেলার পরেও বইটা উঠিয়ে না রেখে অন্তর্জালে তুলে দেয়া হয়েছে। আমি অনুরোধ করবো বইটা দয়া করে যেখানে যেভাবে পারেন ছড়িয়ে দিন। ফেসবুকে, ব্লগে, আপনার অন্তর্জাল পাতায়, ইমেইলে, প্রিন্ট নিয়ে, যেভাবে সম্ভব হয় সেভাবেই। তাঁর কাজ তিনি করেছেন, এবার বাকিটা আমাদের উপরে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনেক বড় শক্তি।
নতুন প্রজন্মকে সেই শক্তির স্বাদ নিতে দিন!
© অমিত আহমেদ
সরাসরি ডাউনলোড লিংক
বড় আকারে
ছোট আকারে
বই এর ওয়েবসাইট
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ১২:২১