somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শীরচ্ছেদ এবং নানা বিপরীত ভাবনা

১২ ই অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৩:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সম্প্রতি সৌদিআরবে ৮ বাংলাদেশীকে প্রকাশ্যে শীরচ্ছেদ করা হয়েছে এবং এই ঘটনা আমাদের দেশের নাগরিকদের মনে নানভাবে চাঞ্চল্য স্মৃষ্টি করেছে। বিভীন্ন ব্লগে পত্রপত্রিকায় এর পক্ষে বিপক্ষে নানা মন্তব্য, কলাম সবাইকে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছে। শাস্তি প্রাপ্ত দের পরিবারের জন্য সবার গভীর সমবেদনা রয়েছে। পরিবারের স্বার্থে এই মানুষগুলো প্রবাসে গিয়েছিলেন, সন্তানাদি পরিজনদের জন্য রোজগার করে দেশে অর্থ পাঠিয়েছেন, তাদের এই অপ্রত্যাশিত ভাবে শাস্তির কবলে পড়ে হত হওয়ায় সব থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এই পরিবারগুলো। এই খবর এবং তার প্রতিক্রিয়া পর্যালোচনা করলে নানা ভাবনায় মন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। প্রথমে দেখি এতে প্রতিক্রিয়া কি হয়েছে-

১। প্রকাশ্যে শীরচ্ছেদ করার মাধ্যমে মানবতার প্রতি চরম অন্যায় করা হয়েছে

২। সঠিক বিচার বা ন্যায় বিচার হয়েছে কিনা এ ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে

৩। একজন কে হত্যার কারনে ৮ জনকেই একই শাস্তি দেয়ার যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ

৪। বাংলাদেশ সরকার তাদের বাচানোর ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি

৫। ঘটনাটি ঘটার আগে পত্রপত্রিকায় এ ব্যাপারে কোন খবর দেখা যায়নি যাতে মানবাধিকার সংগঠনগুলো কোন ভুমিকা রাখতে পারত

৬। মানবাধিকার সংগঠনগুলো যথেষ্ট চেষ্টা করেনি

৭। কতিপয় বাংলাদেশী বিদেশে ডাকাতি করতে গিয়ে একজন নিরাপত্তারক্ষীকে হত্যা করায় দেশের ভাবমুর্তী ক্ষুন্ন হয়েছে

৮। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ তথা বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে এ ঘটনার ফলে নেতিবাচক প্রভাব করবে, এবং পাকিস্তান বা মরক্কোর শ্রমিকদের মত বাংলাদেশের শ্রমিকরাও সামগ্রিক ভাবে অপরাধপ্রবন বলে গন্য হবেন

৯। এ ব্যাপারে সরকার খুব একটা উচ্চবাচ্য করেনি কারন তাতে সৌদিআরবে ভবিষয়তে মানবসম্পদ রপ্তানিতে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে এবং সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন

১০। সৌদিআরবের লোকেরা অত্যন্ত বর্বর এবং মধ্যযুগীয় ধ্যানধারণা থেকে এখনো বেরুতে পারেনি

১১। ইসলামিক বিচার ব্যবস্থাটাই বর্বর

১২। হত্যা এবং ডাকাতির জন্য যাদের সাজা হয়েছে তা সঠিক হয়েছে এবং ইসলামিক আইনে বিচার হয়েছে যা প্রয়োজন ছিলো

১৩। জাতিসংঘ এ ব্যাপারে যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা রাখেনি

১৪। সৌদিআরবে বাংলাদেশ দূতাবাস যথেষ্ট আন্তরিক ছিলোনা এ ব্যাপারে

১৫। প্রানের মুল্য পরিশোধের মাধ্যমে অপরাধীদের বাচানোর সুযোগ থাকলেও তার ব্যবস্থা করা হয়নি বা সুযোগ দেয়া হয়নি

এই প্রতিক্রিয়াগুলো পর্যালোচনা করলে নানা পরষ্পর বিরোধী ভাবনা বেশ গোলমালে ফেলে দেয়। আসলে কি সঠিক হয়েছে কি হয়নি তা নিয়ে দন্দে পড়ে যাই। যেমন দেখুন-

ক) এই ব্যাক্তিরা বিদেশের মাটিতে কাজ করতে গিয়ে ডাকাতি এবং একজন কে হত্যায় লিপ্ত হয়েছেন, অতএব তারা অপরাধী। আবার তারা সবাই যে হত্যায় লিপ্ত ছিলেন তা বলা যাচ্ছেনা অতএব সবাই হত্যার অপরাধে দোষী নন।

খ) ইসলামিক ও সৌদিআরবের আইনে তাদের সঠিক বিচার হয়েছে। আবার দেখুন প্রকাশ্যে এতগুলো লোককে শীরচ্ছেদ করে হত্যা করা মানবতাবিরোধী।

গ) তাদের শাস্তি হোক এতে আপত্তি নেই কিন্তু শীরচ্ছেদের বীভৎসতা অত্যন্ত পীড়াদায়ক, এমন শাস্তি কাম্য নয়।

ঙ) বাংগলাদেশ সরকার যথাযথ ভুমিকা রাখেনি তাদের শাস্তি মৌকুফ বা প্রানেরমুল্য দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনায়। আবার সরকার ভাষ্য বলছে চেষ্টা করেও রক্ষা করা যায়নি যেহেতু সৌদিআরব ইসলামিক আইন মোতাবেক চলে।

চ) দোষীরা যে আইনী সহায়তা পেয়েছেন তা সঠিক ছিলোনা এবং তাদের সাথে ন্যায়বিচার হয়েছে কিনা তা প্রশ্নস্বাপেক্ষ। আবার সৌদি সরকার বলেছে ন্যায়বিচার হয়েছে।

ছ) কারো মতে এ যুগে এ ধরনের মধ্যযুগীয় বিচার ব্যবস্থা অত্যন্ত বর্বর এবং মানবতা বিরোধী। আবার কারো মতে এ ধরনের উদাহরন থাকলে সমাজে অপরাধ কমে যাবে।

জ) কেউ বলছেন তাঁদের এভাবে শীরচ্ছেদ করা মানবতাকে চরমভাবে অপমান করা হয়েছে, আবার কারো অভিমত ঐ বাংলাদেশীরা ডাকাতী এবং একজন মানুষকে হত্যা করে চরম মানবতা বিরোধী কাজ করেছেন।

ঝ) সবাই মোটামুটি এ ব্যপারে একমত যে এ ধরনের ঘটনা ঘটা এবং এর প্রতিবাদে উচ্চ্যবাচ্য করা কোনটার মাধ্যমেই বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে নেতিবাচক প্রভাব এড়ানো সম্ভব নয়।

কি বৈপরিত্ত আমাদের চিন্তা ও চেতনার মাঝে। আসলে জগতে সকল ক্রিয়া কর্মেরই দুই ধরনের ফল থাকে, কারো পক্ষে যায় কারো বিপক্ষে। এ কথা বলা যায় যে ঐ ৮ বাংলাদেশী যদি সেখানে ডাকাতি এবম্নগ হত্যা করে থাকেন তবে তারা অত্যন্ত অন্যায় করেছিলেন এবং তাঁদের শাস্তি প্রাপ্য ছিলো। তবে এই বীভৎস কায়দায় শাস্তিপ্রদান কোনভাবেই কাম্য নয়। আর যদি তারা এইরূপ অন্যায় না করে থাকেন এবং তাঁদের যদি সঠিক আত্মপক্ষ সমর্থন কিংবা আইনি সহায়তা না করা হয়ে অথবা যদি একতরফা বিচারে কোন সৌদী নাগরিক কে বাচাতে তাঁদের কে হত্যা করা হয়ে থাকে তবে তা মানবতার সাথে চরম অন্যায় এবং ঘৃন্য কাজ। আবার সরকার ও মানবাধিকার সংস্থারাও বলছেন তারা চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু সুবিধা করতে পারেন নি। তবে তারা যাই বলুন এর দায় কোনভাবেই তারা এড়াতে পারবেন না। রাষ্ট্র তার সকল নাগরিক কে সমান সুবিধা দেবে এবং নাগরিকের সাথে যেন ন্যায়বিচার হয় তা নিশ্চিত করবে এটাই সকল নাগরিকের কাম্য, এক্ষেত্রে মনে হয়না তা হয়েছে। রাষ্ট্রের পরষ্পর সম্পর্ক রক্ষা ও কূটনৈতিক দক্ষতাতে বাংলাদেশের এটি একটি চরম ব্যার্থতা এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

আমাদের দেশের কটি মানুষ বিদেশে গিয়েছেন, সেখানে রোজগার করেন এখানে পরিবার চলে। তারা অনেক কষ্টে সেখানে থাকেন, আধপেটা খেয়ে থাকেন এই পরিবারের জন্য। তাঁদের জন্য স্বদেশে পরিবারের, পরিজনের মন পোড়ে। তাদেরো নিশ্চয় একি রকম মনে হয়। তাই প্রবাসীরা আশা করবো যাবতীয় অন্যায় হতে দূরে থাকবেন যেন তাতে দেশে থাকা তাঁদের নিকটজনরা হঠাত করে অন্ধকারে নিমজ্জিত না হন বা তাঁদের সন্তানেরা পিতৃহারা বা মাতৃহারা না হন
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×