somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাদের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন আমার পিতা???

১০ ই নভেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার পিতা মেজর (অবঃ) ওয়াকিউজ্জামান একজন মুক্তিযোদ্ধা, ১৯৭১ এ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন সেকেন্ড লেফট্যানান্ট হিসেবে ৪ নং সাব সেক্টরে কমান্ড করেছেন। যুদ্ধের পর সেনাবাহিনী পুনর্গঠনে কাজ করেছেন। পরবর্তিতে ১৯৮১ সালা জেনারেল জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ড হবার পর সৈয়দপুর ক্যন্টনম্যান্ট এ কর্মরত অবস্থায় জেনারেল এরশাদ সাহেবের রোষানলে পড়ে চাকুরী ছেড়ে প্রান বাচিয়ে সেনানিবাস থেকে আমাদের নিয়ে বেরিয়ে আসেন। প্রচন্ড অভীমানে জীবনে আর আর্মির পেনশন নেননি বা নেবার চেষ্টা করেন নি। অনেকবার আমরা বা তার সমসাময়িক অফিসাররা অনুরোধ করলেও তিনি পেনশন নিতে রাজি হননি। এরশাদ সাহেবের শেষ দিকে তাকে ডিওএইচএস এর একটি প্লট নেবের প্রস্তাব দিলেও তা প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তি জীবনে নানা চাকুরী করে একসময় নিজে একটি ছোটখাট ব্যবসা খুলেন, যেখানে আমি নিজের স্বল্পমেয়াদি সামরিক জীবন ছেড়ে এসে কাজ করছি। আর আমার বাবা মেজর ওয়াকি চলে গেলেন সুদুর আমেরিকায়। সেখানে ছোটখাট চাকুরী করে কাটিয়ে দিলেন দীর্ঘ ৯ বছর। তার পিছনে অবশ্য আরেকটা কারন ছিলো আমার মায়ের ক্যন্সারের চিকিৎসা। আলহামদুলিল্লাহ আমার মা এখন সুস্থতার পথে।

এ বছর আমার বাবা দেশে এসে থাকছেন প্রায় ১০ মাস। এসময়ে তার সেক্টরে যুদ্ধ করা সকল মুক্তিযোদ্ধাদের যখনি প্রয়োজন হয়েছে সাহাজ্য করেছেন, তাঁদের সার্টিফিকেটের জন্য সুপারিশ লিখেছেন বা বয়স্ক মুক্তিযোদ্ধাদের তাঁদের বাড়ীতে গিয়ে দেখে এসেছেন। হঠাত একদিন বললেন আমি যে মুক্তিযুদ্ধ করেছি তার কোন সার্টিফিকেট আমার কাছে নেই তাই আর্মি হেডকোয়ার্টারে লিখেছি যেন আর্মি থেকে একটা সার্টিফিকেট দেয়া হয়। যদিও মুক্তিযুদ্ধের গেজেট ও দলীলপত্রে তার নাম লিখা আছে কিন্তু তার কাছে কোন কাগজপত্র নেই। তার কাছে শুধু আছে বিভীন্ন পত্রপত্রিকায় ১ম ওয়ার কোর্সের কিছু পেপার কাটিং আর বিভীন্ন বই এ ছাপা হওয়া কিছু যুদ্ধের বীবরন। ঈদের কদিন আগে আর্মি হেডকোয়ার্টার হতে জানানো হলো তার সার্টিফিকেট তৈরী আছে এবং তিনি তা সংগ্রহ করতে পারেন। বাবা বেশ খুশী হয়ে গতকাল ১০ নভেম্বর ঢাকা গেলেন সার্টিফিকেট আনতে। আজ সকালে যখন কথা হলো বললেন সার্টিফিকেট পেয়ে তা যে অফিসার দিয়েছেন আর্মি হেডকোয়ার্টারে সে অফিসারের সামনে ছিড়ে ফেলে দিয়ে এসেছি। কারন জিজ্ঞেস করলে বললেন আমার ঠিকানা, বাবার নাম দেবার পরও তা ভুল লিখেছে আর একটা সাদা কাগজে সার্টিফিকেট দিয়েছে। আরো বললেন আমি আমার অধীনে যারা যুদ্ধ করেছে তাঁদের এর থেকে অনেক ভালো সার্টিফিকেট দিয়েছি, আর্মি থেকে কিছু নেইনি আর নেবোও না। হয়তো একজন মুক্তিযোদ্ধা অফিসার থেকে সেনাবাহিনীর একটি প্যাড এর পাতার দাম অনেক বেশি।

আমি জানি আমার বাবার মন খুব খারাপ হয়েছে। একজন খুব শান্ত মানুষ যিনি দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন যার বিনিময়ে কোনদিন কোন সুযোগ সুবিধা নেননি তিনি চেয়ে যদি একটি সার্টিফিকেট না পান তাহলে কাদের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন? নিজের আপন সেনাবাহিনী যদি তাকে একটা সার্টিফিকেট দিতে এত তাচ্ছিল্য করে তাহলে আর কোথায় যাবেন তিনি? অনেক আগে একবার যখন মুক্তিযোদ্ধাদের নাম নিবন্ধন হচ্ছিলো তখন তিনি দেশে না থাকায় আমি গিয়েছিলাম আর্মড সার্ভীসে বোর্ডে, সেখানকার এক করণিক যিনি ফর্ম দিচ্ছিলেন, তিনি বলেছিলেন স্যারের নাম নিবন্ধন করতে লাগবেনা, উনার নাম না থাকলে দেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়নাই। আমারো আজ মনে হচ্ছে কাদের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন আমার পিতা?
-------------------------------------------
যা হোক শেষ পর্যন্ত আর্মি হেড কোয়ার্টার থেকে একজন অতি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এসে আমার পিতার সাথে দেখা করে দুঃক্ষ প্রকাশ করেন। যার ফলে আমি এই লিঙ্ক টি দেখার অনুরোধ করছি। Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১১ ভোর ৪:০৯
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×