ছোটবেলার গল্পগুলো ছিল অসাধারণ। প্রতি রাতে মনে হয় কেমন ছিল আমার ছোটবেলা? যা চেয়েছিলাম তা কি পেয়েছিলাম? মনে হয় বেশীরভাগই পাইনি। আবার আরেকবার মনে হয় যা পেয়েছিলাম তাই বা খারাপ কি, অনেকে তো তাও পায়নি।
গল্পের বই পড়তে ভালো লাগতো। স্কুলে যেতে বাসা থেকে প্রতিদিন ৬ টাকা রিকশা ভাড়া বাবদ দেয়া হত। কোনদিন যেতাম আসতাম পায়ে হেঁটে। ৬ টাকাই সঞ্চয় হত। আবার কোনদিন যেতাম রিকশায় কিন্তু আসতাম পায়ে হেঁটে। সেদিন সঞ্চয় হত ৩ টাকা। এভাবে জমানো টাকা ৫০ পার হলেই যেতাম রংপুরের টাউন স্টোরসএ। একটা ফেলুদার বই কিনতাম , ১/২ দিনে পরে শেষ করে আবার টাকা জমানো শুরু করতাম।
মনে মনে একটা দুঃখ ছিল। আমাদের বাড়িটা কেন গনেশপুরে হল? কি সমস্যা ছিল বাড়িটা যদি স্কুল থেকে অনেক দূরে হত? তাহলে রিকশা ভাড়া বাবদ অনেকগুলো টাকা প্রতিদিন পাওয়া যেত। আর ওই টাকা জমিয়ে আরও তাড়াতাড়ি ফেলুদার কিছু বই কেনা যেত।
ফেলুদার বই গুলো আজও আছে। আমার খুব কাছাকাছিই থাকে। জমানো টাকায় কেনা বইগুলো এখন আর পড়া হয় না। বইগুলো শুধু ছোটবেলার কথা মনে করিয়ে দেয়। প্রতি রাতে আমি ছোট্ট অয়ন হয়ে যাই। রংপুরের রাস্তায় হেঁটে বেড়াই। স্কুলে দেরি হয়ে যাওয়ার ভয়ে মাঝে মাঝে দৌড়াই। এক টাকা, দু টাকা গুলো হিসেব করি। ছোট ভাইকে হেঁটে স্কুলে যাতায়াতের সুবিধাগুলো বলি। প্রতিদিন অপেক্ষা করি রাতের জন্য। রাত হলেই যে আমি আমার শৈশব ফিরে পাই।