somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হ্যাইনজা অইলে কারেন থাকে না, পোলা-পাইন লেখা পড়া করে ক্যামনে ?

২৬ শে মার্চ, ২০১২ সকাল ৯:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

1. লোডশেডিং সন্ধ্যায় না দিয়া দিনের বেলা দেওন যায় না?
2. বার বার বন্ধ না কইরা একটানা ৩/৪ ঘন্টা বন্ধ রাইখা একটানা চালু রাখতে পারেন না ।
3. কারেনের প্রতি বারিতে ২ ইউনিট উইট্ট্যা যায় ।(প্রতিবার আসা যাওয়া করা)
4. কারেন থাহে না, বিল তো কম আহে না।
5. গরমের মদ্দে যে বিল আইত, শীতের মদ্দে ও একই বিল আহে।

বিদ্যুৎ বিভাগে চাকুরী করার সুবাদে হাজারো মানুষের হাজারো অভিযোগ শুনতে হয়। বলতে পারেন শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এক সময় মানুষকে বুঝানোর চেষ্টা করতাম, কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে ধৈয্যের বাধ ততই কমছে। কখনো কখনো দীর্ঘ সময় নিয়ে বুঝিয়েছি, কিন্তু যে লাউ সেই কদু অর্থাৎ আপনার সব কথা বুঝেছি, কিন্তু সন্ধ্যায় যেন লোডশেডিং না হয়।মানুষকে আর বুঝানোর ব্যর্থ চেষ্ট করি না। লোকজনকে পাশ কাটিয়ে চলার চেষ্ট করি যাতে এই লোডশেডিং বিরম্বনায় পড়তে না হয়।

তবে সবাই যে ব্যাপারটা বুঝে না তা কিন্তু নয়, এখনো গ্রামের অনেক মানুষ জানে কেন লোডশেডিং হয়, কেনই বা বার বার বিদ্যুৎ আসা যাওয়া করে করে। কেন লোডশেডিং সন্ধ্যের সময় বেশি হয়। বিদ্যুৎ বিভাগে চাকুরী করা সত্বেও এসব প্রশ্নের উত্তর আমার থেকে অনেকেই হয়তো আর ও ভালো জানেন। তারপর ও যারা আর একটু ভালো ভাবে জানতে চান তাদের জন্য:

লোডশেডিং এর মূল কারন:

লোডশেডিং এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে লোড নিয়ন্ত্রন করা। অর্থাৎ সারদেশে মোট উৎপাদিত বিদ্যুৎ সুষম হারে বন্টন করা। ছোটবেলার গ.সা.গু অংক কষার মত।
১৫৬ টি আম, ২২১ টি লিচু ও ৩৯০ টি জাম কতজন বালকের মাঝে সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া যাবে? গ.সা.গু করে আমরা সহজেই এই উত্তর বের করে ফেলতে পারি।
ঠিক এমনি করে বিদ্যুৎ ও সারদেশে আনুপাতিক হারে বিতরন করার বিষয়টি জানলে লোডশেডিং কি সেটা জানতে পারব।

ধরুন, কোন এক বিয়ের অনুষ্ঠানে ৫০০ লোক নিমন্ত্রন করা হলো। আর অনুষ্ঠানে একসাথে সর্বোচ্চ ২৫০ লোক খাওয়া দাওয়া করতে পারবেন । এই অবস্থায় যদি এমন হয় যে, সবাই ঠিক বিকেল ৩.০০ টার সময় একসাথে উপস্থিত হল, তবে কি একসাথে ৫০০ জন লোককে খাওয়া দাওয়া করানো সম্ভব হবে? অবশ্যই নয়। কি করতে হবে? নিশ্চিতভাবে প্রথমে ২৫০ জন খাবে, আর বাকি ২৫০ জন অপেক্ষা করবে যতক্ষন না পর্যন্ত খাওয়া শেষ হয়। প্রথম ২৫০ জন খাওয়া শেষ করলে বাকি ২৫০ জন শুরু করবে।

বিদ্যুৎ এর বিষয়টা হুবুহু একই। একসাথে সবাইকে বিদ্যুৎ খাওয়ানো (সরবরাহ) করা সম্ভব নয়। এভাবে এক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলে অন্য এক এলাকা বন্ধ রাখতে হয়। ( যেহেতু একসাথে সবাইকে খাওয়ানো সম্ভব নয়)
আর এইভাবে বিদ্যুৎ সরাবরাহ বন্ধ রাখাই হল লোডশেডিং।

কতিপয় সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর:

1. সন্ধ্যেয় লোডশেডিং না দিয়ে দিনের বেলা দেওয়া যায় না?/ সন্ধ্যেয় কেন লোডশেডিং হয়?

সন্ধ্যেয় লোডশেডিং করার কারন হল, এই সময় সারদেশে সব মানুষ একসাথে তাদের লাইট, ফ্যান চালু করে, একই সময় সারাদেশের সব মার্কেট, রাস্তার বাতি ও চালু করা হয়। যার কারনে সন্ধ্যেয় চাহিদা দিনের তুলনায় প্রায় দিগুন হয়ে যায়। যদি একই সাথে সবাইকে বিদ্যুৎ দিতে হয় তাহলে বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে প্রায় ৮ হাজার মেগাওয়াট। সারাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ৪৫০০ বা ৫০০০ মেগাওয়াট।
৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা আপাতত বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এই ৪৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎই সবাইকে ভাগ করে দিতে হবে। অর্থাৎ এক এলাকা চালু রেখে আরেক এলাকা বন্ধ রাখতে হবে।

2. বিদ্যুৎ বার বার কেন আসা যাওয়া করে?

বিদ্যুৎ আসা যাওয়া বিভিন্ন কারন হতে পারে। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কারন তুলে ধরা হল:

ক) বৈদ্যুতিক লাইনে ত্রুটি: বৈদ্যুতিক লাইনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ত্রুটি দেখা দিতে পারে। লক্ষ্য করলে দেখবেন ঝড়-বৃষ্টির সময়ে প্রায়শই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। ঝড়ো বাতাসে বা ঝড়বৃষ্টির সময়ে গাছের ডালপালা একেবারে লাইনের কাছাকাছি চলে আসে। গাছের ডালপালা যখন লাইনের সংস্পর্শে আসে তখন শর্ট সার্কিট হয় এবং সাথে সাথে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, কখনো কখনো বিদ্যুতিক তার ছিড়ে যায়। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট ডালপালা অপসারন এবং তার জোড়া না দেওয়া পর্যন্ত লাইন চালু করা সম্ভব হয় না।

খ) লোড ম্যানেজমেন্ট: লোড ম্যানেজমেন্টের কারনে ও লোডশেডিং এর কবলে পড়তে হতে পারে। ধরুন: পাওয়ার গ্রীড থেকে কোন একটি কেভি সাব-স্টেশন এ

ধরুন একটি ১১ সাবস্টেশন এ ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। কিন্তু পাওয়ার গ্রীড থেকে বলা হলো, ৪ মেগাওয়াট এর বেশি নেওয়া যাবে না। এখন দেখা যাচ্ছে ১১ কেভি সাবস্টেশন এ ২ টি ফিডার( ২টি লাইন) চালু রাখলে লোড হয় ৫ মেগাওয়াট। ৪ মেগাওয়াট এ কন্ট্রোল রাখা যাচ্ছে না। আবার যদি একটি লাইন চালু রাখা হয় তাহলে লোড দাড়াবে ২.৫ মেগাওয়াট। একটি ফিডার চালু রাখলে বন্ধ থাকছে ৩ টি লাইন। একটি লাইন চালু রেখে বাকি তিনটি বন্ধ রাখলে প্রতি তিন ঘন্টা পর পর লোডশেডিং করতে হবে। অর্থাৎ প্রতিটি লাইন এক ঘন্ট বিদ্যুৎ পাবে, তিনঘন্ট বন্ধ থাকবে।

তাই লোডশেডিং যাতে একটু কম করা যায় সেই জন্য দুইটি ফিডার একসাথে চালু রাখা হয় বাকি দুইটি বন্ধ রাখা হয়। দেখা গেল ২ টি লাইন একসাথে দুই ঘন্টা চালু রাখা হল। এবার এই দুইটি লাইন বন্ধ করে বাকি দুটি চালু করতেই লোড দাড়ালো ৫.৫ মেগাওয়াট। অথচ ৪ এর মধ্যে কন্ট্রোল করার কথা ছিল, হয়ে গেছে ৫.৫ মেগাওয়াট। এই মুহূর্তে পাওয়ার গ্রীড থেকে ৩৩ কেভি লাইন বন্ধ করে দেওয়া হল । এখন সাবস্টেশন এ কোন লাইন ই চালু নেই। যাদের লাইন মাত্র চালু করা হলো তাদের লাইন সহ সব বন্ধ করে দিলো পাওয়ার গ্রীড। দেখা গেছে ১০ মিনিট বিদ্যুৎ পাওয়ার পর ৩৩ কেভি বন্ধ করে দেওয়ায় আবার লোডশেডিং এ পড়তে হলো।

বিদ্যুৎ বন্ধ হওয়ার আর ও অনেকগুলি কারন রয়েছে যা পরবর্তীতে আলোচনা করব। আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকলে আমাকে জানাতে পারেন। আমি চেষ্টা করব ............
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×