নব্বইয়ের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ক্যাম্পাসের রিক্সাওয়ালাদের হিংসে হতো খুব। তাঁদের নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগতুম। কি অদ্ভুত উদাসীনতা তাঁদের! কি সাবলীল নিঃস্পৃহতা! পহেলা ফাগুনে পুরো ক্যাম্পাস ফুলে ফুলে ছেয়ে যেতো। কোকিলের মুহুর্মুহু ডাকে কানে তালা লাগার জোগাড়। বুক ধড়ফড় করে উঠত। মধুর ক্যান্টিন, হাকিম চত্বর, লাইব্রেরী, টিএসসি, ডাস...সারা গায়ে ফুল জড়িয়ে বালিকারা কলকল ছলছল... হা হা হি হি। দল বেঁধে ঘুরছে সবাই। ক্যাম্পাসজুড়ে হু হু বাতাস। সরসর সরসর পাতা ঝরার শব্দ। বাতাসে কারো চুল উড়ছে। কারো আঁচল। অমন ঘুরতে ঘুরতেই পরীদের কারো ইচ্ছে হতো রিক্সা করে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াবে। রাস্তার ধার ঘেঁসে রাজপুত্রেরা রিক্সা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
- এই মামা যাবেন?
রাজপুত্রেরা ভর দুপুরে আকাশের তারা গুনছেন। মর্ত্যের কিছুতেই তাঁদের কিছু যায় আসে না। পরীদের পিড়াপিড়িতে বিরক্ত হয়ে তাঁদের উদাস উত্তর
- যাব না!
মনে মনে স্বপ্ন দেখতাম। একদিন আমার একটা রিক্সা হবে। রিক্সা নিয়ে ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে থাকবো। কলকল ছলছল ফুল জড়ানো পরীরা আসবে।
- মামা যাবেন?
আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে উদাস বলবো
- যাব না।
আমরা সিরিয়াস বামপন্থী ছেলেরা আর কদিন পরেই বিপ্লব হবে বলে ওসব হ্যাংলামোতে যেতুম না। কেউ পোস্টার হাতে, কেউ চাঁদার রশিদ হাতে উপোষী শরীরে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ফুল ফুল নরম নরম বসন্ত উৎসব দেখতুম। পাশে দাঁড়ানো, চোখে মুখে বিপ্লবের স্বপ্ন মাখা কমরেড ঘাড়ে হাত রেখে মিনমিন করে বলতো, ‘দেখিস! একদিন আমরাও!’
তারপর আমরা বসন্তের আগুনে পুড়তে পুড়তে, হাঁটতে হাঁটতে জগন্নাথ হলের চিপায় এসে দুপুরে খাবার হিসেবে এক কাপ চা দুজনে ভাগ করে খেতুম।
তেত্রিশ বছর কেটে গেছে। এ পোড়া দেশে বিপ্লব হয়নি। আমার একটা রিক্সা কেনা হয়নি। আর ঢাকয় ফেরা হয়নি আমার।


অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


