রাত আনুমানিক একটা সোয়া একটা হবে। আমি শুয়ে শুয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ পড়ছি। আমি যখন বই পড়ি তখন আশে পাশে যারা থাকে তারা আমাকে কোন ডিষ্ট্রার্ব করেনা। তবে তারা কেউ না করলেও বেশ কিছুক্ষন ধরে মিসকল আসছে আমার মোবাইলে। অপরিচিত নাম্বার। এতে বেশ বিরক্ত বোধ করছি। মোবাইলে তেমন ক্রেডিটও নাই যে ওই নাম্বারে ফোন করে একটু ঝাল মেটাবো।
অনেক্ষন পর আমার মনযোগের মায়রে বাপ কইরা ফোনটা বেজে উঠলো। এবার মিস কল নয়। লম্বা সময় ধরে ফোনটা বাজছে। ধরলাম ফোনটা। অপর প্রান্তে কোন একটি মেয়ে,
- হ্যালো...
- হ্যালো, কাকে চাচ্ছেন।আমি কিছুটা বিরক্ত তবে অপরিচিত কাররই সাথে প্রথম সাক্ষাতেই কোনদিন খারাপ ব্যবহার করিনা। অপর প্রান্তের মেয়েটা একটু চুপ থেকে বলল,
- জ্বি এইটা টুম্বার নাম্বার না?
- জ্বি না। এইটা আমার নাম্বার।
- সরি ভাই ভুল নাম্বারে ডায়াল করেছি কিছু মনে করবেন না। সরি।
ফোনটা কেটে দিলো মেয়েটি। আমি আবার মনোযোগ দেবো পড়াই তখনই আবারো ফোন।
- হ্যালো। অপরপ্রান্ত থেকে আবারো সেই মেয়েটি।
- জ্বি আপনি আবারো রং নাম্বারে ডায়াল করেছেন।
- ওহহো সরি ভাই।
মেয়েটি ফোনটা কেটে দিলো। আমি উঠে এক গ্লাস পানি পান করে আবারো পড়ায় মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করতে থাকলাম। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কেবল মাত্র দুইটি কাঁচা শামুক খেয়েছেন। তার নাকি বেশ লাগছে। আবারো মিস কল। এবার ভাবলাম ফোনটা বন্ধ করে দেয়া উচিৎ। ফোনটা হাতে নিয়ে নাম্বারটা দেখলাম। একটু অবাক হলাম এই ভেবে যে, মিসকলটা এসেছে এই মাত্র যেই মেয়েটির সাথে কথা হল সেই নাম্বার থেকে। বুজতে পারলাম না ঘটনাটা আসলে কি ঘটছে। অতপর কোন ভাবনার অবকাশ নতুন করে সৃষ্টি না করতে ফোনটা বন্ধ করে দিলাম।
দু'দিন পরের ঘটনা। রাত তখন সারে এগারোটা বাজে। আমি বসে কম্পিউটারে গান শুনছি। এমন সময় আমার ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম অপরিচিত নাম্বার। ফোনটা রিসিভ করলাম,
- হ্যালো, কে বলছেন?
- হ্যালো...অপরপ্রান্তে একটি মহিলার গলা। উচ্চারনে বরিশালের টান। টুম্পা আছে?
আমি এবার অবাক হলাম। এই টুম্পা শালিটা কে? রাগ হলো আমার নাম্বারে কেন তাকে চাওয়া হচ্ছে। আমার কি হল জানিনা মুখ ফসকেই বের হয়ে গেল কথাটা,
- জ্বি আছে। ওকে দেয়া যাবেনা, ঘুমাচ্ছে।
- তুমি কে বাবা?
- কেন জানেন না?
- কি জানবো?
- আমি ওর হাজব্যান্ড। বলেই ভাবছি কি বললাম। কিন্তু যা হবার তা হয়ে গেছে। অপর প্রান্তের মহিলা একটু চুপ মেরে গেলেন। তারপর হতাশার সুরে বললেন,
- কি বেয়াদপ মাইয়ারে বাবা। বিয়া করছে তয় মোরেই জানায় নাই।
বলেই মহিলাটা ফোন রেখে দিলো। আমি ভাবনায় পরে গেলাম। কাজটাকি ঠিক হলো?
এরপর কয়দিন পেরিয়ে গেছে জানিনা। একদিন একটি মেয়ে ফোন করেই অভিযোগের সুরে জানতে চাইলো,
- ভাই আপনি যে কাজটা করেছেন তা কি ঠিক হয়েছে?
আমি কিছুই বুঝলাম না কি করেছি। তবে অনুমান করার চেষ্টা করছি। তখনই মেয়েটি আবার বলল,
- আপনি আমার মামিকে বলেছেন আপনি আমার হাজব্যান্ড। জানেন বাসায় আমাকে নিয়ে কি কান্ডটাইনা ঘটেছে।
পরে আমি মেয়েটির কাছে জানলাম সে রোকেয়া হলে থাকে। নিজের ফোন নেই। তাই বান্ধবির নাম্বারটা ব্যবহার করে সে। আমিও বুঝাতে চেষ্টা করলাম কি ভাবে কি হলো। মেয়েটি সব বুঝলো। এরপর আমার সাথে ওর একবার দেখাও হয়েছে। তবে আমারা কেউ কারো প্রেমে পরিনি।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৩৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



