দেশের লোক ছেড়ে জার্মানীর জর্জকে এনে বসানোর কারন ছিল তিনি প্রটেস্টান্ট ছিলেন এবং ক্যাথোলিকদের উপর তখন হাড়ে চটা ছিল প্রটেস্টান্টরা । আর ক্যাথোলিক ফরাসীদের সাথে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকত ইংরেজদের তাই প্রটেস্টান্ট জার্মানরা ইংরেজের স্বাভাবিক মিত্র ছিল (যদিও জার্মানদের সবাই আবার প্রটেস্টান্ট ছিল না ) । নেপোলিয়নকে শায়েস্তা করতেও প্রাশিয়ান সাহায্য ছিল অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ।
বলা হয় ভিক্টোরিয়া নিজেও ছোটবেলায় ইংরেজি ভাল করে বুঝতেন না, আর কথা বললে জার্মান অ্যাক্সেন্ট চলে আসত । অবশ্য ততদিনে তাঁর পরিবার ইংল্যান্ডে প্রায় সোয়াশো বছর ধরে আছে । ভিক্টোরিয়া তাঁর মামা, বেলজিয়ামের লিওপোল্ডের পরামর্শে, অতীব ক্ষুদ্র জার্মান রাজ্য সাক্সে কোবুর্গ উন্ড গোটা রাজ্যের ডিউক আলবার্টকে বিয়ে করেন ১৮৩৯ সালে । প্রিন্স আলবার্ট, প্রিন্স অ্যালবার্ট কোট নামের পোশাকটির জন্য পরিচিত । লোকে আরো বলে প্রকৃতিবিদ্যা ও বৈজ্ঞানিক গবেষনায়ও নাকি তাঁর অনেক উৎসাহ ছিল ।
বাইশ বছরের দাম্পত্য জীবনে নয়টি পুত্রকন্যার জন্ম দেন ভিক্টোরিয়া আর আলবার্ট । এর মধ্যে ছয়টী কন্যা । তার মধ্যে পাঁচটিকে আবার বিভিন্ন জার্মান রাজবংশে বিয়ে দেন ভিক্টোরিয়া । সুতরাং বলা হতো ব্রিটিশ সিংহাসনে রাণী যেমন আধা-জার্মান, জার্মান কুলীন বংশগুলোতে আবার ইংরেজ রাজকুমারীদের আধিপত্য । জার্মানীর সাথে যে ব্রিটেনের এমন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ লাগবে সেটা ঊনিশ শতকে আঁচ করা যায় নি বললেই চলে । জার্মানদের সাথে আবার আত্বীয়তা ছিল ডেনিশ, সুইডিশ ও অধুনা প্রতিষ্ঠিত গ্রীসের শাসক পরিবারের ।
কিন্তু ১৮৬০ এর দশকে জার্মানি এক হতে শুরু করল । মুলতঃ প্রাশিয়ার আধিপত্য এখানে ছিল প্রধান । প্রাশিয়া মানে বার্লিনের ক্ষমতা বাড়া মানে অস্ট্রো-হাঙ্গারিয়ান সাম্রাজ্যের ক্ষমতা খর্ব হওয়া, যদিও দু্টিই জার্মান ভাষী । তারপরেও একীভুত জার্মান সাম্রাজ্য ভয় করার কিছু ছিল না ইংল্যান্ডের । বিলাতের সাম্রাজ্য দুনিয়াজোড়া, এবং এর মুল ভিত্তি নৌশক্তি । জার্মানরা বড় জোর মহাদেশীয় ইউরোপে প্রাধান্য করতে পারবে । আবার অন্য দিকে রুশরা যেহেতু অনেককাল ধরেই কনে বাছাই করছে জার্মান অভিজাত বংশগুলোতে । রুশ-জার্মান-ইংরেজ মৈত্রীর কথাও আস্তে আস্তে শোনা যেতে লাগল ।
এত কিছু বলে ফেললাম তার কারন হচ্ছে নিকির বিয়েতে এ সব উঠে এল খুব প্রাসঙ্গিক বিষয়ে । নিকির জন্য যদি আর কোনো কনে পাওয়া নাই যায়, বা সে যদি আলিক্সকেই বিয়ে করবে স্থির করে থাকে তো বেশ! জার্মান গ্র্যান্ড ডিউকের কন্যা ও ভিক্টোরিয়ার নাতনি, প্রয়োজনীয় নী। রক্ত আছে তার শিরায় । তার একটি বোনেরও আবার এদিকে বিয়ে হয়েছে, একেবারে ফেলনা নয় সম্পর্কটা । ভেবেচিন্তে নিমরাজী হলেন জার ও জারিৎসা ।
ভিক্টোরিয়া আলিক্স হেলেনা লুইজ বিয়াট্রিস, রাণী ভিক্টোরিয়ার তৃতীয় কন্যা অ্যালিস আর হেস-ডার্মস্টাটের গ্র্যান্ড ডিউক চতুর্থ লুইয়ের দ্বিতীয় মেয়ে, জন্ম ১৮৭২ সালে । ছোট বেলার একটা বড় অংশ কেটেছে ইংল্যান্ডে যখন আলিক্সের ডাক নাম ছিল 'সানি' বা 'অ্যালিকি' । কিন্তু ছয় বছর বয়সে ডিপথেরিয়ার মহামারীতে আলিক্স তার ছোট্ট চার বছরের বোন মে আর মা অ্যালিসকে হারায় । এবং এই দুই শোকের ধাক্কা আলিক্স অনেক দিন বয়ে নিয়ে বেরিয়েছে । ১৮৮০ দশকে তাকে ইংল্যান্ডে নানীর দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয় । ভিক্টোরিয়া তাঁর এই নাতনিটি নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলেন ।
জার তৃতীয় আলেকজান্ডার কেন মত পাল্টালেন? প্রথম ও প্রধান কারন হচ্ছে কিডনির অসুখটা বেড়ে যাওয়াতে জারকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল । তিনি ভেবেছিলেন তাঁর আরো বেশ কিছূকাল আয়ু আছে, এবং সেই জন্য সিংহাসনে বসার জন্য নিকিকে তৈরি করতে তিনি দেরী করছিলেন । কিন্তু অতিরিক্ত মদ্যপান ও অন্যান্য কারনে তাঁর স্বাস্থ্য এত খারাপ হতে লাগল যে নিকির বিয়ের জন্য তিনি চাপ দিতে থাকলেন, যাকে খুশি নিকি বিয়ে করুক!
১৮৯৪ সালে আলিক্সের ভাই এরনেস্টের বিয়েতে নিকোলাস রাশিয়ার পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন । পাত্রী এরনেস্টের মামাতো বোন, ভিক্টোরিয়া পুত্র, প্রিন্স আলফ্রেডের কন্যা ভিক্টোরিয়া মেলিটা । বিয়েটা খুব বেশিদিন টিকবে না । সে যাহোক এই সুযোগের সদ্ব্যাবহার করে নিকোলাস প্রস্তাব দিয়ে ফেললেন আলিক্সকে । এবং পর দিন আলিক্স তাতে সন্মতি জানালেন । ডায়েরিতে নিকোলাস লিখলেন, 'আমার কাঁধের উপর থেকে একটা পাহাড় নেমে গেছে ।'
জার আর জারিৎসা খুশি হয়ে টেলিগ্রাম করলেন । জারিৎসা, আলিক্সকে একটা পান্না বসানো ব্রেসলেট উপহার দিলেন রোমানভ পরিবারের ভাবী পুত্রবধু হিসেবে । দশদিন নিকোলাস ছিলেন আলিক্সদের বাড়িতে ।
জুনমাসে আলিক্স আর নিকোলাস, রাণী ভিক্টোরিয়ার সাথে দেখা করার জন্য ইংল্যান্ডে পাড়ি জমালেন । সেখানে ওয়ালটন অন টেমস জায়গায় আলিক্সের বোনের একটা কটেজ ছিল । সেখানে নিকোলাস আর আলিক্স বেশ কয়দিন নিরিবিলিতে কাটান । বহুবছর পরেও ওয়ালটনের নাম শুনলে আলিক্সের চোখে পানি আসত ।
ওয়ালটন থেকে তাঁরা 'নানী' মানে উইন্ডসর দুর্গ-প্রাসাদে ভিক্টোরিয়ার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন । রুশ রাজবংশের উপর ভিক্টোরিয়া খুব সন্তুষ্ট না হলেও এই হবু নাত-জামাইটিকে তাঁর খুব পছন্দ হয়েছিল । এখানেই নিকি এনগেজমেন্টের উপহারগুলো দেন । গোলাপী মুক্তা বসানো আংটি, গোলাপী মুক্তার নেকলেস । মুক্তা বসানো একটা চেন তার চারদিকে অনেকগুলো মহামুল্যবান রত্নে পেন্ডেন্ট ।
এবারে আসল কথাটা পাড়তে হয় । নিকোলাস, মাতিলদার সমস্ত কথা খুলে বললেন আলিক্সকে । কিম্তু না প্রথম প্রেমের পুর্বারেগে মশগুল আলিক্স, 'ক্ষমা স্বর্গীয়' নীতিতে সব মাপ করে দিলেন । 'আমাদের যখন অল্প বয়স (নিজের বয়স কিন্তু তখন মাত্র বাইশ!) তখন এসব ভুলত্রুটি আমরা করতেই পারি, এসব ঈশ্বর ক্ষমা করবেন, যদি আমরা অনুতপ্ত হই' অত্যন্ত মহানুভবতার সাথে নিকিকে চিঠি লিখে জানালেন আলিক্স । ছয় সপ্তাহ ইংল্যান্ডে কাটিয়ে দেশে ফিরলেন নিকি ।
বাড়ি ফিরে নিকি দেখলেন বাবার শরীর এর মধ্যে আরো খারাপ হয়েছে । ডাক্তারদের পরামর্শে তিনি সেইন্ট পিটার্সবুর্গ থেকে সুদুর দক্ষিনে, কৃষ্ণ সাগর তীরের ইয়ালতাতে লিভাদিয়া প্রাসাদের অবস্থান করছিলেন । কিডনির বৈকল্য তাঁকে গ্রাস করেছিল ভীষণভাবে । এই প্রাসাদের স্তালিন, রুজভেল্ট আর চার্চিল 'ইয়ালতা সন্মেলন' করবেন ১৯৪৫ সালে । তখন এটা জারদের অনেকগুলো প্রাসাদের একটা ছিল ।
নিকোলাস, আলিক্সকে টেলিগ্রাম করলেন চলে আসার জন্য । ট্রেনে চড়ে জার্মানি থেকে ইউক্রেনে চলে এলেন আলিক্স হবু শ্বশুরকে দেখার জন্য । তারপরে অনেকটা পথ ছাদখোলা ঘোড়ার গাড়িতে । পথে অনেকবার থামতে হলো, স্থানীয় লোকেরা রুটি আর লবন নিয়ে আসছিল (ঐতিহ্য বাহী রুশ অভ্যর্থনা) । সমস্ত অসুস্থতা স্বত্বেও জার তৃতীয় আলেকজান্ডার বিছানা ছেড়ে উঠে ইউনিফর্ম পরলেন । তারপরে নিকোলাস আর আলিক্স এই রোগ জীর্ণ, মৃত্যুপথযাত্রী দৈত্যাকার সম্রাটের কাছ থেকে আশীর্বাদ নিলেন ।
ডাক্তাররা সব তৃতীয় আলেকজান্ডারের বিছানা থেকে জারিৎসার কাছে রিপোর্ট করতেন । পাশের ঘরে বসে থাকা চুপচাপ নিকির সাথে কথা বলার খুব একটা দরকার তাঁরা মনে করতেন না । এবং আলিক্স তো একেবারেই বহিরাগত বাইরের কেউ একজন । নিকোলাস আর আলিক্সের দাম্পত্য জীবনটা খুব মসৃনভাবে শুরু হয়নি ।
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।