আগামীকাল ঐতিহাসিক কোরআন দিবস। আজ এ উপলক্ষে ছাত্রশিবিররে এক আলোচনা সভায় মাওলানা দলোওয়ার হোসাইন সাঈদী বলছেনে সরকার দিনবদলের কথা বলে দ্বীন তথা ইসলাম বদলের কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে কোরআন ও সুন্নাহ বিরোধী প্রত্যাখ্যাত ৭২ এর সংবিধান পুনঃপ্রতষ্ঠিার অপচষ্টো চালাচ্ছে কুদরতে খুদা শিক্ষা কমিশনের নীতিতে র্ধমীয় শিক্ষাকে উপক্ষো করা হয়েছে এ ধরনের র্ধমহীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতষ্ঠিার অপচষ্টো ৯০ ভাগ মোসলমানরে দেশে বাস্তবায়তি হতে দেয়া হবেনা।
কোরআন দিবস সর্ম্পকে বিস্তারিত পড়ুন নিচে
প্রেরনার ভাস্কর একটি দিন- ডা: মো: ফখরুদ্দিন মানিক
আমি আমার এ দুটি আঁিখ কি করে ধরে রাখি
অঝোরে কান্না বেরিয়ে আসে............
যখন মাসের পরে মাস পেরিয়ে ১১মে আসে............
৩৮ বছরের বাংলাদেশে অনেক ঘটনার নিরব সাী, স্বাধীনতার পরবর্তী এই ছোট্ট সময়ে অনেক অর্জন যেমন বাংলাদেশকে মাথা উঁচু করে দাড়াতে সহায়তা করেছে তেমনি ঐতিহাসিক অনেক ঘটনাই আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চেতনায় আঘাত করছে। ত সৃষ্টি হয়েছে অগণিত মানুষের হৃদয়ে। যার দগ দগে ঘা থেকে রক্তরণ হয় মাঝে মাঝে। নির্বাক একটি গাছ কিংবা ইট পাথরের দেয়ালগুলোর যদি কথা বলার সুযোগ থাকতো তাহলে হয়তো তারাও চিৎকার করে বলতো, না এই আঘাত অথবা অপমান আর সহ্য করার মত নয়।
১৯৮৫ সালের ১১মে চাপাই নবাবগঞ্জে ঠিক তেমনই একটি ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে সংযোজিত হয়েছে।
যেভাবে ঘটনা শুরু
১০ এপ্রিল ভারতীয় ২ উগ্রবাদী হিন্দু পদ্মমল চেপারা ও শীতল শিং আদালতে কোরআন বাজেয়াপ্ত করার মামলা দায়ের করে। তারা কোরআনের উল্লেখিত সূরা বাকারার ১৯১নং আয়াত ও সূরা তওবার ৩১ নং আয়াতের রেফারেন্স দিয়ে মামলা দায়ের করেছিল। কোরআন যেহেতু কাফের মুশরিকদের বিরুদ্ধে লড়াই করা, তাদের হত্যা করার কথা বলেছে সেহেতু কোরআন একটি সা¤প্রদায়িক উস্কানী দাতা গ্রন্থ। তাই একে বাজেয়াপ্ত করার দাবি তুলে মামলা দায়ের করে। ভারতীয় সংবিধানের ২২৩ নং ধারা সি আর পিসি ১১৫(ক) ও ২৯৯ (ক) উদ্ধৃতি দিয়ে তারা আল কোরআনকে ভারতীয় সংবিধান বিরোধী বলে উল্লেখ করে। বিচারপতি পদ্মা খাস্তগীর ভারতীয় সংবিধানে ঐশীগ্রন্থ সম্পর্কে যে বক্তব্য রযেছে তা হজম করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা গ্রহণ করেন। তিনি ১২ এপ্রিল এ বিষয়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে এফিডেভিট প্রদানের জন্য রাজ্য সরকারের প্রতি নির্দেশ দেয়। এ ঘটনায় গোটা ভারতে মুসলমানদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বের প্রতিটি মুসলিম দেশ এর প্রতিবাদে বিুব্ধ হয়ে উঠে। যার উত্তাল তরঙ্গের জলরাশি আচড়ে পড়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশ বাংলাদেশের চাপাই নবাবগঞ্জে। এর প্রতিবাদে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় বিােভ মিছিল ও সমাবেশ হয়। বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ ইসলাম প্রিয় তৌহিদি জনতার মিছিলে অত্যাচার নিপীড়নও চালায়।
কোরআন প্রেমিকদের খুনে রঞ্জিত চাপাই নবাবগঞ্জ :
চাপাই নবাবগঞ্জ আলীয়া মাদ্রাসার অধ্য জনাব হোসাইন আহমদ একটি সভার আহবান করেন। সেই সভা থেকে ১১ই মে ঈদগাহ ময়দানে বিকেল ৩টায় প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়। সভার প্রস্তুতির জন্য পুরো জেলাতে লিফলেট ও মাইকিং করা হয়। এর পূর্বের দিন শুক্রবার মসজিদে জুমআর খুৎবায় এবং নামাজ শেষে ইমাম সাহেবেরা পরের দিন সামবেশে অংশ গ্রহণের জন্য আহবান জানান। সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আবেগ ও উত্তেজনা বইতে থাকে। আবাল-বৃদ্ধ সবাই সেই সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। কিন্তু ১১ মে হঠাৎ করে প্রশাসন উদ্যোগক্তাদের জরুরী তলব করে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে তাদেরকে সমাবেশ না করারা জন্য মুছলেকা দিতে বাধ্য করেন। প্রতিবাদ সভা করতে প্রশাসন বাধা দিচ্ছে এমন খবরে উত্তেজিত জনতার মাঝে অদম্য স্পৃহা আরো বেড়ে যায়। বাধ ভাঙ্গা জোয়ারের মত হাজার হাজার জনতা ঈদগাহের দিকে আসতে থাকে। তৎকালীন পুলিশ সুপার আওলাদ হোসেন এবং মেজিষ্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান মোল্লার নেতৃত্বে সভা স্থলে ১৪৪ ধারা জারি করে ব্যপাক পুলিশ মেতায়েন করে। পুলিশ জনতাকে ছত্র ভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এখানে কোন সভা হবে না বলে নিজেই ঘোষণা দেন। আবেগে উদ্বেলিত জনতা ুব্ধ হয়ে উঠেন। সভা করবো না আমরা শুধু দোয়া করে চলে যাবো এই বলে কিছু সময় চাওয়া হয়।
কিন্তু তাতেও ওয়াহিদুজ্জামান রাজী না হয়ে দম্ভ করে চেচিয়ে ওঠে বলে “এই মহুর্তে স্থান ত্যাগ করতে হবে নইলে গুলির আদেশ দিব, শালা মৌলবাদীদের সাফ করে দিবো”। উত্তেজিত আবেগকুল জনতা চলে গেল না। তারা জানিয়ে দিলেন, গুলির ভয়ে এ স্থান ত্যাগ করা মানেই আল কোরআনের অপমান, আমরা এস্থান ত্যাগ করবো না। এই উত্তাল তরঙ্গমালার সাথে সেই দিন শামিল হয়েছিল বাংলাদেশের মুক্তিকামী তৌহিদী ছাত্র-জনতার প্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। যেই আল কোরআনকে প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে শুরু হয়েছিল এই কাফেলার যাত্রা তার তাদের সকল কর্মী বাহিনী নিয়ে ঈদগাহ ময়দানে শামিল হয়েছিল কোরআন অবমাননার প্রতিবাদ জানাতে। জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিলের মাধ্যমে তারা ঈদগাহ ময়দানে জমায়েত হয়। এক পর্যায়ে মেজিষ্ট্রেট মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান বিনা উস্কানিতে গুলির নির্দেশ দেয়। পুলিশ একনাগাড়ে প্রায় পনের মিনিট পর্যন্ত গুলি রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিপে করতে থাকে। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢলে পড়লো পনের বছরের কিশোর ইসলামী ছাত্রশিবিরের স্কুল কর্মী আবদুল মতিন, আর সেই দিনের শহীদি কাফেলার ১ম শহীদ ছিল সেই। পুলিশের গুলিতে একে এক শাহাদাৎ বরণ করলেন কৃষক আলতাফুর রহমান, রিক্সা চালক মোক্তার হোসেন, দশম শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রশিবিরের কর্মী রশিদুল হক, অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র শিবিরের কর্মী শীষ মোহাম্মদ ও সেলিম এবং ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র শাহাবুদ্দোলা। আহত হয় শামীম, গোলাম আযম বুলু, শরীফুল ইসলাম, আলাউদ্দিন, রায়হান, এনামুল হক, মাহবুব, রেজাউল, শাহজাহান, রাজুসহ নাম না জানা আরো অনেকেই। লাশ আর আহতদের স্তপে ভরে গেল ঈদগাহ ময়দান। পলায়নরত অসহায় মানুষের পিছু ধাওয়া করে শহরের অভ্যান্তরেও গুলি চালাতে থাকে। টুপি, পাঞ্জাবি, দাঁড়ি দেখলেই নির্মমভাবে তাদের উপর আক্রমন চালানো হয়। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
হাসপাতালের হৃদয় বিদারক দৃশ্য :
শহীদ ও গাজীদের রক্তে লালে লাল হয়ে যায় চাপাই নবাবগঞ্জের পিচঢালা কালো পথ। আহতদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে ডাক্তাররা। আহতদের রাজশাহীতে নিয়ে যাওয়া হলো দুটো মনিবিাসে করে। দেড়ঘন্টা পর যখন মিনিবাস থানা পার হচ্ছিল কুখ্যাত মেজিষ্ট্রেট আবারো গাড়ি থামিয়ে গুলির নির্দেশ দেয়। এতে আহত হয় গাড়ীর হেলপার, মারা যায় কাপড় ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম। আহতদের নামিয়ে দৌহিক নির্যাতন চালানো হয় এবং নিখোঁজ হয় কয়েকজন আহত ব্যক্তি। কেবল হত্যা ও জখম করেই ্যান্ত হয়নি পুলিশ হতাহতদের গুম করে ফেলেছিল সেই দিন। জানাজার মুহুর্তে লাশ কেড়ে নিয়ে আসা হয়েছে তাদের আতœীয়-স্বজনদের কাছ থেকে। গ্রেফতার করা হয়েছে শিবিরের সাথী এনামুল, রেজাউল, শামীম, সেতাউর রহমান, সাইফুল সহ আরো অনেককে। এর মধ্যে কারফিউ জারি করা হল। শুরু হল সেনা টহল, সামরিক জান্তাদের কাছে অনেকেই নাজেহাল হলো। রাতের চাপাই নবাবগঞ্জ যেন এক মৃত্যু পুরীতে পরিণত হলো।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন বর্বরতা ঘটে গেল। বিুব্দ মানুষ রাস্তায় বের হলো অথচ পরদিন পত্রিকায় কোনো সংবাদ ছাপা হলো না। কারণ সেন্সরশীপ অর্ডিনেন্স জারি করে পত্রিকার কণ্ঠরোধ করা হলো। মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে আবার সেই পুরোনো স্বৈরচারের প্রকাশ ঘটালো। ১৩ই মে সরকার একটি প্রেসনোট করে আসল ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টা করল। তাতে চাপাই নবাবগঞ্জবাসী হতবাক হলো। প্রত্যদর্শীদের মতে যেখানে শহীদের সংখ্যা ১১, চাপাই নবাবগঞ্জবাসীদের মতে ২০ এর অধিক। নিখোঁজ সংখ্যা ৮/৯। কিন্তু প্রেসনোটে শহীদের সংখ্যা বলা হয়েছে মাত্র ৬। এ ব্যাপারে দেশের জনগনকে অন্ধকারে রাখা হলো। কিন্তু খবর চাপা পড়ে থাকেনি। পরদিন হরতাল আহবান করা হয়। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বাজারে ও মসজিদে লিফলেট দেয়া হয়। গভীর রাতে কারফিউ ভঙ্গ করে সাইকলে চড়ে মোল্লার ফাঁসির দাবিতে পোস্টারিং করা হয়। ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা প্রতিদিন ঘটনাকে তুলে ধরতে থাকে মসজেিদ মসজিদে। মুসল্লিদের সপ্ত ঈমান যেন আবার জেগে উঠলো। ঘটনার বিহবলতায় হুহু করে কেঁদে উঠেন মৃত্যু পথযাত্রী বৃদ্ধরা। উত্তেজনায় হাফাতে থাকেন যে এখনই ঝাপেিয় পড়বেন তাগুতের বিরুদ্ধে।
তার পরদিন সরকারি ঘোষণা আসলো শহীদ পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হবে। এটি ছিল সবচেয়ে হাস্যকর। ঠাণ্ডায় মাথায় মানুষ হত্যা করে কিছু টাকা দিয়ে তার দায় এড়াতে চান। কিন্তু আজো চাপাই নবাবগঞ্জ বাসীর দাবি হত্যা কাণ্ডের মূল নায়ক ডি সি এ কে এম শামুসুল হক, এসপি আওলাদ হোসেন এবং মেজিষ্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান মোল্লাসহ খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। জনতার ঘোষণা খুনীদেরকে আমাদের হাতে তুলে দেয়া হোক। তাদেরকে হত্যা করে আমরা চাঁদা তুলে তাদের স্ত্রী পুত্রদের জন্য এক লাখ টাকা করে দিবো।
এই ঘটনায় ছাত্রশিবির বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষণা করে ১৪ ই মে শিা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট ও ১৫ই মে প্রতিবাদ দিবসের কর্মসূচী এবং বিশেষ বুলেটিন বের করে। একই সাথে সারা বিশ্বে একটি জনমত সৃষ্টি হয় এবং ১৩ ই মে কলজকাতা ইউকোর্টের বিচারপতিকে বি. সি বাসক বামন উক্ত মামলাটি খারিজ করে দেয়। সেই থেকেই বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এটি ঐতিহাসিক কোরআন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। চাপাই নবাবগঞ্জের ঈদাগাহ মাঠে যেন আজো শোনা যাচ্ছে কিশোর শীষ মোহাম্মদের আর্তনাদ, শহীদ রফিকুলের করুন আহাজারী। আব্দুল মতিন ও সেলিমের আর্তচিৎকারে শহীদ সবুর ও নজরুলের বুক ফাটা কান্না। এই আওয়াজ প্রতিটি দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হলেও কর্ণকুহরে প্রবেশ না যারা আছেন শাসকের সিংহাসনে। বরং নব্য জাহিলিয়াতের আওয়াজ শুনা যায়। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স¤প্রচারীদের মুখ থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০০৯ রাত ৮:৫২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



