যশোর-১ (শার্শা) আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিলউদ্দিন শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) পিটিয়েছেন।। এমপির সঙ্গে থাকা দলীয় লোকেরাও এ সময় ওসির ওপর চড়াও হন। যুবদল নেতা আব্দুল হামিদ হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ আশ্রিত সন্ত্রাসীদের নামে মামলা হওয়ায় প্তি এমপি গতকাল রোববার বিকেলে ওসিকে ডেকে এনে নিজ অফিসের মধ্যে এ কাণ্ড ঘটান। শার্শা থানার সেকেন্ড অফিসারসহ সশস্ত্র কনস্টেবলরা ঘটনার সময় উপস্থিত থাকলেও তারা পাল্টা কোন অ্যাকশনে যাননি।
শার্শা থানার ওসি এনামুল হক ও সেকেন্ড অফিসার আসাদ ঘটনা স্বীকার করে জানিয়েছেন, বিষয়টি পুলিশের ঊধর্্বতন কর্মকর্তাদের গোচরে আনা হয়েছে। থানায় সাধারণ ডায়রি করে ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হবে। তবে সংসদ সদস্য আফিলউদ্দিন ওসিকে পেটানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
গত শনিবার রাত ৮টার দিকে শার্শা উপজেলার পাড়ুইঘুপি গ্রামে একদল সন্ত্রাসী কুপিয়ে হত্যা করে আব্দুল হামিদ নামে এক যুবককে। নিহত হামিদ লক্ষ্মণপুর ইউনিয়ন জাতীয়তাবাদী যুবদলের সদস্য এবং ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি। এ ঘটনায় ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি আব্দুল খালেক বাদী হয়ে ১৬ জনকে আসামি করে গতকাল শার্শা থানায় হত্যা মামলা রুজু করেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ শেখ আফিলউদ্দিন বিকেলে শার্শা থানার সেকেন্ড অফিসার আসাদকে দিয়ে টেলিফোনে ডাকিয়ে আনেন ওসি এনামুল হককে। সেকেন্ড অফিসারের কাছ থেকে খবর পেয়ে ওসি ছুটে যান সংসদ সদস্য শেখ আফিলউদ্দিনের মালিকানাধীন আফিল জুটমিলে।
ওসি এনামুল হক অভিযোগ করেন, জুটমিলের অফিসক েঢোকামাত্র সংসদ সদস্য আফিলউদ্দিন তার দিকে তেড়ে আসেন এবং আওয়ামী লীগ নেতাকমর্ীদের নামে হত্যা মামলা গ্রহণ করা হয়েছে কেন তা জানতে চান। একপর্যায়ে এমপি আফিল তাকে চড়-লাথি মারা শুরু করেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত সংসদ সদস্যের একান্ত সহকারী আসাদ, ঝিকরগাছার মুসা মাহমুদসহ আওয়ামী লীগ নেতাকমর্ীরাও ওসির ওপর চড়াও হয়। উপযর্ুপরি কিল-ঘুষি, ধস্তাধস্তিতে ওসির পোশাক ছিড়ে যায়। পরে থানার সেকেন্ড অফিসার ও কনস্টেবলরা ওসিকে উদ্ধার করে থানায় আনেন।
শার্শা থানার সেকেন্ড অফিসার আসাদও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, এমপি সাহেব ওসিকে শুধু মারধরই করেননি, বাপ-মা তুলে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজও করেছেন। এমপির আচরণ এমন হলে এই থানায় কোনো পুলিশের প েকাজ করা সম্ভব নয় বলে অভিমত দেন সেকেন্ড অফিসার আসাদ।
তবে ওসিকে পেটানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংসদ সদস্য শেখ আফিলউদ্দিন। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি এলাকায় আসামাত্র দলীয় নেতাকমর্ীরা আমার কাছে অভিযোগ নিয়ে আসে যে, হামিদ হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগের নিরীহ নেতাকমর্ীদের নামে মামলা নিয়েছেন ওসি। সে কারণে আমি ওসিকে ডেকে এনে ঘটনা জানতে চাই। মামলা গ্রহণের আগে আমার সঙ্গে কেন পরামর্শ করলেন না তা জানতে চাইলে ওসি চুপ থাকেন। এ সময় আমি ওসিকে বলি, আমার সঙ্গে বেয়াদবি করবেন না। ঘটনা এটুকুই। এর বেশি কিছু নয়।' হত্যা মামলায় কারা আসামি হবে সে ব্যাপারে থানার ওসি কেন সংসদ সদস্যের সঙ্গে পরামর্শ করবেন?_ এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ আফিলউদ্দিন বলেন, আমি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত এমপি। মানুষের সুবিধা-অসুবিধা আমাকে দেখতে হয়।
শার্শা থানার ওসি এনামুল হক জানান, তার ওপর হামলার বিষয়টি তিনি ঊধর্্বতন কর্তৃপকে জানিয়েছেন। ঘটনার আদ্যপান্ত লিপিবদ্ধ করে গতকাল সন্ধ্যায় তিনি থানায় সাধারণ ডায়রি করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুবদল নেতা হামিদ হত্যা মামলায় যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তারা নিরীহ দলীয় কমর্ী নয়। মামলাটির এক নম্বর আসামির বিরুদ্ধে আরো দুটি হত্যা মামলা রয়েছে।
এদিকে, সংসদ সদস্য শেখ আফিলউদ্দিন দাবি করেছেন, শার্শা থানার ওসি অনেক অপরাধমূলক কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত। তিনি ফেনসিডিল ব্যবসাও করেন। অপরাধীদের কাছ থেকে আদায় করেন হিস্যা। সব জেনেও চুপচাপ আছেন কেন?_ এমন প্রশ্নের জবাবে সংসদ সদস্য বলেন, এ সব প্রকাশ করলে সরকারের ভাবমূর্তি ুণ্ন হবে।
উল্লেখ্য, শনিবার রাতে বাড়ি ফেরার পথে শার্শার পাড়ুইঘুপি গ্রামে সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হন যুবদল নেতা আব্দুল হামিদ ও মফিজুর রহমান। সন্ত্রাসীদের ধারাল অস্ত্রের আঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান হামিদ। আহত অবস্থায় মফিজুরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মফিজুর লক্ষ্মণপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি সলেমান আলী হত্যা মামলার বাদী। মাস তিনেক আগে সলেমানকে খুন করে সন্ত্রাসীরা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



