somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রবাসে নিজের মত করে রোজা এবং ঈদ

১৪ ই অক্টোবর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৬:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিদেশে এসে দেশের যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশী মিস করি, সেটা হলো ইফতার। এমনিতে আমি বড় কোন ভোজনরসিক না। ভাত/তরকারি রান্নার ঝামেলা এড়াতে দিনের পর দিন কাটিয়ে দিয়েছি পাউরুটি/বাটার দিয়ে। একটু মুড ভাল থাকলে খেয়েছি ফ্রেন্চ ফ্রাইস অথবা পিজ্জা (যারা পশ্চিমে কখনো ছিলেন, তারা যানেন কিচেনে একটা ওভেন থাকলে কতটা অলসের পক্ষেও এই দুটা জিনিস বেক করা সম্ভব)। সেই আমিই রমজানে এসে টের পেলাম, ইফতারটা মিস করছি। মিস করলেও নিজে তৈরি করে খাবার মত স্ট্যামিনা আমার নেই, তাই মিস করার কষ্ট নিয়েই বসে ছিলাম, যদি না শহরের বাংলাদেশী কেউ ডেকে নিয়ে ইফতার করাত। প্রায় ১০জন বাংলাদেশীর বসবাস ছিল যেখানে, সেখানে এমন কোন উইকএন্ড ছিল না, যখন আমরা একসাথে ইফতার করিনি।

কিন্তু এবার পরিস্থিতি আলাদা। আমি এবার অন্য শহরে, যেখানে আর কোন বাংলাদেশী থাকেনা। সর্বমোট চারদিন ইফতার করেছি বাংলাদেশীদের বাসায়। ৩০০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের ভেতরে চারটা শহরে গিয়েছি এই চারটা ইফতারের জন্য। নিজের শহরে ফিরে বাড়িতে খবর দিয়েছি কি কি ইফতার করলাম। আমার মা ভাবলেন, ছেলে ভালই আছে। বাকি রোজাগুলো কিভাবে গেছে, সেটা অবশ্য কাউকে বলিনা, কুমিরের ছানার মত আমি ঐ চার ইফতারের গল্পই ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মাকে বলে গেছি।

রোজাটা মন মত হয়না বলেই শেষদিকে এসে শুধু মনে হয়, কবে ঈদ হবে। গতরাতে ব্যাকুল হয়ে বসেছিলাম চাঁদের খবরের জন্য। শেষ পর্যন্ত রাত নটায় যখন খবর পেলাম যে চাঁদ দেখা গেছে, মনে হচ্ছিল, আমার হারিয়ে যাওয়া খুব প্রিয় কাউকে খুঁজে পাওয়ার সংবাদ যেন পেলাম। রোজা যেখানে বিফল, প্রাণহীন, সেখানে তার সমাপ্তির জন্য অপেক্ষা করাটাই বুঝি যুক্তিসঙ্গত।

এদিকে ঈদ উদযাপনের জন্য পুরনো শহরে ফিরে যাওয়ার প্ল্যান বাতিল করতে হলো কাজের একটা ডেডলাইন পরে যাওয়াতে। কিন্তু ঈদে একটা কিছু করতে আমি দৃঢ়পণ।

ঈদের নামাজ পড়লাম। তারপর গেলাম ল্যাবে। আমি একমাস পর খাবার খাচ্ছি, এটাতে আমার চাইতে আমার ল্যাবের অন্য সহকর্মীরা যেন বেশী আহ্লাদিত। সারাদিন সহকর্মীদের সাথে খাবার শুরু করা নিয়ে খুনসুটি, তারপর দুপুরে পাকিস্তানী খাবারের দোকানে "ইন্ডিয়ান" খাবার খাওয়া এবং দিন শেষে বাড়ি ফেরা। টুকটাক কিছু জিনিস কিনেছি নিজে রান্না করব বলে। গরু, মুরগী, বাসমতী চাল, কনডেন্সড মিল্ক, সালাদের উপকরণ, তেল, বাটার, ড্রিংকস কিনে ঘর বোঝাই করে ফেলেছি। ঈদে কিছু করবোনা, তা তো হয় না।

ঈদের রাতে বেশ সময় নিয়ে বানালাম পায়েস। মনে হলো, অন্য সববারের চেয়ে এবার বোধহয় একটু বেশীই মজা হলো। উপরে পেস্তা বাদাম আর কিসমিস ছড়িয়ে দিয়ে একটা সুন্দর ডেকোরেশনও করে ফেললাম। নতুন একটা আইটেম করতে চাই, তাই ওয়েব ঘেটে জোগাড় করলাম কোরমা রান্নার রেসিপি। মাংস, মসলা সব রেডি করতে করতে রাত ১১টা বেজে গেল, আমি ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিলাম।

ঘুম থেকে উঠেই বসালাম গরুর মাংস। ওটা হতে হতে কোরমার মাংসটা মেরিনেড করতে দিলাম। গরু হয়ে গেল, তারপর বসালাম কোরমা। পোলাওটা বেশী হেভি খাবার হয়ে যাবে বলে সাদা ভাত বসিয়ে দিলাম রাইসকুকারে। এদিকে আমার এক প্রাক্তন নেবার হাত দিয়ে ভাত খাবার ইচ্ছা পোষণ করেছিল অনেকদিন আগে, আজ সে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে বলে তাকেও ডাকলাম বিদায় দিতে। নেবাররা এবং তাদের সঙ্গীদেরসহ আমরা ছয় দেশের ছয়জন মিলে বসলাম ঈদের খাবার খেতে। মূল ডিশগুলা আমার রান্না, আমার এক প্রতিবেশীর দেড় ঘন্টা সময় নিয়ে বানানো অসাধারণ একটা সালাদ, প্রতিবেশিনীর আনা ড্রিংকস আর একটা আনারস, এবং সবশেষে নাখটিশ পায়েস।

আমরা খাওয়া শুরু করলাম সালাদ দিয়ে। একগাদা সালাদ খাওয়ার পর শুরু হলো হাত দিয়ে ভাত খাওয়া। ইউরোপিয়ানগুলো জীবনেও কোনদিন হাত দিয়ে খায় নি। ওদের দেখালাম কিভাবে একটু ভাত, একটু মাংস আর একটু ঝোল একসাথে করে আঙ্গুলের মধ্যে চেপে ধরে মুখে ভরতে হয়। ওরা খাওয়া শুরু করল। অনেক কষ্ট করে ওরা হাতের নলায় বড়জোর ১০টা করে ভাত তুলতে পারল। ফলাফল: ১ ঘন্টা লেগে গেল সামান্য কটা ভাত খাওয়া শেষ করতে। কোরমা আর ঝালবিহীন গরুর কারি খেয়ে এরা মুগ্ধ। পায়েসের কাছাকাছি একটা সংস্করণ ওরা মিল্করাইস নামে খায়, ওটার চেয়ে আমার বাংলাদেশী স্টাইল পায়েস যে ১০০ গুণ ভাল, সেটও ওরা বলতে ভুললো না। ঈদ, বাংলাদেশী খাবার, আমাদের মত করে হাত দিয়ে খাবার খাওয়া, সবমিলিয়ে আমার কাছে পুরো ব্যাপারটাকে সার্থক বলেই মনে হলো।

সব শেষে বিদায়ের পালা। কোনরকমে পার করা একটা রমজানকে বিদায় দিলাম, আমার প্রতিবেশীকে বিদায় দিলাম। গতরাতে যে উৎসাহ নিয়ে রান্না শুরু করেছিলাম, ঠিক তার উল্টো একটা অনুভূতি গ্রাস করে নিলো আমাকে। জানিনা কেন, নিজেকে প্রশ্ন করলে অসংখ্য কারণ খুঁজে পাব জানি, তবে কারণগুলো খুঁচিয়ে বের না করে একটা ছোট্ট, সুন্দর ঈদ উদযাপনের স্মৃতিকেই ধরে রাখতে চাই মনের ভেতর।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৬:০৯
১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×