(পূর্বপ্রকাশের পর)
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকাশের ঐতিহাসিক ধারা আলোচনার মাধ্যমেই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার শরীরটিকে খুজে পাই। দেখতে পাই দীর্ঘ বির্বতনের ধারায় বিশ্ববিদ্যালয় ধারণা একটি জীবন্ত স্বত্তা হিসেবে অস্তিত্বশীল। এখানে শিক্ষকদের নি:সঙ্গ জ্ঞানের সাধনা, চিন্তার স্বাধীনতা ও সামাজিক প্রভাবমুক্ততা, বিশুদ্ধ জ্ঞানের সঙ্গে প্রায়োগিক জ্ঞানের অন্বেষণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের আধিপত্য, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগের ক্ষেত্রএসবই যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্বের সাথে সম্পর্কিত। প্রাসঙ্গিকভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় ধারণা সংক্রান্ত আলোচনার সাথে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলিকে মিলিয়ে দেখার বিষয়টি চলে আসে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস এবং তার বিকাশের ধারার 83 বছর আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের লম্বা ইতিহাসেরই একটি কার্বন কপি। নিজেদের প্রয়োজনেই উপমহাদেশে শিক্ষা কাঠামো তৈরি করেছিলো ব্রিটিশরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাও তার ব্যতিক্রম ছিলোনা। তারপরেও আমরা যদি নির্মোহ মূল্যায়ন করি,চোখ বুজে বলা যায়; নানা এতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে দিয়ে আজকে আমরা যে বাঙালীর একটি নিজস্ব রাষ্ট্র বাংলাদেশ পেয়েছি তাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকাই অগ্রগন্য।
যে বিষয়টি বলার জন্য এত প্রসঙ্গের অবতারনা করা হচ্ছে সেখানকার আলোচনাতেই ফেরা যাক। বর্তমান সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ধারণা এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলির গতিপ্রকৃতি আসলে কোন অবস্থায় আছে? মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি আলোচনার মাধ্যমে অন্যান্য পাবলিক বিশ্বাবদ্যালয় গুলির অবস্থাও পরিস্কার হবে।ব্যক্তিগতভাবে আমি যদিও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শব্দটি ব্যবহার করতে চাইনা কারন বিশ্ববিদ্যালয় নামের আগে এ ধরণের কোন বিশেষনের ব্যবহার বিশ্ববিদ্যালয় ধারণা কে ক্ষুন্ন করে।তারপরেও বাধ্য হয়ে শব্দটি ব্যবহার করতে হলো কারন শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় বললে অনেকে গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি এলাকার দোকান গুলিকেও এর অন্তর্ভূক্ত করতে পারেন এ ভয়ে। আমার ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচায (বর্তমানও বটে) বেতন-ফি বাড়ানোর পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে বলেছিলেন , একুশ শতকের উপযোগী আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় পেতে হলে নাকি তার কোন বিকল্প নেই। সেরকম একটি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল বা ধারণা দিতে গিয়ে তিনি এখনকার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলির বৈশিষ্ট্যই উপস্থাপিত করলেন। এ ঘটনা শুধুমাত্র একটি নমূনা। এরকম অসংখ্য নমূনা রয়েছে। একটা পর্যায় পর্যন্তলাগাতার প্রচারণার মাধ্যমে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কে আদর্শ হিসেবে হাজির করার চেষ্টা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মনোজগত এভাবেই ভাবতে অভ্যস্ত। এটা বিচিত্র নয়। কারন এরকম অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পাওয়া যাবে-যিনি বিশ্ববিদ্যালয় ধারণা সম্পর্কে সচেতন নন এবং এ ব্যাপারে আগ্রহীও নন। যে কারনে বাণিজ্যিক ভাবধারার আগ্রাসন এত দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে।(চলবে..)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



