somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ....আজ আমার প্রিয় কবির মৃত হবার দিন.....

২১ শে জুন, ২০১৪ সকাল ৭:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ (জন্ম: ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর, মৃত্যু: ১৯৯১ সালের ২১ জুন) একজন প্রয়াত বাংলাদেশী কবি ও গীতিকার যিনি " প্রতিবাদী রোমান্টিক" হিসাবে খ্যাত।
আনুমানিক উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর সময়। বৃটিশ শাসনাধীন অবিভক্ত ভারতবর্ষের পূর্ববঙ্গ, বর্তমান বাংলাদেশ। খুলনা জেলার তৱকালীন বাগেরহাট মহকুমার রামপাল থানার বিশাল এলাকা সুন্দরবনের অন্তর্ভুক্ত। সেখানে জঙ্গল কেটে সদ্য বাসযোগ্য করে তোলাও গ্রামটিকে পুরো গ্রাম বলা যায় না। অত্যন্ত সাহসী পরিশ্রমী কিছু মানুষ সুন্দরবনে জঙ্গল কেটে জায়গাটিকে আবাদ ও বাসের যোগ্য করে তুলেছে। এসময় যশোর থেকে খুলনার বাগেরহাটে পীর খানজাহান আলীর মাজারে প্রায়ই আসতেন। তার ভক্ত ধোনাহ খা। একসময় তিনি সাহেবের মৌ-এ বসিত স্থাপন করেন, জঙ্গল কেটে জমি আবাদযোগ্য করতে শুরু করেন এবং প্রথমত তার প্রস্তুত করা আবাদযোগ্য জমির মালিক হন। ক্রমে তিনি বিশাল এলাকার অধিকারী হয়ে স্থানীয় ভূস্বামী বলে পরিচিত হন। তার পুত্র মোংলাই হাজী পিতৃসূত্রে পাওয়া ভূসম্পত্তির প্রবৃদ্ধি ঘটান। মোংলাই হাজীর মেজো পুত্র শেখ ইউসুফ উত্তরাধিকারী সূত্রে বাবার বিপুল সম্পত্তি, ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির অধিকারী হন। তার সময় থেকেই ভূমিনর্ভির এই পরিবারটি শিক্ষার দিকে অগ্রসর হয়। শেখ ইউসুফের ছয় ছেলে এক মেয়ের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ শেখ মুহম্মদ ওয়ালীউল্লাহ ডাক্তার হন। ডা: শেখ মুহম্মদ ওয়ালীউল্লার প্রথম সন্তান শেখ মুহম্মদ শহিদুল্লার জন্ম হয় ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর, বরিশাল রেডক্রস হাসপালে।আশির দশকে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠে যে কজন কবি বাংলাদেশী শ্রোতাদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি তাদের অন্যতম। তার জনপ্রিয় কবিতার মধ্যে অন্যতম "যে মাঠ থেকে এসেছিল স্বাধীনতার ডাক, সে মাঠে আজ বসে নেশার হাট","বাতাসে লাশের গন্ধ"। । এই কবির স্মরণে বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার মংলার মিঠেখালিতে গড়ে উঠেছে "রুদ্র স্মৃতি সংসদ"।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন:
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জন্ম তাঁর পিতার কর্মস্থল বরিশাল জেলায়। তাঁর মূল বাড়ি বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলার মিঠেখালি গ্রামে। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম। ঢাকা ওয়েস্ট এ্যান্ড হাইস্কুল থেকে ১৯৭৪ সালে এস এস সি এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৭৬ সালে এইচ এস সি পাস করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৮০ সালে সম্মানসহ বি এ এবং ১৯৮৩ সালে এম এ ডিগ্রি লাভ।

কর্মজীবন-
তিনি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা। জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক। ১৯৭৫ সালের পরের সবকটি সরকারবিরোধী ও স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিবাদী কবি হিসেবে খ্যাত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, দেশাত্মবোধ, গণআন্দোলন, ধর্মনিরপেক্ষতা, ও অসাম্প্রদায়িকতা তাঁর কবিতায় বলিষ্ঠভাবে উপস্থিত। এছাড়া স্বৈরতন্ত্র ও ধর্মের ধ্বজাধারীদের বিরুদ্ধে তাঁর কণ্ঠ ছিল উচ্চকিত। কবিকন্ঠে কবিতা পাঠে যে কজন কবি কবিতাকে শ্রোতৃপ্রিয় করে তোলেন, তিনি তাঁদের অন্যতম।[৪] তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ৩৪ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ভালো আছি ভালো থেকো সহ অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন।[৫]

ব্যক্তিগত জীবন:
১৯৮১ সালের ২৯ জানুয়ারি বহুল আলোচিত নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে বিয়ে করেন। ১৯৮৮ সালে তাদের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটে। ১৯৯১ সালের ২১ জুন রুদ্র ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।[৪]

প্রকাশিত গ্রন্থ:
কবিতা:
উপদ্রুত উপকূল (১৯৭৯)
ফিরে পাই স্বর্ণগ্রাম ১৯৮২
মানুষের মানচিত্র (১৯৮৪)
ছোবল (১৯৮৬)
গল্প (১৯৮৭)
দিয়েছিলে সকল আকাশ (১৯৮৮)
মৌলিক মুখোশ (১৯৯০)[৬]

ছোটগল্প:
সোনালি শিশির
নাট্যকাব্য:
বিষ বিরিক্ষের বীজ

পুরস্কার:
মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮০)


............দূরে আছো দূরে – রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ

তোমাকে পারিনি ছুঁতে, তোমার তোমাকে-
উষ্ণ দেহ ছেনে ছেনে কুড়িয়েছি সুখ,
পরস্পর খুড়ে খুড়ে নিভৃতি খুঁজেছি।
তোমার তোমাকে আমি ছুঁতে পারি নাই।

যেভাবে ঝিনুক খুলে মুক্ত খোঁজে লোকে
আমাকে খুলেই তুমি পেয়েছো অসুখ,
পেয়েছো কিনারাহীন আগুনের নদী।

শরীরের তীব্রতম গভীর উল্লাসে
তোমার চোখের ভাষা বিস্ময়ে পড়েছি-
তোমার তোমাকে আমি ছুঁতে পারি নাই।
জীবনের প’রে রাখা বিশ্বাসের হাত
কখন শিথিল হয়ে ঝ’রে গেছে পাতা।
কখন হৃদয় ফেলে হৃদপিন্ড ছুঁয়ে
বোসে আছি উদাসীন আনন্দ মেলায়-

তোমাকে পারিনি ছুঁতে-আমার তোমাকে,
ক্ষাপাটে গ্রীবাজ যেন, নীল পটভূমি
তছ নছ কোরে গেছি শান্ত আকাশের।
অঝোর বৃষ্টিতে আমি ভিজিয়েছি হিয়া-

তোমার তোমাকে আমি ছুঁতে পারি নাই।।


................এ কেমন ভ্রান্তি আমার............

এ কেমন ভ্রান্তি আমার !
এলে মনে হয় দূরে স’রে আছো, বহুদূরে,
দূরত্বের পরিধি ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে আকাশ।
এলে মনে হয় অন্যরকম জল হাওয়া, প্রকৃতি,
অন্য ভূগোল, বিষুবরেখারা সব অন্য অর্থবহ-
তুমি এলে মনে হয় আকাশে জলের ঘ্রান।

হাত রাখলেই মনে হয় স্পর্শহীন করতল রেখেছো চুলে,
স্নেহ- পলাতক দারুন রুক্ষ আঙুল।
তাকালেই মনে হয় বিপরীত চোখে চেয়ে আছো,
সমর্পন ফিরে যাচ্ছে নগ্ন পায়ে একাকী বিষাদ- ক্লান্ত
করুণ ছায়ার মতো ছায়া থেকে প্রতিচ্ছায়ে।
এলে মনে হয় তুমি কোনদিন আসতে পারোনি..

কুশল শুধালে মনে হয় তুমি আসোনি
পাশে বসলেও মনে হয় তুমি আসোনি।
করাঘাত শুনে মনে হয় তুমি এসেছো,
দুয়ার খুল্লেই মনে হয় তুমি আসোনি।
আসবে বললে মনে হয় অগ্রিম বিপদবার্তা,
আবহাওয়া সংকেত, আট, নয়, নিম্নচাপ, উত্তর, পশ্চিম-
এলে মনে হয় তুমি কোনদিন আসতে পারোনি।

চ’লে গেলে মনে হয় তুমি এসেছিলে,
চ’লে গেলে মনে হয় তুমি সমস্ত ভূবনে আছো।

..................উল্টো ঘুড়ি ....................

এতো সহজেই ভালোবেসে ফেলি কেন!
বুঝি না আমার রক্তে কি আছে নেশা-

দেবদারু-চুলে উদাসী বাতাস মেখে
স্বপ্নের চোখে অনিদ্রা লিখি আমি,
কোন বেদনার বেনোজলে ভাসি সারাটি স্নিগ্ধ রাত?

সহজেই আমি ভালোবেসে ফেলি, সহজে ভুলিনা কিছু-
না-বলা কথায় তন্ত্রে তনুতে পুড়ি,
যেন লাল ঘুড়ি একটু বাতাস পেয়ে
উড়াই নিজেকে আকাশের পাশাপাশি।

সহজে যদিও ভালোবেসে ফেলি
সহজে থাকি না কাছে,
পাছে বাঁধা পড়ে যাই।
বিস্মিত তুমি যতোবার টানো বন্ধন-সুতো ধ’রে,
আমি শুধু যাই দূরে।

আমি দূরে যাই-
স্বপ্নের চোখে তুমি মেখে নাও ব্যথা-চন্দন চুয়া,
সারাটি রাত্রি ভাসো উদাসীন বেদনার বেনোজলে…

এতো সহজেই ভালোবেসে ফ্যালো কেন?

...........কথা ছিলো সুবিনয় ...........

কথা ছিলো রক্ত-প্লাবনের পর মুক্ত হবে শস্যক্ষেত,
রাখালেরা পুনর্বার বাঁশিতে আঙুল রেখে
রাখালিয়া বাজাবে বিশদ।
কথা ছিলো বৃক্ষের সমাজে কেউ কাঠের বিপনি খুলে বোসবে না,
চিত্রর তরুন হরিনেরা সহসাই হয়ে উঠবে না
রপ্তানিযোগ্য চামড়ার প্যাকেট।

কথা ছিলো , শিশু হবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সম্পদের নাম।
নদীর চুলের রেখা ধ‌‌রে হেঁটে হেঁটে যাবে এক মগ্ন ভগীরথ,
কথা ছিলো, কথা ছিলো আঙুর ছোঁবো না কোনোদিন।

অথচ দ্রাক্ষার রসে নিমজ্জিত আজ দেখি আরশিমহল,
রাখালের হাত দুটি বড় বেশি শীর্ণ আর ক্ষীণ,
বাঁশি কেনা জানি তার কখনোই হয়ে উঠে নাই-

কথা ছিলো, চিল-ডাকা নদীর কিনারে একদিন ফিরে যাবো।
একদিন বট বিরিক্ষির ছায়ার নিচে জড়ো হবে
সহজিয়া বাউলেরা,
তাদের মায়াবী আঙুলের টোকা ঢেউ তুলবে একতারায়-
একদিন সুবিনয় এসে জড়িয়ে ধরে বলবেঃ উদ্ধার পেয়েছি।

কথা ছিলো, ভাষার কসম খেয়ে আমরা দাঁড়াবো ঘিরে
আমাদের মাতৃভূমি, জল, অরণ্য, জমিন, আমাদের
পাহাড় ও সমুদ্রের আদিগন্ত উপকূল-
আজন্ম এ-জলাভূমি খুঁজে পাবে প্রকৃত সীমানা তার।

কথা ছিলো, আর্য বা মোঘল নয়, এ-জমিন অনার্যের হবে।
অথচ এখনো আদিবাসী পিতাদের শৃঙ্খলিত জীবনের
ধারাবাহিকতা
কৃষকের রন্ধ্রে রক্তে বুনে যায় বন্দিত্বের বীজ।

মাতৃভূমি-খন্ডিত দেহের পরে তার থাবা বসিয়েছে
আর্য বণিকের হাত।

আর কী অবাক! ইতিহাসে দেখি সব
লুটেরা দস্যুর জয়গানে ঠাঁসা,
প্রশস্তি, বহিরাগত তস্করের নামে নানারঙা পতাকা ওড়ায়।

কথা ছিলো ‌’আমাদের ধর্ম হবে ফসলের সুষম বন্টন’,
আমাদের তীর্থ হবে শস্যপূর্ণ ফসলের মাঠ।
অথচ পান্ডুর নগরের অপচ্ছায়া ক্রমশ বাড়ায় বাহু
অমলিন সবুজের দিকে, তরুদের সংসারের দিকে।
জলোচ্ছাসে ভেসে যায় আমাদের ধর্ম আর তীর্থভূমি,
আমাদের বেঁচে থাকা, ক্লান্তিকর আমাদের দৈনন্দিন দিন।


..........কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প..................

তাঁর চোখ বাঁধা হলো।
বুটের প্রথম লাথি রক্তাক্ত করলো তার মুখ।
থ্যাতলানো ঠোঁটজোড়া লালা-রক্তে একাকার হলো,
জিভ নাড়তেই দুটো ভাঙা দাঁত ঝরে পড়লো কংক্রিটে।
মা…..মাগো….. চেঁচিয়ে উঠলো সে।

পাঁচশো পঞ্চান্ন মার্কা আধ-খাওয়া একটা সিগারেট
প্রথমে স্পর্শ করলো তার বুক।
পোড়া মাংসের উৎকট গন্ধ ছড়িয়ে পড়লো ঘরের বাতাসে।
জ্বলন্ত সিগারেটের স্পর্শ
তার দেহে টসটসে আঙুরের মতো ফোস্কা তুলতে লাগলো।

দ্বিতীয় লাথিতে ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে গেলো দেহ,
এবার সে চিৎকার করতে পারলো না।

তাকে চিৎ করা হলো।
পেটের ওপর উঠে এলো দু’জোড়া বুট, কালো ও কর্কশ।
কারণ সে তার পাকস্থলির কষ্টের কথা বলেছিলো,
বলেছিলো অনাহার ও ক্ষুধার কথা।

সে তার দেহের বস্ত্রহীনতার কথা বলেছিলো-
বুঝি সে-কারণে
ফর ফর করে টেনে ছিঁড়ে নেয়া হলো তার শার্ট।
প্যান্ট খোলা হলো। সে এখন বিবস্ত্র, বীভৎস।

তার দুটো হাত-
মুষ্টিবদ্ধ যে-হাত মিছিলে পতাকার মতো উড়েছে সক্রোধে,
যে-হাতে সে পোস্টার সেঁটেছে, বিলিয়েছে লিফলেট,
লোহার হাতুড়ি দিয়ে সেই হাত ভাঙা হলো।
সেই জীবন্ত হাত, জীবন্ত মানুষের হাত।

তার দশটি আঙুল-
যে-আঙুলে ছুঁয়েছে সে মার মুখ, ভায়ের শরীর,
প্রেয়সীর চিবুকের তিল।
যে-আঙুলে ছুঁয়েছে সে সাম্যমন্ত্রে দীক্ষিত সাথীর হাত,
স্বপ্নবান হাতিয়ার,
বাটখারা দিয়ে সে-আঙুল পেষা হলো।
সেই জীবন্ত আঙুল, মানুষের জীবন্ত উপমা।
লোহার সাঁড়াশি দিয়ে,
একটি একটি করে উপড়ে নেয়া হলো তার নির্দোষ নখগুলো।
কী চমৎকার লাল রক্তের রঙ।

সে এখন মৃত।
তার শরীর ঘিরে থোকা থোকা কৃষ্ণচূড়ার মতো
ছড়িয়ে রয়েছে রক্ত, তাজা লাল রক্ত।

তার থ্যাতলানো একখানা হাত
পড়ে আছে এদেশের মানচিত্রের ওপর,
আর সে হাত থেকে ঝরে পড়ছে রক্তের দুর্বিনীত লাভা-

...........এ কেমন ভ্রান্তি আমার...............

এ কেমন ভ্রান্তি আমার !
এলে মনে হয় দূরে স’রে আছো, বহুদূরে,
দূরত্বের পরিধি ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে আকাশ।
এলে মনে হয় অন্যরকম জল হাওয়া, প্রকৃতি,
অন্য ভূগোল, বিষুবরেখারা সব অন্য অর্থবহ-
তুমি এলে মনে হয় আকাশে জলের ঘ্রান।

হাত রাখলেই মনে হয় স্পর্শহীন করতল রেখেছো চুলে,
স্নেহ- পলাতক দারুন রুক্ষ আঙুল।
তাকালেই মনে হয় বিপরীত চোখে চেয়ে আছো,
সমর্পন ফিরে যাচ্ছে নগ্ন পায়ে একাকী বিষাদ- ক্লান্ত
করুণ ছায়ার মতো ছায়া থেকে প্রতিচ্ছায়ে।
এলে মনে হয় তুমি কোনদিন আসতে পারোনি..

কুশল শুধালে মনে হয় তুমি আসোনি
পাশে বসলেও মনে হয় তুমি আসোনি।
করাঘাত শুনে মনে হয় তুমি এসেছো,
দুয়ার খুল্লেই মনে হয় তুমি আসোনি।
আসবে বললে মনে হয় অগ্রিম বিপদবার্তা,
আবহাওয়া সংকেত, আট, নয়, নিম্নচাপ, উত্তর, পশ্চিম-
এলে মনে হয় তুমি কোনদিন আসতে পারোনি।

চ’লে গেলে মনে হয় তুমি এসেছিলে,
চ’লে গেলে মনে হয় তুমি সমস্ত ভূবনে আছো।

.................বাতাসে লাশের গন্ধ.............

আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই
আজো আমি মাটিতে মৃত্যূর নগ্ননৃত্য দেখি,
ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে…
এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দু:স্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময় ?
বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে
মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।
এই রক্তমাখা মটির ললাট ছুঁয়ে একদিন যারা বুক বেঁধেছিলো।
জীর্ণ জীবনের পুঁজে তারা খুঁজে নেয় নিষিদ্ধ আধাঁর,
আজ তারা আলোহীন খাঁচা ভালোবেসে জেগে থাকে রাত্রির গুহায়।
এ যেন নষ্ট জন্মের লজ্জায় আরষ্ট কুমারী জননী,
স্বাধীনতা – একি হবে নষ্ট জন্ম ?
একি তবে পিতাহীন জননীর লজ্জার ফসল ?

জাতির পতাকা খামচে ধরেছে আজ পুরোনো শকুন।

বাতাশে লাশের গন্ধ
নিয়ন আলোয় তবু নর্তকীর দেহে দুলে মাংসের তুফান।
মাটিতে রক্তের দাগ -
চালের গুদামে তবু জমা হয় অনাহারী মানুষের হাড়
এ চোখে ঘুম আসেনা। সারারাত আমার ঘুম আসেনা-
তন্দ্রার ভেতরে আমি শুনি ধর্ষিতার করুণ চিৎকার,
নদীতে পানার মতো ভেসে থাকা মানুষের পচা লাশ
মুন্ডহীন বালিকার কুকুরে খাওয়া বিভৎস্য শরীর
ভেসে ওঠে চোখের ভেতরে। আমি ঘুমুতে পারিনা, আমি
ঘুমুতে পারিনা…
রক্তের কাফনে মোড়া – কুকুরে খেয়েছে যারে, শকুনে খেয়েছে যারে
সে আমার ভাই, সে আমার মা, সে আমার প্রিয়তম পিতা।
স্বাধীনতা, সে আমার – স্বজন, হারিয়ে পাওয়া একমাত্র স্বজন -
স্বাধীনতা – আমার প্রিয় মানুষের রক্তে কেনা অমূল্য ফসল।
ধর্ষিতা বোনের শাড়ী ওই আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা।

তথ্যসূত্র
http://www.kobiruddro.com
সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; ঢাকা, ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা- ৩৫৭।
http://www.bangladeshfirst.com/
কবি ও কবিতা – রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ | শব্দনীড়
wikipedia.org
১৪টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×