somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাধীনতার অপ্রকাশিত কিছু সত্য ও নিউক্লিয়াস

৩১ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় ছোট ভাই Rayan Rhiddho দীর্ঘদিন যাবত বলে আসছিলো “নিউক্লিয়াস” নিয়ে লিখতে। কিন্তু নিউক্লিয়াস নামক সংগঠন নিয়ে লিখতে হলে যে পরিমান জ্ঞানের প্রয়োজন তার ছিটে-ফোঁটাও আমার নেই। তবুও প্রিয় ছোট ভাইটির অনুরোধ রাখতেই এই লেখার সূচনা।

. প্রশ্নঃ নিউক্লিয়াস কি?

উত্তরঃ নিউক্লিয়াস একটি গোপন সংগঠনের নাম। যার জন্ম ১৯৬২ সালে।

. প্রশ্নঃ কারা এই সংগঠন তৈরী করে?

উত্তরঃ নিউক্লিয়াস গঠন হয় সেই সময়ের তিন স্বাধীনতা পাগল তরুনের হাত ধরে। এই তিন যুবক হলেন, ১. জনাব সিরাজুল আলম খান (দাদা ভাই), ২. মরহুম আব্দুর রাজ্জাক, ৩. মরহুম কাজী আরেফ আহমেদ।

. প্রশ্নঃ কি উদ্দেশ্য নিয়ে নিউক্লিয়াস গঠিত হয়?

উত্তরঃ নিউক্লিয়াস গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্য নিয়ে।

. প্রশ্নঃ নিউক্লিয়াস গঠনের পিছনে মূল কারিগর কে ছিলেন?

উত্তরঃ জনাব সিরাজুল আলম খান (দাদা ভাই),

. প্রশ্নঃ যাদেরকে নিয়ে নিউক্লিয়াস গঠন হয় তাদের সেই সময়কার পরিচয় কি ছিল?

উত্তরঃ যাদেরকে নিয়ে নিউক্লিয়াস গঠন হয় তারা সবাই তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন।

প্রশ্নঃ ছাত্রলীগ তো আঃলীগের ছাত্র সংগঠন, তাহলে বলা যায় আঃলীগই প্রথম স্বাধীনতার জন্য গোপনে কাজ শুরু করে?

উত্তরঃ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের জন্ম রাজনৈতিক দল আঃলীগের জন্মের পূর্বে। এবং তৎকালীন ছাত্রলীগ আঃলীগের কোন অঙ্গ সংগঠন ছিল না। তবে বাংলাদেশের জন্মের পূর্বে ছাত্রলীগে দুটি ধারা ছিল। ১. প্রতিক্রিয়াশীল। ২. প্রগতিশীল। ছাত্রলীগের প্রতিক্রিয়াশীল অংশ ছিল রাজনৈতিক দল আঃলীগের পক্ষে। আর প্রগতিশীল অংশ ছিল মূলত ছাত্র/জনতার মূখপাত্র হিসেবে পরিচিত।

. প্রশ্নঃ নিউক্লিয়াসের সদস্যরা কোন অংশের ছিল?

উত্তরঃ নিউক্লিয়াসের সদস্যরা ছিলেন প্রগতিশীল অংশের।

. প্রশ্নঃ ৬২ সালে নিউক্লিয়াস গঠনের পর তারা কি কি কাজ করেছে?
.

উত্তরঃ ৬২ সালে নিউক্লিয়াস গঠনের পর থেকে এই সংগঠন কর্মী তৈরীতে মনোনিবেশ করে। প্রাথমিক ভাবে এই সংগঠনের কর্মী হিসেবে ছাত্রলীগের প্রগতিশীল অংশের তাদেরকেই নেয়া হয় যাদের মাঝে স্বাধীনতার আকাংখা ছিল প্রবল। এবং বিশ্বাসের দিক দিয়ে যারা ছিল শতভাগ যোগ্য।
এই সংগঠন তাদের কর্মী তেরীরে এতটাই গোপনীয়তা রক্ষা করে চলে যে অন্য কোন রাজনৈতিক দল বা ছাত্র সংগঠন তার কিছুই আঁচ করে সক্ষম হয়নি। উদাহরন হিসেবে বলা যায় বর্তমানে যুদ্ধাপরাধী দল জামাতের ছাত্র সংগঠন যেমন ভাবে বছরের পর বছর ধরে তাদের কর্মীদের ব্রেইন ওয়াস করে তৈরী করে নিউক্লিয়াস ও ঠিক তেমনি ভাবে মেধাবী দেখে কর্মী তৈরী করতো। মূলত “শিবিরের কর্মী তৈরীর পদ্ধতিটি নিউক্লিয়াসের কর্মী তৈরীর পদ্ধতি থেকেই নেয়া বলা চলে।

. প্রশ্নঃ নিউক্লিয়াসের উল্লেখ যোগ্য কাজ গুলো কি কি?

উত্তরঃ নিউক্লিয়াসের উল্লেখ যোগ্য কাজ হলো আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নিউক্লিয়াস তৈরী করে, আমাদের জাতীয় সঙ্গীত নিউক্লিয়াস নির্ধারন করে, স্বাধীনতার মন্ত্র মানুষকে উজ্জীবিতকারী যুগান্তকারী স্লোগান “জয় বাংলা” নিউক্লিয়াসের একটি হাতে লেখা পত্রিকার নাম। (“জয় বাংলা স্লোগানের ইতি কথা” নামে ব্লগার banglar_hasan সামু ব্লগে তিন পর্বের একটি ব্লগ লিখেন যেখানে “জয় বাংলা” স্লোগানের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।) “তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা,মেঘনা,যমুনা” সহ বেশ কিছু যুগান্তকারী স্লোগান নিউক্লিয়াস সৃষ্টি করে যা পূর্ব বাংলার মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে। এমনকি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষনের যে অংশটিকে আঃলীগ স্বাধীনতার ঘোষনা বলে দাবী করে, “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম” এ অংশটি বঙ্গবন্ধুর ভাষনে নিউক্লিয়াস সংযোজন করে।

. প্রশ্নঃ স্বাধীনতার পিছনে নিউক্লিয়াসের এত অবদান, তারপরেও ইতিহাসে তাদের নাম নেই কেন? এবং বঙ্গবন্ধুর ভাষনে নিউক্লিয়াস কি করে তাদের বক্তব্য যোগ করল?

উত্তরঃ নিউক্লিয়াসের কথা আমাদের ইতিহাস থেকে ইচ্ছে করেই সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে, কেননা ইতিহাসে যদি তাদের কথা উল্লেখ করা হয় তবে জাতীয় নেতাদের অনেকেই জাতীয় হিরো থেকে জাতীয় বেঈমানে পরিনত হবেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষনে নিউক্লিয়াস তাদের বক্তব্য যোগ করতে পারার পিছনে অনেক লম্বা ইতিহাস আছে। মূলত নিউক্লিয়াসের সদস্যরা সকলেই ছিলেন তৎকালীন ছাত্র নেতা। কেউ জাতীয় বা আঞ্চলিক রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না। আর সে কারনেই নিউক্লিয়াস সেই সময়কার বেশ কয়েকজন জাতীয় নেতাকে চয়েস করেন যার ঘাড়ে ভর করে দেশকে স্বাধীনতার নোঙ্গরে নেয়া যাবে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তারা ১৯৬২ সাল থেকেই তাদের চয়েজ করা নেতাদের পরিক্ষা/নিরিক্ষা করতে থাকেন, এবং খুঁজতে থাকেন কার ঘাড়ে চড়ে তাদের আসল উদ্দেশ্য সফল করবেন। সেই সূত্রেই বঙ্গবন্ধুর সাথে নিউক্লিয়াসের নেতাদের তৈরী হয় নিবিড় বন্ধন, সেই বন্ধন তারা এতটাই মজবুত করতে সক্ষন হন যে ৭ মার্চের ভাষনের তিন দিন আগেই তারা বঙ্গবন্ধুকে সকল আঃলীগ নেতাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এবং বঙ্গবন্ধুর মাধ্যমে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষনে “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম” কথা গুলো বলাতে সক্ষম হন।

. প্রশ্নঃ স্বাধীনতার জন্য নিউক্লিয়াস কি ধরনের প্রস্তুতি গ্রহন করে?

উত্তরঃ স্বাধীনতার জন্য নিউক্লিয়াস ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৭০ সালের ভিতরে সাড়ে সাত হাজার কর্মী তৈরী করে যাদেরকে বিদেশের মাটি থেকে সামরিক ট্রেনিং দিয়ে লড়াইয়ের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করার কাজ হাতে নেয়। এই সাড়ে সাত হাজার কর্মীর মাঝে বেশ কয়েকজনকে ৭০ এর নির্বাচনের পূর্বেই বিদেশের মাটি থেকে সামরিক টেনিং দিয়ে আনা হয়। বাকীদের টেনিং ৭০ এর মাঝামাঝি বিদেশের মাটিতে হবার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু নির্বাচন এর কারনে তা পিছিয়ে যায়। যাদেরকে নির্বাচনের পূর্বেই টেনিং করিয়ে আনা হয় তাদের মাঝে “ওরা এগারজন ছবির নায়ক খসরু ভাই এবং মোস্তফা মহসিন মন্টু (বর্তমানে ডাঃ কামাল হোসেনের রাজনৈতিক দলে যুক্ত) উল্লেখ যোগ্য। দেশ স্বাধীন করার লক্ষে নিউক্লিয়াস একটি সামরিক বাহীনিও গঠন করে। যার নাম “বাংলাদেশ লিভারেশন ফোর্স সংক্ষেপে বিএলএফ। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার অনেক অনেক পূর্বেই বিএলএফ সদস্যদের কে গোপনে দেশের ভিতরেই সামরিক ট্রেনিং দেয়া হতো খুবই অল্প সংখক করে তা তৃতীয় মাত্রার বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে মরহুম রাজ্জাক ভাই, আ,স,ম আব্দুর রব, শাহজাহান সিরাজ উল্লেখ করেছেন। যা ইউটিউবে খোঁজ করলে পাওয়া যায়।

. প্রশ্নঃ নিউক্লিয়াসে কারা কারা ছিলে তার কি কোন লিষ্ট আছে?

উত্তরঃ হ্যাঁ, প্রায়ত আরজু আহমেদ রচিত এবং নিউক্লিয়াসের জনক সিরাজুল আলম খান (দাদা ভাই) কতৃক স্বীকৃত “নিউক্লিয়াস” নামক একটি বইয়ে অনেক সদস্যের নাম উল্লেখ আছে।

সূত্রঃ বর্তমানে জীবিত নিউক্লিয়াসের সদস্যদের জবানি থেকে নেয়া।

বিঃদ্রঃ এই লেখাটির সূত্র ধরে ইতিহাস ঘাটলে স্বাধীনতার ইতিহাসের অনেক সত্যই জানা যাবে, যা আজও অপ্রকাশিত।

১। ডা. মাহফুজুর রহমান - 'বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগ-নিউক্লিয়াস বাংলাদেশ সৃষ্টির মূলধারা';
২। মনিরুল ইসলাম- 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সমাজতন্ত্র;
৩। কাজী আরেফ আহমেদ - 'বাঙালির জাতীয় রাষ্ট্র' (শীঘ্রি প্রকাশিতব্য)

বইগুলোতে বিস্তারিত প্রামাণ্য তথ্য পাওয়া যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:২৫
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×