somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জনাব আব্দুল গাফফার চৌধুরীকে খোলা চিঠি।

২৮ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চিঠির শুরুতে কিছু ভূমিকা থাকে। যেহেতু এটা খোলা চিঠি তাই এর ভূমিকাও একটু ভিন্ন। চিঠি পত্র লেখার যুগ গত হয়েছে বেশ অনেক বছর আগে, ব্যক্তি জীবনে চিঠি লেখার অভিজ্ঞতাটাও খুব সামান্য। জনাব চৌধুরীকে চিনি তার লেখা বিভিন্ন কলাম পড়ে। তার সম্পর্কে জানার পরিধিও সীমিত, যদ্দুর জানি তিনি বিলেতে বসবাসকারী একজন আওয়ামী কলামিষ্ট। অবশ্য আমাদের দেশের বেশি অংশ কলাম লেখকগন কোন না কোন দলের অনুসারী।

জনাব চৌধুরী আপনি গত ১৩ই আগস্ট দৈনিক জনকণ্ঠের চতুরঙ্গে প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু আর কত শহীদ হবেন?’ শীর্ষক লেখাটিতে ‘নিউক্লিয়াস’ নিয়েও নিম্নরুপ মন্তব্য করেছেন:
“…হালে শুরু হয়েছে তাঁকে (বঙ্গবন্ধু) বিতর্কিত ও তাঁর ভূমিকাকে খাটো করার জন্য কিছু ‘বামন দেবতার’ আবির্ভাব। ... এখন স্বাধীনতার পতাকা সর্বপ্রথম উত্তোলনের একজন দাবিদার খাড়া করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণও নাকি তখনকার ছাত্রনেতাদের দ্বারা গঠিত একটি নিউক্লিয়াস মুসাবিদা করেছিল এবং ভাষণটি দেয়ার সময় বঙ্গবন্ধু যাতে ভুল না করেন, সে জন্য এই নিউক্লিয়াসের এক সদস্য বঙ্গবন্ধুর পাঞ্জাবির খুট ধরে টেনেছিলেন বলেও হাস্যকর প্রলাপোক্তিযুক্ত প্রচারপত্র হালে দেশে-বিদেশে প্রচার করা হচ্ছে। এদের মস্তিষ্ক পরীক্ষা করা প্রয়োজন এবং দরকার হলে সরকারী খরচে চিকিৎসার জন্য এদের হেমায়েতপুরে পাঠানো উচিত।”

১. স্বাধীনতার পতাকা সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে কে কোথায় কখন উত্তোলন করেছেন, তা আপনি না জানার ভান করলেও তার সাক্ষী আছেন লক্ষ জনতা। নতুন করে এর ‘দাবিদার খাড়া’ করার মতো আর কি কিছু বাকি আছে জনাব চৌধুরী?

২. ৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে আপনার মন্তব্যে মাধ্যমে আপনি নিজের অজ্ঞতা প্রকাশ করে দিয়েছেন। “সবার পক্ষে সব কিছু জানা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি না জানাটা দোষের কিছু নয়” তবে কোন বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকলে সে বিষয়ে মন্তব্যকারী আর যাই হোক জ্ঞানী নিশ্চয় বলা হয় না। ৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে আপনার অজ্ঞতার প্রেক্ষিতে জানানো উচিত যে ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণের অজানা ইতিহাস’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রচারপত্রটি প্রকাশ করেছে, “সিরাজুল আলম খান পাঠচক্র” নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ব্যক্তি সিরাজুল আলম খান নন এবং এটি যে তিনি নিজে লিখেছেন তারও কোন প্রমাণ নেই। অথচ আপনি তাকে ‘ইতিহাসবিদের পোষাক’ পরিয়েছেন। এতে মনে হয়, আপনি প্রচারপত্রটি না দেখে বা না পড়ে স্রেফ বিদ্বেষ প্রসূত বা অন্য কারো দ্বারা প্ররোচিত হয়ে ‘উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপিয়েছেন।

জনাব চৌধুরী,
প্রচারপত্র অনুসারে, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের অজানা অধ্যায়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ‘নিউক্লিয়াস’-এর সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মণি, আবদুর রাজ্জাক, কাজী আরেফ আহমেদ, তোফায়েল আহমেদ, আসম আবদুর রব এবং আওয়ামী লীগ ‘হাই কম্যান্ড’-এর সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, খন্দকার মোস্তাক আহমেদ ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলী প্রমুখ। এঁদের প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বেই যে ’৭১ সালে যুদ্ধের মাধ্যমে দেশটা স্বাধীন হয়েছে তা আপনার চেয়ে কে বেশী জানে! প্রশ্ন জাগে, আপনি কার স্বার্থ হাসিল করার জন্য এঁদেরকে ‘বামন দেবতা’বলে খাটো/অপমান করার চেষ্টা করলেন?
বঙ্গবন্ধুকে বিতর্কিত ও তাঁর ভূমিকাকে খাটো করার জন্য উদ্দেশ্য নিয়ে যদি প্রচারপত্রটি তৈরী ও বিতরন করা হতো তাহলে প্রচারপত্রে যাদের নাম উল্লখ আছে তাদের মাঝে জনাব তোফায়েল আহমেদ শুরু থেকে আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতিবীদ ও মন্ত্রী অনেক আগেই এর উত্তর দিতেন। নিশ্চয় আপনার অজানা থাকার কথা নয় যে, বেশ কিছুদিন আগে “বুয়েটের” একজন শিক্ষক কারো নাম উল্লেখ না করে তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে) “হায়না” লিখার দায়ে জেলে গেছেন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে যেখানে সংবাদ প্রচারের দায়ে সংবাদ কর্মীকে জেল/জরিমানা করা হয়, সেখানে আপনার ভাষ্য অনুসারে বঙ্গবন্ধুকে বিতর্কিত ও তাঁর ভূমিকাকে খাটো করার জন্য উদ্দেশ্য নিয়ে প্রচারপত্র প্রকাশ কতটা গুরুতর অপরাধের খাতায় পড়ে তা হিসেব করেছেন কি জনাব চৌধুরী?

জনাব চৌধুরী,
আপনার ভাষায় ভাষণটি ‘ছাত্রনেতাদের দ্বারা গঠিত একটি নিউক্লিয়াস মুসাবিদা করেছিল এবং ভাষণটি দেয়ার সময় বঙ্গবন্ধু যাতে ভুল না করেন, সে জন্য এই নিউক্লিয়াসের এক সদস্য বঙ্গবন্ধুর পাঞ্জাবির খুট ধরে টেনেছিলেন’, আপনার এ বাক্যাংশটি যে সত্য নয় তার প্রমাণ প্রচারপত্রেই রয়েছে। প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, “মধ্যরাতের এই আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে বললেন, ... তাঁকে যেন কোনো না কোনোভাবে মঞ্চ থেকেই মনে করে দেয়া হয়। তাঁর সেই কথার প্রসঙ্গে ধরে আ স ম আবদুর রবকে বঙ্গবন্ধুর জামা বা পাজামায় একটু টান দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।”পাঞ্জাবির খুট ধরে টানা হয়নি।
আর বঙ্গবন্ধুর পরামর্শে নেয়া এই সিদ্ধান্তে আপনার ভাষায় বঙ্গবন্ধুকে ‘বিতর্কিত ও তাঁর ভূমিকাকে খাটো’ কি ভাবে করা হলো? এতেও কি বোঝা যায় না যে প্রচারপত্রটি আপনি পড়েন নি ? আপনার কলাম পাঠক হিসেবে যদি প্রশ্ন করি প্রচারপত্রটি আপনি পড়ে থাকলেও নিজের অজ্ঞতা বশত বঙ্গবন্ধুর উপস্থিত বুদ্ধিকে খাটো করার উদ্দেশ্য নিয়ে আপনি এই কলাম লিখেছেন। কি জবাব দিবেন জনাব চৌধুরী?

জনাব চৌধুরী,
“সিরাজুল আলম খান পাঠচক্রের বেশ কিছু প্রচারপত্র পড়ে দেখলাম। সেখানে স্বাধীনতার ইশতেহার, বাংলাদেশের পতাকার ডিজাইন, জাতীয় সঙ্গীত নির্ধারন সহ একটি দেশ স্বাধীন করার জন্য যে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রয়োজন তার সব কিছুই গোপন সংগঠন “নিউক্লিয়াস” বঙ্গবন্ধুর সমর্থনে তৈরী করে। সেই সকল বিষয় নিয়ে আপনার কলামে কোন মন্তব্য খুঁজে পেলাম না দেখে হতাশ হলাম। আপনার ভাষায় ‘বামন দেবতার’ আবির্ভাব ও তাদের সরকারী খরচে চিকিৎসার যে উপদেশ আপনি দিয়েছেন তা দেয়ার আপনি কে? বিলেতে বসে আপনি পত্রিকায় কলাম লিখে যে সন্মানীটা নেন তা দেশের অর্থের অপচয় ছাড়া আর কি কাজে আসে বলবেন কি?

প্রচারপত্রটি পড়ে যা বুঝেছি, ‘নিউক্লিয়াস’ তাদের সে সময়কার গোপনে নেয়া কৌশলাদি প্রকাশের চেষ্টা করেছে মাত্র। যা আপনি বা আপনার মতো কারো জানার কথা নয়। যাহোক, ‘নিউক্লিয়াস’-এর অস্তিত্ব এবং এর কর্মকান্ডের সত্যতা প্রমাণ ও মূল্যায়ন করার দায়িত্ব ইতিহাসের ছাত্রদের। আপনি নিশ্চয়ই সে রকম কেউ নন।
বিণীত,
জহিরুল ইসলাম অমি হাসান,
ব্লগার ও সংবাদ কর্মী।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×