somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দৌড়

১০ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(সতর্কবানীঃ হার্ডকোর সাইন্স প্রিয় মানুষ ছাড়া এই পোস্ট কেউ পড়ে ফেললে, তার জন্য লেখক দায়ী থাকবেন না।)

(১) হঠাৎ করে কি যে হল, ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। কেমন আচমকা ছুটতে লাগলাম। কোথা থেকে এলাম, কিভাবে এলাম, কিছুই আমার খেয়াল নেই। হুশ হতেই দেখি, কেমন একটা অন্ধকার টানেলের (২) মধ্য দিয়ে ছুটে চলছি, আমার সাথে আরো দুই জন ছুটছে (৩), প্রায় একই রকম দেখতে দুজন, না ভুল বললাম, এক রকম না, শেষেরজন একটু খাট।

(৩) বেশীক্ষন এভাবে ছুটতে হল না, কেমন একটা পেঁচানো যন্ত্রের মধ্যে ঢুকে গেলাম, আমাকে কি কি জানি পিষে ফেললো। ভয়ঙ্কর কোন পরিবর্তন হল আমার। পরমুহুর্তে টের পেলাম, আমি ভাসছি!!

সাথের দুজন এখন আর নেই, এতক্ষন একটা ভরসা পাচ্ছিলাম ওদেরকে দেখে, এখন আরো বেশী ভয় লাগছে। বাতাসে কাঁপন ধরিয়ে ছুটে যাচ্ছি, কোন দিকে যাচ্ছি কে জানে!! (৪)

যাহ!! আবার কিভাবে অন্ধকার পেঁচানো যন্ত্রের (৫) ভেতরে ঢুকে পরলাম, আবার সেই যন্ত্রনা। প্রায় সাথে সাথেই চারিদিকের আলোয় চোখ ঝলসে গেল আমার। এ কোন জায়গায় এসে পরলাম! চারপাশে সবাই দেখি ছুটছে। আর কি তাদের রঙ! (৬) নিজের দিকে তাকানোর কথা খেয়াল হল এতক্ষনে, আরে!! আমারও দেখি বেশভূষা বদলে গেছে! হাল্কা বেগুনী রঙ এখন আমার সারা দেহের! একটু পেছনে আগের সেই দুই সাথিও আছে। কথা বলতে চাইছিলাম ওদের সাথে, কিন্তু কিভাবে থামতে হয় ঠিক বুঝতে পারছিলাম না।

অনেকক্ষন ধরে ছুটছি, অনেক দুর্বলও হয়ে গেছি। যখন মনে হল আর পারছি না, তখন দেখি সামনে আবার এক কালো ঘর (৭)। সবাই সাই সাই করে ঢুকে পরছে সেখানে। বুঝে গেলাম, আমাকেও ঢুকতে হবে, অবশ্য আর কোন উপায়ও ছিল না। বেশীক্ষন দেরি হল না। সেই ঘর থেকে বের হয়ে যখন আবার ছুটতে হল, মনে হল যেন নবযৌবন ফিরে পেয়েছি, আবার সেই আগের শক্তিতে ছুটতে থাকলাম।

এভাবে অনেকক্ষন চলার পরে যখন আরেকবার থামার সুযোগ পেলাম ততক্ষনে পুরো হাঁপিয়ে গেছি। সামনে যখন বিশাল এক লাইন দেখতে পেলাম (৮), মনে মনে একটু খুশীও হয়ে উঠলাম। যাক বাবা, একটু জিরিয়ে নেয়া যাবে, কাউকে একটু জিজ্ঞেসও করে নেয়া দরকার কি হচ্ছে আসলে! কিছুই তো বুঝতে পারছিনা।

সামনের জন এখন একদম গায়ে গা লেগে আছে, ভাবছিলাম জিজ্ঞেস করব। এত কাছাকাছি আছি, পরিচয়টা অন্তত হওয়া উচিত। কিন্তু দেয়ালে লাগানো নোটিশ দেখে আর সাহস হল না। একটা মাথার খুলির সাইন, ক্রস চিহ্ন দিয়ে কাটা, আর লেখা, পরস্পরের সাথে মিশবেন না, (৯) একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড। আমার কৌতুহলের কাটাটা একদম ফিউজ হয়ে গেল এই নোটিশ দেখে।

সামনে দেখি এক ট্রাফিক পুলিশের চেহারা দাঁড়িয়ে, একজন একজন করে সামনে যাচ্ছে, সামনে সাত রাস্তার মোড়ের মত এক মোড়, একেক জনকে একেক দিকে পাঠাচ্ছে সেই পুলিশ। মাঝে মাঝে বিশাল এক নোটবই দেখে কি যেন হিসেব কষছে, আর কখনো গম্ভীর হয়ে মাথা নাড়ছে, কখনো একটু মুচকি হাসছে! (১০) পুলিশের মুখে মুচকী হাসি দেখলে স্ব্য়ং প্রধানমন্ত্রীরও নাকি বুক শুকিয়ে যায়, আমার কথা আর নাই বা বললাম।

আমি যখন সেই পুলিশের সামনে যেয়ে দাঁড়ালাম, আমাকে দেখে কেন জানি না মুখখানি তার পুরো বেজার হয়ে গেল। সেই ভাবেই আমার দিকে একবার অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে বললো, নতুন নাকি? পুরো পথখানি দেখি ঠিক করে দিতে হবে। আমার আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই। রাগে গজগজ করতে থাকে সে, আমি ভ্যাবলার মত দাঁড়িয়ে রইলাম। কি হচ্ছে, কেন হচ্ছে, কিছুই তো জানি না, জানলে নাহয় কিছু একটা বলতাম। সারা বই ঘেটে কি সব হিসাব করে আরেকবার ভেংচি কেটে বলল, ডানদিকের ৪ নম্বর পথে চলে যাও, এই বলে হিজিবিজি সংখ্যা লেখা একটা কাগজ (১১) পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল, সামনে কেউ আটকালে এইটা দেখাবে। এবার ভাগো, আমার বহুত সময় নষ্ট করছ।ভাগো।

বলতে যতটুকু দেরি, আমি কি আর দেরি করি? দিলাম ছুট। এরপর আর ঝামেলা হয়নি, ৩ বার শুধু থামতে হয়েছে, পকেটের কাগজটুকু দেখালে খালি বলেছে ঐদিকে যাও, আমিও ছুট লাগিয়েছি সাথে সাথে, কে চায় পুলিশের মেজাজ খারাপ করতে? আমার সাথের বাকি দুজনেরো একি অবস্থা, ওরা দেখি সব সময় আমার পেছন পেছন আসছে! জিজ্ঞেস করব নাকি কি ব্যাপার?



এতক্ষন তো ভালই এসেছিলাম।শেষ মুহুর্তে এসে কোথায় জানি ঘাপলা হয়ে গেল। অনেকে অপেক্ষা করছি একসাথে। এতদূর এসে সবার শক্তিই প্রায় শেষ, মর মর অবস্থা, কিন্তু গেট দিয়ে বের হতেই দিচ্ছে না। কিসব শুনতে পাচ্ছি - ব্যান্ডউইথ নাকি ভাল না। কিছু কল টার্মিনেশন করতেই হবে। এইসব হাবিজাবি। কিভাবে জানি বুঝে গেলাম এবার মৃত্যু আসন্ন। সময় চলে এসেছে। এমন সময় কে জানি টান মেরে তুলে নিয়ে গেল, পেছন পেছন ঐ দুটোও আসতে লাগলো। কে একজন (১২) বলে উঠল, এইটাই শেষ, আর কোনটা খতম হবার আগে যদি কাউকে ঢুকতে দাও, একেবারে খুনাখুনি হয়ে যাবে!!

এইটাই ছিল তার শেষ চিন্তা। ভিওআইপি টেকনোলজিতে ভেসে আসা ডাটা প্যাকেটগুলো একে একে মোবাইলের স্পীকার দিয়ে শব্দে পরিণত হচ্ছিল তখন।

সাত সমুদ্রে তের নদীর পার থেকে ভেসে আসা কিছু শব্দ।





----------------

যারা কম্পিউটার নেটওয়ার্কের বিষয়ে জ্ঞান রাখেন, তারা বিষয়টা ধরে ফেলেছেন, যারা এ লাইনের লোক না, তাদের বোঝার সুবিধার জন্য পয়েন্টগুলোর সামান্য ব্যাখ্যা রইল, লেখার পয়েন্টগুলোর সাথে মিলিয়ে পড়ুনঃ

(১) ডাটা প্যাকেট তৈরি হল
(২) নেটওয়ার্ক কেবল
(৩) ট্রান্সমিটার
(৪) ওয়ারল্যাস ট্রান্সমিশন
(৫) রিসিভার
(৬) ফাইবার অপটিক কেবল
(৭) রিপিটার
(৮) রাউটিং কিউ
(৯) ডাটা করাপশন
(১০) রাউটিং এলগোরিদম
(১১) রুট
(১২) SIP সার্ভার

সবাইকে ধন্যবাদ এই দীর্ঘ, বিরক্তিকর লেখাটি পড়ার জন্য।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×