somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চলচ্চিত্র না জীবনচিত্র

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমানে কর্মসূত্রে যেখানে আছি সেখানে কাজের চাপ তুলনামূলকভাবে কম। বছরের শেষের দিকে এসে ভাবলাম সময়টাকে কাজে লাগাই। পরিকল্পনামতো লেগে গেলাম কাজে লাগনোর। সময় কাজে লাগানোর উপকরন হিসেবে কিনতে হলো একগাদা ডিভিডি। পকেট থেকে বেশকিছু টাকা বের গেলো। এবার রাতজাগার পালা। শুরু হলো আমাদের মুভি উৎসব। কিছু মুভি মনকে নাঁড়া দিয়ে যায়, কিছু মুভি ভাবতে শেখায়। তেমনি আমার হৃদয়ছোয়াঁ মুভিগুলোর মধ্যে পাচঁটিকে নিয়েই এ লেখা। প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিই এটা কোন মুভি রিভিউ পোস্ট নয় কেবল আমার ভাললাগাটুকু শেয়ার করলাম আপনাদের সাথে।


দ্যা বাইসেল থিফ (১৯৪৮) :


একটা মুভি যে একই সাথে তিন বয়সী তিনজনের (আমি, স্ত্রী, আমার ছয় বছর বয়সী সন্তান) চোখে পানি আনতে পারে তা এই মুভিটা দেখার আগে বুঝতে পারিনি। এ মুভিটির বর্ণনার জন্য পাঁচটি বাংলা বর্ণের প্রয়োজন অ স ধ র ন !! (প্রয়োজনমতো আকার লাগিয়ে নিন)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে এক হতভাগ্য পিতার চাকুরীর প্রধান অবলম্ভন একমাত্র সাইকেল চুরি, সন্তানকে নিয়ে চুরিকৃত সাইকেল খুজেঁ ফেরা এবং শেষে নিজেই সাইকেল চোরে পরিণত হওয়া; মোটাদাগে এই হলো কাহিনী। কিন্তু এই এই সরল কাহিনীটি যে একটি ছবিকে কত উচুমাত্রায় নিয়ে গেছে তা ছবিটি না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। সাদাকালো এ ছবিটি যদি আপনার মনকে ভালোলাগার রঙে রাঙিয়ে না দেয় তবে আমার মুভি দেখা অর্থহীন।

মুভিটির আইডিএম রেটিং : ৮.৫

দ্য রিডার (২০০৮): How far would you go to protect a secret?


ছবিটার প্রথম অংশ পুরোমাত্রারই ১৮+। কিন্তু পরের অংশেই কাহিনীর আসল মজা লুকিয়ে। এটাও ২য় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ের কাহিনী। ঘটনাচক্রে ১৪ বছর বয়সী বালকের সাথে তার দ্বিগুন বয়সী একটি মেয়ের পরিচয় এবং পরিচয় থেকে শারিরীক সম্পর্ক। ছেলেটি মেয়েটিকে পড়ে শোনাত বিভিন্ন ক্লাসিক গল্প-উপন্যাস। ছেলেটি পড়ত আর মেয়েটি গল্পে ডুবে হাসত, কাঁদতো। পড়া এবং শারীরিক সম্পর্ক চলছিলো সমান তালে। ট্রাম কন্ডাক্টর মেয়েটির বাসায় ঢুকেই ছেলেটি চাইতো মেয়েটির শরীর আর মেয়েটি বলতো আগে পড়ো তারপর ওসব। হঠাৎ একদিন মেয়েটি হারিয়ে যায় ছেলেটির জীবন থেকে। আট বছর পর আইন বিষয়ে পড়ার সময় ছেলেটি খুজেঁ পায় মেয়েটিকে একটি আদালতে, যেখানে নাজ্জীদের বিচার চলছিল। মেয়েটি ছিল এসএস এর গার্ড। বিচারে মেয়েটির যাবজ্জীবন সাজা হয়। তারপর .......
বাকীটুকু নিজেই দেখে নিন। শুধু এটুকু বলে নিই এ মুভি দেখ ঘোর কাটতে আমার কয়েকদিন লেগেছিল। যারা টাইটানিক এর কেট উইনস্লেট এর রুপের প্রেমে পড়েছিলেন তারা এ মুভি দেখে তার অভিনয়ের প্রেমে পড়বেন নিশ্চিত।
Behind the mystery lies a truth that will make you question everything you know.

মুভিটির আইডিএম রেটিং : ৭.৭


শাটার আইল্যান্ড (২০১০) : Someone is missing.


আমি প্রতিদিন সকালে অফিসে যাই। রুটিন মতো বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করি। বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করি। রাতে বাড়ী ফিরে স্ত্রী-পুত্রকে সময় দিই। ব্লগিং করি, বই পড়ি, মুভি দেখি। হঠাৎ একদিন যদি দেখি এসবে আসল কিছুই না, সবকিছু সাজানো, আমাকে দেখি এসব করানো হয়েছে একটা বিশেষ উদ্দেশ্যে। ..... জানি না, আমার কেমন লাগবে। তবে শাটার আইল্যান্ডের শেষ দিকে এসে আমাদের থেকে মুখ থেকে ওয়াও বা ওরে বাপরে জাতীয় অদ্ভুত একটা শব্দ বের হয়েছিল এটা নিশ্চিত। ছবির কাহিনী সম্পর্কে এর বেশী বলা যাবে না। গ্যারান্টি !!! মুভিটি উপভোগ্য না হলে এ পোস্টে এসে গালি দিয়ে যাবেন।

মুভিটির আইডিএম রেটিং : ৮.০০

শশান্ক রিডাম্পশন (১৯৯৪): Fear can hold you prisoner. Hope can set you free.


আপনি কি নিরাশাবাদী মানুষ? তবে সিনেমাটা দেখুন। কি বললেন ... আপনি আশাবাদী মানুষ? তবে কোনমতেই মুভিটা মিস করবেন না। মুভিটা দেখতে বসার আগে এটা জেনে রাখুন এটার রেটিং সর্বকালের সেরা ৯.২। এন্ডি একজন তরুন ব্যাংকার। হঠাৎ একদিন তার জীবনটা বদলে যায়। স্ত্রী হত্যার অপরাধে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। জেলে পরিচয় হয় অপর এক সাজাপ্রাপ্ত বন্দী রেড এর। বাকীটুকু ................। মুভিটা যে পটভূমিতে রচিত নিজে সেরকম একটা চাকুরিতে জড়িত বলেই নয় সত্যিকার অর্থেই সিনেমাটি আমার অলটাইম ফেভারিট। টিম রবিন্স আর মর্গান ফ্রিমেন এর অভিনয় ভুলার নয়। জেল থেকে পালিয়ে বাইরে আসার পর টিম রবিন্স এর বৃষ্টিতে ভেজার দৃশ্যটাকে মুভি ইতিহাসের অন্যতম সেরা দৃশ্য বলে বিবেচনা করা হয়। তবে আমার মতে এ সিনেমার সেরা অভিনয় দেখিয়েছেন অতশীপর বৃদ্ধ ব্রুকস চরিত্রে রুপদানকারী জেমস হোয়াইটমোর। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার কিছুদিন পর ব্রুকসের আত্মহত্যার দৃশ্যটা যদি আপনার হৃদয়কে নাড়া দিয়ে না থাকে তবে আপনি শীঘ্রই মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ এর শরণাপন্ন হোন। ছোট্ট একটা তথ্য এ সিনেমায় কোন উল্লেখযোগ্য নারী চরিত্র নেই।

ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন দ্যা ওয়েস্ট (১৯৬৮) : There were three men in her life. One to take her... one to love her... and one to kill her.



কলেজ জীবন থেকেই ওয়েস্টার্ন আর কিন্ট ইস্টউড এর ভক্ত। ঐ সময় ইস্টউড ছাড়া অন্য কোন নায়কের ওয়েস্টার্ন দেখেছি কিনা মনে পড়ে না। ভাগ্যিস দেখলাম, না হলে কি মিসটাই না করতাম!!! হারমোনিকা চরিত্রে হেনরি ফন্ডার অভিনয় সর্বকালের সেরা অভিনয়ের একটি। তেমন একটা সংলাপ না দিয়ে প্রায় তিন ঘন্টা একটা সিনেমায় কত সুন্দর অভিনয় করা যায় তা দেখলে হলে মুভিটা অবশ্যদর্শনীয়। একটু ধীরলয়ের মুভি বলে এটি দেখতে আপনার একটু ধৈর্য্যের প্রয়োজন। তবে একবার দেখতে বসলে ..... শেষ না করে উঠা কঠিন। ভালকথা আগে জানা না থাকলে মুভিটা পুরোটা শেষ না করা পর্যন্ত আপনি জানতেও পারবেন না মুভিটার নাম কি। জীবনে যদি একটা ওয়েস্টার্ন মুভি দেখেন তবে দেখুন "দ্যা গুড, দ্যা বেড এন্ড দ্যা আগলি" কিন্তু জীবনে যদি দ্বিতীয় কোন ওয়েস্টার্ন মুভি দেখেন তবে অতিঅবশ্যই .. " ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন দ্যা ওয়েস্ট"।

মুভিটির আইডিএম রেটিং : ৮.৮
৪৩টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×