ছবি - dailyjurain.com
আগামীকাল সোমবার (২৯ মার্চ) দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় সারাদেশে দিনটি পালিত হবে। হিজরি বর্ষের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটিকে মুসলমানরা সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালন করে থাকেন। মহান আল্লাহ তাআলা আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মতদের ইবাদতের জন্য বিশেষ কিছু সুবিধা প্রদান করেছেন। এর মধ্যে পাঁচটি রাত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।যে সব রাতের ইবাদতে অশেষ সওয়াব লাভ করা যায়। ইবাদতের এই বিশেষ পাঁচটি রাত হলো ১। জুমার রাত ২। ঈদুল ফিতরের রাত ৩।ঈদুল আযহার রাত ৪। শবে বরাত বা মুক্তির রাত তথা নিসফ শাবান বা শাবান মাসের মধ্য রাত ৫। শবে কদর বা কদরের রাত অর্থাৎ মর্যাদাপূর্ণ রজনী।
মূলত "শব" শব্দের অর্থ রাত এবং "বারাত" অর্থ সৌভাগ্য। এ দুটি শব্দ নিয়ে "শবে বরাত"অর্থাৎ সৌভাগ্যের রজনী।‘শব’ একটি ফারসী শব্দ এর অর্থ রাত। 'বারায়াত' কে যদি আরবী শব্দ ধরা হয় তাহলে এর অর্থ হচ্ছে সম্পর্কচ্ছেদ, পরোক্ষ অর্থে মুক্তি। যেমন কুরআন মাজীদে সূরা বারায়াত রয়েছে যা সূরা তাওবা নামেও পরিচিত। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,"সম্পর্কচ্ছেদ করা হল আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে সেই মুশরিকদের সাথে, যাদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলে।"। (সূরা তাওবা,আয়াত - ১)।
ছবি - alamy.com
আবার ‘বারায়াত’ শব্দকে যদি ফারসী শব্দ ধরা হয় তাহলে উহার অর্থ হবে সৌভাগ্য। অতএব শবে বরাত শব্দটার অর্থ দাড়ায় মুক্তির রজনী, সম্পর্ক ছিন্ন করার রজনী। মূলত ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত এবং ‘বারাত’ অর্থ সৌভাগ্য। এ দুটি শব্দ নিয়ে ‘শবে বরাত’, অর্থাৎ সৌভাগ্যের রজনী।এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ এ ইরশাদ করেন,"শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন নাযিল করেছি। নিশ্চয়ই আমিই সতর্ককারী। আমারই নির্দেশক্রমে উক্ত রাত্রিতে প্রতিটি প্রজ্ঞাময় বিষয়গুলো ফায়সালা হয়। আর নিশ্চয়ই আমিই রাসুল প্রেরণকারী"।(সূরা দু'খান, আয়াত - ২-৫)।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসবে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করবে ও দিনে রোজা পালন করবে(ইবনে মাজাহ)। ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো নামাজ। মহান আল্লাহপাক বান্দাদের জন্য তাঁর অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন এ রাতে।হিজরি বর্ষপঞ্জির শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি বিশ্ব মুসলিম সমপ্রদায়ের কাছে অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত। মহিমান্বিত এ রজনীতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিগত জীবনের সব ভুল-ভ্রান্তি, পাপ-তাপের জন্য গভীর অনুশোচনায় মহান আল্লাহর দরবারে সকাতরে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। এই রাত্রি সম্পর্কে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেন, "এই রাত্রিতে এবাদত-কারিদের গুণাহরাশি আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দেন।
ছবি - asaduzzamanshobuj.wordpress.com
নফল ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো নফল নামাজ।এই রাতে মুসলমানরা নফল নামাজ, জিকির-আজকার, কোরআন মজিদ তিলাওয়াতের মধ্যদিয়ে বিনিদ্র রাত কাটিয়ে বিনম্র প্রার্থনা করেন ভবিষ্যৎ জীবনে পাপ-পঙ্কিলতা পরিহার করে পরিশুদ্ধ জীবনযাপনের জন্য। একইসঙ্গে মরহুম আত্মীয়-স্বজনসহ চিরবিদায় নেয়া মুসলিম নর-নারীর কবর জিয়ারত করে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন। এ ছাড়া পাড়া-মহল্লার মসজিদগুলোতেও সন্ধ্যার পর থেকেই মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। অনেকে গভীর রাত পর্যন্ত ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন থেকে শেষ রাতে সেহরি খেয়ে পরদিন নফল রোজা রাখেন। শাবান মাসের পরেই আসে পবিত্র মাহে রমজান। তাই শবে বরাত মুসলমানদের কাছে রমজানের আগমনী বার্তা বয়ে আনে।
শবে বরাতের নামাজ -
প্রকৃত অর্থে শবে বরাতের আলাদা নামাজ বলে কিছু নেই, যেহেতু এই রাতটি ইবাদত বন্দেগি করে কাটাতে হবে তাই হাদিসেই এই সমাধান দেয়া হয়েছে। আর বিশ্ব মুসলিম এই রাতে বিশেষ কিছু ইবাদত পালন করে থাকেন।
শবে বরাতের নফল নামাজের নিয়ম -
১। এ রাতে প্রথমেই পড়া যায় দুই রাকাত তাহিয়াতুল অযুর নামায - দুই রাকাত তাহিয়াতুল অযুর নামাজের নিয়ম - প্রতি রাকাতে আলহামদুলিল্লাহ ( সূরা ফাতিহা) পড়ার পর , ১ বার আয়াতুল কুরসী এবং তিন বার ক্বুলহু আল্লাহ শরীফ ( সূরা এখলাছ) মিলিয়ে পড়া যায়।
২। দুই রাকাত,দুই রাকাত করে নফল নামায শবে বরাতের নামাজ দু‘রাকাত করে যত বেশী পড়া যায় তত বেশী ছওয়াব। নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর সূরা ইখলাছ, সূরা ক্বদর, আয়াতুল কুরছী বা সূরা তাকাছুর ইত্যাদি মিলিয়ে পড়া অধিক ছওয়াবের কাজ। এই ভাবে কমপক্ষে ১২ রাকাত নামাজ আদায় করা উত্তম। এর বেশি যত রাকাত আদায় করা যায় ততই উত্তম।প্রতি ৪ রাকাত পর পর কিছু তাসবিহ-তাহলীল আদায় করে মহান আল্লাহর নিকট দোয়া কামনা করা অতি উত্তম। এই ভাবে সারা রাত নামাজ আদায় করা যেতে পারে।
এছাড়া এভাবে ও করা যায়, প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর, ১ বার আয়াতুল কুরসী এবং ১৫ বার করে সূরা এখলাছ শরীফ, অতঃপর সালাম ফিরানোর পর ১২ বার দুরূদ শরীফ। ফযীলতঃ রুজিতে রবকত, দুঃখ-কষ্ট হতে মুক্তি লাভ করবে, গুনাহ হতে মাগফিরাতের বখসিস পাওয়া যাবে।
তাছাড়া এ রাতের নিয়মিত নফল ইবাদতের মধ্যে রয়েছে - বাদ মাগরিব ছয় থেকে বিশ রাকাত আউওয়াবিন নামাজ।
৩।আওয়াবীন নামাজ - মাগরিব ও এশার নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে আদায়কৃত ছয় রাকাত নামাজ ‘আউয়াবিন’ নামে পরিচিত। আল্লামা মাওয়ার্দি এই মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (মুগনির মুহতাজ - ১/৩৪৩)। তবে কেউ কেউ ‘দুহা’ নামাজকেই আউয়াবিনের নামাজ বলেছেন। নাম নিয়ে মতভিন্নতা থাকলেও এই সময় নামাজ আদায়ের গুরুত্ব হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, "যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ছয় রাকাত নামাজ আদায় করবে এবং এগুলোর মধ্যে কোনো মন্দ কথা না বলে, তার আমলনামায় বারো বছর ইবাদতের সওয়াব লেখা হবে"। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস - ১১৬৭) ।
হজরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, "যে ব্যক্তি মাগরিবের পর বিশ রাকাত নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন"। (তিরমিজি, মিশকাত, ফয়জুল কালাম, হাদিস - ৪৪৯-৪৫০)।
তাছাড়া, এ রাতের শ্রেষ্ঠতম ইবাদত হলো তাহাজ্জুদ নামাজ।এ প্রসংগে মহান আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে বলেছেন, "এবং ভোর রাত্রির কিছু অংশ কুরআন তিলাওয়াত আর নামায কায়েম করার মধ্য দিয়ে জাগ্রত থাকো। এটা তোমার জন্যে অতিরিক্ত দায়িত্ব। অচিরেই তোমার রব তোমাকে ‘প্রশংসিত স্থানে’ প্রতিষ্ঠিত করবেন"।( সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত - ৭৯)।
ছবি-tazakhobor24.com
৪। তাহাজ্জুদ নামাজ - ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ নামাজ হলো তাহাজ্জুদ। পবিত্র কোরআনে তাহাজ্জুদ আদায়ের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।সালাতুল লাইল বা তাহাজ্জুদ এশার নামাজ আদায়ের পর থেকে সুবেহ সাদিকের আগ পর্যন্ত পড়া যায়। তবে অর্ধ রাতের পর থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ভালো। শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা সর্বোত্তম।শেষ রাতের এ নামাজ অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। যাকে তাহাজ্জুদের নামাজ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এ নামাজ সুন্নত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়তেন।প্রিয় নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই দুই রাকাত করে এ নামাজ আদায় করতেন। যেকোনো সূরা দিয়েই এ নামাজ পড়া যায়। তবে তিনি লম্বা কেরাতে নামাজ আদায় করতেন। তাই লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ আদায় করা উত্তম।তাই প্রতি বার ২ রাকাত ২ রাকাত করে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়াই ভালো।সম্ভব হলে ১২ রাকাআত তাহাজ্জুদ নামাজও আদায় করা যায়। তবে ৮ রাকাআত আদায় করা উত্তম।
এ ছাড়া এ রাতে সালাতুস তাসবিহ এবং অন্যান্য নফল নামাজ ও আদায় করা যায়।
৫।সালাতুত তাজবীহ - সালাতুত তাসবীহ "তাসবীহের নামাজ" নামেও পরিচিত। নবী মোহাম্মদ (সা.) তার অনুসারীদেরকে এ নামাজ পালনে উৎসাহিত করছেন। জীবনে একবার হলেও মুসলমানরা যেনো এ নামাজ পড়ে সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন।সালাতুত তাসবীহ চার রাকাত। প্রতি রাকাতে "সুবাহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার" তাসবীহগুলো ৭৫ বার পড়তে হয়। চার রাকাতে মোট ৩০০ বার পড়তে হয়।
ছবি - pixelstalk.net
শবে বরাতের নামাজের নিয়ত - আরবীতে
"নাওয়াইতুআন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা রাক‘আতাই ছালাতি লাইলাতিল বারাতিন নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার"।
বাংলায় নিয়ত "আমি ক্বেবলামূখী হয়ে আল্লাহ এর উদ্দেশ্যে শবে বরাতের দু'রাকআত নফল নামাজ আদায়ের নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবার"।
শবেবরাতের পরদিন রোযা রাখা -
হযরত আলী রাঃ) থেকে বর্ণিত, "রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,পনেরো শাবান (চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে, তখন তোমরা রাতটি ইবাদত বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনে রোযা রাখ। কেননা এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করবো। আছে কি কোন রিযিকপ্রার্থী? আমি তাকে রিযিক দিব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাদেরকে ডাকতে থাকেন"। ( সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস-১৩৮৪)।তাছাড়া শাবান মাসে বেশী বেশী নফল রোযা রাখার কথা বহু হাদীসে এসেছে এবং আইয়ামে বীজ তথা প্রতি চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখার বিষয়টি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
হযরত আয়েশা সিদ্দীক ( রাঃ ) বর্ণনা করেন -
মহানবী (সাঃ) আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, "হে আয়েশা! তুমি কি জান? আজ রাত ( নিসাফে শাবান ) কী? হযরত আয়েশা ( রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা ) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তো জানি না, দয়া করে বলুন। মহানবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বললেন, আজ রাতে আগামী বছরে যে সমস্ত বনী আদম জমীনের বুকে জন্মগ্রহণ করবে এবং আরা মৃত্যুবরণ করবে, তাদের তালিকা লিপিবদ্ধ করা হয়। বিশেষ করে বান্দাদের আমলনামা মহান আল্লাহর নিকট প্রকাশ করা হয়"। (বাইহাক্বী, ইবনে মাজাহ্, মিশকাত শরীফ)
হযরত আয়েশা ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত -
অপর একটি হাদীসে মহানবী (সাঃ) বলেন, "আমি এক রাতে মহানবী (সাঃ) কে বিছানায় পেলাম না। তাই আমি অত্যন্ত পেরেশান হয়ে খোঁজাখুঁজি আরম্ভ করলাম। খুঁজতে খুঁজতে দেখি, তিনি জান্নাতুল বাকীর মধ্যে মহান আল্লাহর প্রার্থনায় মগ্ন। তখন তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা! আমার নিকট হযরত জিবরাইল ( আঃ ) উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, আজ রাত হল নিসফে শাবান ( অর্থাৎ লাইলাতুল বারাত )। এ রাতে আল্লাহ তাআলা অধিক পরিমাণে জাহান্নামবাসী লোকদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। এমনকি কালব বংশের বকরীগুলোর লোম সমপরিমাণ গুনাহগার বান্দা হলেও"। (বুখারী শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাযাহ, রযীন, মিশকাত শরীফ)।উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, এ রাতে আল্লাহর তাআলার পক্ষ থেকে মাগফিরাতের দ্বার ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত করা হয়।
হযরত আশরাফ আলী থানভী (রঃ) এর মত -
তিনি বলেন হাদীসে শবে বরাতের তিনটি কাজ সুন্নত মত করাকে সওয়াব ও বরকত লাভের উপায় বলা হয়েছে। প্রথমতঃ পনেরো তারিখ রাতে কবরস্থানে গিয়ে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করা। সাথে সাথে গরীব মিসকীনদের কিছু দান করে সে দানের সওয়াবটুকু ঐ মৃতদের নামে বখশে দিলে আরও ভাল হয়। সেই মুহূর্তে হাতে না থাকলে, অন্য সময় গোপনে কিছু দান করে দেওয়া উচিত। দ্বিতীয়তঃ রাত জেগে একা একা বা বিনা আমন্ত্রণে জড়ো হয়ে যাওয়া দু চারজনের সাথে ইবাদতে মশগুল থাকা। তৃতীয়তঃ শাবানের পনেরো তারিখ নফল রোযা রাখা।
কোন কোন মানুষকে মহান আল্লাহপাক শবেবরাত এর রাতেও ক্ষমা করবেন না - এ রাতে মহান আল্লাহপাক প্রায় সব মানুষকে ক্ষমা করলেও আল্লাহর সঙ্গে শিরককারী, সুদখোর, গণক, যাদুকর, কৃপণ, শরাবী, যিনাকারী এবং পিতা-মাতাকে কষ্টদানকারীকে আল্লাহ মাফ করবেন না। এসকল মানুষ আল্লাহর এই ব্যাপক রহমত, মাগফিরাত ও সাধারণ ক্ষমা থেকে বঞ্চিত থাকবেন।
শবে বরাত ও হালুয়া-রুটি - শবে বরাতের সঙ্গে হালুয়া-রুটির একটি প্রচলন পরিলক্ষিত হয়। হালুয়া আরবি শব্দ, অর্থ হলো মিষ্টি বা মিষ্টান্ন। রাসুলুল্লাহ (সা.) মিষ্টি পছন্দ করতেন, এ কথা সুবিদিত । তিনি গোশত পছন্দ করতেন, তা-ও অবিদিত নয়। যা-ই হোক শবে বরাত হলো ইবাদতের রাত, দান-খয়রাত করা ও মানুষকে খাওয়ানো একপ্রকার ইবাদত ।তবে এই দিন ও রাতকে হালুয়া-রুটিতে পরিণত করে ইবাদত থেকে গাফেল হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তেমনি হালুয়া-রুটির ওপর ফতোয়া প্রদানও প্রজ্ঞাপ্রসূত নয়।
ছবি - daily-sun.com
শবে বরাতে করণীয়ও বর্জনীয় -
যা যা করা উচিত -
(ক) নফল নামাজ,যেমন - (১)তাহিয়্যাতুল অজু (২)দুখুলিল মাসজিদ (৩) আউওয়াবিন নামাজ (৪) তাহাজ্জুদ নামাজ (৫) ছলাতুত তাসবিহ (৬)তাওবার নামাজ (৭)ছলাতুল হাজাত (৮)ছলাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল নামাজ পড়া।
(খ) নামাজে কিরাআত ও রুকু-সেজদা দীর্ঘ করা।
(গ) পরের দিন নফল রোজা রাখা ।
(ঘ) কোরআন শরিফ সুরা দুখান ও অন্যান্য ফজিলতের সুরাসমূহ তিলাওয়াত করা।
(ঙ) দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া।
(চ) তাওবা-ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা ।
(ছ) দোয়া-কালাম, তাসবিহ তাহলিল, জিকির-আসকার ইত্যাদি করা ।
(জ) কবর জিয়ারত করা ।
(ঝ) নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সকল মোমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা।
যা যা করা উচিত নয় বা বর্জনীয় -
(১) আতশবাজি, পটকা ফোটানো ।
(২) ইবাদত-বন্দেগি বাদ দিয়ে বেহুদা ঘোরাফেরা করা ।
(৩) অনাকাঙ্ক্ষিত আনন্দ-উল্লাস করা ।
(৪) অযথা কথাবার্তা ও বেপরোয়া আচরণ করা ।
(৫) অন্য কারও ইবাদতের বা ঘুমের বিঘ্ন ঘটানো ।
(৭) হালুয়া-রুটি বা খাওয়া-দাওয়ার পেছনে বেশি সময় নষ্ট করে ইবাদত থেকে গাফিল থাকা।
সতর্কতা:
মনে রাখতে হবে ফরজ নফলের চেয়ে অনেক বড়। শবে বরাতের নামাজ যেহেতু নফল সেহেতু নফল পড়তে পড়তে ফরজ পড়া ভুলে গেলে বা ঘুমের কারণে পড়তে না পারলে কিন্তু সবই শেষ। অর্থাৎ নফল নামাজ পড়ে পড়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন আর এই দিকে ফজরের নামাজ পড়তে পারলেন না।এ যেন না হয় এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
মহিমান্বিত এই রাতে আমরা বেশি বেশি ইস্তেগফার করবো। যাতে করে আল্লাহ তায়ালা আমাদের ক্ষমা করে দেন এবং বেশি বেশি নফল ইবাদতে মশগুল থাকবো। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে আমল করার তৌফিক দান করুন ।
তথ্যসূত্র - আল কোরআন,হাদীস ।
=================================================================
পূর্ববর্তী পোস্ট -
ঈমান ও আমল - ৫ Click This Link
(" নামাজ " ইসলামের দ্বিতীয় ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ । যা মুসলিম-অমুসলিমের মাঝে পার্থক্যকারী সূচক হিসাবে বিবেচিত এবং মুসলমান মাত্রই দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে)।
ঈমান ও আমল - ৪ Click This Link
("ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ" - যার শুরুটা কালেমা বা ঈমানে। যা শুধু মুখে বলা নয়, অন্তরে বিশ্বাস ও কর্মে পরিণত করার বিষয়)।
ঈমান ও আমল - ৩ Click This Link
(তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব )।
ঈমান ও আমল - ২ Click This Link
("শুক্রবার - পবিত্র জুমা"- মুসলমানদের জন্য এক মর্যাদা ও ফজিলত পূর্ণ দিন এবং জুমার দিনের কতিপয় আমল )।
ঈমান ও আমল - ১ Click This Link
(যেসব আমলে মানুষের অভাব দূর হয় ও জীবন সুখের )।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:১৭