ছবি - prosancons.com
শিক্ষা হচ্ছে একজন মানুষের সার্বিক দক্ষতা ও সামগ্রিক উন্নয়ন। শিক্ষা মনুষ্যত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ ও জীবনের সামগ্রিক প্রস্তুতি গ্রহণে সাহায্য করে। মানবশিশু জন্মগ্রহণের পর পরই শিক্ষার হাতে খড়ি হয় পরিবারের মাধ্যমে। শিক্ষাজীবনে একজন শিক্ষার্থীর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে প্রথমেই পরিচিতি ঘটে কিন্ডার গার্টেন অথবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে। শিক্ষা এমন একটি বিষয় যা ধনী-গরীব সবার জন্য প্রয়োজন এবং সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। শিক্ষা ছাড়া মানুষ অন্ধের শামিল।
ছবি - thehansindia.com
শিক্ষা কি - সাধারণ অর্থে জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জনই শিক্ষা। ব্যাপক অর্থে পদ্ধতিগতভাবে জ্ঞানলাভের প্রক্রিয়াকেই শিক্ষা বলে। তবে শিক্ষা হল সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের অব্যাহত অনুশীলন।মানুষের সমগ্র জীবনেই এবং কোন না কোন ভাবে কিছুনা কিছু প্রতিনিয়ত শিখছে।আর শিক্ষা অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে নীতি-নৈতিকতার প্রসঙ্গটিও এসে যায় স্বাভাবিকভাবেই। নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত শিক্ষা অর্জন প্রকৃত শিক্ষা নয়। প্রকৃত শিক্ষা অর্জনের মর্যাদা দুনিয়াতে সবসময় ছিল, এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।শিক্ষা বলতে আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সনদভিত্তিক বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকেই বুঝি বা বোঝাতে চাই। অথচ শিক্ষা শুধু সনদভিত্তিক বা প্রাতিষ্ঠানিকই নয় আর আমাদের জীবনে প্রকৃত এবং সনদভিত্তিক শিক্ষা ,দুটিই প্রয়োজন।
যাঁরা নৈতিকতার চর্চা করতে চান, তাঁদের ছোটবেলার পাঠ্যবইতে পড়া খুব সহজ দুটি কথা মনে রাখতে পারলেই জীবনে প্রকৃত শিক্ষা অনেকটা অর্জিত হয়ে যায়। তা হলো -
১. সদা সত্য কথা বলবো।
২. সৎ পথে চলবো।
এ দুটি শিক্ষা যদি আমাদের মনে-প্রাণে গ্রহণ করা যায় এবং নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে যদি এর প্রতিফলন ঘটানো যায়, তাহলেই সত্যিকার শিক্ষায় আমরা শিক্ষিত হওয়ার পথে অনেকটা এগিয়ে যাব। ভালো-মন্দ বিচারের ধারণা থেকেই এসেছে নৈতিকতার শিক্ষা। দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিদ্যালয়-বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শাখায়ই নৈতিকতার উপর জোর দেয়া হয়না। অথচ নৈতিকতার শিক্ষা বিদ্যালয়-বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর জন্য বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। নয়তো শিক্ষার্থীদের নিজেদেরই নৈতিকতার শিক্ষা গ্রহণে উদ্যোগী হওয়া উচিত।
ছবি - dnaindia.com
সুশিক্ষা কি - সুশিক্ষা বলতে সেই প্রকৃত শিক্ষা কে বোঝায় যা মানুষ বাস্তব ক্ষেত্রে এর পজিটিভ দিক গুলোর প্রয়োগ ঘটাতে পারে। অর্থাৎ আমরা বইয়ে যা পড়ছি - সত্য কথা বলতে হবে , ভাল কাজ করতে হবে। এগুলো যদি আমরা বাস্তবে প্রয়োগ দেখাতে পারি তবেই আমরা সুশিক্ষিত।আর পজিটিভ দিক উল্লেখ করার কারণ আমরা যা শিখব তার অপপ্রয়োগ সুশিক্ষা হতে পারে না। তাই আমরা যদি সফটওয়ার বানানো শিখি এবং তা বাস্তব ক্ষেত্রে মানব জাতির উপকারে কাজে লাগাতা পারি তবে এটি সুশিক্ষার একটি উদারহণ।
সহ-শিক্ষা বা কো- এডুকেশন কি - সহ-শিক্ষা বা কো- এডুকেশন এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা যেখানে ছেলে-মেয়ে (পুরুষ ও মহিলা) রা পড়া- লেখার জন্য একইসাথে-একই জায়গায় সহ অবস্থান করে। এই শিক্ষা পরিবেশে ছেলে-মেয়ে বা পুরুষ-মহিলার একত্রে মেলা-মেশা, কথা-বার্তা, গল্প-গুজবে কোনরুপ প্রাতিষ্ঠানিক বাঁধা থাকে না।
ছাত্র সমাজ, দেশ ও জাতির ভবিষ্যত কর্ণধার। দেশ ও জাতির ভবিষ্যত কর্ণধার হতে হলে তাদেরকে অবশ্যই সৎ, মহৎ ও চরিত্রবান করে তুলতে হবে। আদর্শ ও চরিত্রবান মানুষ গড়ে তোলার একমাত্র স্থান হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবশ্য শুরুটা হয় যার যার পরিবার থেকে।শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষা লাভ করে বের হয়। এদের অনেককে দেখা যায় অসৎ চরিত্রের অধিকারী ও চরম দুর্নীতিবাজ হিসাবে। এখানে প্রশ্ন হল - উচ্চশিক্ষা লাভ করেও তারা কেন চরিত্রহীন হলো ? ধর্ষণ মামলার বেশীরভাগ আসামী যদি খুঁজে বের করা হয় তাহলে দেখা যাবে প্রায় সবাই শিক্ষিত লোক। এখানেও প্রশ্ন থেকে যায় ,শিক্ষিত হয়েও সে ধর্ষক হবে কেন? আবার দেখা যায় চরিত্রহীনতার জন্য যে বা যারাই দায়ী-এরাও সবাই শিক্ষিত। যেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে চরিত্রবান লোক বের হওয়ার কথা ছিল সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হচ্ছে চরিত্রহীন লোক। সে জন্য আজ সমাজের সবস্থানে চরিত্রহীনদের মহড়া। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে চরিত্রহীন লোক বের হচ্ছে !!!! তাই বলে কি আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করব?
না, তা কখনও না এবং তা করাও উচিত না। এ জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কখনও দায়ী হতে পারে না, দায়ী করা যাবে না। তাহলে দায়ী কে ?সে ক্ষেত্রে যাকে দায়ী করা যায় তা হলো প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে।যেখানে মানুষকে প্রচলিত বাজার ব্যবস্থার উপযোগী করে গড়ে তোলা হয় বা চেষ্টা করা হয় নৈতিকতার নয়।আবার সারা দুনিয়াব্যাপী বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থায় সহশিক্ষা চালু আছে। সেই সহশিক্ষা নামক মরণব্যাধিই আমাদেরকে চরমভাবে কলুষিত করছে। সহশিক্ষাই ছাত্রছাত্রীদেরকে অতি অল্প বয়সে চরিত্রহীন করছে।সহশিক্ষায় রয়েছে ছাত্রছাত্রীর অবাধ চলাফেরার ব্যবস্থা। সহশিক্ষায় ইসলামের পর্দার বিধানকে অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখা হয়, যারা পর্দা করে চলতে চায় তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়, যারা যত নগ্নভাবে চলে তাদেরকে ধন্যবাদ দেয়া হয়।
শিক্ষার মূল লক্ষ্যই হওয়া উচিত উত্তম চরিত্র গঠন করে ইহকালীন শান্তি ও মুক্তি লাভ করা। যে শিক্ষা ব্যবস্থায় চরিত্র নষ্ট হয়, অবাধ যৌনাচারের পথ দেখায় সেই শিক্ষা দ্বারা আমাদের লাভ কি? শিক্ষাকে মানুষের আত্মিক, নৈতিক, মানবিক ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধনের জন্য সহায়ক উচিত।শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষা ছাড়া কোন জাতির উন্নয়ন কল্পনা করা যায় না।
শিক্ষা অর্জন করা পুরুষের উপর যেমন ফরজ তেমনি নারীর উপরও শিক্ষা অর্জন করা ফরজ। নারীদের উচ্চশিক্ষা লাভ করতে ইসলামের কোনো বাধা নেই। নারীদেরকে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে ইসলাম সব সময় উৎসাহিত করে।তবে যে শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামের পর্দার বিধান লংঘন হয় সেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে ইসলাম সমর্থন করে না। নারী-পুরুষ আলাদা অবস্থানে থেকে পর্দা রক্ষা করে শিক্ষা অর্জন করবে-এটাই ইসলামের চিরন্তন বিধান। জ্ঞানার্জনের কোনো বিকল্প ইসলামে নেই।ইসলামের প্রাথমিক যুগে জ্ঞানচর্চার যে প্রবাহ শুরু হয়, নারীরাও সেখানে শামিল হয়েছিল।
শুরুতেই কোরআন মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে পড়তে ও জানতে। কোরআন অজ্ঞতাকে অভিহিত করেছে মহাপাপ রূপে। মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে জ্ঞানের পথে, মুক্তবুদ্ধির পথে। এমনকি বিশ্বাসের স্তরে পৌঁছার জন্যেও মানুষের সহজাত বিচারবুদ্ধির প্রয়োগকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে কোরআন। বৈষয়িক ও আত্মিক জীবনকেও একই সূত্রে গেঁথেছে কোরআন। সুস্পষ্টভাবেই বলেছে, আল্লাহর বিধান অনুসরণ করো। দুনিয়া ও আখেরাতে তুমি সম্মানিত হবে।
ইসলাম নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য না করে উভয়কে সমভাবে জ্ঞানার্জনের আদেশ দিয়েছে। কুরআনের নির্দেশও তাই।লেখাপড়া বিদ্যা শিক্ষা এবং জ্ঞান অর্জনের আদেশ দান করে আল্লাহ্ ঘোষণা করেছেন,"পড়ো! তোমার সৃষ্টিকর্তা প্রভুর নামে। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। পড়ো!আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। আর শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না"।( সূরা আলাক,আয়াত - ১-৫) এই আয়াত দিয়েই কোরআন নাজিলের সূচনা।
কুরআন সকল পাঠককেই আদেশ করছে পড়তে ,চিন্তা-গবেষণা করতে ,অনুধাবন করতে,এমনকি বিশ্ব প্রকৃতির মাঝে লুক্কায়িত বিভিন্ন নিদর্শন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে। আর তাইতো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছে প্রথম যে ওহী নাযিল তার প্রথম শব্দ ছিল "ইকরা" অর্থাৎ পাঠ কর।
ইসলামের শিক্ষার আলোকে পুরুষদের মধ্য হতে যেমনি হযরত আবূ বকর(রাঃ),হযরত উমর (রাঃ),হযরত উসমান(রাঃ), হযরত আলী(রাঃ), ইবনে আব্বাস(রাঃ), ইবনে মাসউদ (রাঃ), ইবনে উমার (রাঃ) এবং হাসান বসরী (রাঃ), ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম, ইমাম আবূ হানীফা, ইমাম শাফেয়ী এর মত মহাপুরুষগণের আবির্ভাব ঘটেছিল, ঠিক তেমনি আয়েশা(রাঃ), হাফসা(রাঃ), শিফা বিনতে আব্দুল্লাহ (রাঃ), কারীমা বিনতে মিকদাদ(রাঃ), উম্মে কুলসুম (রাঃ) মত মহিয়সী নারীও আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। মোটকথা, ইসলামের নির্ধারিত সীমা ও গণ্ডির মধ্যে অবস্থান করেই সে যুগের মহিলাগণ আত্মসংশোধন এবং জাতির খিদমতের উদ্দেশ্যে দীনি-শিক্ষা লাভ করতেন এবং নিজ সন্তানদেরকে এমন আদর্শবান করে গড়ে তুলতেন, যাতে তাঁরা নিজেদের যুগের পথিকৃৎ রূপে কওমের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন।
পুরুষ সাহাবীগণ যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করতেন, তেমনি মহিলা সাহাবীগণও নিঃসংকোচে জ্ঞান অর্জন করতেন। সুতরাং সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে যেমন পুরুষ মুফতী ছিলেন, তেমনি ছিলেন মহিলা মুফতী। উমর, আলী, যায়েদ ইবন সাবিত, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম প্রমুখ পুরুষ সাহাবীদের ন্যায় আয়েশা সিদ্দীকা, উম্মে সালমা, হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুন্না প্রমুখ মহিলা সাহাবীগণও ফতোয়ার গুরুদায়িত্ব পালন করতেন।নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়।’’ এ হাদীসে কুরআনের ‘ইলম শিক্ষা করার জন্য বলা হয়েছে। আর এ শিক্ষা পুরুষদের ন্যায় মহিলাদের জন্য সমভাবে প্রয়োজন।
কুরআন ও হাদীসের আলোকে নারীশিক্ষা
কুরআন ও হাদীসে শুধু নারী শিক্ষার কথা পৃথকভাবে বর্ণনা করা হয়নি। শিক্ষা সম্পর্কে যে কথাই বলা হয়েছে, তা নর ও নারী উভয়ের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। নর ও নারীর জন্য আলাদাভাবে কোনো আলোচনা করা হয় নি। শিক্ষা প্রসঙ্গে যে নির্দেশগুলো দেয়া হয়েছে, তাতে সাধারণত পুরুষবাচক ক্রিয়াপদ ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন কুরআন মজীদে বলা হয়েছে, "তুমি পাঠ কর তোমার প্রভূর নামে" আবার হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, "তোমরা বিদ্যা অন্বেষণ কর"। এখানে এই নির্দেশ কেবল পুরুষের জন্য নয়, বরং নর ও নারী উভয়ের জন্যই সমভাবে প্রযোজ্য।
শুধু শিক্ষার ক্ষেত্রেই নয়, প্রায় সকল বিষয়েই কুরআন ও হাদীসে সাধারণ নির্দেশগুলো এভাবে পুরুষবাচক ক্রিয়াপদ দ্বারা বর্ণনা করা হয়েছে। যদিও এ দ্বারা নর ও নারী উভয়কেই সমভাবে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়,"তোমরা যথাযথভাবে নামায পড় ও যাকাত দাও এবং নামাযীদের সঙ্গে নামায আদায় কর"।(সুরা বাকারা,আয়াত - ৪৩)।এখানে ব্যবহৃত দু’টি ক্রিয়াপদই পুরুষবাচক। কিন্তু এর দ্বারা নর-নারী উভয়কেই নির্দেশ করা হয়েছে। কেননা নামায পড়া এবং যাকাত দেওয়া নর ও নারী উভয়ের জন্য ফরয।
শিক্ষা সম্পর্কে কুরআনের নির্দেশনা
শিক্ষা, জ্ঞান ও বুদ্ধির মূল উৎস হলেন আল্লাহ। নবী ও রাসূলগণের মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ হতে মানুষের কাছে শিক্ষা ও জ্ঞান পৌঁছে। আল্লাহ হতে প্রাপ্ত শিক্ষা ও জ্ঞানের দ্বারা বুদ্ধির উন্মেষ ঘটে। এভাবে বিকশিত বুদ্ধি দ্বারা মানুষ চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করতে থাকে। মানুষের সামনে তখন আল্লাহর সৃষ্টি রাজ্যে লুক্কায়িত অনেক রহস্যের দ্বার উদ্ঘাটিত হয়। অজানা বহু বিষয় সম্পর্কে মানুষ জ্ঞান লাভ করে। সে অনেক কিছু আবষ্কিার করে এবং পৃথিবীকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলে। অতএব, আল্লাহ হতে প্রাপ্ত জ্ঞান বলেই মানুষ পৃথিবীকে সুশোভিত, সুসজ্জিত এবং সৌন্দর্যমণ্ডিত করতে সক্ষম হয়েছে।
মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম মানব জাতির আদি পিতা আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি রাজ্যের যাবতীয় জীবজন্তু, পশু-পক্ষী, বৃক্ষ-তরু, আসমান-যমীন, পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী, সাগর-মহাসাগর, বস্তু-পদার্থ প্রভৃতি সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান দান করেছিলেন। তাঁর মগজে আল্লাহ সকল বিষয়ের মৌলিক জ্ঞানের বীজ রোপণ করেছিলেন। যুগ যুগ ধরে বংশ পরম্পরায় আদম সন্তানেরা তাদের আদি পিতার মগজে রোপিত জ্ঞান উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করে থাকে। বিদ্যা শিক্ষা এবং জ্ঞান সাধনার মাধ্যমে তাদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এ জ্ঞানের বিকাশ ঘটে।
এ মর্মেই মহান আল্লাহ আল কোরআনে বলেছেন,"আর তিনি আদমকে নামসমূহ সব শিক্ষা দিলেন তারপর তা ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। সুতরাং বললেন, ‘তোমরা আমাকে এগুলোর নাম জানাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’। তারা বলল, ‘আপনি পবিত্র মহান। আপনি আমাদেরকে যা শিখিয়েছেন, তা ছাড়া আমাদের কোনো জ্ঞান নেই। নিশ্চয় আপনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।"(সুরা বাকারা,আয়াত - ৩২-৩৩)।
নর-নারী নির্বিশেষে প্রত্যেকের জন্য লেখাপড়া করা, বিদ্যা শিক্ষা করা এবং জ্ঞান অন্বেষণ করা অপরিহার্য। কেননা এ ছাড়া মানুষের জীবনে পূর্ণতা লাভের জন্য আর কোনো বিকল্প পথ নেই। সুতরাং এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা যে কত বেশি তা আর ব্যাখ্যা করে বলার অপেক্ষা রাখে না।এ প্রসংগে মহান আল্লাহ আল কোরআনে বলেছেন,"তিনি যাকে চান প্রজ্ঞা দান করে। আর যাকে প্রজ্ঞা দেয়া হয়, তাকে অনেক কল্যাণ দেয়া হয়। আর বিবেক সম্পন্নগণই উপদেশ গ্রহণ করে।(সুরা বাকারা,আয়াত - ২৬৯) ।
আল্লাহ্ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্যে।আর ইবাদতের সারবস্তু হলো আল্লাহর ভয়।যাদের হৃদয়ে আল্লাহর ভয় আছে,তারাই প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর ইবাদত করে।আর যারা জ্ঞানী, কেবল তারাই আল্লাহকে ভয় করে থাকে।এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,"বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে"(সুরা ফাতির,আয়াত - ২৮)।
যারা বিদ্যা শিক্ষা করে সঠিক জ্ঞান অর্জন করে কেবল তারাই সৃষ্টি রাজ্যের রহস্য উপলব্ধি করতে পারে। তারা অনেক অজানা বস্তুকে জানতে পারে। আর যারা বিদ্যা শিক্ষা করে না, তারা এ থেকে চির বঞ্চিত। কাজেই বিদ্বান ও মূর্খ কখনও সমান হতে পারে না।মহান আল্লাহ্ তাআলা বলেন,"(সেই ব্যক্তি ভালো, নাকি) যে রাত্রিকালে সেজদার মাধ্যমে এবং দাঁড়িয়ে ইবাদতে মশগুল থাকে ও পরকালের ভয় করে এবং তার পালনকর্তার রহমতের ব্যাপারে আশাবাদী? হে রাসূল আপনি বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না,তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে, যারা বুদ্ধিমান।(সূরা আয-যুমার,আয়াত - ৯)।
যারা শিক্ষা অর্জন করে গভীর জ্ঞানের অধিকারী হয়, তাদের সম্মুখে সৃষ্টি রাজ্যের রহস্যাবলীর দ্বার উম্মোচিত হয়। একমাত্র বিদগ্ধ পণ্ডিত ব্যক্তিরাই এর সন্ধান পেয়ে থাকেন। মহান আল্লাহ এ প্রসঙ্গে ঘোষণা করেছেন,"নিশ্চয় আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি এবং রাত ও দিনের বিবর্তনের মধ্যে রয়েছে বিবেকসম্পন্নদের জন্য বহু নিদর্শন।"(সূরা আল ইমরান,আয়াত - ১৯০)।তিনি আরো বলেন,"তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আসমান ও যমীনের সৃষ্টি এবং তোমাদের বর্ণের ভিন্নতা। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য।(সূরা আর রুম ,আয়াত - ২২)
শিক্ষা সম্পর্কে হাদীসের নির্দেশনা
শিক্ষা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের নির্দেশনার পাশাপাশি হাদীসেরও সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই নিজেকে একজন শিক্ষক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়াও মহান আল্লাহ তাঁকে মানবজাতিকে কিতাব, হিকমত, উত্তম চরিত্র ইত্যাদি শিক্ষা দেয়ার জন্য রাসূল হিসেবে মনোনীত করেছেন। তাঁর নবুয়তী জীবনে শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে যেসব বাণী বিধৃত হয়েছে সেগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো।আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,"‘‘জ্ঞান অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলানের উপর ফরয বা অপরিহার্য"।(ইবনে মাজাহ)।আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,"যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেষণের জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে, মহান আল্লাহ তাদ্বারা তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন"।(আবূ বকর আহমদ ইবনুল হুসাইন আল্-বায়হাকী)।
নারীদের শিক্ষা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরী। কেননা, নারী কখনো মা, কখনো বোন, কখনো ছাত্রী আবার কখনো পরিবারের কর্তী হিসেবে আবির্ভূত হন। তাছাড়া মা ই তার সন্তানের প্রথম শিক্ষক। সামগ্রিকভাবে সুশিক্ষিতা মা স্বভাবতই জ্ঞানী, চরিত্রবান, ব্যক্তিত্ব সম্পন্না, নিষ্ঠাবান, নম্র ও ভদ্র। শিক্ষিত মায়ের এসব গুণ আপনাআপনিই সন্তানের মধ্যে সঞ্চারিত হয়।নারীরা শুধু শিক্ষিত নয়, শিক্ষকও হতে পারেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ছিলেন অন্যতম একজন শিক্ষক। এছাড়াও উম্মে সালমা, উম্মে হাবিবা, হাফসা, আসমা বিনতে আবু বকর, মায়মুনা, উম্মে হানী প্রমুখ মহিলা সাহাবিয়ার নাম প্রথম সারিতে এসে যায়।অতএব আল্-কুরআন ও সুন্নাহর এই অমোঘ নির্দেশের মধ্য দিয়ে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ইসলাম নারী শিক্ষার উপর অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে। শিক্ষার অধিকার প্রদানের মাধ্যমেই ইসলাম নারীকে সুউচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত করেছে। কারণ, বিশ্বাসী ও জ্ঞানীদের উচ্চাসন দেবেন বলে আল্লাহ নিজেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আমাদের সমাজে প্রচলিত সহ শিক্ষার দিকে যদি আমরা দেখি তাহলে এর দুইটি দিক আমরা দেখতে পাব।এর যেমন উপকারী বা ভাল দিকও রয়েছে তেমনি অপকারী বা ক্ষতির আশংকা ও কম নয়।
ছবি - worldblaze.in
১। সহ শিক্ষার সুফল বা উপকারী দিক-
** কোন এক মনীষীর বাণী আছে "এই পৃথিবীতে কল্যানকর যা কিছু তৈরী হয়েছে তার অর্ধেক করিয়েছে নর আর অর্ধেক করিয়েছে নারী।" কাজেই নর-নারীর সহযোগীতায় পৃথিবী এগিয়ে যাবে আর সেই সহযোগীতার ভিওি গড়ে উঠতে পারে কো- এডুকেশনের মাধ্যমে।
** সহ-শিক্ষা কর্ম জীবনে সফলভাবে কাজ করার ভিত্তি গড়ে দেয়। ছেলে-মেয়ের পারস্পরিক মেলা-মেশার মধ্য দিয়ে তারা পরস্পরের প্রতি সহনশীল হওয়ার শিক্ষা পায় এবং উভয়ে উভয়কে ভালভাবে বুঝতে পারে যা তাদেরকে পরবর্তিতে কর্মজীবনে বিপরীত লিংগের সহকর্মীর সাথে সঠিক আচরন করতে সহায়তা করে"।
** সর্বোপরী "নার-নারী "র একের প্রতি অন্যের আকর্ষন দূর্নিবার। এ সৃষ্টির ই নিয়ম। উভয়েই বিপরীত লিংগের প্রতি আকর্ষিত হয় এবং উভয়ে উভয়ের সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে চায়।আর এই জানা ও বুঝার ক্ষেত্রে সহ-শিক্ষা কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে ।
ছবি - stac.school.nz
এবার নজর দেই ক্ষতি বা কুফল এর দিকে -
** যেহেতু "নার-নারী "র একের প্রতি অন্যের আকর্ষন দূর্নিবার।আর এই সহ-শিক্ষা আগুনে ঘি ঢালার মত কাজ করবে।অপরিণত বয়স ও মানষিকতা,কৈশোরপ্রাপ্ত বা সুযোগ সন্ধানী ছেলে-মেয়েদের যখন এ সুযোগ মিলবে তখন একটা কিছু করবে এটা নিশ্চিত।তা ভাল খারাপ দু রকমই হতে পারে।আর এর প্রভাব ছেলে-মেয়ে উভয়ের জীবনেই সুদুরপ্রসারী প্রভাব ফেলে (এরকম বহু নজির আমাদের সমাজে বর্তমান)।কিশোর অপরাধ,কৈশোরে গর্ভধারন,অনাকাংখিত গর্ভধারন, অসম বয়সী সম্পর্ক, পরকীয়া এসবের বেশীরভাগের ই হাতে খড়ি হয় সহ-শিক্ষার মাধ্যমে।
** কোনো যুবক-যুবতী যুগলকে যদি অবাধ মেলামেশা ও সহাবস্থানের সুযোগ করে দিয়ে বলা হয়, তোমরা কেউ কারো প্রতি আকৃষ্ট হয়ো না- তাহলে এ উপদেশও কখনও ফলপ্রসূ হতে পারে না। সহশিক্ষার কুফল কি হতে পারে তা আর ব্যাখ্যা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সহশিক্ষা ব্যবস্থা গোটা মানবজাতিকে যে অকল্যাণ, অবক্ষয় এবং অশান্তি দান করেছে তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেও মানুষ এ থেকে মুক্তির কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছে না। কারণ, মানব রচিত আইনে এ সমস্যার কোনো সমাধান নেই। আছে শুধু সমস্যা বৃদ্ধির অসংখ্য উপায়। সহশিক্ষা ব্যবস্থা মানব জাতির যে ভয়াবহ ও অপূরণীয় ক্ষতি করেছে তন্মধ্যে নৈতিক চরিত্রের অবনতি, দাম্পত্য জীবনে চরম অশান্তি, অসামাজিক ক্রিয়াকর্ম, যৌতুক প্রথা, তালাক, নারী ধর্ষণ, নারী হত্যা, মাদকদ্রব্যের অবাধ ব্যবহার, অযোগ্য সন্তানের প্রাদূর্ভাব, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।সহশিক্ষার কারণে নৈতিক চরিত্রের যে অবনতি ও অবক্ষয় হয়েছে তা বর্ণনাতীত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছেলেমেয়েরা অবাধ মেলামেশার সুযোগ পায়। ফলে তারা উচ্ছৃঙ্খল হয়ে ওঠে।
** সহশিক্ষার কুফল হলো দাম্পত্য জীবনে অশান্তি। এ শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রত্যেক ছেলে ও মেয়ে বহু ছেলেমেয়ের সাথে অবাধে কথা বলার এবং যথেচ্ছা মেলামেশার করা সুযোগ পায়। এ অভ্যাসের কারণে সহপাঠী ও সহপাঠিনী ছাড়াও বাইরের ছেলেমেয়েদের সাথে তাদের অবাধ মেলামেশা চলে। এদের মধ্যে যার সাথে তথাকথিত প্রেম জমে ওঠে, তার সাথে বিয়ে না হলে, বিবাহিত জীবনে স্বামী স্ত্রীকে এবং স্ত্রী স্বামীকে মেনে নিতে পারে না। সারা জীবন চলে পরস্পরের মধ্যে ভুল বোঝাবোঝি। কেউ কাউকে মেনে নিতে পারে না। আবার প্রেমের বিয়ে হলে পরস্পরের মধ্যে আকর্ষণের চেয়ে বিকর্ষণই ঘটে বেশি। এভাবেই সৃষ্টি হয় গরমিল আর পরিণামে ঘটে পারিবারিক সহিংসতা, হত্যা-আত্মহত্যা, তালাকের মত বেদনাদায়ক ঘটনা ও মর্মান্তিক ঘটনা।
** সহশিক্ষার বদৌলতে মেলামেশার কারণে একই সময়ে একজন যুবক কিংবা যুবতী অনেকের সাথে সম্পর্ক গড়ার সুযোগ পায়। একই নারী বা পুরুষকে নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা। কেউ আবার একজনের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের পর তাকে বাদ দিয়ে অপর একজনকে পেতে চায়। এর ফলে শুরু হয় রেষারেষি, এসিড নিক্ষেপ, খুন-খারাবি ইত্যাদি।অতএব, গোটা জাতিকে আল্লাহর গযব, অপূরণীয় ক্ষতি, ধ্বংস এবং বিপর্যয় থেকে সর্বস্তরে পৃথক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা জাতীয় কর্তব্য।
সহ-শিক্ষা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে ?
আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করলে আমরা মাঝে মাঝে এমন কিছু ব্যাপার প্রত্যক্ষ করি যা ইসলাম কোনভাবেই অনুমোদন করে না। ছেলেমেয়েদের শালীনতা বর্জিত মেলামেশা এমন একটি পর্যায়ে ঠেকেছে যে, শুধু ইসলাম কেন, পরিবর্তনশীল দুনিয়ার কোনো ধর্মই একে অনুমোদন দিবে না। ইসলামী শরীয়তের অনুমোদিত উপায়ে লিংগ বৈষম্য মুক্ত হয়ে মানব সম্পদের অর্ধেক অংশ নারী জাতির উন্নয়নে সর্বাত্মক প্রয়াস ইসলাম গোড়া থেকেই চালিয়ে আসছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ও তৎপরতাকে ইসলাম কল্যাণকর মনে করেছে। তাই শিক্ষার মাধ্যমে নারী সমাজের উন্নয়ন ইসলামের একান্ত কাম্য।তবে তার সাথে সাথে যাতে নারীর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা পায় সে ব্যাপারেও ইসলাম খেয়াল রাখার নির্দেশ দিয়েছে।আর তাই যুগের অবস্থার প্রতি খেয়াল রেখে মুসলিম নারীদের শিক্ষিত করে তুলতে হবে এবং তাদেরকে ব্যভিচার, ধর্ষণ ও নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতেও হবে,এটাই ইসলামের নির্দেশ ।
ইসলাম সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত দ্বীন। এই মহান দ্বীনের অনুশাসন নারী জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর স্পর্শে এনেছে। আজ সারা বিশ্বে নারী শিক্ষা আন্দোলন জেগে উঠেছে। নারী চায় সমাজে পুরুষের পাশাপাশি সমান অধিকার। ইসলামও নারীর এই অধিকারকে অস্বীকার করে না বরং স্বাগত জানায়। পুরুষ জাতির পাশে কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করার জন্য নারী জাতি শিক্ষাঙ্গনে প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জনের নিমিত্তে প্রবেশ করে। শিক্ষাঙ্গনে নারীর এই প্রবেশে ইসলাম বাধা দেয়নি।
এখন সারা মুসলিম জাহানে নারী তাদের ন্যায্য অধিকার প্রায় সাবলীলতার সঙ্গে ভোগ করছে। তারা সব রকমের বিদ্যা নিকেতনে সমাজের প্রয়োজনীয় জ্ঞানর্জনে নিয়োজিত আছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত নারী জাতির যাতায়াত এখন প্রায় অবাধ। নারী এখন শিক্ষিকা, বিজ্ঞানী, ডাক্তার, প্রকৌশলী, নার্স, সমাজসেবী, বৈজ্ঞানিক। নারী এখন তাদের কাজ পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে করার জন্য প্রস্তুত। শিক্ষাঙ্গনে নারীর স্বাভাবিক যাতায়াত নিশ্চিত না হলে সমাজের সর্ব প্রকার উন্নতিতে পুরুষকেই হাত লাগাতে হবে, তার ফলে পুরুষের এই প্রচেষ্টা পুরোপুরিভাবে কোনো দিনই সার্থকতা লাভ করতে পারবে।পারবেনা। ইসলামে নারীর এই স্বাধীনতা খর্ব করার নীতি নেই। নারী তার প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জনের জন্য শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশ করবে এবং তার এই প্রবেশকে ইসলাম স্বাগত জানায়। তবে লজ্জাই নারীর ভূষণ। নারী যদি লজ্জা বিসর্জন দিয়ে সমাজের কাছ থেকে জোর করে তার অধিকার পেতে চায়, তবে ইসলাম তার এই কাজেই বাধ সাধবে। শালীনতা বিবর্জিত কোনো কাজই ইসলাম অনুমোদন করে না। ইসলাম উদার নীতি পোষণ করে, কিন্তু এই উদারতার সুযোগ নিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টিকে ইসলাম কঠোরভাবে সমালোচনা করে। শিক্ষা অন্বেষণের দোহাই দিয়ে কোনো নারীকেই তার শালীনতা ও সতীত্ব বিসর্জন দেওয়াকে কিছুতেই অনুমোদন করে না। শিক্ষার পবিত্র অন্বেষণকে ইসলাম সর্বদা উৎসাহ দিয়ে এসেছে, ভবিষ্যতেও দেবে তবে তা নারীর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করেই।
ছবি - soundvision.com
আমাদের মুসলিম মেয়েরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতা জ্ঞানী-গুণী মা বোনেরা তথাকথিত প্রগতিবাদী সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রতি দূর্নিবার আকর্ষণে মোহাবিষ্ট হয়ে শাশ্বত সুন্দর জীবনাদর্শ ইসলামী আইনকে কুসংস্কার ও ইসলামের নির্দেশিত পর্দাকে অবরোধ বলে অবজ্ঞা করে দূরে সরে থাকছেন। তাঁরা বুঝতেছে না যে, ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণেই এবং এ জীবনাদর্শ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাবেই আজকে নারী সমাজের অধিকার ও মর্যাদা সাধারণভাবে ভুলুণ্ঠিত হচ্ছে। মানব রচিত মতবাদ ও চিন্তা-চেতনার ধারক-বাহকরা নারীর সম্মান ও মর্যাদা যথাযথভাবে রক্ষা করতে পারছেনা।
ইসলামের দৃষ্টিতে সহ-শিক্ষা নিষিদ্ধ নয় তবে তা ইসলামের পর্দা প্রথার সাথে মিলেনা।আর তাই আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন- "হে নবী! আপনি মুমিন পুরুষদের বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান সমূহের হেফাজত করে। এটা তাদের জন্য উত্তম। নিশ্চয়ই তারা যা করে, আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত।আর ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও"। (সুরা আল নূর,আয়াত - ৩০-৩১ )
নবী করিম (সঃ) বলেছেন- " মহিলারা হলো পর্দায় থাকার বস্তু। সুতরাং, তারা যখন (পর্দা উপেক্ষা করে) বাইরে আসে তখন শয়তান তাদেরকে (অন্য পুরুষের দৃষ্টিতে) সুসজ্জিত করে দেখায়"। (তিরমিযী শরীফ, মেশকাত শরীফ)
ছবি - muslimvillage.com
তাই সহ-শিক্ষার ব্যাপারে ইসলামিক দৃষ্টিভংগি হলো - " ছেলে-মেয়েরা পৃথক পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থেকে শিক্ষা গ্রহন করবে। আর কারো যদি সে সুযোগ না থাকে তবে পরিপুর্ন পর্দা অবলম্বন করে জ্ঞান অর্জন করবে "।
সব শেষে ,সব কিছুরই ভাল-খারাপ দুটি দিক আছে। এ দুনিয়ায় কোন কিছুই শতভাগ ভাল না আবার শতভাগ খারাপ ও না।যে কোন কিছুর ভাল খারাপ নির্ভর করে তার প্রয়োগ ও পরিমিতি বোধের উপর।যদি ছেলে-মেয়ে (নারী-পুরুষ) উভয়ে উভয়ের উপর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হ্য় ও সম্মান প্রদর্শন করে, যাবতীয় পংকিলতা ও পাপাচার থেকে নিজেদের হেফাজত করে এবং উভয়ে উভয়কে সহযোগীতার মনোভাব নিয়ে সহযোগীতা করে তাহলে সহ-শিক্ষা হতে পারে নিজেকে / দুনিয়াকে ভাল কিছু দেয়ার মাধ্যম হিসাবে।
আর তা যদি না হয় তবে সহ-শিক্ষা হতে পারে উভয়ের জীবনের জন্য এক অভিশাপ ।ব্যাপারটা এমন,নিয়ম মেনে-পরিমাপমত ও সঠিক ঔষধ খেলে ঔষধে অসুখ খেয়ে ফেলে আর তা না করে বেঠিক, অনিয়মিত ও অপরিমিত ঔষধ খেলে ঔষধে জীবন খেয়ে ফেলে।
চলবে -
তথ্যসূত্র - আল কোরআন,হাদীস।
=========================================
পূর্ববর্তী পোস্ট -
মানব জীবন - ১১ " শিক্ষা " - Click This Link
মানব জীবন - ১০ "পরিবার " - Click This Link
মানব জীবন - ৯ "বিবাহের পরে" - Click This Link
মানব জীবন - ৮ " মানব জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য " - Click This Link
মানব জীবন - ৭ " তালাক " - Click This Link
মানব জীবন - ৬ "দেনমোহর - স্ত্রীর হক" - Click This Link
মানব জীবন - ৫ "বিবাহ" - Click This Link
মানব জীবন - ৪ " মাতৃত্ব " - Click This Link
মানব জীবন - ৩ Click This Link
"নারী স্বাধীনতা বনাম নারী(জরায়ু)'র পবিত্রতা "
মানব জীবন - ২ " মাতৃগর্ভ (জরায়ু)" - Click This Link
মানব জীবন - ১ "মানুষের জন্ম প্রক্রিয়ার ইতিকথা"- Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ৮:৫৬