ছবি - pbd.news
মধুর বচন -১ - শেখ হাসিনার বেহেস্তে যাওয়ার অধিকার আছে: পরিকল্পনামন্ত্রী
১৮ নভেম্বর, সোমবার বিকেল - সন ২০১৯। স্থান - বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র - যেখানে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) আয়োজন করে " উন্নয়ন মেলা-২০১৯" এর। সেই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান উপস্থাপন করেন নতুন এক তত্ত্ব ও তথ্যের এবং প্রসব করেন এক মধুর বচনের । যেখানে তিনি বলেছিলেন, "এখন আমরা ভালো খাই, ভালো পরি। আমরা তিনবেলা ভাত খাই। তিনবেলা পেট ভরে ভাত খাচ্ছে,এই বুভুক্ষু জাতির ইতিহাসে তেমন কোনো উদাহরণ ছিল না। সেই জাতির প্রায় প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বলছে। এ দেশের ৯৫-৯৬ ভাগ ঘরে বিদ্যুৎ নিয়ে গেছি। এর চেয়ে বড় উন্নয়ন মেলা আর কি হতে পারে। এই একটি কাজের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন পরিমাণ পুণ্য অর্জন করেছেন যে, তার বেহেস্তে যাওয়ার অধিকার আছে, হক আছে"।
সেখানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান আরো বলেছিলেন, "প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও দেশবাসীর উন্নয়নের জন্য রাত দিন নিরলসভাবে কাজ করেন। তাঁর (প্রধানমন্ত্রী) চেষ্টার কারণেই আমরা এখন ভালো খাই ও ভালো পরি ( এই দেশের ১৬ কোটি মানুষকে খাইয়ে-পরিয়ে রাখছেন বাঁচিয়ে রাখছেন

ছবি - sottosamachar.com
মধুর বচন - ২ - আল্লাহ শেখ হাসিনার জন্য ফেরেশতা পাঠাবেন, এটা যদি মনে না করেন ইমান চলে যাবে - কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান।
১৮ জুলাই, মঙ্গলবার বিকেল - সন ২০২৩। স্থান - কক্সবাজার শহরের পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ দৌলত ময়দান - জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত "শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা" কর্মসূচিতে সভাপতির বক্তব্যে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান আবারও উপস্থাপন করেন নতুন আর এক তত্ত্ব ও তথ্যের । সেখানে তিনি বলেন, "আল্লাহ অদৃশ্য শক্তি দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ফের প্রধানমন্ত্রী বানাবেন। আল্লাহ শেখ হাসিনার জন্য ফেরেশতা পাঠাবেন। এটা যদি কেউ মনে না করেন ঈমান চলে যাবে। ফেরেশতা দিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচনকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিবেন। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বানাবেন। এটাই সত্য, এটাই বাস্তব''। (নাউজুবিল্লাহ) ।
তিনি বলেন, "রাজনীতির নামে কেউ মানুষের জানমালের ক্ষতি করলে বিন্দু পরিমাণও ছাড় দেয়া হবে না। মেয়র মুজিব আরো বলেন, "সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে আওয়ামী লীগ সরকার। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কোনো সুযোগ নেই"। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম, সালাহউদ্দিন আহমদ, নুরুল আবছার, মাহবুবুল হক মুকুল, আবদুল খালেক, নবনির্বাচিত মেয়র মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।
ছবি - প্রথম নিউজ
মধুর বচন - ৩ - ৭০ শতাংশ মানুষ শেখ হাসিনাকে ভোট দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে: ওবায়দুল কাদের
সর্বশেষ - ৬ আগস্ট রবিবার দুপুর ,সন ২০২৩ । স্থান - গণভবন । বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের তৃণমূলের নেতাদের নিয়ে দলের বিশেষ বর্ধিত সভায় মাননীয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী এবং আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের উপস্থাপন করেন আরও নতুন এক তত্ত্ব ও তথ্যের তথা এক মধুর বচনের (অবশ্য তিনি প্রতিদিনই নতুন নতুন মধুর বচন তথা তত্ত্ব ও তথ্য দিয়ে দেশবাসীকে চমকিত-বিমোহীত করে রাখছেন তার দায়িত্বের পুরো মেয়াদকাল)। সেখানে তিনি বলেন, " দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে সমর্থন করে এবং আগামী নির্বাচনে তাকে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে " (৭০ শতাংশ



এ পরিসংখ্যান তিনি কোথায় পেলেন (তার মতে সর্বশেষ জনমত জরিপের ফলাফল তবে কে বা কারা সেই জরিপ করেছেন তা বলেন নি) বা কিভাবে তিনি জানলেন যে দেশের ৭০ ভাগ মানুষ (কম ও নয় বেশীও নয়। তিনি যদি বলতেন ৬৫-৭০ ভাগ ভোট পাবার সম্ভবনা আওয়ামীলীগের তাহলেও না হয় মেনে নেয়া যেত। অবশ্য ২০১৮ সালে উনারা এককভাবে ২৫৯ আসনে জয়ী হয়েছিলেন। সে হিসাবে তাহার এবারের হিসাব আগের চেয়ে কিছুটা কম হয়েছে কিন্তু কেন ? যেখানে যে পরিমান উন্নয়ন তারা বিগত ১৫ বছরে দেশের করেছেন সে হিসাবে শতভাগ আসনই তাদের হক সেখানে তিনি বাকী ৩০% ভোট তথা ৯০ আসন কেন বা কাকে কাকে দেয়ার জন্য (সিলেকশন/ভাগাভাগি) রেখে দিয়েছেন,সেটা তিনি ব্যখ্যা করেননি।
এখানে যে প্রশ্ন একজন মুসলমান হিসাবে মনে আসে -
১। " তারা সবাই মসুলমান। একজন মুসলমান হিসাবে তারা কি এ ধরনের কথা বলতে পারে? বা ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিতে এ জাতীয় কথার বৈধতা কতটুকু?
২। এ ব্যাপারে (বেহেশতের হক-দাবীদার কিংবা কারো কোন কাজে ঈমান চলে যাওয়া বা যে কোন কিছুর আগাম ফলাফল ঘোষনা) ধর্মের নির্দেশনাই বা কি?
৩। আওয়ামীলীগ গত ১৫ বছর যাবত দেশের একচছত্র ইজারাদার /ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার সাথে সাথে কি বেহেশতের ইজারাদারের অধিকারও লাভ করেছে? যদি করে থাকে তাহলে তাদের এ ক্ষমতা ( বেহেশত বরাদ্দ দেয়ার দায়িত্ব ) কে দিয়েছে?
ক্ষমতাশীন আওয়ামীলীগকে বাংলাদেশ পরিচালনার দায়িত্ব তাদের ভাষায় এ দেশের জনগন তাদের দিয়েছে (যদিও বাস্তবতা ভিন্ন ) তা না হয় বুঝা গেল, তবে বেহেশতের ইজারাদারের (নরক বা স্বর্গের বরাদ্দ) দায়িত্ব তাদের কে দিয়েছে < ঈশ্বর-আল্লাহ-সৃষ্টিকর্তা? নাকি দেশের ক্ষমতার মত বেহেশতের ক্ষমতাও বিরোধীদলকে যেভাবে নানা মারপ্যাচে (হামলা-মামলা-গুম) ফেলে সব কিছু নিজেদের করে নিয়েছে, সেভাবে সে ক্ষমতাও হাতিয়ে নেয়া হয়েছে?
এ দুনিয়ায় ক্ষমতা পাওয়ার জন্য এবং পাওয়া ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য ক্ষমতালোভী মানুষ অনেক কিছুই করে বা এমন অনেক কথা (মধুর বচন) ই বলে যা সাধারন সময়ে বা সাধারন মানুষ বলা কিংবা করার কথা কল্পনাতেও আনেনা ( উদাহরন - হাসানুল হক ইনু ,জাসদের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী ,লিংক - https://bn.wikipedia.org/wiki/ কিংবা মুরাদ হাসান যিনি মুরাদ টাকলা পরিচিত , লিংক - https://bn.wikipedia.org/wiki/ ,যখন তারা ক্ষমতায় ছিল তাদের সারাদিনের প্রধান কাজই ছিল জামাত-বিএনপি ,খালেদা জিয়া ও তার পরিবারকে নিয়ে গালাগালি কিংবা তাদের নিয়ে কয়েক দফা মধুর বচন না বলে তারা মনে হয় দিনের খাওয়াও শুরু করতনা/খেতনা, যা এখন আর তেমন শুনা যায়না তাদের মুখ থেকে এবং বর্তমানে ওবায়দুল কাদের (যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী) ও হাসান মাহমুদ (তথ্য মন্ত্রী ) এ দুজনের প্রতিদিনের শত শত কথা-মন্তব্য তথা মধুর বচনের মাধ্যমেই বাংলাদেশে বিএনপি-জামাত টিকে আছে গত ১৫ বছর ধরে নানা প্রতিকুলতার মাঝেও না হলে এ দু দল সম্পর্কে একটা প্রজন্ম কিছু জানতেই পারতনা। এ দুজন বিএনপি-জামাতকে নিয়ে ক্ষমতার মধুর লোভে এত এত কথা বলেন যা বিএনপি-জামাতের নেতারাও তাদের দলের জন্য এতটা বলেন না এবং উনারা সত্য-মিথ্যার মিশেলে এমনসব কথা বলেন যাতে ক্ষমতার মধুর সংযোগ না থাকলে নিজেরাও এসব কথার জন্য লজ্জাবোধ করতেন । আর এসবই (মধুর বচন প্রসব) উনারা সবাই করেন ক্ষমতার মধুর লোভে। আর সেই ক্ষমতার মধুর লোভেই মাঝে মাঝে কেউ কেউ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ন্যায়-অন্যায় ভুলে অবললিলায় এমনভাবে ধর্মকে টেনে নিয়ে আসেন যেখানে মনে হয় বাংলাদেশের ক্ষমতার টিকেটের ইজারার সাথে সাথে বেহেশতের ইজারাও (বেহেশতে যাবার অধিকার) দয়াময় উনাদের দিয়ে দিয়েছেন। ধিক !!!!!!!!!!!! ক্ষমতার এ মধুকে। ধিক এসব মধুর বচন ওয়ালাদেরকে।
বিজ্ঞানের তত্ত্ব অনুসারে প্রতিটি ক্রিয়ার যেমন সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে, ঠিক তেমনি ধর্মেও মানুষের প্রতিটি কাজেরও প্রতিফলের কথা বলা আছে। মানুষের বলা-করা কোনো কথা-কাজই বৃথা যাবে না বা আল্লাহপাক সকলকে তার বলা ও করণীয় কাজের প্রতিদান দিবেন। আল্লাহপাকের নিকট ভালো কাজের জন্য যেমন পুরস্কারের ঘোষনা করা আছে, ঠিক তেমনি মন্দ কাজের জন্য অনিবার্য শাস্তির হুশিয়ারীও দেয়া আছে।
আমাদের যে কারো পার্থিব জীবনে ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য ধর্মকে জড়িয়ে কিংবা ধর্মকে ব্যবহার করে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা কিংবা ঈমান-বেহেশত-দোযখ নিয়ে এ জাতীয় কথা বলা কতটা শোভন কিংবা গ্রহণযোগ্য এ ব্যাপারে ভেবে দেখার অবকাশ আছে। যে সব বিষয়( ঈমান-বেহেশত-দোযখ-কর্মফল) একমাত্র আল্লাহর হাতে সে সব বিষয়ে কথা বলা বা মন্তব্য করার আগে (কারন ঈমান কি জন্য চলে যাবে কিংবা কে বেহেশতে যাবে কিংবা ভবিষ্যতে কি হবে) যে কারোরই আরো সর্তক হওয়ার প্রয়োজন আছে । কারন - এ দুনিয়া এবং এর ক্ষমতা ক্ষণস্থায়ী এবং এখানে আমরা যে যাই করি কিংবা বলি তার জন্য পরকালে জবাবদিহী করতে হবে । যেখানে না এখনকার প্রশাসনিক ক্ষমতা কোন কাজে আসবে, না এর প্রধানকে তখন খুঁজে পাওয়া যাবে এ মধুর বচন ওয়ালাদেরকে উদ্ধার করার জন্য। সেখানে সবাই নিজেকে নিয়েই পেরেশান থাকবে। কারন যার যার কাজের ফল সেই ভোগ করবে । আর তাইতো আল কোরআনে আল্লাহপাক বলেন, " যখন সময় আসবে তখন অবশ্যই তোমার প্রতিপালক তাদের সবাইকে তার কর্মফল পুরোপুরিভাবে দেবেন। তারা যা করে, নিশ্চয়ই তিনি সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত"। (সুরা হুদ, আয়াত - ১১১)
আল্লাহপাকের ওয়াদার ব্যতিক্রম হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর প্রতিদানের ক্ষেত্রে আল্লাহর বিচার অত্যন্ত ন্যায়সংগত। তিনি কারো ওপর জুলুম করেন না। কারো প্রতিদানে কমবেশিও করেন না। আলোচ্য আয়াতে এ বিষয়ের প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, " প্রত্যেকে নিজ নিজ কর্মের জন্য দায়ী থাকবে। কেউ অন্যের (পাপের) বোঝা বহন করবে না। তারপর তোমাদের পালনকর্তার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন তিনি সেসব বিষয়ে বলে দেবেন, যা নিয়ে তোমরা মতবিরোধ করতে"।(সুরা আনআম, আয়াত - ১৬৪)
আলোচ্য আয়াতে এ কথাও বলে দেওয়া হয়েছে যে কেয়ামতের আদালতের আইন-কানুন দুনিয়ার আদালতের মতো হবেনা বা এরকম নয়ও। দুনিয়ায় যেমন কেউ অপরাধ করলেও তার দায়িত্ব অন্যের ঘাড়ে চাপানো যায় যা বর্তমানে আমাদের দেশের বাস্তবতা,কিন্তু আল্লাহর আদালতে এরকম কোনো সুযোগ নেই বা পাওয়াও যাবেনা। সেখানে একজনের পাপের জন্য অন্যকে দায়ী করা হবে না। দুনিয়ায় যে যেমন কাজ করবে, পরকালে সে তার কাজ অনুযায়ী ফল ভোগ করবে। ভালো কাজ করলে ভালো প্রতিদান পাবে। আর মন্দ কাজ করলে ফলও পাবে অনুরূপ।
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে , "আর মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ অতঃপর যে ক্ষমা করে দেয় ও আপস-নিষ্পত্তি করে তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে আছে। নিশ্চয় তিনি যালিমদেরকে পছন্দ করেন না "। (সুরা শুরা, আয়াত - ৪০) ।
এ ব্যাপারে আল্লাহপাক আরো বলেন,"যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে, সে তার শাস্তি পাবে এবং সে আল্লাহ ছাড়া নিজের কোনো অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না। আর নারী-পুরুষের মধ্য থেকে যারাই সৎকর্ম করে এবং বিশ্বাসী হয়, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। অণু পরিমাণও তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না"। (সুরা নিসা, আয়াত - ১২৩-১২৪)।
আর তাই আমাদের সকলেরই কথা-আচরনে সংযত হওয়ার অবকাশ আছে । কারন - সেখানে (পরকালে) দুনিয়ার ক্ষমতাশীন নেতা বা রাজনৈতিক নেতা-পাতিনেতা কেউ কারো সাহায্যে আসবেনা।
আল্লাহতাআলা মানুষকে অনেকগুলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করেছেন যার সবগুলোই অমূল্য সম্পদ। এদের কোন কোনটি দ্বারা মানুষ পাপ করে আবার পূণ্যও করে। মানুষের কিছু কিছু অঙ্গ এমন যে এগুলো মানুষের জান্নাত কিংবা জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হতে পারে। যদি কেউ এই অঙ্গের সঠিক ব্যবহার করে তাহলে এই অঙ্গগুলো তাদের জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম হবে, আর যদি কেউ এই অঙ্গগুলো গুনাহের কাজে ব্যবহার করে, তবে এই অঙ্গগুলো তাদের জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে। মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে দুটি এমন আছে, যেগুলো মানুষের জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ হবে।আর তাই একজন মানুষের তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের হেফাজত ও সঠিক ব্যবহার জরুরী।মানুষের অসংখ্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্য থেকে মাত্র দুটি অঙ্গের হেফাজতের জিম্মাদারি কোনো ব্যক্তি গ্রহণ করলে হজরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার জান্নাতের জিম্মাদারি গ্রহণ করবেন বলে ওয়াদা করেছেন।
এ ব্যাপারে হজরত সাহাল ইবনে ইবনে সাআদ (রাঃ) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, "যে ব্যক্তি নিজের দুই চোয়ালের মধ্যস্থ অঙ্গ (জিহ্বা) এবং দুই রানের মধ্যস্থ অঙ্গ (লজ্জাস্থান) হেফাজত করবে আমি তার জান্নাতের জিম্মাদার "। (সহিহ বোখারি শরীফ, হাদীস নং - ৬৪৭৪)।
এই অঙ্গ দুটি কোনো বড় অঙ্গ নয়, বরং অত্যন্ত ছোট। যাদের মধ্যে -
১। জিহ্বা।
২। লজ্জাস্থান।
এই অঙ্গ দুটি যদিও অত্যন্ত ছোট তবে মানুষের জীবনের বেশীরভাগ পাপ এই দুটি অঙ্গ দ্বারাই সাধিত হয়। প্রতিটি মানুষ প্রতিদিনই অসংখ্য বাক্য-কথা বলে এই জিহ্বা ব্যবহার করে। তার কিছু নিজের প্রয়োজনে ও সঠিক , কিছু অনুমানে ও স্বার্থের আশায়, কিছু চাটুকারিতায় তথা অন্যকে খুশী করার জন্য এবং কিছু কারো কারো চরিত্র হননে তথা অন্যের দোষ খুঁজে বের করার আশায়। আর এর ফলে প্রতিদনই মানুষ অসংখ্য পাপ অর্জন করছে নিজের অজান্তে।
এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক আল কোরআনে বলেন," হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান হতে দূরে থাক,কারণ কোন কোন অনুমান পাপ এবং তোমরা একে অন্যের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অন্যের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে চাইবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণ্যই মনে কর। আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর; নিশ্চয় আল্লাহ্ তওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু"। (সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত - ১২)
এ ব্যাপারে রসুল (সাঃ) বলেন, " মুসলিমদের গীবত করো না এবং তাদের দোষ অনুসন্ধান করো না। কেননা, যে ব্যক্তি মুসলিমদের দোষ অনুসন্ধান করে, আল্লাহ তার দোষ অনুসন্ধান করেন। আল্লাহ যার দোষ অনুসন্ধান করেন, তাকে স্ব-গৃহেও লাঞ্ছিত করে দেন"। (আবু দাউদ শরীফ, হাদীস নং - ৪৮৮০)। দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান না করার এ নির্দেশ শুধু ব্যক্তির জন্যই নয় বরং সরকারের জন্যেও (তবে বিচারিক প্রয়োজনে কারো দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান করা দোষের নয় বরং এর ফলে ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয়।যদি কাউকে হেয় কিংবা অপমানের উদ্দেশ্যে কিংবা নিজেদের ব্যক্তিগত লাভের উদ্দেশ্যে তা করা হয় তাহলে তা দোষের)।
বর্তমানে আমাদের দেশে সরকার-সরকারী দল-বিরোধী দল-প্রশাসন-আমজনতা-বুদ্ধিজীবি-রাজনীতিবিদ সবাই যার যার অবস্থান থেকে ও নিজ নিজ স্বার্থে যেভাবে একে-অন্যের সমালোচনা(গীবত)'য় মধুর বচনের ফোয়ারা ছুটাচছে এবং একে অন্যকে হেয়-নাংগা কিংবা অপমানের লক্ষ্যে যেভাবে জান-প্রাণ দিয়ে ঝাপিয়ে পড়ছে তাতে মানুষ যে আশরাফুল মাখলুকাত তথা ঈশ্বর-আল্লাহ-সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক ঘোষনাকৃত শ্রেষ্ঠ জীব তাই ভুল প্রমাণ হয়ে যাচছে এবং এমন সব কথা বলছে যা হয়ত সত্য থেকে যোজন যোজন দূরে কিংবা তা শুনে মিথ্যাও লজ্জায় পরে যায় । ন্যায়-অন্যায়,হিতাহিত জ্ঞান ভুলে আমরা একে অন্যের ক্ষতির জন্য জান-প্রাণ বাজি লাগিয়ে যেভাবে ঝাপিয়ে পড়ছি তা মানুষ হিসাবে বড়ই লজ্জা-অপমানের।
মহান আল্লাহপাক আমাদের সকলকে ক্ষমতার লোভে কিংবা দুনিয়ার মোহে পরে এরকম কাজ তথা মধুর বচন থেকে হেফাজত করুন ও জিহ্বার সংযত আচরন এবং এই দু অঙ্গের সঠিক ব্যবহারের তওফিক দান করুন।
জবাব দিহীতা - বর্তমানে দেশের সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সহ আরো নানা বিষয়ে ঘটিত একই ঘটনার পক্ষে-বিপক্ষে যেসব আলোচনা - সমালোচনা হচছে তার প্রেক্ষাপটেই এই লেখা। এখানে কে সত্যি কথা বা ভাল বলছে তথা কার মুখ নিঃসৃত বাণী কতটা মধুর কিংবা কে খারাপ বলছে তা প্রমান কিংবা সরকারের নীতির সমালোচনা করা বা সরকারের বিরোধীতাকারীদেরকে ভাল বলার বিষয় নয়।আমার শুধু এতটকুই বলতে চাওয়া যে , আমরা যে বলি বা করি তার দায় যেমন আমাদের উপর বর্তায় ঠিক তেমনি এর ফলও আমাদের ভোগ করতে হবে কোন এক সময়। তাই আমাদের সকলেরই নিজ নিজ জায়গায় সর্তক হতে হবে কথা বলা ও কাজ করার ক্ষেত্রে। আর তাই, পাঠককে এর সাথে রাজনীতির দূরতম কোন সম্পর্কও না খোজার বিনীত অনুরোধ রইলো
=========
পূর্ববর্তী পোস্ট
" মধুর বচন " - ২ - Click This Link
" মধুর বচন " - ১ - Click This Link
তথ্যসূত্র -
=======
১। বেহেশতে শেখ হাসিনার হক আছে - https://www.ntvbd.com/bangladesh/
২। ‘শেখ হাসিনা বেহেস্তে যাওয়ার অধিকার আছে, হক আছে’ - https://www.pba.agency/
৩। শেখ হাসিনার বেহেস্তে যাওয়ার অধিকার আছে: পরিকল্পনামন্ত্রী - https://m.dailyinqilab.com/article/248874/
১। ‘আল্লাহ শেখ হাসিনার জন্য ফেরেশতা পাঠাবেন, এটা যদি মনে না করেন ইমান চলে যাবে’- Click This Link
২। আল্লাহ শেখ হাসিনার জন্য ফেরেশতা পাঠাবেন' - Click This Link
১। ৭০ শতাংশ মানুষ শেখ হাসিনাকে ভোট দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে - ওবায়দুল কাদের - Click This Link
২।৭০ শতাংশ মানুষ শেখ হাসিনাকে সমর্থন করে - https://www.bhorerkagoj.com/2023/08/06/