somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশে মহিলাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয় না কেন?

১১ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে মহিলাদের ফাঁসি কার্যকর না হওয়ার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে, যা আইনি, সামাজিক এবং প্রথাগত দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা যায়।

১. উচ্চ আদালতের রায়ে ফাঁসির দণ্ড কমে যাওয়া
বাংলাদেশে নারী আসামিদের ফাঁসি কার্যকর না হওয়ার প্রধান কারণ হলো উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে গেলে তাদের ফাঁসির দণ্ড প্রায়শই কমিয়ে যাবজ্জীবন বা আমৃত্যু কারাদণ্ডে রূপান্তরিত হয়। উদাহরণ হিসেবে, শিল্পপতি লতিফুর রহমানের কন্যা শাজনীন হত্যা মামলায় এস্তেমা খাতুন মিনু এবং পুলিশ কর্মকর্তার বাবা-মা হত্যার দায়ে ঐশী রহমানের ফাঁসির দণ্ড মওকুফ করে সর্বোচ্চ আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়। কারাগার সূত্রে জানা যায়, নিম্ন আদালতে ফাঁসির রায় হলেও আপিলে গেলে নারীদের ক্ষেত্রে শাস্তি হ্রাস পায়, যা একটি প্রচলিত প্রবণতা।

২. আইনি বিধানে নারীদের প্রতি বিশেষ বিবেচনা
সাধারণ কারাবিধি অনুযায়ী, ফাঁসি কার্যকরের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ বিষয় বিবেচনা করা হয়—যেমন আসামির বয়স, শারীরিক অসুস্থতা, এবং নারী হলে গর্ভবতী কিনা। এসব কারণে নারী আসামিদের মৃত্যুদণ্ড স্থগিত বা হ্রাস করা হয়। ঐতিহাসিকভাবে, নারীদের প্রতি এই ধরনের বিবেচনা একটি অলিখিত প্রথা হিসেবে কাজ করেছে, যার ফলে তাদের ফাঁসি কার্যকর থেকে বিরত থাকা হয়েছে।

৩. রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা আবেদনের অনুপস্থিতি
ফাঁসির আসামিরা চূড়ান্ত সুযোগ হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোনো নারী ফাঁসির আসামির ক্ষমা আবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছায়নি। কারা কর্মকর্তাদের মতে, নারীদের মামলার কাগজপত্র সাধারণত আপিল বিভাগে আটকে থাকে, ফলে প্রক্রিয়াটি আর এগোয় না।

৪. কারাগারে ফাঁসির মঞ্চের অভাব
২০০৭ সালে কাশিমপুরে মহিলা কারাগার উদ্বোধনের সময় দেখা গেছে, দেশের অন্যান্য কারাগারে ফাঁসির মঞ্চ থাকলেও সেখানে কোনো ফাঁসির মঞ্চ নির্মাণ করা হয়নি। সাবেক আইজি প্রিজন্স জাকির হাসান জানিয়েছিলেন, অতীতে কোনো নারীর ফাঁসি কার্যকরের রেকর্ড না থাকায় এটি তৈরি করা হয়নি। এটি বাস্তবায়নের অনীহা বা অগ্রাধিকারের অভাবকেও নির্দেশ করে।

৫. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব
বাংলাদেশের সমাজে নারীদের প্রতি সহানুভূতি বা লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকার প্রতি সংবেদনশীলতা ফাঁসি কার্যকরে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ঐতিহাসিকভাবে, নারীদের ফাঁসির মতো কঠোর শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি সমাজে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি, যা আইনি সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে। এই অলিখিত সামাজিক নিয়ম ফাঁসি কার্যকরে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে।

৬. আন্তর্জাতিক চাপ ও মানবাধিকার
মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংস্থাগুলোর চাপও একটি কারণ হতে পারে। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে এই চাপ আরও তীব্র হয়, যা বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে প্রভাব ফেলে। ফলে, ফাঁসি কার্যকরের পরিবর্তে বিকল্প শাস্তির দিকে ঝুঁকে পড়ে আদালত।

বর্তমান পরিস্থিতি
২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন কারাগারে ৩৮ জন নারী ফাঁসির আসামি কনডেম সেলে রয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আপিল করেছেন, আবার কেউ সীমাবদ্ধতার কারণে তা করতে পারেননি। এদের বেশিরভাগই হত্যা মামলায় দণ্ডিত, প্রায়শই পরিবারের সদস্যদের হত্যার দায়ে। তবে আইনি প্রক্রিয়ার জটিলতা এবং উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের কারণে তাদের ফাঁসি কার্যকর হয়নি।

বাংলাদেশে নারীদের ফাঁসি কার্যকর না হওয়ার মূল কারণ হলো উচ্চ আদালতের শাস্তি হ্রাসের প্রবণতা, আইনি বিধানে বিশেষ বিবেচনা, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা আবেদন না পৌঁছানো, ফাঁসির মঞ্চের অভাব এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি। এসব কারণ একত্রে কাজ করে নারীদের ফাঁসির রায় কার্যকরে বাধা সৃষ্টি করেছে।

এই বিষয়টি সামনে আসছে কারণ গণহত্যার দায়ে আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাব্য ফাসিঁর আদেশ হতে পারে। আশা করি তার ফাসিঁর মধ্য দিয়েই এটি শুরু হবে বাংলাদেশে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ৯:৪১
৯টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×