somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রেফারি/আম্পায়ার নিয়ে একটি রঙ্গনামা

১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চৈনিক কোনো এক জ্ঞানীপ্রবর নাকি বলে গেছেন, সামান্য হাতের ইশারায় একই সঙ্গে ১১ জন জিগরি দোস্ত আর ১১ জন খুনে শত্রু যে তৈরি করতে পারে, তাকে রেফারি বলা হয়!

আবার ইংরেজ কোনো এক সাহেব পণ্ডিত বলেছেন, ২২ জন খেলোয়াড়, দুজন লাইন্সম্যান, একজন অসহায় দর্শক আর কয়েক হাজার রেফারি নিয়ে ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।

আম্পায়ারদের যে বন্ধু থাকে না, এটা কথার কথা নয়। একেবারে পরীক্ষিত সত্য। আর এই সত্য না জেনে এক ভদ্রলোক পড়েছিলেন মহা বিপাকে। কোনো একটা ক্রিকেট ম্যাচ চলছিল। ধরুন, ভারত-পাকিস্তান বা আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ। ওই ভদ্রলোক বিনা টিকিটে চলে এসেছেন খেলা দেখতে। তা লোকজন দেখতে দেবে কেন। আয়োজকদের একটা ইজ্জতের ব্যাপার আছে না?

‘আমি আপনাদের এই ম্যাচের একজন কর্তার বন্ধু।’ ভদ্রলোক কাতর হয়ে বললেন স্টেডিয়ামের গেটে দাঁড়ানো রক্ষীকে। দুয়ারের পাহারাদার এবার থতমত খেয়ে গেলেন, ‘তাই নাকি! তাই নাকি! তো আপনার বন্ধু কে?’ এবার হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন সেই বিনা টিকিটের লোকটা, ‘ওই যে আম্পায়ার, নাম···’

নাম পর্যন্ত আর বলা হলো না। এক নিরাপত্তাকর্মী তেড়েমেড়ে এলেন, ‘ঘাড় ধরে বের করে দে এই লোককে। মিথ্যেবাদী, জালিয়াত···’
‘কেন, কেন? এমন বলছেন কেন!’

‘মিথ্যেবাদী ছাড়া আর কী? এই দুনিয়ায় কোনো আম্পায়ারের আবার বন্ধু থাকে নাকি?’

আম্পায়ারদের প্রধান ‘শত্রু’ মাঠে নিশ্চয়ই খেলোয়াড়েরা। কিন্তু ক্রিকেট মাঠে বসে এই শত্রুকে তো কিছু বলাও যায় না। তাই বলে ছেড়েও তো দেওয়া যায় না। একের পর এক খারাপ সিদ্ধান্ত (পড়ুন নিজেদের বিপক্ষে সিদ্ধান্ত) পেয়ে চটে গেছেন এক অধিনায়ক। চটে গেছেন, কিন্তু কিছু বলতে গেলেই আইনের ফেঁকড়া।

অবশেষে অধিনায়ক আস্তে আস্তে আম্পায়ারের কাছে হেঁটে গেলেন, বিনীতভাবে জানতে চাইলেন, ‘স্যার, মনে মনে কিছু চিন্তা করলে কি আইসিসি কোনো শাস্তি দেয়?’

‘নাহ্‌। চিন্তা করলে শাস্তি কেন হবে!’ আম্পায়ার মহোদয় বি্নিত।

‘ও আচ্ছা।’ একটু নিশ্চিন্ত হলেন ফিল্ডিং দলের অধিনায়ক। তারপর আরও কাছে এগিয়ে এসে বললেন, ‘স্যার, আমরা সবাই এখন চিন্তা করছি আপনি একটা গর্দভ, চিন্তা করছি আপনাকে কীভাবে কড়া একটা পিটুনি দেওয়া যায়, চিন্তা করছি···।’

চিন্তার দৌড় কত দূর ছিল কে জানে!

আম্পায়ার মহোদয়েরা, আমার ওপর চটবেন না। এসব অভিজ্ঞতা যৎকিঞ্চিৎ আপনাদের নিশ্চয়ই আছে। অন্তত মাঠে দাঁড়িয়ে পেছনের গ্যালারি থেকে ‘ভুল সিদ্ধান্ত’-এর সমালোচনা নিশ্চয়ই হাজারবার শুনেছেন-এটা কী করল? এটা কি ওয়াইড হয় নাকি! ইশ, এমন এলবিডব্লিউটা দিল না! ব্যাটা আম্পায়ার কি কানা নাকি?

এক আম্পায়ার এসব কথা শুনতে শুনতে আর সহ্য করতে পারলেন না। খেলা বন্ধ করে মাঠ ছেড়ে গ্যালারিতে চলে গেলেন। সবচেয়ে বেশি সমালোচনা যে দর্শক করছিলেন, নির্বিকারভাবে তাঁর পাশে বসে অন্য আম্পায়ারকে বললেন, ‘তুমি একাই খেলা চালাও। আমি এখান থেকে দেখি।’

সঙ্গী আম্পায়ার কিছু বলার আগেই পাশের দর্শকটি চটে উঠলেন, ‘এখান থেকে দেখবেন মানে? এখান থেকে দেখে কি খেলা চালানো যায় নাকি?’

এবার আম্পায়ারের বলার পালা, ‘কেন? এতক্ষণ তো আপনার কথায় মনে হচ্ছিল, এখান থেকেই সবচেয়ে ভালো দেখা যায়।’
একই সিদ্ধান্তে একদল রাগ হবে, একদল ক্ষুব্ধ হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের এই ঢাকায় আবাহনী-মোহামেডান ফুটবল ম্যাচে এক সিদ্ধান্ত দিয়ে দুই দলেরই ক্ষোভের (নিন্দুকেরা বলে শারীরিক আক্রমণের) শিকার হওয়ার ঘটনাও নাকি ঘটেছে।

বেশি পেছনে যেতে হবে না। গত মৌসুমেই চরম বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে হকি ম্যাচ অসমাপ্ত রেখে মাঠ ছেড়ে এদিক-ওদিক তাকিয়ে, সন্ত্রস্ত হয়ে আম্পায়ার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমি আর ম্যাচ চালাতে পারব না। সামান্য কয়টা টাকার জন্য জীবনের ঝুঁকি নেওয়া যায় না।’
এ রকম জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ম্যাচ পরিচালনা করতেন এক রেফারি। ভদ্রলোক মারা গেছেন। মৃত্যুর পর তাঁর জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ওপরের কেউ একজন জানতে চাইলেন, ‘জীবনে কোনো সাহসের পরিচয় দিয়েছেন? সাহসী লোকদের সম্মান দেখানোর নিয়ম আছে।’
অনেক ভেবে সেই রেফারি বললেন, ‘মনে পড়ছে না।’

‘ভালো করে ভেবে বলুন।’

‘ও হ্যাঁ। একবার আবাহনী-মোহামেডান ফুটবল ম্যাচের শেষ মিনিটে পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছিলাম···।’

‘বাহ্‌, বাহ্‌! এ তো বিরাট কাণ্ড! বাহবা। তো কত আগের ঘটনা এটা?’

‘এই যে স্যার, মিনিট দুয়েক আগে।’
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:৩৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×