somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলবদর বাহিনীর দ্বারা নিখোঁজ রাসূলুল্লাহ(সাঃ)-এর বংশধর সৈয়দ নজমুল হকের জীবনী

১৩ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সৈয়দ নজমুল হক (১৯৪১-১৯৭১) একজন শহীদ বুদ্ধিজীবী। পেশাগত জীবনে তিনি একজন স্বনামধন্য সাংবাদিক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর তিনি আলবদর বাহিনী দ্বারা অপহৃত হন।

জন্ম ও শিক্ষাজীবনঃ
সৈয়দ নজমুল হক ১৯৪১ সালের ৫ জুলাই খুলনা জেলার কান্দাপাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। একই জেলার পয়গ্রাম কসবা গ্রামে ছিল তাঁর পৈতৃক নিবাস। নিজ গ্রামেই তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। ১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিএ (সম্মান) এবং ১৯৬৪ সালে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৪ সালেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা এবং ১৯৭০ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।

কর্মজীবনঃ
সৈয়দ নজমুল হক ছাত্রজীবন থেকেই সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলেন। তাঁরই সম্পাদনায় ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকদের পত্রিকা Vista প্রকাশিত হয়। সেই বছরই তিনি পাকিস্তান প্রেস ইন্টারন্যাশনালে (পিপিআই) সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় সৈয়দ নজমুল হক পিপিআই-এর চিফ রিপোর্টার পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে নিয়মিত প্রবন্ধ লিখতেন। ১৯৬৭ সালে সৈয়দ নজমুল হক পাকিস্তান সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ইনফরমেশন সার্ভিসের জন্য মনোনীত হন। কিন্তু সমাবর্তন মামলায় তাঁর ভূমিকার জন্য পুলিশের ছাড়পত্র না পাওয়ায় চাকরিতে যোগদানে ব্যর্থ হন। পরে তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। নজমুল হক ১৯৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সম্পূর্ণ প্রসিডিংস-এর রিপোর্ট করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৯ সালে জেল থেকে মুক্ত হয়ে অক্টোবরে ইউরোপ সফরে গেলে একমাত্র সাংবাদিক হিসেবে সৈয়দ নজমুল হক তাঁর সফরসঙ্গী হন। এ সময় তিনি বিবিসি এবং লন্ডন টেলিভিশনে বাঙালির স্বায়ত্তশাসন ও জাতীয়তাবাদের পক্ষে তাঁর জোরালো মতামত তুলে ধরেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি নজমুল হক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নৃত্যনাট্য “শ্যামা” পরিচালনা করেন। তাঁর পরিচালনায় “চন্ডালিকা” নৃত্যনাট্য ১৯৬৭ সালে ব্রিটিশ কাউন্সিলে এবং ১৯৭০ সালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে মঞ্চস্থ হয়। এছাড়া তিনি নিয়মিত ঢাকা বেতার ও টেলিভিশনে নাটক, কথিকা ও একাঙ্কিকায় অংশগ্রহণ করেন। নজমুল হক ১৯৬০-৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন।

আন্দোলনে ভূমিকাঃ
ষাটের দশকের বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে নজমুল হক সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। এছাড়া ১৯৬২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের সামরিক আইন বিরোধী আন্দোলন এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৬৪ সালের ২২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল কার্জন হল প্রাঙ্গণে। সেখানে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর আবদুল মোনায়েম খানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আন্দোলনে অংশ নেন। একারনে তিনি মিছিল থেকে গ্রেফতার হন এবং কনভোকেশন মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে কারারুদ্ধ হন। পরে তিনি উচ্চ আদালতের রায়ে মুক্তি পান।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকাঃ
নজমুল হক ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে পাকিস্তানি সৈন্যদের নির্যাতন ও নৃশংসতার সংবাদ বহির্বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরেন। এই কারণে ঐ বছরের ৬ আগস্ট সামরিক সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। একই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর তাঁকে ঢাকায় নিয়ে এসে নজরবন্দী রাখা হয়। ১৯ অক্টোবর পুনরায় তাঁকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয় এবং নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তিনি মুক্তি লাভ করেন।

নিখোঁজঃ
১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর আলবদর বাহিনীর সদস্যরা সৈয়দ নজমুল হককে তাঁর পুরানা পল্টনের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। পরে তাঁর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি।

সূত্রঃ
(১) স্বরনের আবরনে মরনেরে রাখে ঢাকি : আমার চাচা সৈয়দ নজমুল হক
(২) উইকিপিডিয়া
(৩) বাংলাপিডিয়া
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১২:২০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×