বুঝলাম লকডাউনে ভাবীর সাথে অনেক মারামারি কাটাকাটি চলছে, আসেন এবার কিছুক্ষন বিরতি দিয়ে রান্নাবান্না করি। আর সারপ্রাইজ দেন ভাবীদেরকে, অন্তত একটা দিন শান্তিতে থাকতে দেন বেচারীদের........ ।
রান্না শব্দটা জীবনভর আমার কাছে আতংকের নাম ছিল। মানুষ ক্যামনে ঘন্টার ঘন্টার পর চুলার সামনে দাঁড়ায়ে খুন্তি নাড়ে তা আমার কাছে বরাবরেই বিস্ময়। দেশে থাকতে ভুলেও উকিঁ দেই নাই। মানুষ শখ করেও অনেক সময় রান্না করে আমি তাও করি নাই। কিন্তু প্রবাসে তো আর আমার এ্যাসিসটেন্টরা নাই যে হুকুম করলেই তামিল হবে ।
এখানে আসার পর থেকে একপ্রকার রেডি ফুডের উপ্রে জীবন কাটাইছি। যেমন সকালে সিরিয়াল, এখানে শত শত ভ্যারাইটির সিরিয়াল পাওয়া যাই। দুধে ঢালো আর খাও, শেষ সকালের নাস্তা। দুপুরে রেডি বার্গাার পেটি পাওয়া যায় যা সকালে একটু তেলে ভেজে দুইখান পাউরুটি বা বানের মাঝে ঢুকায়ে একটু লেটুসপাতা আর সাথে কিঞ্চিত সস। ব্যাস রেডি পরিবারের সকলের দুপুরের লাঞ্চ। আর রাতে সপ্তাহে একদিন রেধেঁ রাখা মাংস, ৩/৪ রকমের সব্জি দিয়ে কিছু একটা রান্নার চেস্টা.... সাথে ডাল। ব্যাস পোলাপান খাইলে ভালো, না খাইলে পিৎজার অর্ডার, অফিস থেকে ফেরার পথে কোন ইন্ডিয়ান দোকানের বিরিয়ানী কিংবা ম্যাকের বার্গার। শেষ রাত দিন!
কিন্তু জীবনের এই প্রথম দীর্ঘ বন্দী জীবন পাওয়ার পর বুঝলাম এতো আরামের জীবন আমার না। সারাদিন গড়াগড়ি করতে করতে টায়ার্ড। আর এদিকে চারপাশের রেডিফুডের দোকানও বলতে গেলে বন্ধ, এরকম মাইনকার চিপায় পড়ে কিছু একটা করে সময় কাটানোর জন্য রান্নাঘরে ঢুকলাম। প্রথম প্রথম এক্সপেরিমেন্ট শুরু করলাম ইউটিউব দেখে, সকলেই খেয়ে বললো খারাপ না। (অবশ্য খারাপ বলার মতো সাহস সঞ্চার করতে হয়তো পারে নাই)। তারপর আমার সাহস বেড়ে গেল, একে একে ট্রাই করতে লাগলাম বিভিন্ন আইটেম। দেখলাম ব্লগার শায়মা হতে বেশী বাকি নাই । তাই সাহস করে এই পোস্ট কিছু ট্রিক্স এন্ড টিপস্.......।
ঘরে পাতা দই:
এই এক জিনিস আমি জীবনে বহুবার ট্রাই করছি কিন্তু কোনভাবেই সফল হই নাই। একবার জোড়া লাগেতো আরেকবার ভাঙ্গে, একাকার অবস্থা। আর এখন মুহুর্তেই বানাতে পারি দারুন স্বাদের দই।
ট্রিক্স এন্ড টিপস্:
১) দুধটা যত পারেন ঘন করার চেস্টা করবেন। চিনি আগেই মেশাবেন নিজের পছন্দ মতো জ্বালের সময়।
২) দই এর বীজটা যথা সম্ভব ফ্রেস ইউজ করার চেস্টা করবেন।
৩) গরম দুধের সাথে বীজটা ইউজ করবেন না বরং একটু হালকা গরমের সাথে ইউজ করবেন।
৪) দুধটা ব্লান্ড করে নিলে খুব ভালো হয়।
৫) মাটির পাত্র ইউজ করলে দই এ পানি কম জমবে নতুবা কাঁচের পাত্রে দিতে পারনে। তবে কোনভাবেই স্টিল বা অন্য কোন পাত্রে দিবেন না। (আমি অন্তত সফল হইনি)।
৬) যদি ওভেন ইউজ করেন তাহলে ১০ মিনিট হাই হিট দিয়ে ওভেন বন্ধ করে পাত্রে দই বসায়ে দিবেন ৪/৫ ঘন্টার জন্য। ওভেন না হলে হালকা গরম স্থানে বেশ ভালোভাবে মোটা কোন কাপড় দিয়ে দিবেন পাত্রের উপরে।
চিকেন মাঞ্চুরি :
এটা আমার পোলাপানের খুব পছন্দ। বানানো একটু ঝামেলা বাট এই ফাঁকে সব্জী খাওয়াতে পারি। তাই এই রেসিপি এখন আমার নিত্য সঙ্গী।
ট্রিক্স এন্ড টিপস্:
১) শুধু চিকেনের বুকের মাংস নিলে ভালো হয়। এবং খুব ছোট ছোট টুকরো করবেন।
২) এক ঘন্টা মেরিনেট করবেন সয়াসস, একটু আদা বাটা, একটা ডিম, একটু কর্ন ফ্লাওয়ার ও ময়দা, সাথে গুড়া মরিচ।
৩) ব্যাস এক ঘন্টা পর তেলে ভেজে উঠিয়ে নেবেন।
৪) আচ্ছা মত সব্জী নিবেন। কিউব করে কাটবেন। অল্প টমেটু সস, সয়া সস এর সাথে গোল মরিচ দিয়ে স্বী কিছুটা ভেজে ভাজা চিকেন মেশাবেন।
৫) যদি হালকা ঝোল চান তাহলে একটু কর্ন ফ্লাওয়ার ঠান্ডা পানিতে গুলে তার সাথে মিশিয়ে দিবেন। ব্যাস রেডি রেস্টুরেন্ট স্টাইলের চিকেন মাঞ্চুরি ।
হানি গার্লিক চিকেন :
এটা ও আমার পোলাপানের খুব পছন্দ করে। আসলে পোলাপানকে চিকেন আইটেম যেমনই করেন না কেন ওরা পছন্দ করবে।
ট্রিক্স এন্ড টিপস্:
১) রেসিপি খুব সোজা। নরমাল চিকেন রান্নার মতোই তবে গরম সমলা, জিরা, হলুদ দিবেন না। আদা, গোল মরিচ আর কাচাঁ মরিচ ইউজ করবেন।
২) তেলের উপর শুধু এক্সট্রা রসুন কুচি দিবেন। আর বাকি মসলা দিয়ে ভুনা করার পর প্রচুর মধু দিবেন। নামানোর আগে সাদা তিল দিলে একটু ডেকোরেশন হলো এই যা।
ক্রিমি টফু/পনির :
এটা আমি খেয়েছিলাম আমার এক ইন্ডিয়ান ফ্রেন্ড এর বাসায়। ওরা সব কিছুর সাথেই বলতে গেলে পনির ইউজ করে, যেমন পালং পনির, সব্জী পনির, পনির ডাল....। তবে পনির বা টফু দিয়ে এ ক্রিমি আইটেমটা পোলাও দিয়ে দারুন খেতে। রান্না কিন্তু খুবই ইজি।
ট্রিক্স এন্ড টিপস্:
১) আমি টফু দিয়েই বেশী করি কারন টফু বেশী পুস্টিকর তাই। টফু না পেলে পনির দিয়ে করতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে ভাজার স্টেপটা বাদ দিবেন।
২) টফু প্যাকেট থেকে বের করে বেশ ভালোভাবে মুছে নিবেন টিস্যু দিয়ে। তারপর সামান্য লবন ও বারবিকিউ মসলা দিয়ে মেখে হালকা তেলে ভেজে নিবেন।
৩) ঘরে যেই বাদাম থাকুক না কেনো তা একটু পানিয়ে আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রাখবেন। আমি কাজু ইউজ করদে পছন্দ করি। তেলের উপর সেই বাদাম, টমেটু, ও পেয়াজ ভেজে তা ব্লান্ড করে নিবেন।
৪)তারপর অন্যান্য শাহী রান্নার মতই তেল বা ঘিতে পেয়াজ, আদা, রসুন, গরম মসলা দিবেন তবে সবই খুব সামান্য পরিমান। এর সাথে দিবেন ব্লান্ড করা পেস্ট ও স্বাদের জন্য সামান্য টমেটু সস। ব্যাস টফু মিশিয়ে নিলেই তৈরী হয়ে গেল মজাদার ক্রিমি টফু।
এখানে আমি ডিটেইলস রেসিপিতে গেলাম না কারন ইউটিউবে এতো এতো রেসিপি আছে যে যেকোন একটা ফলো করে স্টেপ বাই স্টেপ করতে পারবেন যেকোন রান্না। সারা জীবন রান্না থেকে পালিয়ে বেড়ালেও এখন মনে হয় রান্না জিনিসটা এতোটা খারাপ না, অনেকটা আর্ট! একটু ধৈর্য্য রাখলেই চমৎকার কিছু তৈরী হয়। নেক্সট্ মিস্টির রেসিপি নিয়ে আসবো। কারন এরই মাঝে বেশ কয়েক পদের মিস্টি বানিয়েছি যা সত্যিই ভালো হয়েছে।
আজকের মতো খোদা হাফেজ, ও ভালো কথা.... ছোট্ট একটা রান্না ঘরের ট্রিক্স ভাইদের জন্য যারা নাকি হাড়ি পাতিল বেসিন মাজতে মাজতে হাত ক্ষয় করে ফেলছেন! কিছুতেই নাকি পরিস্কার হচ্ছে না হাড়ি পাতিল! নো প্রবলেম... সামান্য বেকিং সোডা ছড়িয়ে মেঝে নিন দেখবেন সব ঝকঝকে !!!!
ছবি ক্রেডিট: নিজের সহ গুগুল মামার
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:১৩