বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান নারী ও শিশুর প্রতি যৌন সহিংসতার কারণ ও তা প্রতিরোধে করণীয়-১ম পর্ব
লিখাটা ব্লগার জাফরুল মবীন ভাই এর। বাংলাদেশের নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যান দেয়া আছে। আপনি যদি একজন সত্যিকারের মানুষ হোন (হাত পা ওয়ালা কোন বিশেষ প্রাণী নয়) তাহলে তা দেখে আতঁকে উঠবেন!
ধর্ষণ, নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে। এরকম সহিংসতা কি হঠাৎ ই শুরু হয়েছে দেশে? একটি সমাজ কি রাতারাতিই নারীর প্রতি সহিংস হয়ে উঠেছে?
না, আজকের এ বিপর্যয় অনেকদিনের ফসল মাত্র। কিন্তু কেন হচ্ছে? কেন পুরুষ নারীর প্রতি এতোটা নির্দয়? নারীর গর্বে জন্ম নেয়া, বা নারীর আদরে বেড়ে উঠা সে পুরুষ কিভাবে নারীর প্রতি এতোটা সহিংস হতে পারে?? নিজেকেই প্রশ্ন করি?
উত্তর কিন্তু সহজ......... !
১) ক্ষমতার দ্বন্দ: পুরুষ নারীকে তার প্রতিপক্ষ ভাবে। নারীকে কখনই আপন করে নিতে পারেনি। কি মা হিসেবে. কি বোন হিসেবে, কি স্ত্রী হিসেবে! খুব খারাপ লাগছে শুনতে? কিন্তু এটাই বাস্তবতা। আপনি বুকে হাত দিয়ে বলুন, আপনি কি চাননি আপনার স্ত্রী, আপনার বোন, আপনার সহকর্মী আপনার অধীনস্ত থাকুক? আপনি চেয়েছেন সবসময়ই তার চেয়ে এগিয়ে থাকতে। তাকে মনের অজান্তেই হিংসে করেন। কখনই তাকে তার যোগ্য সন্মান দিতে চাননি। তাই যখনই পেরেছেন তাকে আঘাত দিয়েছেন।
২) অসন্মান: আপনি জন্ম থেকেই দেখেছেন আপনার মা অত্যাচারিত। আপনার বাবা কথায় কথায় আপনার মাকে অপমান অপদস্ত করে। বাড়ির বাকি সদস্যরাও পারলে আপনার মাকে অপদস্ত করে। সে যে একটা মানুষ তা ও আপনি মাঝে মাঝে ভুলে যান। আবার দেখেন সেই মা ই আপনার বোনকে নয় আপনাকেই পক্ষেই বেশী ঝুঁকে। তাই আপনার অজান্তেই মনেই গেঁথে নেন নারী মানেই তাকে যখন ইচ্ছে অপমান করা যাবে, এটাই আপনার অধিকার। তাই যখনই "না" শব্দটা কোন নারীর মুখে শোনেন তখনই আপনার মাথা গরম হয়ে যায়। সেটা স্ত্রী হোক, বান্ধবী হোক, কিংবা প্রেম নিবেদন করা কোন মেয়েই হোক। তাকে আঘাত করার জন্য মুখিয়ে থাকেন।
৩) অর্থনৈতিক বৈষিম্য: ইসলাম নারীদেরকে সম্পত্তির ভাগের অংশ যেমন কম দিয়েছে তেমনি সামাজিকভাবে মেয়েদেরকে সবসময়ই ঠকানোর একটা চেষ্টা থাকে। সেটা হতে পারে বাবা মায়ের দিক থেকে, হতে পারে স্বামীর দিক থেকে, হতে পারে ভাইয়ের দিক থেকে.... এমন কি সহকর্মীর কাছ থেকে। সব দিক ঠেকেই সে ঠকে আসছে। এমন কি পারিবারিকভাবে মেয়েকে শিক্ষিত করার ব্যাপারেও অনেক পরিবারের অনীহা। কারন খুব সহজ, সবসময়ই বাবা মা ছেলে সন্তানের উপর ডিপেন্ড করতে চায়। মেয়ে সন্তানকে পরের পরিবারের ভাবে নিজের পরিবারের সদস্য নয় কিছুতেই।
৪) মেয়েতো মানুষ নয় মেয়েমানুষ: ব্লগেরই এক ভাইয়ের মুখে শোনা ঐতিহাসিক বাণী, "পুরুষ রাগে বাদশা, মেয়ে রাগে বেশ্যা"। অর্থ্যাৎ একটি মেয়ের রাগ দু:খ করার মত অধিকারও থাকে না। সে রাগ করেছে মানে তাকে যে কেউই ইউজ করতে পারে। এ ধরনের বিশ্বাস যদি ব্লগের মতো আধুনিক স্থানে দেখি তাহলে ঘরে ঘরে দেখা খুব স্বাভাবিক। তাই একটি মেয়েকে অপমান অপদস্ত করাই স্বাভাবিক যেন, কিন্তু সে মেয়ে কোনভাবেই মুখ তুলে কথা বলতে পারবে না।
৫) মেয়েদেরকে অসন্মানসূচক কথা: আমি অনলাইনে বিভিন্ন গ্রুপের সাথে আছি। এবং বলতে গেলে এরা সবাই উচ্চ শিক্ষিত ভদ্রলোক। কিন্তু গ্রুপ ম্যাসেন্জারের ৮০% ই হলো মেয়ে সংক্রান্ত কোন জোক্স। শুধু কি এখানে, সারা অনলাইন ঘাটুন, দেখবেন যা জোক্স আছে তা মেয়েদেরকে ঘিরেই, পৃথিবীতে যত খারাপ গালি আছে সবই প্রায় স্ত্রীবাচক। অর্থ্যাৎ মেয়েদেরকে নিয়ে হাসাহাসি, নোংরা কথা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়, খুব আনন্দঘন একটি বিষয়। এটা নিয়ে মাইন্ড করার কিছু নেই।
এরকম আরো অনেক কিছু আছে। তাই লিখাটা বড় করতে চাই না। এ আন্দোলন, চিৎকার বা ফাঁসি সত্যিকারের এ সহিংসতার সমাধান আনবে না যতক্ষন পর্যন্ত আপনি নিজের মনকে শুদ্ধ করেন। নিজের পরিবারের মেয়েটিকে যথাযথ সন্মান করেন।
আসুন, একটু ভাবুন, একটু নারী নির্যাতনের কারনগুলো নিয়ে আবারো ভাবুন্।.....
নিজের মন থেকে সন্মান দেন একজন নারীকে।
নারীকে প্রতিপক্ষ হিসেবে নয় একজন আপন হিসেবে ভাবতে চেস্টা করুন।
নারী শুধু ভোগেরই বস্তুরই নয় একজন মানুষ, মায়া মমতায়ভরা একজন মানুষ ভাবতে শিখুন।
দেখবেন অনেক কিছুর সমাধান হয়ে যাবে, অনেক পাজল সহজে মিলে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১২:৪৬