আচ্ছা বলেনতো নারীর জরায়ুর স্বাধীনতা বলতে কি বোঝায়? কিংবা এর সাথে নারী স্বাধীনতার সম্পর্ক কি? আর "মুসলিম নারীরাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সতী ও পবিত্র নারী" বলে একজন ব্লগার দাবী করেছেন। তো ভাই, "শ্রেষ্ঠ সতী ও পবিত্র নারী" নারী বলতে কি বোঝায় তা কি কেউ আমারে একটু বুঝায়ে দিবেন?
ওয়েল, এবার বলেন তো ভাইয়েরা...
এ পৃথিবীর কত ভাগ মেয়ে বহু বিয়ে করে?
কতজন ভদ্দরলোক কাজের মেয়েকে রেপ করে?
আশেপাশের নিরীহ ৫ বছরের বাচ্চা থেকে শুরু করে ৭০ বছরের বৃদ্ধাকে কারা রেপ করে?
বাসের মাঝে নিরীহ স্কুলগামী বা গার্মেন্সটস্ থেকে ফেরা মেয়েকে কে রেপ করে?
চারটা বিয়ে করার জন্য ইনিয়ে বিনিয়ে যুক্তি জাহির করে একটার পর একটা কারা বিয়ে করে?
নিজের সুন্দরী বউ থাকার পরও পরকীয়া/উপপত্নী করা রাখে?
সৈাদীর মতো আরব রাস্ট্রগুলো থেকে বছরে কতগুলো মেয়ে রেইপড্ হয়ে লাশ হয়ে ফেরে?
স্কুলের হেডমাস্টার, বাসার টিউটর, পরিমল, পান্না মাস্টার..... ওরা কি ছেলে নাকি মেয়ে?
দেশে কতজন মেয়ে প্রতিদিন অত্যাচিারিত হয়, লাশ হয় কার দ্বারা?
দেশে কয়টা পতিতালয় আছে আর তাদের খদ্দের কারা?
আসলে বলতে গেলে একটা বড় অংশই মেয়েদেরকে শুধু একপিন্ড জড়ায়ু ভাবে। এর বাইরে কিছুই নয়। যে জড়ায়ু পিন্ডকে চাহিবা মাত্রই দিতে বাধ্য থাকিতে হইবে। সেটা স্বামী হোক, চাচা/মামা/ফুফা/দুলাভাই/চাচাতো/মামাতো/খালাতো/ফুফাতো ভাই হোক, স্কুল/মাদ্রাসা/কলেজের শিক্ষক হোক, বাস/সিএনজি এর ড্রাইভার হোক, গৃহকর্তা হোক, প্রতিবেশী হোক, রাস্তার ঝাঁড়ুদাড় হোক, রাস্তার বখাটে ছেলে হোক, অফিসের বস হোক, সহকর্মী হোক..... চাহিবা মাত্রই কাপড়-চোপড় খুলে শুয়ে পড়তে হবে। নতুবা তোমাকে মৃদু আঘাতের নামে হাত পা ঝলসে দেয়া হবে, সন্মান রক্ষার নামে গলা টিপে ধরা হবে, শিক্ষা দেবার নাম করে এসিডে ঝলসিয়ে দেয়া হবে। যেহেতু সৃষ্টিকর্তা তোমাকে কম শক্তিশালী করে পাঠিয়েছেন তাই তোমাকে পুরুষের দাসত্ব মেনে নিতেই হবে।
মেয়ে মানেই হলো গলা উঁচু করে কথা বলা যাবে না, চার দেয়ালের বাইরে যাওয়া যাবে না, নিজস্ব চিন্তা ভাবনা ইচ্ছা চাহিদা বলে কিছু থাকবে না, কোন পুরুষ সদস্যের অনুমতি ছাড়া কিছু করা যাবে না, সকল পুরুষ সদস্যদের মনোরন্জন ও তাদের ইচ্ছার বাস্তবায়ন করাই প্রতিটি নারীর অবশ্য কর্তব্য। শরীরের প্রতিটি অংশ বিশেষভাবে ঢেকে রাখতে হবে যাতে পুরুষশ্রেণী তা দেখা মাত্রই উত্তেজিত না হয়ে পরে। কারন কাউকে উত্তেজিত হবার দায়ভার তোমাকেই নিতে হবে।
তুমি বেশী দূর শিক্ষিত হতে দেয়া হবে না কারন তোমার শিক্ষা তোমাকে বিপথগামী করবে, তুমি পর-পুরুষের সাথে মিশে নষ্টাভ্রষ্টা হবে আর নিজের আখেরাত নষ্ট করবে। শুধু নিজের আখেরাতই নয় পরিবারের সবার নিশ্চিত বেহেস্ত থেকে বঞ্চিত করবে। তুমি শুধুই হবে সন্তান উৎপাদনকারী মেশিন এর বাইরে নয় কিছুতেই। তুমি হবে গৃহকাজে পটু একজন রোবট যাকে শুধু সময় সময় সোনা গয়না কাপড়-চোপড় দেয়ার মাধ্যমে চার্জ দেয়া হবে।
নারী জড়ায়ু স্বাধীনতার ব্যাখাকারীরা পশ্চিমা দেশের সাথে বিভিন্নভাবে তুলনা করেছেন নন-পশ্চিমা বা মুসলিম রাস্ট্রের মেয়েদের সাথে। আপনি জানেন কি, পশ্চিমা দেশের মেয়েরা কতটা সন্মানের সাথে বাচেঁ? এখানে নারীকে কোনভাবে অসন্মান করার কথা চিন্তাই করতে পারে না কেউ কি ঘরে কি বাইরে। এখানে নারীকে কেউ মেয়ে-মানুষ ভাবে না, ভাবে একজন মানুষ হিসেবে। আর তাই রাত বিরাতে একটি মেয়ে যখন খুশি ঘর থেকে বের হতে পারে, যেখানে খুশি যেতে পারে, আড্ডা দিতে পারে, হৈচৈ করতে পারে, নিজের ভালোলাগা মন্দলাগাকে জানাতে পারে, নিজের ভবিষ্যত নিজে গড়তে পারে, নিজের জীবনের ডিসিশান নিজে নিতে পারে। হাঁ, সত্য যে সেখানেও নারী নির্যাতন হয়, ধর্ষণ হয় তবে তা আমাদের দেশের তুলনায় শতভাগের একভাগ এবং তার বেশীর ভা্গই কঠিন আইনের আওতায় আনা হয় যদি ভিকটিম কমপ্লেইন করে।
আর তার পাশাপাশি সৈাদী মেয়েদের দিকে দেখেন! একেকটি মেয়ে যেন কৃতদাস, একেকটা পরগাছা। পুরুষদের বাইরে তাদের কোনই অস্তিত্ব নেই। একজন পুরুষ হাজারটা বিয়ে করার পরও কাজের মেয়ের সাথে সহজেই শারীরিক সম্পর্ক গড়ে বাবা ও ছেলে। ছি: ধীক্কার জানাই এ সমাজকে। যাদের কাছে যৈানতাই মূখ্য অন্য সব বিষয় গৈাণ। আর নারী তাদের কাছে সেই জড়ায়ু পিন্ড ছাড়া কিছুই নয়। সেখানে কোন মেয়ে এ পর্যন্ত কোন অন্যায়ের বিচার পেয়েছে? বিচার পেয়েছে কি সেখানে ধর্ষিত বা লাশ হয়ে আসা আমাদের দেশের করিমন, আছিয়া, রেখারা?
জনাব ব্লগার সাহেব, আপনি কি সেই মুসলিম সমাজের উদাহরন দিতে চাচ্ছেন? সেই অন্ধ সমাজে ফিরে যেতে বলছেন?? সেই বর্বর সৈাদী বা আরব রাস্ট্রের উদাহরন হতে বলছেন নারীদের?
থাক্ আর বাড়ালাম না এ লিখার দৈর্ঘ! শুধু আপনাদের কাছে করজোড়ে প্রার্থনা,
এ মেয়েগুলোকে ওদের মতো বাঁচতে দেন।
ওদেরকে বাঁচার পথে বাধাঁ দিবেন না।
ওদের জীবনের ডিসিশান ওদেরকে নিতে দিন।
ওদেরকে শিক্ষার পথ দেখান।
ওদের নিজেদের ভালো মন্দ নিজেদেরকে ভাবতে দেন।
সতী ও পবিত্র জড়ায়ুর মেয়ে নয় একজন সত্যিকারের মানুষ হতে পারে। যে মানুষ মেয়েমানুষ নয়, একজন সত্যিকারের মানুষ।
আর আপনাদের পুরুষ নয় শুধু নারীই সতী সাধ্ধী হবার এ চিন্তাধারাটা কতটুকু নি:কৃষ্ট, কতটা অপমানকর একজন নারীর জন্য তা বোঝার তৈাফিক দান করুক রাব্বুল আল-আমিন।
ভালো থাকুন সবাই।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৫৮