somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আতেন-এর জন্য রক্তপাত!

১১ ই অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চতুর্থ আমেনহোটেপ ছিলেন প্রাচীন মিশরের একজন ফারাও। মৃত্যু ১৩৩৬ খ্রিস্টপূর্ব। তাকে স্মরণ করার কারণ: তিনি মিশরে একেশ্বরবাদের সূচনা করেছিলেন। এবং তার একেশ্বরবাদ হিব্রুবাসী ইহুদিদের প্রভাবিত করেছিল। ইহুদিরা এককালে মিশরে বন্দি ছিল আমরা জানি। মুসা নবী তাদের মুক্ত করে সিনাই উপত্যকায় নিয়ে গিয়েছিলেন। মুসা নবীর ওপর চতুর্থ আমেনহোটেপ-এর প্রভাবের কথাও কেউ কেউ বলে থাকেন।
সে যা হোক। চতুর্থ আমেনহোটেপ-এর সময়ে মিশরজুড়ে আমুন-রে উপাসনা প্রচলিত ছিল। প্রাচীন মিশরের প্রধানতম দেবতা ছিলেন আমুন-রে। এমন কী তাকে থিবস নগরের রক্ষাকর্তাও মনে করা হত।
ফারাও চতুর্থ আমেনহোটেপ কী কারণে আমুন-রে উপাসনার পরিবর্তে একেশ্ববাদী “আতেন” উপাসনার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। আতেনকে মনে করা হত আলোর জীবনদায়ী শক্তি। কাজেই আতেন ছিল সূর্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
ফারাও চতুর্থ আমেনহোটেপ-এর আমুন-রে উপাসনার পরিবর্তে একেশ্বরবাদী আতেন উপাসনার সিদ্ধান্তে সমগ্র মিশরজুড়ে আমুন-রেপন্থি পুরোহিতদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তারা একত্র হয়ে সশস্ত্র আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয়। ফারাও চতুর্থ আমেনহোটেপ পিছ-পা হননি। তিনি অসংখ্য আমুন-রেপন্থী উপাসনাকারী পুরোহিত ও আমুন-রে অনুসারীদের হত্যা করার নির্দেশ দেন!
একেশ্বরবাদ প্রতিষ্ঠায় রক্তপাতের সেই শুরু। যে ধারাটি আজও অব্যাহত।
এখন প্রশ্ন এই-হঠাৎ ফারাও চতুর্থ আমেনহোটেপ-এর আতেন পূজার ভূত চাপল কেন?
....তিনি আতেন শব্দটার প্রতি এমন গভীর আবেগ বোধ করলেন কেন? আতেনের প্রতি গভীর আবেগের বশবর্তী হয়ে ফারাও চতুর্থ আমেনহোটেপ তার নাম পরিবর্তনেরও সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন।
আমেনহোপেট থেকে আখেনাতেন।
আখেনাতেন মানে, “আতেন-এর দাস।”
তারপর আখেনাতেন মিশরের রাজধানী পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেন। মিশরের রাজধানী আগে ছিল থিবস, এখন নতুন রাজধানী হল- আখেটাটেন। আখেটাটেন মানে আতেন-এর দিগন্ত। (বর্তমানে এই জায়গাটির নাম আমারনা।)
ফারাও আখেনাতেন-এর উদ্যেগে ক্রমশ আখেটাটেন নগরটি হয়ে উঠল আতেন উপাসনার কেন্দ্রে। বিশাল বিশাল সব আতেন-মন্দির গড়ে তুললেন আখেনাতেন । ওদিকে আতনবাদী একেশ্বরবাদ প্রতিষ্ঠায় অসংখ্য আমুন-রে উপাসনাকারী পুরোহিত ও আমুন-রে অনুসারীদের গুমখুন চলছিল আখেনাতেন-এর নির্দেশে।
“আতেনের প্রতি সুমহান স্তব” নামে ধর্মীয়গ্রন্থও নাকি লিখেছিলেন ফারাও আখেনাতেন ।
আতেনপূজো হত খোলা সূর্যালোকে । বদ্ধ মন্দিরে নয়। আতেন মন্দিরে ছাদ ছিল না। চারিদিকে কলাম। মাঝখানে নেফারতিতি দুহাত তুলে দাঁড়িয়ে। নেফারতিতি? হ্যাঁ। নেফারতিতি ছিলেন আখেনাতেন-এর স্ত্রী। আজও সৌন্দর্যর জন্য বিখ্যাত হয়ে রয়েছেন নেফারতিতি। আতেন পূজায় আসক্ত ছিলেন জানা যায়। স্বামীর বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কজন নারী যেতে পারে? অনুমান করি- খোলা সূর্যালোকে দাঁড়িয়ে স্বামীর সঙ্গে আতন উপাসনা করতেন নেফারতিতি । নেফারতিতি সম্ভবত তার স্বামীকে একটা প্রশ্ন করেননি-আতেন-এর জন্য এত রক্তপাত কেন?
আগেই বলেছি, আখেনাতেন-এর একেশ্বরবাদ হিব্র“বাসীদের প্রভাবিত করেছিল। মনোবিজ্ঞানী সিগমন্ড ফ্রয়েড “মেজেস অ্যান্ড মনোথেইজম” (মুসা ও একেশ্বরবাদ) নামে একটি বই লিখেছিলেন। ফ্রয়েডের মতে: মুসা ছিলেন আতনবাদী পুরোহিত; আখেনাতেন-এর মৃত্যুর পর তাঁর অনুসারীসহ তাকে মিশর থেকে নির্বাসিত করা হয়েছিল। ফ্রয়েডের মতে আখেনাতেন যা অর্জন করতে পারেননি-মুসা তাই পেরেছেন। ইহুদি ধর্মের সঙ্গে পরবর্তী সেমেটিক ধর্মসমূহের সাদৃশ্য স্পস্ট। কাজেই ইহুদিদের ঈশ্বর ও আখেনাতেন-প্রবর্তিত আতেন অভিন্ন।
কাজেই, মাঝে মাঝে আখেনাতেন কে আমার মৌলবাদের জনক বলেও মনে হয়।

সূত্র: উইকিপিডিয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৩১
১১টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×