somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রিক মিথ: অ্যালসেষ্টিস

২৪ শে জুন, ২০১১ সকাল ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
অ্যালসেষ্টিস। গ্রিক উপকথার এক অনন্য নারী চরিত্র। স্বামীর প্রতি সুগভীর ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ অ্যালসেষ্টিস গ্রিক উপকথায় অমর হয়ে রয়েছেন। যে জগতে ঈর্ষা বিশ্বাসঘাতকতা এবং পরকীয়াই ছিল স্বাভাবিক ঘটনা সেই টালমাটাল জগতে অ্যালসেষ্টিস এর আত্বত্যাগী চরিত্রটি আমাদের সান্ত¦না দেয়। নিজের জীবনের বিনিময়ে স্বামী অ্যাডমিটাস কে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন অ্যালসেষ্টিস, নিজেকে সাঁপে দিয়েছিলেন মৃত্যুর দেবতার কাছে । তবে অ্যালসেষ্টিস- এর উপকথায় কোথায় যেন এক মহৎ ইঙ্গিত নিহিত রয়েছে বলে মনে হয় নইলে গ্রিক বীর হারকিউলিস জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেনই-বা অ্যালসেষ্টিস কে বাঁচিয়ে তুলবেন?





প্রাচীন গ্রিসের মানচিত্রে থেসালির অবস্থান। এখানেই ফ্যারি নামে এক রাজ্য ছিল। সেই রাজ্যের রাজা ছিলেন অ্যাডমিটাস। গ্রিক বীর হারকিউলিস-এর সমসাময়িক ছিলেন অ্যাডমিটাস । অ্যাডমিটাস এর সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল ওই গ্রিক বীরের। মাঝেমাঝে অ্যাডমিটাস-এর রাজপ্রাসাদে এসে আতিথ্য বরণ করতেন হারকিউলিস ...

অ্যাডমিটাস যখন রাজা হলেন সে সময় এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল। গ্রিক দেবতা অ্যাপোলোর ছেলে এসক্লেপিয়াস জিউস এর বজ্রের আঘাতে নিহত হয়েছিল। জিউসের বজ্র নির্মাণ করত সাইক্লোপসরা।




সাইক্লোপস

দেবতা অ্যাপোলো সাইক্লোপস হত্যা করে প্রতিশোধ গ্রহন করে । শাস্তি হিসেবে দেবতা অ্যাপোলো কে এক বছরের জন্য অ্যাডমিটাস এর দাসত্ব করতে হয়। অ্যাডমিটাস অবশ্য অ্যাপোলোর সঙ্গে মধুর ব্যবহার করে। তারা দু’জনে বন্ধু হয়ে উঠেছিল।



অ্যালসেষ্টিস।

থেসালির আরেক রাজার নাম পেলিয়াস। তার এক কন্যার নাম অ্যালসেষ্টিস। মহাকবি হোমার অ্যালসেষ্টিস fairest among
the daughters of Pelias
বলে উল্লেখ করেছেন । অ্যালসেষ্টিস কে বিয়ে করার জন্য রাজপুত্রেরা ভিড় করছিল। তাদের মধ্যে অ্যাডমিটাস ও ছিলেন। এতে রাজা পেলিয়াস অসম্ভব বিরক্ত হচ্ছিলেন। রাজা পেলিয়াস এক বুদ্ধি আঁটলেন। তিনি একটি শর্ত জুড়ে দিয়ে বললেন, যে আমার দরবারে সিংহ এবং শূকর টানা রথে চেপে আসতে পারবে তার কাছেই আমি আমার কন্যাকে শঁপে দিব।
শর্তের কথা শুনে অ্যাডমিটাস এর চোখ কপালে উঠল।
অ্যাপোলো হেসে বললেন, সমস্যা নেই বন্ধু। আমি আছি।



সিংহ এবং শূকর টানা রথে অ্যাডমিটাস এবং অ্যাপোলো । এসব অদ্ভুত দৃশ্য গ্রিক মিথের আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তার কারণ।

শর্ত পূরণ হওয়ায় অ্যালসেষ্টিস আর অ্যাডমিটাস এর বিয়ে হয়ে গেল। ওদিকে অ্যাপোলোর দাসত্ব শেষ। এবার তিনি স্বর্গে ফিরে যাবেন। বন্ধু হিসেবে অ্যাডমিটাস কে ভালোবাসেন । তার জন্য কিছু করতে চান। অ্যাপোলো নিয়তিদেবীর কাছে গেলেন। নিয়তিদেবীর কাছে থেকে অ্যাডমিটাস- এর মৃত্যুর দিন ও মৃত্যুরোধের উপায় জেনে নিলেন অ্যাপোলো । এবং স্বর্গে যাবার সময় সেটি কে জানিয়ে দিলেন। বললেন, বন্ধু, তোমার মৃত্যুকালে অন্য কেউ তোমার পরিবর্তে মৃত্যুপুরীতে যেতে রাজী তাহলে তোমার আর মৃত্যু হবে না।
আশ্চর্য!
হ্যাঁ। আশ্চর্যই বটে বন্ধু। বলে অ্যাপোলো বিদায় নিলেন।
তারপর অ্যালসেষ্টিস এবং অ্যাডমিটাস- এর দিনগুলি সুখে কেটেছিল।
এরপর যথা সময়ে অ্যাডমিটাস- এর মৃত্যুর দিন এল। মৃত্যুর দেবতা থ্যানাটস এল ।



থ্যানাটস। একালের শিল্পীর কল্পনায়।

অ্যাডমিটাস এর মুখেচোখে মৃত্যুর ছাপ। অ্যাডমিটাস হাহাকার করে উঠলেন। কেউই তার বদলে মরতে রাজি হল না। তখন অ্যালসেষ্টিস। এগিয়ে এসে মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুর দেবতা থ্যানাটস অ্যালসেষ্টিস -এর আত্মা নিয়ে ছুটল পাতালের উদ্দেশে।



ফরাসি নিউক্লাসিকাল চিত্রকর পিয়েরে পেইরনের (১৭৪৪-১৮১৪) আঁকা The Death of Alcestis

সে সময় গ্রিক বীর হারকিউলিস রাজপ্রাসাদে উপস্থিত ছিলেন। এ লেখার প্রারম্ভে বলেছিলাম যে মাঝেমাঝে অ্যাডমিটাস-এর রাজপ্রাসাদের এসে আতিথ্য বরণ করতেন হারকিউলিস ... হারকিউলিস শুনলেন অ্যালসেষ্টিস মৃত্যু বরণ করেছেন । হারকিউলিস উর্ধ্বশ্বাসে ছুটলেন। ষ্টিক্স নদীর কাছে এসে থমকে দাঁড়ালেন হারকিউলিস । যে ষ্টিক্স নদী সম্বন্ধে বলা হয়: A river that separates the world of the living from the world of the dead. মৃত্যুর দেবতা থ্যানাটস পিছন ফিরে দেখল হারকিউলিসকে। মুহূর্তেই মৃত্যুর দেবতার ছোটার গতি দ্রুত হয়ে উঠল ।



ইংরেজ চিত্রকর ফ্রেডেরিক লেইটংএর (১৮৩০-১৮৯৬) আঁকা Hercules Wrestling Death (detail)

তার পর মল্লযুদ্ধে থ্যানাটস কে পরাজিত করে অ্যালসেষ্টিস এর আত্মা ছিনিয়ে এনে অ্যালসেষ্টিস কে আবার জীবিত করে তোলেন। এ লেখার প্রারম্ভে বলেছিলাম: অ্যালসেষ্টিস- এর উপকথায় কোথায় যেন এক মহৎ ইঙ্গিত নিহিত রয়েছে বলে মনে হয় নইলে গ্রিক বীর হারকিউলিস জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেনই-বা অ্যালসেষ্টিস কে বাঁচিয়ে তুলবেন?
এই প্রশ্নটি নিয়ে মানুষকে ভাবতেই হয়।
আর এভাবেই মানবসভ্যতার আশ্চর্য মিথগুলো বেঁচে থাকে ...

প্রাচীন গ্রিক নাট্যকার ইউরিপিদেস (৪৮০-৪০৬ খ্রিস্টপূর্ব) অ্যালসেষ্টিস-এর কাহিনী অবলম্বন করে একটি নাটক রচনা করেছেন। ৪৩৮ খ্রিস্টপূর্বে নাটকটি প্রথম মঞ্চস্থ হয়। নাটক দেখে তৎকালীন গ্রিক দর্শকরা মুগ্ধ হয়েছিল। সে কালে নাট্যকারদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা ছিল। অ্যালসেষ্টিস নাটকের জন্য ইউরিপিদেস দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন।



নাট্যকার ইউরিপিদেস। ইউরিপিদেস-এর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল মানবিক ; যুগের তুলনায় অনেক এগিয়ে ছিলেন তিনি। ছিলেন নির্মম দাসপ্রথার বিরোধী এবং নারীর প্রতি সহমর্মী। কাজেই অ্যালসেষ্টিস-এর আত্বত্যাগ যে ওই মহান নাট্যকারকে আকৃষ্ট করবে সেটি বোঝা যায়।

ছবি: ইন্টারনেট।

তথ্যসূত্র:

Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link



সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০১১ সকাল ৭:৩৫
৩৪টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×