যুদ্ধের কামান গর্জে উঠল— বঞ্চিত নিগ্রীহিত মুক্তিকামী মানুষের কন্ঠকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেবার জন্য । বৃদ্ধ, নারী, শিশু কারো ক্ষমা নেই । সবার রক্ত চাই । রক্তের সমুদ্রে ডুবে যাক এইসব আবর্জনা । চারদিকে শুধু বিষ্ফোরণের শব্দ, আর রক্তের আর্তনাদ !
গত কয়দিন যাবৎ বিশ্ব-বিবেককে দংশন করে চলেছে যে ঘটনাটি, তা হল ফিলিস্তিনের উপর ইসরাইলের বর্বরোচিত গণহত্যা । এর মধ্য দিয়ে শুরু মানবসভ্যতার ইতিহাসের আরেকটি অমানবিক নিষ্ঠুর লজ্জাজনক অধ্যায়ের । আমরা কেউই এই ঘটনা থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন বা আলাদা করে দেখতে পারি না । কারণ এখানে শুধু কোন একটা নির্দিষ্ট জাতি নয়, এখানে মানবতা ভূলণ্ঠিত হচ্ছে !
১৯৪৮ সালে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ফিলিস্তিন নামক রাষ্ট্রটি দ্বিখন্ডিত হয়ে ইসরাইল নামক এই ইহুদি রাষ্ট্রটি সৃষ্টি হয় । অর্থ্যাৎ সাম্প্রদায়িকতার উপর ভিত্তি করেই ইসরাইল রাষ্ট্রটির জন্ম । ফিলিস্তিনের সাথে তাদের এই চরম বিরোধের মূলও হল সাম্প্রদায়িকতা । গোটা পৃথিবীর সামনে এখন উন্মোচিত— জাতিতে জাতিতে কতটা পৈশাচিকতার জন্ম দিতে পারে এই সাম্প্রদায়িকতা । কতটা বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে সাম্প্রদায়িকতার ছোবল— যেখানে নিষ্পাপ অবুজ শিশুদেরকেও নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হচ্ছে ! শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না ঘাতকেরা । হত্যার পর উল্লাসও হচ্ছে ! ভাবতেই অবাক লাগে, এ কোন পৃথিবী থেকে আমরা প্রত্যহ নিঃশ্বাস টেনে নিচ্ছি !
ইসরাইলের এই আগ্রাসনকে শুধু সাম্প্রদায়িকতার বৃত্তে বন্দি করে দেখলেই হবে না । এর সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদও ওতপ্রোতভাবে জড়িত । বিশ্বব্যাপী সাম্রজ্যবাদের মূল কেন্দ্রশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরাইলের যে সখ্য, এ সম্পর্কে নতুন করে কিছুই বলার নেই । ফিলিস্তিনের উপর ইসরাইলের এই অমানবিক নিষ্ঠুর গণহত্যাতে যে মার্কিনীদের ইন্ধন সহজেই অনুমেয় । কারণ, ‘সন্ত্রাসবাদ’ নির্মূলের নামে একটি জাতির স্বাধীন সত্ত্বার উপর আঘাত হানার পুরনো মার্কিন অপকৌশলটি এখন ইসরাইলও প্রয়োগের জোর চেষ্টা চালাচ্ছে ।
তবে মানবতার উপর এই বর্বরতা দেখে আমরা ব্যথিত হলেও আশাহত নই । কারণ, মানবসভ্যতার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত আমরা সবশেষে মুক্তিকামী মানুষের বিজয়ই দেখেছি । পাকিস্তানী বর্বরেরা যেমন বাংলার মুক্তিকে রুদ্ধ করতে পারে নি, আমেরিকার বর্বরেরা যেমন ভিয়েতনামের মুক্তিকে রুদ্ধ করতে পারি নি— তেমন ইসরাইলের বর্বরেরা ফিলিস্তিনের মুক্তিকে রুদ্ধ করতে পারবে না । এটাই হল শেষ সত্য ।