somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেরিকা, স্বপ্নের যেখানে কোনো সীমা নেই--পর্ব ৪ :) :);) (ভ্রমন পোষ্ট)

০২ রা অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৩:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে সবার জন্য নিয়ে এসেছি, National Aquarium in Baltimore এর কিছু তথ্য। Inner Harbor area of Baltimore, Maryland, USA -তে এই এয়কুরিয়ামটি অবস্থিত।২০০৮ সালের নভেম্বার এর ২৫ তারিখ সন্ধ্যায় আমার অখানে যাওয়ার সুযোগ এসেছিল।

আজ ২০১১ এর নভেম্বার প্রায় আসন্ন। তাই কিছু নতুন-পুরাতন তথ্য দিয়ে সাজিয়েছি আজকের আয়োজন---চলুন ঘুরে আসি পৃথিবীর আরেক স্বর্গরাজ্য থেকে, যা আপনাকে পৃথিবীর বিরল এবং বিখ্যাত কিছু জল-নির্ভর প্রানীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে, যারা কিনা পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে জলের উপর নির্ভরশীল।

সন্ধ্যা ৭টায় আমি ঠিক এইখানে দাড়িঁয়ে আছি।আমার সামনের এই আলো ঝলমলে বিল্ডিং টি-ই ন্যাশানাল এয়াকুরিয়াম ভবন।

রাতের খাবার শেষ করে, হাতে একটা লেমোনেড, এখনও তেমন শীত আসেনি, তবুও মাঝে মাঝে কেমন যেনো অচেনা হাওয়া বইছে, ---এই হাওয়া যখন বইছে, তখন মনে হচ্ছে আমার জিন্স-জুতো ভেদ করে লোহার কিছু যেনো একটা হাড্ডি পর্যন্ত বিধেঁ গেলো, তারপর চিন চিন ব্যথা করে, আমাকে বাকিঁইয়ে দিয়ে তা বের হয়ে হাওয়ায় মিশে গেলো, আর সেই হাওয়া আমার মত নিঃস্বঙ্গতা নিয়ে ইনার হারবারের শান্ত জলের উপড় দিয়ে আচঁল ঊড়িয়ে নেচে নেচে যেতে লাগলো, আর শা শ শব্দে বলতে লাগ্লো --আমি ভালো আছি--তুমি শুনতে পাও কী??

এমন সময় ভাইয়া বলে উঠলেন, যাবেন নাকি?? National Aquarium এ ?? জিজ্ঞেস করলাম ফ্রি নাকী ভাইয়া ?? ভাইয়া বললো, এইখানে??
চিন্তা করাই বাতুলতা !! প্রায় ন্যনতম ১৪ ডলার করে হতে পারে, একেকটা রাইড বা সেগমেন্ট !! ভাইয়ার কথা শুনে, চোখ কপালে উঠে গেলো আমার !!। পাচঁটা সেগমেন্ট দেখতে গেলে খুব কম করে হলেও আনুমানিক ৮০ ডলার লাগবে !! ওরে বাপরে !! ববের সাথে আসলে ভালো ছিলো তাই না ভাইয়া??, ভাইয়া হাসলেন,

আমরা একটু দাঁড়ালাম, লেমোনেড খেতে খেতে, ২ টা ছবিও তুললাম, বাইরে থেকে, তারপর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম, একটু চিন্তা করে নেই ? ভাইয়া বললেন শিয়র। তবে এত চিন্তা করার কিছু নাই, গেলে যেতে পারি। আমি বললাম না, দাড়াঁন, আমি একটু ভেবে নেই !!

আগেই বলে নেই, এটি স্থাপিত হয়েছে ৮ আগস্ট ১৯৮১ সালে, আমি তখন আমার মায়ের কোলে ! মূলত ৬৬০ প্রজাতির ১৬,৫০০ টি প্রানী আছে।২০০৯ সালের ডাটা অনুযায়ী প্রায় 1.5 million দর্শনার্থী আসেন এইখানে প্রতি বছর। এই বিল্ডিংটির নির্মান নান্দনিকতা নিয়ে বলার আছে অনেক কিছু, যা ছবি দেখলেই কিছুটা আচঁ করা যায়।



এই বিল্ডিং আ মোট পাচঁটি স্তর বা লেয়ার আছে, এস্কালেটর দিয়ে প্রতিটিতেই যাওয়া যায়! প্রতিইটি ফ্লোরেই রয়েছে প্রর্শনীর ব্যবস্থা আর তা অবশ্য-ই একটি থিম কে কেন্দ্র করে ! বুঝিয়ে বলি, সহজ ভাষায়--

আর তা হলো, এই পাচঁতলা বিশিষ্ট ভবনের প্রতিটিতে একটি নির্দিষ্ট থিম ভিত্তিক প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা আছে। যেমন--
Level 1: Wings in the Water
Level 2: Maryland: Mountains to the Sea
Level 3: Surviving through Adaptation
Level 4: Sea Cliffs, Kelp Forest, Pacific Coral Reef, Amazon River Forest
Level 5: Upland Tropical Rain Forest, Hidden Life
এর বাইরেও এই বিল্ডিং এর আওতায় বিশাল ২টা ট্যাং আছে যার একটা Atlantic coral reef বা আটলান্টিল প্রবাল প্রাচীর, আরেকটা উন্মুক্ত সাগরের সরুপ তুলে ধরার চেষ্টা করেছে।

এই হলো ব্যাপার। চলুন ঘুরে আসি সবকটি লেভেল-- :)

Level 1: Wings in the Water (This exhibit simulates the open ocean)

এই বিল্ডিং এর গ্রাউন্ড ফ্লোরে, সবচেয়ে বড় পুলটাতে যেসব প্রানীর দেখা মিলে তারা হলো, Southern Stingray, Roughtail Stingray, Cownose Ray, Bullnose Ray, Pelagic Ray, Spiny Butterfly Ray, Atlantic Guitarfish, Blacknose shark, Zebra Shark, Bonnethead Shark, and Tarpon ইত্যাদি। চলুন ছবি দেখি এমন কয়েকটি প্রানীর।



Level 2: Maryland: Mountains to the Sea

এইখানে দেখা মিলবে সেইসব প্রাণীর যারা নেটিভ হিসাবে পরিচিত। যেমন কচ্ছপ, জেলিফিশ সহ আরো বিভিন্ন ধরনের প্রানী। মূলতঃ চারটা স্তরে এইখানে দর্শনার্থীদের একটা ইল্যুশনের দিকে নিয়ে যাওয়া হয় সমুদ্রের তলদেশের জীবনে!





Bangaii_Cardinalfish:

Level 3: Surviving through Adaptation

এই লেভেলে এমন্সব প্রানী রাখা হয়েছে, যারা বেচেঁ থাকার জন্য অভিযোজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এক ভিন্ন রকমের বৈশিষ্ট বা প্রকরন অর্জনে সক্ষম হয়েছে! যেমনঃ
Electric Eel



এই প্রানীটি তার দেহে ইলেক্ট্রিক পাওয়ার উৎপাদন করতে সক্ষম। যা দিয়ে সে শিকার করে খায় এবং নিজেকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করে।

Level 4: Sea Cliffs, Kelp Forest, Pacific Coral Reef, Amazon River Forest
প্রবাল প্রাচীর ঘেরা প্রানী জগৎ কে তুলে ধরা হয়েছে এইখানে। সে দৃশ্য মুগ্ধ হওয়ার মত-ই।


Level 5: Upland Tropical Rain Forest, Hidden Life

এইখানে ট্রপিক্যল রেইন ফরেস্টের চিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।যেগুলো আমাজন রেন ফরেস্টে পাওয়া যায়। কাচেঁর দেয়ালের বাইরে থেকে এইখানে দেখা যায়, কৃত্রিম গুহায় রাখা বিভিন্ন রকমের সরীসৃপ, উভয়চর এবং এন্থ্রপডস। যেমন বিষাক্ত নীল ব্যাঙ, সোনালী সিংহ, সবুজ সাপ,
ইবাইস সহ আরো কত নাম না জানা বিরল প্রজাতির পাখী !!

সোনালী সিংহ


সবুজ সাপঃ


বিষাক্ত নীল ব্যাঙঃ


দ্য সান বিটার্ন পাখীঃ


দ্য ব্লু-ক্রাউন মটমটঃ


এছাড়াও ১৯৯০ সালে Pier 4 Pavilion নামে আরেকটি ছোট বিল্ডিং এর অবতারনা হয়, যেখানে মূলতঃ ডলফিন প্রদর্শনী চলে। বিভিন্ন গেইম এবং প্রদর্শনের জন্য এই প্যাভিলিওন বেশ জনপ্রিয়।


এর বাইরেও আছে--

4D Immersion Theatre
আমরা যারা 3D ভিডিও দেখেছি, বিভিন্ন স্টুডিওতে বা বিনোদন পার্ক বা সেন্টারে, তাদের নিশ্চই নতুন করে এর মজা ব্যাখ্যা করে বলার দরকার নেই, কিন্তু একবার ভাবুন তো, 3D ভিডিও আপনাকে যেই আনন্দ দিয়েছে, সেখানে 4D Immersion Theatre এর অবস্থা কেমন হতে পারে ! উফফফ--আমি ভাষায় ব্যাখ্যা করতে পারবো না !! শুধু এইটুকু বলি, স্ক্রিনে মনে করুন একটা সাপ দেখা যাচ্ছে, জিহবা নাডছে সাপটা---ফুসস স স ফুস স শব্দ আসছে কানে, আপনার মনে হবে সাপটা ঠিক আপনার কপালে দুই চোখের মাঝখানে টিপ দেয়ার জায়গাটিতে এসে জিহবা নাড়ছে, এবং আপনি ভয়ে মুহুর্তেই লাফ দিয়ে সরে যেতে পারেন বা উল্টে চেয়ার থেকে পড়েও যেতে পারেন !!B-)

অত্তকিছু দেখে কি লাভ ? আবার খিদা লেগে গেলে আরো ৩-৫ ডলার!! তারুপড়ে সব দোকান করে দিল বন্ধ !! অনেক্ষন চিন্তা করলাম, লেমোনেড শেষ হলো, সেই সাথে চকোলেট প্লাস কিছু নাটস! তারপর দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে বললাম, ভাইয়া চলেন তো--কাল সকালে হপকিন্সের শাটল ধরতে হবে, ভোর সাতটায় !! ভাইয়া হাসলেন, মনে মনে বোকা বললেন নাকী বুদ্ধিমান ! বুঝা গেলো না !!

আমিও হাসলাম, মনে মনে, হাতের ২০০ ডলার মানি ব্যাগ থেকে বের করে, ল্যাম্পপোষ্টের আলোয় ডলারের রঙ দেখতে দেখতে !! সামনে এখনো অনেক পথ বাকী ! অয়াশিংটন ডিসি, ভারজিনিয়া স্টেটস, নিউইয়র্ক, হিথ্রো !!

তবু-ও হাসি থামেনি আমার, ক্লান্তি ছুয়েঁ দিতে পারে নি চোখের পাতাকে !!
কারন আমি জানি, আমি জানবো-ই ! আমি জিতবো-ই !!




আমেরিকা: স্বপ্নের যেখানে কোনো সীমা নেই--- পর্ব-৩

আমেরিকা, স্বপ্নের যেখানে কোনো সীমা নেই !! পর্ব-২

আমেরিকা : স্বপ্নের যেখানে কোনো সীমা নেই। পর্ব-১

তথ্যসূত্রঃ National Aquarium in Baltimore এর নিজস্ব সাইট এবং উইকিপেডিয়া ডট কম
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:২৪
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×