somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জন্মশত বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি - একজন বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষী সুলুক সন্ধানে

১৭ ই মার্চ, ২০২০ রাত ২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান...

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার গর্বিত নাগরিক আমরা। ত্রিশ লাখ জীবনের বিনিময়ে প্রাপ্ত এ বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর সেরা দান। গঙ্গারিডই থেকে পুন্ড্র রাঢ় ; বাঙাল- বাঙ্গালা হয়ে, বাংলা থেকে আজকের বাংলাদেশ। বাঙালি সভ্যতার আধুনিক স্থপতি হিসাবে শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের "জাতির জনক" বা "জাতির পিতা" বলা হয়ে থাকে। আজ জন্মশতবার্ষিকীর এই মাহেন্দ্র ক্ষনে পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি জাতির জনক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।



বাংলার স্বাধীনতা বাঙালীর স্বাধীনতার আকাঙ্খা চিরকালের। তাইতো এই ভূমির নাম ছিল ‘বুঘলকপুর’ বা চিরবিদ্রোহের দেশ। গঙ্গারিডই থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ। ইতিহাসের চড়াই উৎরাই, সংগ্রাম আর আত্মত্যাগের মহিমায় ভরপুর। কবির চোখে সেই ইতিহাস দেখতে পাই কাব্যিকতায়-

“পলাশীতে সিরাজের সাথে আবারো ডুবে
স্বাধীন সূর্য; অবিমৃষ্যকারী জগৎশেঠদের লোভের বলি
মীর জাফরের প্রতারণা আজও কুড়ে কুড়ে খায়
স্বাধীনতার আকাংখায় মাথা নত না করা বাংলা জাগে বারবার।

অত্যাচারী বৃটিশের শোষনে আবারও রক্ত ঝড়ে।
তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা অসম সাহসের প্রতীক
সিপাহী বিদ্রোহ, ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতা, মাষ্টার দা সূর্যসেন
শত দেশপ্রেমিকের আত্মদানে ১৯০৭ বেয়ে আসে ১৯৪৭।

বাংলার আকাশে ওঠে মেঘে ঢাকা স্বাধীনতা সূর্য
পদে পদে নতুন খোলসে পুরানো পরাধীনতায়
ফুসে ওঠে আত্মা - ভাষার দাবীর পথ বেয়ে স্বায়ত্বশাসন
স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতা- টগবগ করে ফোটে মুক্তি আকাঙ্খা।

চির মুক্তি আকাঙ্খী আত্মা জেগে ওঠে স্বর্ণালী একাত্তরে!
নক্ষত্র দিশায় শেখ মুজিব : আঙুলী হেলনে ইতিহাসের নব লিখন
রক্তের নদী পেরিয়ে গঙ্গারিডই থেকে বাংলাদেশ...
সবুজের বুকে লাল স্বাধীনতার পতাকা: জয় বাংলা।”

হ্যাঁ। ১৯৭১ এবং জয় বাংলা আর আমাদের স্বাধীনতা একে অন্যে অঙ্গাঙ্গী জড়িত। বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ যেমন। কেউ কারো থেকে পৃথক নয়। করা যায় না। যদিও রাজনীতির ঘোরপ্যাচে নানা মুনির নানা মত থাকে কিন্তু বাঙালী এবং বাংলাদেশের সাথে বঙ্গবন্ধু নিয়ে কোন দেশপ্রেমিকেরই অন্যথা ভাবার সুযোগ নেই।
এই মহান নেতা, ত্রাতা এবং স্বাধীনতার স্বাপ্নিক রুপকার ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের বঙ্গ প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা শেখ লুৎফর রহমান গোপালগঞ্জ দায়রা আদালতের সেরেস্তাদার ছিলেন । তাঁর মায়ের নাম সায়েরা খাতুন। চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান। তার বড় বোনের নাম ফাতেমা বেগম, মেজ বোন আছিয়া বেগম, সেজ বোন হেলেন ও ছোট বোন লাইলী; তার ছোট ভাইয়ের নাম শেখ আবু নাসের।

১৯২৭ সালে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন যখন তার বয়স সাত বছর। নয় বছর বয়সে তথা ১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং এখানেই ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জে মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেনীতে ভর্তি হন। ১৯৩৪ থেকে চার বছর তিনি বিদ্যালয়ের পাঠ চালিয়ে যেতে পারেন নি। কারণ তার চোখে জটিল রোগের কারণে সার্জারি করাতে হয়েছিল এবং এ থেকে সম্পূর্ণ সেরে উঠতে বেশ সময় লেগেছিল। গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।


১৯৩৪ সনে দাদা আব্দুল হামিদের আদেশে শেখ মুজিবের বাবা ১৪ বছর বয়সে তার সঙ্গে তার বাবার সম্পর্কের আত্মীয় ৩ বছর বয়সের সদ্য পিতামাতাহীন বেগম ফজিলাতুন্নেসার বিয়ে দেন।বিয়ের ৯ বছর পর ১৯৪২ সালে শেখ মুজিবের ২২ বছর বয়স ও ফজিলতুন্নেসার ১২ বছর বয়সে তারা দাম্পত্যজীবন শুরু করেন।এই দম্পতির ঘরে দুই কন্যা এবং তিন পুত্রের জন্ম হয়। কন্যারা হলেন শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। আর পুত্রদের নাম শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং শেখ রাসেল।

এই ব্যাক্তিক পরিচয়ের উর্ধে ছিলেন রাজনীতিবিদ বঙ্গবন্ধু। তিনি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সভাপতি, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং পরবর্তীতে এদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। জনসাধারণের কাছে তিনি শেখ মুজিব এবং শেখ সাহেব হিসাবে বেশি পরিচিত ছিলেন এবং তার উপাধি "বঙ্গবন্ধু"।

১৯৪৭-এ ভারত বিভাগ পরবর্তী পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতির প্রাথমিক পর্যায়ে শেখ মুজিব ছিলেন তরুন ছাত্রনেতা। জনগণের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি একসময় ছয় দফা স্বায়ত্ত্বশাসন পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন যাকে পশ্চিম পাকিস্তানে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিকল্পনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সরকারের সাথে যোগসাজশ ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তার বিচার শুরু হয় এবং পরবর্তীতে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় অর্জন করে। তথাপি তাকে সরকার গঠনের সুযোগ দেয়া হয় নি।
পাকিস্তানের নতুন সরকার গঠন বিষয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে শেখ মুজিবের আলোচনা বিফলে যাওয়ার পর ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মার্চ ২৫ মধ্যরাত্রে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকা শহরে গণহত্যা পরিচালনা করে। একই রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং পরবর্তীকালে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়।
রহিমুদ্দিন খান সামরিক আদালতে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে তবে তা কার্যকর করা হয় নি। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।

১৯৭২-এর ১২ই জানুয়ারি তিনি সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মতাদর্শগতভাবে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী ছিলেন, যা সম্মিলিতভাবে মুজিববাদ নামে পরিচিত। জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে ভিত্তি করে সংবিধান প্রণয়ন এবং সে অনুযায়ী রাষ্ট্র চালনার চেষ্টা সত্ত্বেও তীব্র দারিদ্র্য, বেকারত্ব, সর্বব্যাপী অরাজকতা এবং সেই সাথে ব্যাপক দুর্নীতি মোকাবেলায় তিনি কঠিন সময় অতিবাহিত করেন। ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দমনের লক্ষ্যে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এক দলীয় রাজনীতি ঘোষণা করেন। এর সাত মাস পরে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালো রাতে একদল সামরিক কর্মকর্তার হাতে তিনি সপরিবারে শহীদ হন।
২০০৪ সালে বিবিসি'র সম্পাদিত একটি জরিপে শেখ মুজিবুর রহমান "সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি" হিসেবে সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত হন।

বাংলা এবং বাঙ্গালীর জীবনে এই ছোট্ট নশ্বর জীবনের অবদান অবিনশ্বর। অতুলণীয়। অনন্তকাল যে অবদানকে স্মরণ করাতেই জাতির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পাবে, কিন্তু ঋণ শোধ হবে না। ব্যাক্তিক, পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনের বাইরে সার্বজনীন কল্যানের স্বপ্নে নিজেকে বিলিয়ে দেবার এমন দুলর্ভ ইতিহাস খুবই কম। সেই কিশোর তরুন জীবনে থেকেই রাজনৈতিক সচেতনতা এবং দায় আটপৌড়ে জীবনে বাঁধতে পারেনি বঙ্গবন্ধুকে। তাইতো দেখি -

ব্রিটিশ ভারতে রাজনৈতিক সক্রিয়তায়-বঙ্গবন্ধু, বাংলা ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু,, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠায়, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবী-ছয় দফা আন্দোলনে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা-উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান সর্বত্র বঙ্গবন্ধু, নক্ষত্র দিশায় জাতির জন্য নিরবিচ্ছিন আন্দোলনে জেল, জুলুম, হুলিয়া মাথায় নিয়ে একটা স্বপ্নই বুকে পুষে রাখতেন: স্বাধীন বাংলাদেশ।


১৯৪৯ সালে হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে শেখ মুজিব

মিথ্যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে মাসব্যাপী প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ , ১৪৪ ধারা ভঙ্গ, কারফিউ, পুলিশের গুলিবর্ষণ এবং বেশ কিছু হতাহতের পর আন্দোলন চরম রূপ ধারণ করলে পাকিস্তান সরকার ছাড় দিতে বাধ্য হয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান রাজনৈতিক নেতাদের সাথে এক গোলটেবিল বৈঠকের পর এই মামলা প্রত্যাহার করে নেন। এর সাথে শেখ মুজিবসহ অভিযুক্ত সকলকে মুক্তি দেয়া হয়। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে শেখ মুজিবের সম্মানে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক সভার আয়োজন করে। লাখো জনতার এই সম্মেলনে শেখ মুজিবকে "বঙ্গবন্ধু" উপাধি প্রদান করা হয়।

১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক জনসভায় মুজিব ঘোষণা করেন যে এখন থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে "বাংলাদেশ" নামে অভিহিত করা হবে:
" একটা সময় ছিল যখন এই মাটি আর মানচিত্র থেকে "বাংলা" শব্দটি মুছে ফেলার সব ধরণের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। "বাংলা" শব্দটির অস্তিত্ব শুধু বঙ্গোপসাগর ছাড়া আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যেত না। আমি পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আজ ঘোষণা করছি যে, এখন থেকে এই দেশকে 'পূর্ব পাকিস্তানের' বদলে 'বাংলাদেশ' ডাকা হবে।"
মুজিবের এই ঘোষণার ফলে সারা দেশে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। মুজিব পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক জনমত গড়ে তুলতে সমর্থ হন এবং ১৯৭০ নাগাদ কার্যত ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন।



১৯৭০ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রাদেশিক আইনসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।

স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে ইয়াহিয়া খান সংসদ ডাকতে দেরি করছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা এর ফলে বুঝতে পারে যে, মুজিবের দলকে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও সরকার গঠন করতে দেয়া হবে না। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় শেখ মুজিব স্বাধীনতার ডাক দেন এবং জনগণকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করেন।

ইয়াহিয়া খান সামরিক আইন জারি করেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন এবং মুজিবসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী রাজনৈতিক ও জনসাধারণের অসন্তোষ দমনে ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট শুরু করে। সামরিক বাহিনীর অভিযান শুরু হলে মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ধানমণ্ডির ৩২ নং বাড়ি থেকে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। মূল ঘোষণার অনুবাদ নিম্নরূপ:


"এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।"

মুজিবকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ফয়সালাবাদের একটি জেলে কড়া নিরাপত্তায় রাখা হয়।
১৯৭১ সালে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপ্রধান ও সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তার অনুপস্থিতিতে উপরাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান ও অস্থায়ী সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।


যুদ্ধবর্তী সময়ে মুজিবের পরিবারকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। তার সন্তান শেখ কামাল মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর এডিসি এবং একজন গুরুত্বপূর্ণ অফিসার ছিলেন। মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তান বাহিনীর ভিতরে নয় মাস ব্যাপী সশ্রস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়। মুক্তিপাগল আমজনতা ঝাপিয়ে পড়ে এ লড়াইয়ে, এ স্বাধীনতার যুদ্ধে । ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে ভারতীয় সরকার
মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে। এবং যুদ্ধের তীব্রতায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর যৌথ দলের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং লীগ নেতৃবৃন্দ ঢাকায় ফিরে সরকার গঠন করেন। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি কারাগার থেকে বিজয়ীর বেশে মুক্তি নিয়ে বেরিয়ে আসেন।

বঙ্গবন্ধুর এই জানা ঘটনাগুলো পুনরালোচনা করেছি কেন?
একজন বঙ্গবন্ধুকে অনুভব করার জন্য। বঙ্গবন্ধুর অবদানকে অনুধাবন করার জন্য।
আমাকে যদি বলো তাঁর কি অবদান?- বলবো চোখ মেলে তাকা্ও স্বাধীন পতাকায়
আমাকে যদি বলো তাঁর কি অবদান? - বলবো শুধা্ও দেশের প্রতিটা মাটির কনায়
আমাকে যদি বলো তাঁর কি অবদান?- বলবো তাকা্ও তোমার স্বাধীন স্বত্তানুভবের আয়নায়
যদি মৃত না হ্ও পলে পলে পাবে সেই সত্য।

একবার ভেবে দেখেছো কতটা ভালবাসলে, এভাবে একটা জীবন বিলিয়ে দেয়া যায়। জেল, জুলুম, নির্যাতনকে হাসিমূখে বরণ করা যায়। বঙ্গবন্ধুর অবদান- তাঁর পুরোটা জীবন তিনি বিলিয়ে দিয়েছেন বাঙালীর মুক্তির লক্ষ্যে- এমনকি শেষ দিন পর্যন্ত্ও। তাই দল মত নির্বিশেষে, সাফল্য ব্যার্থতার কুতর্ক ছেড়ে একজন অবিসংবাদিত বিপ্লবীকে তার বিপ্লবী মন্ত্রেই স্মরণ করতে হবে। জয় বাংলা- একটা শ্লোগানে, একটা জাতির অস্তিত্বে মিশে থাকা একজন স্বপ্নের রুপকার- অনন্তকাল....।



একটি কথা শুধু বঙ্গবন্ধুকে বিশেষ দিবসে ভালোবেসে বা শ্রদ্ধা করেই সোনার বাংলা গড়া যাবে না। বঙ্গবন্ধুর কথাগুলোকে তিল তিল করে কাজে লাগাতে হবে, কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত করতে হবে বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্ন। তবেই আমরা তাঁর কথা রেখেছি সে কথা বলতে পারব গর্বের সাথে। কথার চেয়ে কাজ বেশি, পরিকল্পনার চেয়ে বাস্তবায়ন বেশিই হোক আমাদের আন্তরিক অঙ্গীকার। ব্যাক্তিক এবং দলীয় পরিচয়ের উর্ধে তিনি সকল বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা। দলীয় বৃত্তাবদ্ধতায় নয়, পারিবারিকতার গন্ডিতে নয়, দল, মত নির্বিশেষে তিনি সকলের। দলীয় বৃত্তের বাইরে সার্বিকতায়, সামগ্রিকতায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হোক আমাদের হৃদয়ের মন মানসিকতার শুভ পরিবর্তনের মাধ্যমে। স্বাধীনতার চেতনা- গণতন্ত্র, আর মুক্তির প্রকৃত বিকাশের মাধ্যমে স্বৈরাচার প্রতিরোধে বঙ্গবন্ধু যেমন ছিলেন অটল অবিচল, তেমনি চেতনার দৃঢ় অংগীকারে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হোক। আমরা যেন তখন মাথা উঁচু করে বলতে পারি -সার্থক জনম মাগো জন্মেছি এই দেশে।

কৃতজ্ঞতা: ছবি - গুগল,
বঙ্গবন্ধু উইকি , অন্তর্জাল,
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:০৩
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×