মানুষ হয়ে মানুষের সততায় মুগ্ধ হইনি কতদিন ! নিজ থেকে কেউ কোন ভাল কথা বলতে আসলেও তাকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখার শিক্ষা যাদের জন্মগত, এই রকম সততার বাস্তব উদাহরণ দেখে তারাতো একটু আবেগাল্পুত হবেই।
দেশের বাইরে এসে এটাই আমার প্রথম ব্লগ। মানুষের সততার এক বাস্তব ঘটনা আর সেই অপরিচিত ব্যক্তির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতঙ্গতা জানানোর তাগিদ থেকেই এই লেখা। এই মাসের ১২ তারিখে আসছি এখানে। নতুন জায়গা। বাংলাদেশে থাকতে জিন্স পরার অভ্যাস ছিলনা খুব একটা। সম্ভবত: এই কারনেই মানিব্যাগ টা কোথায় যেন পকেট থেকে পড়েগিয়েছিল ঠিক মনে করেতে পারছিলামনা। হয়তবা রাস্তায়, কিংবা বাস-এ, কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়েরই কোন জায়গায়। আমি নিজে এখনো মোবাইল নেই নাই। তাই মানিব্যাগে আমার নিজের কোন নাম্বার ছিলনা। আইডেন্টিফিকেশন বলতে যা ছিল তা আমার ইউনিভার্সিটি আইডি কার্ড।
মানিব্যাগে কি ছিল তার একটা ফিরিস্তি দেই। ছিল আমেরিকান ডলার, কোরিয়ান ওন, বাংলাদেশী টাকা, বাংলাদেশের দুইটা ব্যাংকের এটিএম কার্ড, একটা কোরিয়ান ব্যাংকের এটিএম কার্ড, ডাচ বাংলা এবং ব্রাক ব্যংকের একটা করে ব্লাংক চেক, ঢাবি আইডি কার্ড (এখনো রয়ে গেছে, ফেলে দিতে কেন জানি কষ্ট লাগে), এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড, বাসার চাবি, এখানকার দরকারি ফোন নাম্বারের লিস্ট এবং হয়ত আরো কিছু দরকারি কাগজপত্র..। আপুরা নিশ্চিতভাবেই যে প্রশ্নটা করবেন তা হল: এক মানিব্যাগে সারা দুনিয়ার জিনিসপত্র রাখার কি দরকার? খুবই যুক্তিযুক্ত এবং সময়োপযোগী প্রশ্ন। তবে ভাইয়ারা বুঝবেন ব্যপারটা। আমরা নরমালি এই রকমই। যা পাই সব রাখি মানিব্যাগে।
তো যাই হোক, মানিব্যাগ হারিয়ে একটু খারাপ লাগতেছিল। সবাই বলতেছিলেন যে, মানিব্যাগ ফেরত পাওয়া যাবে কার্ডগুলোসহ। এইটা মোটামোটি নিশ্চিত। তবে টাকা পয়সা নাও পাওয়া যেতে পারে । আর যদি এটা কোরিয়ানদের হাতে না পরে চায়নিজ বা ভিয়েতনামীজদের হাতে পরে তবে আশা খুব একটা নাই। শেষ পর্যন্ত গত পরশুদিন (হারানোর ২ দিন পর) আমার পাশের ল্যাবের হেলাল ভাই খবর পাঠালেন আমার মানিব্যাগ পাওয়া গেছে এবং ওটা এখন ওনার কাছে আছে। কে যেন ওটা আমাদের ইউনিভার্সিটি অফিসে জমা দিয়ে গেছে এবং অফিস সেটা পাঠিয়ে দিয়েছে হেলাল ভাইয়ের কাছে। টেনশন হচ্ছিল একটু। ভাবতেছিলাম হয়ত কার্ডগুলো সব আছে টাকা পয়সা নাই।
মানিব্যাগটা হাতে নিয়ে একটু নেড়েচেড়ে দেখে আমি এতটা খুশী হয়েছিলাম যে কি বলব নিকট অতীতে কবে এতটা খুশী হয়েছিলাম ঠিক মনে করেত পারছিলামনা। সবকিছু অক্ষত আছে। ঠিকঠাক আগের মত। আইডি কার্ডটার বাইরে আর কোনাকিছু খুলে দেখেনি পর্যন্ত !
আফসোস একটাই। যিনি আমার এই উপকারটা করলেন এবং সততার এমন দৃষ্টান্ত দেখালেন তার পরিচয়টা জানারই সুযোগ হলনা । সরাসরি তাকে ধন্যবাদ জানানোর সৌভাগ্যটা যদি হতো?
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:২৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



