আযানের প্রথম শব্দ(আল্লাহু আক্ববার) শুনতেই ঘুম ভেঙে যায়। স্বামীকে ডেকে দিয়ে নামাযে দাঁড়িয়ে যায় হালিমা। ছোট মাহমুদকে হাতে নিয়ে মসজিদে চলে গেলেন করিম মিয়া। মসজিদে যেতে যেতে মনে মনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছেন "আল্লাহ আমাকে হয়তো এত ধনসম্পদ দাওনি কিন্তু আমাকে একজন নেক্কার সাথী দান করেছেন যে আমার জান্নাতের সঙ্গী হবে" আমার এটায় সব চেয়ে বড় সম্পদ। আল্লাহ তুমি মহা দয়াময়।
আল্লাহ তায়ালা কোরআন শরীফে বর্ণনা করেন...
ْ لَئِن شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ ۖ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِى لَشَدِيدٌ
অর্থ : যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, তবে আমি তোমাদের নিয়ামত বৃদ্ধি করে দিব। যদি তোমরা নিয়ামতের অস্বীকার কর, তবে জেনে রেখ, তাদের জন্য আমার শাস্তি অবশ্যই কঠিন হবে।
[সূরা ইব্রাহীম : ৭]
করিম মিয়া একজন রিক্সা চালক। ফজরের নামাজের পরে বের হয়ে তার চার সদস্যের পরিবারের জন্য সকালের নাস্তার ব্যবস্থা করাটা করিম মিয়ার নিত্য দিনের রুটিন। হালাল উপায়ে যখন কেউ রুজিরোজগার করেন আল্লাহ তায়ালা তাতে অবশ্যই বরকত দান করেন। করিম মিয়া এই কথার বিশ্বাসী, হাজার টাকা ভাড়া হলেও নামাজের সময় করিম মিয়া ভাড়ায় যায়না। শহরের অনেক নামি দামি এরিয়াতে করিম মিয়ার বিচরণ। রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দামি দামি রেস্টুরেন্টে দেখতে পায়, অনেক খাবার প্লেটে রয়ে যায়, অথচ এই সামান্য খাবারের জন্য মানুষ দিনরাত পরিশ্রম করে। যে খাবার রয়ে গেছে তাতে একটা শিশু মন ভরে খেতে পারবে। কিন্তু তারা কত সহজেই তা নষ্ট করছে।
করিম মিয়া মনে মনে বলতে লাগলো আল্লাহ এরা তোমার আদেশ অমান্য করছে তুমি তাদেরকে হেদায়ত দান কর। তাদেরকে ক্ষমা করে দাও হে মাওলা।
সূরা আরাফের ৩১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
ﻛُﻠُﻮﺍ ﻭَﺍﺷْﺮَﺑُﻮﺍ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﺴْﺮِﻓُﻮﺍ ﺇِﻧَّﻪُ ﻟَﺎ ﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻤُﺴْﺮِﻓِﻴﻦَ
অর্থ : তোমরা খাও এবং পান কর তবে তোমরা অপচয় করো না। অপচয়কারীকে আল্লাহ তায়ালা ভালোবাসেন না। [সূরা আরাফ : ৩১]
প্রত্যেক রেস্টুরেন্ট কিংবা হোটেলে গেলে দেখতে পাওয়া যায় অনেক খাবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কিংবা কেউ সামান্য খেয়ে রেখে দিচ্ছে। আপনি যখন খাবেন সামান্য তাহলে বেশি নেওয়ার ই বা কি দরকার ছিল। এই সামান্য খাবারের অভাবে কত শিশু আজ রাস্তায় রাস্তায়। কত মানুষ আজ পথের ভিক্ষুক। অথচ তারা যখন দুই টাকা পাওয়ার আশায় আমাদের কাছে হাত বাড়িয়ে দেয়, আমরা খুব সহজেই বলে দিয়, মাফ করেন ভাংতি নাই।
করিম মিয়া এই সব ভাবতে ভাবতে যখন ঘরের দরজায় আসলো, তার আদরের সন্তান আর স্ত্রী অপেক্ষায় সকালের নাস্তার। সালাম বিনিময়ে স্ত্রী যখন জিজ্ঞেস করলো আমাদের নাস্তার ব্যবস্থা কি হয়েছে? করিম মিয়া মুস্কি হেসে দিয়ে বলল
আমরা এমন রবের গোলাম যার কাছে আমাদের খাবারের কোন অভাব নাই।
এই বলে নাস্তার পেকেটটা স্ত্রী-র হাতে দিয়ে বাচ্চা দুইটাকে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করতে করতে বলল
"শুকরান আল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ"
আল্লাহ তায়ালা সূরা হুদের ছয় নাম্বার আয়াতে ইরশাদ করেন...
وَمَا مِن دَآبَّةٍ فِى الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا
অর্থ : আর যমীনে বিচরণকারী সবার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহরই।
[সূরা হুদ : ৬]
রিযিকের আভিধানিক অর্থ এমন বস্তু যা কোন প্রাণী আহার্যরূপে গ্রহণ করে, যার দ্বারা সে দৈহিক শক্তি সঞ্চয়, প্রবৃদ্ধি সাধন এবং জীবন রক্ষা করে থাকে। রিযিকের জন্য মালিকানা স্বত্ব শর্ত নয়। সকল জীব জন্তু রিযিক ভোগ করে থাকে কিন্তু তারা তার মালিক হয় না। কারণ, মালিক হওয়ার যোগ্যতাই ওদের নেই। অনুরূপভাবে ছোট শিশুরাও মালিক নয়, কিন্তু ওদের রিযিক অব্যাহতভাবে তাদের কাছে পৌছতে থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:১০