somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুখোমুখি ধর্ম ও বিজ্ঞান

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিজ্ঞানের বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করায় একটা সমস্যায় পড়েছি। সেইটা হল, বিজ্ঞান কি ধর্মকে নাকচ করতে পারে কি না? যদিও প্রশ্নটা খুব আপত্তিকর। ধর্ম আর বিজ্ঞানকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। লড়াইয়ে কোন পক্ষ জিতে এইটা জানার একটা উদগ্রীব ভাব উৎসুক মনে। এদিকে ধার্মিক মন, আগেই তার কিতাবকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়ে রেখেছে। কিতাবের মাধ্যমে আসমান হতে যা নাযেল হয়েছে সেইটা হল পরম ভেদ, এর উপর কোন বক্তব্য থাকতেই পারেনা। এটা হল ধার্মিকের মনের আগেই নিয়ে নেওয়া সিদ্বান্ত, অনেকটা বিজ্ঞানের স্বতসিদ্ধ নামক ধারণার মতন। যা নিজেই নিজের প্রমাণ, অন্য কোন যুক্তি দ্বারা যাকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়োজন নেই। ফলে ধার্মিক যখন পবিত্র গ্রন্থের বক্তব্যকে সবার উপরে স্থান দেয়, তখন এর সাথে সাংঘর্ষিক যেকোন ধরনের তত্ত্ব বা দর্শন বা মতবাদ তার কাছে বাতিলের খাতায় পড়ে যেতে বাধ্য। কিন্তু এ জায়গাতে সমস্যা বাঁধিয়ে দিলো বিজ্ঞান।

প্রকৃতিবিজ্ঞানে মানুষ নিজে একজন পর্যবেক্ষক, নিজের ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সে "প্রকৃতি"-কে কিংবা "প্রকৃতি"-তে অবস্থিত যা কিছু আছে সেগুলোকে "ধরতে" চেষ্টা করে। এইখানে "ধরতে" চেষ্টা করার মানে হলো, "প্রকৃতি" বা "প্রকৃতি"-তে অবস্থিত যা কিছু আছে সেগুলোর আচরণ বুঝতে চেষ্টা করা, এবং পুরোপুরি বুঝে সেগুলোর পরবর্তী আচরণ ব্যাখ্যা করা। প্রকৃতিবিজ্ঞানে, (যেমন: পদার্থবিজ্ঞানে, রসায়নবিজ্ঞানে বা জীববিজ্ঞানে) মানুষ প্রকৃতি থেকে আলাদা। এমনকি প্রকৃতিবিজ্ঞানে সবকিছুই কংক্রিট এবং সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত। যদিও প্রকৃতিবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় প্রকৃতি, এবং মানুষ নিজে এখানে তত্ত্ব-প্রনয়ণকারী; কিন্তু মানুষের সাথে এই প্রকৃতির সম্পর্ক কি- সেই প্রশ্নের উত্তর প্রকৃতিবিজ্ঞান দিয়ে পাওয়া যায় না। আর এই প্রশ্নের সুরাহা না করেই বিজ্ঞান (প্রকৃতিবিজ্ঞান)- এর অবদান বা সুফল আমরা ভোগ করছি, আবহাওয়ার আগাম পূর্বাভাস পেয়ে যাচ্ছি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে, টর্নেডো কিংবা হারিকেনের গতিপথ ভবিষ্যৎবাণী করে দিচ্ছে নাসা, পৃথিবী ছাড়িয়ে মঙ্গলেও স্যাটেলাইটের সংখ্যা বাড়ছে বছরে বছরে, ভয়েজার রওনা হয়েছে ইন্টারস্টেলার অভিযানে, হাবলের পর্যবেক্ষণ থেকে বিগব্যাং -এর ধারণায় পৌঁছে গেছে মহাবিশ্ব সৃষ্টির তত্ত্ব, মাথার উপর পাঁক দিচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল স্পেইস স্টেশন, আন্ত:রাষ্ট্রীয় সীমারেখা মুছে স্কাইপি-তে কথোপকথন চলছে ভিন্ন দেশে অবস্থিত দু'জন মানুষের... এ কারণে ধার্মিকের টনক নড়তে বাধ্য। সে আসমান থেকে অবতীর্ণ বাণীকে পরম ভেদ হিসেবে মেনে নিয়েছে, ওদিকে আবার দেখছে যে, তার বাস্তব জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রকৃতিবিজ্ঞানের অবদানগুলো ছাড়া চলছে না, অথচ কিতাবে যেমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া আছে এই ইহজগতের মায়ায় না ভুলে পরকালের জন্য আমল সংগ্রহ করার সেভাবে সে ইহজগতকেও পুরোপুরি অস্বীকৃতি দিতে পারছে না। সে যতই অস্বীকৃতি জানাক, তার মানবিক মন টের পায় প্রকৃতিবিজ্ঞানীরাও নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে একই ঈশ্বরেরই পথেই...অর্থাৎ একজন দিন-রাত খাটতে-থাকা প্রকৃতিবিজ্ঞানীর আমল বা এবাদতও তার থেকে কোন অংশে কম নয়। তখন বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানের তত্ত্ব নিয়ে চিন্তায় তাকে বাধ্য হয়েই নামতে হয়।

ধার্মিক মনের সামনে এখন দু'টো পথ খোলা। প্রথমটি হল, নিজের ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এইটা দেখানো যে তার ধর্মেও প্রকৃতিবিজ্ঞান আছে...এর জন্য প্রয়োজন প্রচুর অধ্যয়ন, পরিশ্রম, ধ্যান-জ্ঞান; সেই কারণে সে প্রকৃতিবিজ্ঞানকে কোন প্রকার চ্যালেঞ্জ না করেই দেখাতে চায় তার নিজ ধর্মেও আছে বিগব্যাং কিংবা ব্ল্যাকহোলের তত্ত্ব। যদিও আসলে এই পরিশ্রম করার কোন প্রয়োজন ছিলো না, কিন্তু প্রকৃতিবিজ্ঞান এমনভাবে নিজের প্রাধান্য আর যৌক্তিকতা সৃষ্টি করেছে যে সে নিজে বাধ্য হয়ে নামে নিজের ধর্মকে রক্ষা করছে এই ভেবে। আর সেটা করতে না পারলে সহজ পথ হল- সরাসরি প্রকৃতিবিজ্ঞানকেই অস্বীকার করা। সাধারণত প্রকৃতিবিজ্ঞানকে অস্বীকার করার প্রবণতা এখন তুলনামূলকভাবে কম; বরং, ধার্মিকদের পক্ষ থেকে ধর্মকে কিভাবে প্রকৃতিবিজ্ঞানের সাথে সমন্বয় করা যায় এই প্রচেষ্টাই বেশি চোখে পড়ে।

এতকিছুর পরেও আমাদের মূলসমস্যার সমাধান হয় না। সেটা হল, ধর্ম আর বিজ্ঞান যখন মুখোমুখি দাঁড়ায় তখন কি ঘটে? বা বিজ্ঞান দিয়ে কি ধর্মকে খারিজ করা যায় কী না?
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×