কে বড় কসাই ? যে সারাদিন কষ্ট করে একটি পশু জবাই করে খদ্দের এর নিকট বিক্রি করে ৫০০ টাকা লাভ করে সে নাকি যে রোগীর দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একদিনে ৫০,০০০ টাকা ইনকাম করে। প্রশ্নের শুরু অনেক আগে থেকেই। সর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে নাকি সেই ভূত তাড়ানো যায়না। ঠিক তেমনি ডাক্তারি পেশাটার মধ্যেই অমানবিকতা রয়েছে যেটা ছাড়ানোর কোন সুযোগ আছে কিনা আমার জানা নেই। গত কিছুদিন যাবত ডাক্তার এবং ঔষধ কোম্পানীর উইন-উইন খেলা প্রত্যক্ষ করছি। ঔষধ কোম্পানী আগে ডাক্তারদের লেখার পেড বিনামূল্যে বিতরণ করতো এখন পেড দেয়না দেয় ফ্রিজ,এসি,গাড়ি,সোফা ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাত ঔষধ কোম্পানী ডাক্তারদের উইন করে দেয় সেজন্য ডাক্তারও ঔষধ কোম্পানীদের ঔষধ পেসক্রাইব করে ঔষধ কোম্পানীদের উইন করে দেয়। মধ্যে খানে আমরা যারা বলির পাঠা তারা শুধু উপর উয়ালার নিকট প্রার্থনা করে যাই এই থেকে পরিত্রান পাওয়ার। কিন্তু আমরা যারা ভোট দিয়ে সরকার গঠন করলাম জনগনের স্বার্থে কাজ করার জন্য কোথায় গেল সেই সরকার। আমার এক বন্ধু মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভ সেই সূত্রে জানলাম আমার জেলায় তার কোম্পানী (বাংলাদেশের প্রথম সারির) প্রায় ৮৮ জনকে মাসে মাসে বেতন দেয়। তার মধ্যে সর্বনিম্ন বেতন বিশ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ অনেক টাকা পর্যন্ত। বিনিময়ে ডাক্তারবৃন্দ যা ফেরতদেয় পেসক্রিপশন আকারে তাতে তাদের কোম্পানী বাংলাদেশের প্রথম সারিতে আছে। ঘটনা এখানেই শেষ নয় প্রত্যেকটি ডাক্তার এরকম একাধিক কোম্পানীর সাথে মৌখিক ভাবে চুক্তিবদ্ধ। বিনিময়ে ডাক্তাররা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ঔষধ কোম্পানীর কাছ থেকে ঔষধ কোম্পানী কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সাধারণ রোগীর পকেট কেটে। ঘটনা এখানেই শেষ নয় আমার আরেক বন্ধু আছে বড় ডাক্তারের ভাই সেই সুবাধে আগে আমি মনের মন (৪০কেজি) পেড নিয়ে আসতাম। বন্ধু লন্ডন চলে যাওয়ায় আমার পেড প্রাপ্তিতে ভাটা পড়ল। কিছুদিন আগে বন্ধু আমার দেশে আসলে আবার বললাম পেড দিতে। সে বলল তার বাড়িতে যেতে গেলাম কিন্তু পেড আশানুরোপ পাইনি। কারণ জিজ্ঞেস করলাম সে বলল এখনতো আর পেড চলে না নগদ টাকা বা দামি দামি যন্ত্রাংশ বা গেজেট। আরো বিস্তারিত জিজ্ঞেস করলে সে জানালো কয়েকটা কোম্পানী ডাক্তারকে গাড়ি দিতে চাচ্ছে কিন্তু ডাক্তার তা নিতে চাচ্ছে না। কারণ চুক্তি অনুযায়ী যে সময় প্রয়োজন তার আগেই ডাক্তার স্ব-পরিবারে আমেরিকা চলে যাবে তাই গাড়ি নিচ্ছে না। তাছাড়া প্রাইভেট রোগী দেখে অনেক ইনকাম আছে। জিজ্ঞেস করলাম ডাক্তারের অফিস টাইম কয়টা থেকে কয়টা পর্যন্ত সে যা বলল আমার চোখ ছানা বড়া। কারণ তাদের হসপিটালে শিফট আছে কখনো কখনো শিফট অনুযায়ী কিছু সময় ইমাজেন্সিতে থাকতে হয় অন্য সময় সকালে একটু গিয়ে বসল ঘন্টা খানেক তারপর রোগীদের ওয়ার্ডে একটা চক্কর ব্যাস এটুকুই। তার মধ্যে প্রাইভেট বিভিন্ন হসপিটাল থেকে রিং আসলে চলে যায়। কতো সুবিধা তাদের। তার উপর সরকার তাদের ইনকামের উপর কোন ট্যাক্স ধরেনি। কারণ ডাক্তাররা গোস্বা করতে পারে কিনা।
ঘটনা এতটুকু অমানবিকতার মধ্যে থাকলে ভালোই হতো। কিন্তু কতো দুর্ভাগা জাতি আমরা মানবিকতার দোহাই দিয়ে আরো অনেক বেশী অমানবিকতা আমাদের দেখতে হয়। এবার আসি প্রাইভেট রোগী দেখার বিষয়ে বর্তমানে প্রাইভেট রোগী দেখার ফি ১২০০ টাকা (পুরোটাই ডাক্তারদের। কারণ যেখানে বসে সেখানের কোন ফি দিতে হয় না), তারপর আসেন রির্পোট দেখাবেন ৫০০ টাকা, তারপর কিছু টেষ্ট দিবে সেটা তাদের নির্ধারিত ল্যাব থেকেই করাতে হবে এখানেও একই কারণ কমিশন। একবার ভাবেন আমাদের দেশের বাস্তবতায় ১২০০ টাকা দিয়ে রোগী দেখানোর সামর্থ্য কত জনের রয়েছে। তারপর তারই দেয়া ল্যাবে টেষ্ট করিয়ে শুধু মাত্র রিপোর্ট দেখাবেন তাতেও ৫০০ টাকা। পুরোটাই সাখের করাতের মতো। যেতেও কাটে আসতেও কাটে। যেখানে আমাদের দেশে মাসে ৮০০০ টাকা সাধারণ বেতনই মানুষ পায়না সেখানে ১২০০ টাকা কতটুকু অমানবিক।
কোথায় গেল আমার এতো সাধের সরকার, কোথায় গেল উন্নয়ন। কত বড় কসাই হলে রোগীদের দূর্বলতার সুযোগে এই পিং পিং খেলা খেলে। আবার তাদেরই আয়কর দিতে হয় না, ট্রেড লাইসেন্স লাগে না, ভূল চিকিতসায় মানুষ মারা গেলে দন্ড হয়না। কতো সুবিধা সরকার এই অমানবিক লোক গুলোকে দিয়ে রেখেছে। আর সরকারী হসপিটালের দুর্ভোগের কথাতো এখানে উল্লেখই করিনি। শুধু মাত্র ডাক্তার আর ঔষধ কোম্পানীর পিং পিং খেলার কথা বলেছি। আমাদের দেশে এরকম অনেক ঘটনা আছে আমি নিজেও দেখেছি রোগীর চিকিতসা করাতে গিয়ে ফতুর হয়ে গেছে, জায়গা-জমি বিক্রি করে দেউলিয়া হয়েছে। ভালো কোন সভ্য দেশে এটা সম্ভব কিনা আমার জানা নেই। তবে এটা জোড় গলায় বলতে পারি আজকে যারা গলাবাজি করছেন উন্নয়নের জোয়াড় নিয়ে একবার গিয়ে আয়নায় চেহারাটা দেখে আসুন। আজো পর্যন্ত এই অমানবিক ডাক্তারদের হাত থেকে কয়জন রোগীকে রক্ষা করতে পেরেছেন বুকে হাত দিয়ে বলুন। এই অমানবিক লোক গুলোকে কিভাবে মানবিক করে দেশের কল্যানে কাজে লাগাবেন সেই চিন্তা কি কখনো করেছেন? সর্বদা কাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন নিজেকে নাকি জনগনকে ?
আমরা এই অমানবিক ডাক্তারদের হাত থেকে বাচতে চাই। আজ যদি আপনারা না এগিয়ে আসেন কাল কেউ না কেউ ঠিকই এগিয়ে আসবে। তখন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেব দেশপ্রেম ককে বলে।