১.
ঝকঝকে আকাশ।
একটা ফোটা মেঘ কোথাও নেই। পরিষ্কার আকাশের দিকে তাকায়ি অনিকের মনটা ভাল হয়ে গেল। আজকের সকালটা বেশ সুন্দর।
রাতে বৃষ্টি হয়েছিল। তাই ঘুমটা বেশ জবর হয়েছে। এখন আকাশে মেঘের ছিটেফোটাও নেই।
হঠাত্ করেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আতকে ওঠলো অনিক। সকাল সাড়ে আটটা।
ধরমরিয়ে জানালার কাছে থেকে সরে এসে বাথ রুমের দিকে দৌড় দিল। ৫ মিনিটের মধ্যে বাথরুমের কাজ সেরে বের হয়ে এলো।
মা বলল, "কিরে, কি হয়েছ? এরকম তারাহুরা করছিস কেন?"
"তারাহুরা করছিনা মা। আজকে তো আমাদের স্কুলে অনুষ্ঠান আছে। তুমি খাবারটা রেডি করো। আমি দ্রুত রেডি হয়ে আসি।"
"তোদের স্কুলে অনুষ্ঠান আর তুই এভাবে ঘুমুচ্ছিলি?"
"কথা বলোনাতো মা। খাবারটা প্লিজ রেডি করো।"
"খাবারতো রেডি। কিন্তু তুইতো ঘুম থেকে উঠছিলি না।"
"জাগাতে পারতে না?"
"আমি তোকে আবার জাগাই না কবে?" জাগালেই তুই কবে ঘুম থেকে ওঠিস? আমার কথা শুনিস কখনো?"
কথা না বাড়িয়ে অনিক ঝটপট রেডি হয়ে নিল। আজ স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনেক আগেই তার যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঘুম থেকে ওঠতেই দেরি হয়ে গেল।
বাইরে বের হয়ে আসতে আসতে নয়টা বেজে গেল।
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর অনিকের মনটা ভাল হয়ে গিয়েছিল। এখন আবার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।
এতক্ষনে অনুষ্ঠান নিশ্চই শুরু হয়ে গেছে।
অনিক আকাশের দিকে একবার তাকাল। আকাশটা আজ নীল। অন্যদিনের মত নয়। আজকের আকাশের নীলটা অন্য দিনের চেয়ে আলাদা। অনিকের মনে হলো নীলটা যেন একটু বেশিই গাড়। এরকম গাড় নীল রংয়ের আকাশ অনিক এর আগে কখনো দেখেনি।
অনিকের মনটা আবার ভাল হয়ে গেল। গাড় নীল আকাশের দিকে একবার তাকালে কারো মন খারাপ থাকতে পারে না।
স্কুলের দিকে না গিয়ে অনিক উল্টোদিকে যেতে শুরু করল। কেন যেন এখন আর অনুষ্ঠান দেখতে স্কুলে যেতে ইচ্ছে করছে না। এরকম অদ্ভুদ সুন্দর একটা দিনে বসে বসে অনুষ্ঠান দেখার কোনো মানে হয় না।
অনিক মনে মনে ঠিক করল, সে আজ ঘুরে বেড়াবে। সুন্দর এই দিনটাকে নিজের মত করে কাটাবে।
এই রাস্তা দিয়ে আরো কিছুক্ষন হটালে সামনে ডানদিকে একটা মোড়। দুর থেকেই অনিক মোড়ের মাথায় মিঠুকে দেখতে পেল।
অনেক চেষ্টা করেও মিঠুকে পাশ কাটানো গেল না। অনিককে দেখতে পেয়ে মিঠু বলল, "কিরে উল্টো দিকে কোথায় যাচ্ছিস?"
"কাজ আছে।"
"কি কাজ?"
"তুই জেনে কি করবি? যেদিকে যাচ্ছিলি সেদিকে যা।"
"অনুষ্ঠান দেখতে যাবি না?"
"না। যাব না।"
অনিক মনে মনে একটু বিরক্ত হচ্ছে। মিঠুর সাথে এখন তার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
অনিক আকাশের দিকে তাকাল। গাড় নীল আকাশ। কোথাও সাদা মেঘের ওড়াওড়ি পর্যন্ত নেই।
মিঠু বলল, "কিরে, তুই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?"
অনিক শান্তস্বরে বলল, "আজকের আকাশটা অনেক নীল।"
"আকাশ তো নীল হবেই। এটা কি নতুন কোনো কথা?"
"ভাল করে তাকিয়ে দেখ।একদম অন্যরকম নীল। এরকম আগে কখনো দেখেছিস?"
মিঠু এবার আকাশের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে অবাক হয়ে গেল।
তারপর বিড়বিড় করে বলল, "আশ্চর্য! আকাশ এতো নীল কেন?"
অনিক বলল, "আজকের দিনটা একটু অন্যরকম। চারিদিকে ভালকরে তাকিয়ে দেখ সবকিছু কিরকম ঝকঝকে। সবকিছু নতুন নতুন লাগছে।"
"এর মানে কি?"
"এর মানে আমি জানি না।"
"তুই কোথায যাচ্ছিস?"
"এরকম সুন্দর একটা দিন হয়তো আর কখনো আসবে না। তাই আজ আমি সারাদিন ঘুরে বেড়াব।"
"চমত্কার! ঠিক আছে আমিও তোর সাথে ঘুরতে চাই"
"আচ্ছা ঠিক আছে। তোকে আমি সাথে নিতে পারি তবে একটা শর্ত আছে। আজকের দিনের জন্য আমি যা বলব তোকে তাই
শুনতে হবে।"
অনিক জানে এই শর্তে মিঠু কখনো রাজি হবে না। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যপার মিঠু রাজি হয়ে গেল।
একা একা ঘুরতে মজা নেই। দুজন মিলে ঘুরলে ভালই হবে। তাছাড়া মিঠু যেহেতু শর্ত মানতে রাজি হয়েছ তাই ওকে সাথে নিতে সমস্যা কি?
দুজন মিলে হাটতে শুরু করল। কিছুক্ষন হাটার পর মিঠু জিজ্ঞাসা, "কোথায় যাবি?"
অনিক উদাস কন্ঠে জবাব দিল,"জানিনা। বলতো কোথায় যাওয়া যায়?"
"আজক দিনটায় আমি তোর কথা মত চলব। তুই যেদিকে যাবি আমিও সেদিকেই যাব।"
"আজকে আমাদের যাত্রার কোনো গন্তব্য আগে থেকে ঠিক করা থাকবে না। যেদিকে চোখ যায় সেদিকে যাব। যেখানে চোখ যায় সেখানে যাব।"
"গন্তব্যহীন যাত্রা? ব্যপারটা খুব ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে।"
"ব্যপারটা মোটেও ইন্টারেস্টিং না। ভয়ানক..খুবই ভয়ানক।"
মিঠু অবাক চোখে অনিকের দিকে তাকাল।
"কি বলছিস এসব? আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না"।
"আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। আমি তোকে কেন কথাটা বললাম তাও আমি জানি না।"
সময় কেটে যাচ্ছে। মৃদু বাতাস বইছে। মিঠু হেটে চলছে অনিকের পিছু পিছু।
অনিক বুঝতে পারছে এই মুহুর্তে তাদের দুজনের সাথে কিছু একটা ঘটেছে। কিন্তু কি ঘটছে সেটা সে জানে না।
হাত ঘড়িটার দিকে তাকাল অনিক। সকাল সাড়ে অটটায় এসে ঘড়ির কাটা গুলো স্থির হয়ে রয়েছে।
কিন্তু এটা কি করে সম্ভব? অনিক যখন বাসা থেকে বের হয়েছে তখন সে স্পষ্ট ভাবে দেখেছে ঘড়িতে সময় ছিল সকাল ৯টা।
এই ঘড়িটা মামা তাকে নতুন দিয়েছে এই কয়েকদিন আগে। এতো তারাতারি ঘড়িটা নষ্ট হয়ে যাবে?
ঘড়ি যদিও নষ্ট হয়ে থাকে তবে ঘড়ির কাটা ৯টা থেকে সাড়ে আটটায় নেমে আসবে কিভাবে?
কাপা কাপ কন্ঠি অনিক জিজ্ঞাসা করল, "মিঠু তোর কাছে কি ঘড়ি আছে?"
মিঠু বলল,"আমি হাতে কখনো ঘড়ি পরি না। তবে আমার পকেটে সবসময় একটা ঘড়ি থাকে"।
অনিক উত্তেজিত গলায় বলল "ঘড়িটা তারাতারি বের কর"।
পকেট থেকে ঘড়িটা বের করার সাথে সাথেই অনিক মিঠুর হাত থেকে ঘড়িটা কেড় নিল।
এই ঘড়িটাও সকাল সাড়ে আটটায় থেমে আছে।
(চলবে...)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


