somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“বৈদেশিক সাহায্য”

১০ ই মে, ২০১০ দুপুর ১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সামহ্যোয়ার ইন ব্লগে প্রায় এক বছর হলো একাউন্ট খুলেছি। কিন্তু তেমন কোনো পোস্ট দেয়া হয়নি “বৈদেশিক সাহায্য” এর লেখাটা ছাড়া। তখনও এ্যাডমিন মহাশয় আমাকে প্রথম পাতায় লেখা প্রকাশের সুযোগ দেননি। কাজেই “বৈদেশিক সাহায্য” বিষয়ক লেখাটা হয়তো অনেক পাঠকই পড়েননি। তাই “বৈদেশিক সাহায্য” নিয়ে আমার এই দ্বিতীয় লেখাটি পড়ার আগে প্রথমটা আমার ব্লগ থেকে চাইলে পড়ে নিতে পারেন।[/si

“বৈদেশিক সাহায্য” গ্রহণের যুক্তি হিসেবে দাতারা যে কথাটা সবসময় বলেন, তা হলো “বৈদেশিক সাহায্য” আমাদের দারিদ্র কমাতে সাহায্য করবে। তৃতীয় বিশ্বের কাছে পরিচিত পি.আর.এস.পি. (Poverty Reduction Policy Paper) বা দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র দেয়া ও বাস্তবায়নের মূল কথাও তাই। অর্থাৎ “বৈদেশিক সাহায্য” নেব কেন? এর উত্তর হলো “গরীবকে বাঁচাতে”।
আশির দশকে “বৈদেশিক সাহায্য” এর নামে প্রদত্ত ঋণের ভারে নুয়ে পড়ছিল লাতিন আমেরিকার দেশগুলো। তারা দাতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে অনুরোধ করে ঋণের আসল অথবা ঋনের সুদ যেন অন্তত মওকুফ করা হয়। কিন্তু মওকা পেয়ে পশ্চিমা দাতারা যেন আরো চেপে বসেন। তারা ঋণের সুদ পরিশোধের ব্যতিরেকে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার হুমকি দেন। তবে মামলা থেকে বেঁচে যাবার সহজ পথও বাতলে দেন দাতারা। তা হলো structural adjustment বা অবকাঠামো পরিবর্তন। কি সেই অবকাঠামো পরিবর্তন?
এ পর্যন্ত দাতাদের দেয়া এই অবকাঠামো পরিবর্তনের মাঝে বিদ্যমান গুরুত্বপুর্ণ ধারাগুলো নিম্নরূপঃ
১. সরকারি মালিকানায় অধিকৃত সব শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেসরকারিকরণের মাধ্যমে বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দিতে হবে। এতে স্বদেশী মালিক ছাড়াও বিদেশী বিনিয়োগকারীরা টেন্ডার ড্রপ করতে পারবেন।
২. গণতন্ত্র ও মানবাধিকার উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
৩. কৃষির ওপর ভর্তূকি প্রত্যাহার করতে হবে।
৪. আমদনির ওপর কর (tariff) প্রত্যাহার করতে হবে।
৬. এন.জি.ও.দের সর্বপ্রকার সহায়তা করতে হবে ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে।
৭. আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আরো “জড়িত” (exposed) হতে হবে।
১,২,৩,৪,৭, নং পয়েন্টগুলো দাতাদের কৌশলপত্রের মধ্যে common। নং ৬ বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হয়েছে।
মজার ব্যাপার হলো দাতা দেশগুলো বিশেষতঃ ইউ.এস ও ই.ইউ আমাদের তথা তৃতীয় বিশ্বের দেশে শুল্কমুক্ত আমাদানি বাস্তবায়নের কথা বললেও তারা তাদের দেশে কোটা আরোপের মাধ্যমে নিজেদের আভ্যন্তরীণ বাজারকে রক্ষা করে যাচ্ছে।
আশির দশকে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো এসব policy বাস্তবায়নে বাধ্য হয়। এগুলোকে তখন বলা হত অবকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত নীতি বা structural adjustment policy বা সংক্ষেপে SAP। SAPর পরিকল্পনা মোতাবেক বিভিন্ন আবকাঠামোগত উন্নয়ন করে দরিদ্র দেশগুলো আরো বিপদে পড়ে। যেমন আমদানি শুল্ক রহিতকরণের ফলে বিদেশী পণ্যের ভীড়ে দেশী অপেক্ষাকৃত দামী পণ্যগুলো মার খেয়ে যায়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় দেশী শিল্প কারখানা।বৈদেশিক বিনিয়োগ এর সুবিধা SAP অন্যতম শর্ত ছিল। বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ এই সমস্যাকে আরো জটিল করে। যেমন লভ্যাংশ বাইরে প্রেরণের মাধ্যমে বিদেশী মুদ্রার ঘাটতি সৃষ্টি, আমলাতন্ত্রকে প্রভাবিত করে নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসা, বিদেশী যন্ত্রপাতি ও এক্সপার্ট নিয়োগ ও দেশী কর্মী ছাঁটাই, ইত্যাদি। এর ফলে এক প্রকার নব্য ধনী সমাজের সৃষ্টি হয়, যারা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মিশন সফল করছে। এভাবে “বৈদেশিক সাহায্য” প্রদানের শর্তগুলো বৈদেশিক বিনিয়োগের পথ সুগম করছে যার ফলে লাভের চেয়ে বিপদ্গ্রস্ত হচ্ছে বেশী তৃতীয় বিশ্ব।
আমরা দেখছি গনতান্ত্রিক সরকারগুলো বারবার বৈদেশিক ঋণ নিচ্ছে যখন ঋণের প্রয়োজন খুব একটা নেই। ১/১১ এর পর আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে PRSP বাস্তবায়নের পরিবর্তে ঋণ নেয়ার চেষ্টা করে দেখেছি অনির্বাচিত সরকারি প্রতিনিধিদের। কিন্তু জোর প্রতিবাদের ফলে তা স্থগিত করা হয়েছিল।
মেক্সিকো ’৯০ এ ঋণ গ্রহণের অক্ষমতা প্রকাশ করে সব ঋণ থেকে দায়মুক্ত হিসেবে ঘোষণা করে। এতে অবশ্য তাদের “বৈদেশিক সাহায্য” গ্রহণের পথ বন্ধ করে দেয়। তারপরও মেক্সিকো ইউ.এস. এর বিশাল অর্থনীতির সাথে যুদ্ধ করে টিকে আছে।
১৯৯৮ এর বন্যার পর বাংলাদেশ সরকারকে কৃষকদের অর্থসাহায্য না দেয়ার নির্দেশ দেয় দাতারা। কিন্তু সরকার সে সময় কৃষকদের ঋণ ও ভাতা প্রদানের পর কম/বিনামূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ করার ফলে ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালে বাম্পার ফলন হয় এবং এর ফলে বাংলাদেশের কৃষকরা ১৯৯৮ এর বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে অনেকটাই সফল হয়। এরপর থেকেই বস্তুত কৃষিখাতে সরকারি সাহায্য অব্যাহত রাখা হছে। বর্তমানে দেশী গ্যাস বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে প্রদান করে কৃষকদের যেভাবে বিদেশী সার কিনতে বাধ্য করা হছে তা আমাদের কৃষির জন্য উদ্বেগজনক। অন্যদিকে এই নীতি PRSP এর অনুকূল, তাও আমাদের ভেবে দেখা দরকার।
বৈদেশিক সাহায্য ও দারিদ্র্য বিমোচনের সম্পর্কঃ
১৯৯০-৯৬ পর্যন্ত নীট সাহায্য প্রবাহ প্রতি বছর ছিল ১২৩২ মিলিয়ন ডলার এবং জি.ডি.পি. প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪.২২%। অন্যদিকে ১৯৯৬-২০০২এ নীট সাহায্য প্রবাহ প্রতি বছর ছিল ৯০৩.২৭ মিলিয়ন ডলার এবং জি.ডি.পি. প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫.৩২%।শহর ও গ্রামের ভোগের গিনি সূচক বেড়েছে ১৬ থেকে ১৯% (গিনি সূচক বৈষম্যকে পরিমাপ করে। এর মান যত বাড়বে বৈষম্য তত বাড়বে। বৈষম্য একেবারে না থাকলে তার মান হবে ০. এই সূচকের মান ০ থেকে ১ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ।) । অতএব বৈদেশিক সাহায্য কমার পরেও জি.ডি.পি. প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে। এবং তার সাথে বৈদেশিক সাহায্য আসার সময় বৈষ্ম্যের হার ছিল বেশী। বস্তুত বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে বৈদেশিক সাহায্য আমাদের তেমন একটা প্রয়োজন নেই। সাম্প্রতিককালে রেমিট্যান্স প্রবাহের নিম্নগতি বৈদেশিক সাহায্য এর ঊর্ধ্বগতির সূচনা করতে পারে।

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৫৭
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×