পড়ে হাসব না কাঁদব বুঝতেছি না। পদ্মা সেতু বানালে আমাদের মৃতপ্রায় অর্থনীতি যে ধ্বংস হয়ে যাবে সেটা বুঝতে অর্থনীতিবিদ হওয়া লাগে না। কিন্তু ''মৌল্বাদের অর্থনীতিবিদ" খ্যাত শ্রী আবুল বারকাত নয়া প্রেস্ক্রিপশন দিছেন!! বলা বাহুল্য "বিশ্ব ব্যাংকও নাকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান না"।
আম্লীদের বুদ্দিজিবিরা এরপর বলবেন খোদ বিধাতা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান না।
বার্তার খবর পড়ে দেখেনঃ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বার্তা২৪ ডটনেট
ঢাকা, ১৯ জুলাই: বিশ্বব্যাংককে ‘দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট ষড়যন্ত্রের গুরু’ অ্যাখ্যা করে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবুল বারকাত বলেছেন, ‘‘তাদের কি ১৯৭১ সালের মানবতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার খুবই অপছন্দ হচ্ছে।’’
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কার্যালয়ে ‘নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু: জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সুযোগ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এমন মন্তব্য করেন আবুল বারকাত।
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে এমন কি ঘটলো যে পদ্মা সেতু ঋণ চুক্তি বিশ্বব্যাংককে বাতিল করতে হলো। এর আগেও তো বাংলাদেশ তিন বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও ঋণ দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। তাহলে কি ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তাদের পছন্দ হচ্ছে না? কিভাবে হবে? কারণ তারাই তো মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল।’’
আবুল বারকাত বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যখন ঘোষণা দিলেন বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের থেকে টাকা না নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করবে তখনই মার্কিন রাষ্ট্রদূত মজিনা সাহেব ভয় দেখাতে শুরু করেছেন। বলছেন বাংলাদেশের উৎপাদিত তৈরি পোশাক-নিটওয়ার এবং প্লাস্টিক জাতীয় পণ্যের মার্কিন বাজার বন্ধ হতে পারে। এতে সুন্দর স্পষ্ট যুক্তরাষ্ট্র-বিশ্বব্যাংক যোগসুত্র।’’
মুল প্রবন্ধে আবুল বারকাত উল্লেখ করেন যে মোট উৎস থেকে আগামী চার বছরে ৯৮ হাজার আট’শ ২৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করা সম্ভব যা দিয়ে চারটি পদ্মা সেতু নির্মাণ ব্যয়ের সমান।
তিনি বলেন, ‘‘পদ্মা সেতু নির্মাণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ ( বৈধ চ্যানেলে আসা এবং হুন্ডি), পেনশন ফান্ড, দেশজ ব্যাংক ব্যবস্থা, দেশজ বীমা ব্যবস্থা, প্রবাসে বাংলাদেশীদের সঞ্চয়, দেশের মধ্যে অপ্রদর্শিত আয়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) অব্যয়িত অর্থ এবং স্বল্পগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প স্থগিত করে তার বরাদ্দ অর্থ, স্বাস্থ্যহানীকর তামাকজাত পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ, ব্যক্তি পর্যায়ে এক কোটি টাকা বা তদুর্ধ আয়কর দাতাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা, লেভী বা সারচার্জ আরোপ, আইপিও, কৃচ্ছতা সাধন এবং অনুদান এই ১৪টি উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহের ব্যাপারে আমাদের সক্রিয়ভাবে ভাবতে হবে।’’
বারকাত বলেন, ‘‘অর্থ সংগ্রহের জন্য ‘পদ্মা সেতু বন্ড’ ছেড়ে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় ভাবে অর্থ সংগ্রহ করা যেতে পারে। আট থেকে ৩০ বছর মেয়াদী এসব বন্ডের বিপরীতে প্রতিযোগিতামুলক সুদের হার সর্বনিম্ন ১২ শতাংশ নির্ধারণ করা যেতে পারে।’’
‘অর্থ সংগ্রহ থেকে শুরু করে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন শেষ হওয়া পর্যন্ত এই প্রকল্পের কাজ দ্রুত ও পরিকল্পিতভাবে করা লক্ষ্যে এবং সর্বস্তরে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে তিনটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের প্রস্তাব’ও করেন এই অর্থনীতিবিদ।
তিনি বলেন, ‘‘তিনটি কমিটির মাধ্যমে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন করতে হবে। একটি কমিটি হবে অর্থায়ন কমিটি বা অর্থসংস্থান কমিটি, দ্বিতীয়টি হবে কারিগরি-প্রযুক্তি কমিটি এবং তৃতীয়টি হবে ইনটিগ্রিটি কমিটি। আর ইনটিগ্রিটি কমিটি হবে সবচেয়ে শক্তিশালী কমিটি।’’
প্রধানমন্ত্রীকে ইনটিগ্রিটি কমিটির প্রধান নির্বাচন করে মন্ত্রীবর্গ, উপদেষ্টা, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ, বাংলাদেশ ব্যাংক, সংশিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের এই কমিটি সদস্য করা প্রস্তাব দেন আবুল বারকাত।
এসময় তিনি বলেন, ‘‘বিশ্ব ব্যাংকের গাফিলতি ও প্রতারণার জন্য বাংলাদেশ পদ্মাসেতু নির্মাণে ১৮ মাস পিছিয়ে গেছে। আর এতে করে ১৮ মাসের টোল আহরণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে দেশ। আমি আশা করি বিশ্ব ব্যাংক ভদ্রভাবে এই ক্ষতিপূরণ বাবদ পাঁচ’শ ৮৪ কোটি টাকা পরিশোধ করে ক্ষমা চাইবে। অবশ্য এব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে।’’
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা লাগবে এমন কথা যারা বলেন তারা মানুষকে বোকা বানাতে চাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন আবুল বারকাত। তবে আবুল বারকাত তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেন মূল সেতুর নয়টি উপাদানের মধ্যে আটটি উপাদান প্রায় ৭০ ভাগই বৈদেশিক উৎস থেকে আহরণ করতে হবে। দেশীয় ভাবে যেসব উপাদান পাওয়া যাবে তারও কাঁচামাল আমদানি করতে হবে বিদেশ থেকে।
আত্মসম্মান নেই বলেই বিশ্ব ব্যাংকের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন: ইব্রাহীম খালেদ
একই অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের সমালোচনা করে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. ইব্রাহীম খালেদ বলেছেন, ‘‘যাদের আত্মসম্মান বোধ নেই তারাই বিশ্ব ব্যাংকের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘যিনি এরশাদে ছিলেন, হাসিনায় ছিলেন এখন খালেদাও আছেন তিনি বলেছেন, ‘বিশ্ব ব্যাংকের কাছে আমাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।’ আপনার আত্মসম্মানবোধ না থাকতে পারে আমাদের আছে। আমরা কেন বিশ্ব ব্যাংকের কাছে ক্ষমা চাইবো। বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতি করেছে বাংলাদেশ নয়। ক্ষমা চাইতে হলে বিশ্ব ব্যাংককেই ক্ষমা চাইতে হবে।’’
ইব্রাহীম খালেদ বলেন, ‘‘চার বছর মেয়াদী প্রকল্পের মাধ্যমে পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নেই বাস্তবায়ন সম্ভব। আর এজন্য পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় ২৪ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা সম্ভব। প্রতিবছর গড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা করে সংগ্রহ করতে হবে। এখনই পদ্মা সেতু প্রকল্প শুরু করলে প্রথম বছরের ছয় হাজার কোটি টাকার তিন হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা যেতে পারে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) জন্য বরাদ্দকৃত তিন হাজার কোটি টাকা থেকে। বাকি টাকা প্রবাসিদের অনুদান থেকেও সংগ্রহ করা সম্ভব।’’
তিনি বলেন, ‘‘সরকারি হিসেবের বাইরে প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় এক কোটি। আর সরকার যদি এই প্রবাসীদের কাছে আবেদন করে পদ্মা সেতুর জন্য এক ডলার দুই ডলার করে অনুদান দিতে তাহলেও বেশ কিছু ডলার এখান থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব।’’
ইব্রাহীম খালেদ বলেন, ‘‘প্রবাসিরা তাদের আয়ের একটি অংশ সে দেশে সঞ্চয় করে। ইউরোপের দেশগুলো সঞ্চয়ের বিপরীতে এক শতাংশ সুদ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ যদি এই সুদের পরিমাণ এক দশমিক পাঁচ শতাংশ করে তাহলে শুধু মাত্র দেশ প্রেমের জন্যই নয়, অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হতে অনেক প্রবাসি দেশে সঞ্চয় করতে উৎসাহিত হবেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘ ১৯৭১ সালের মতো এখনো বাংলাদেশে কিছু নব্য রাজাকার রয়েছে। যারা বলছে বিশ্ব ব্যাংকের টাকা ছাড়া পদ্মাসেতু সম্ভব নয়। তাদের ব্যাপারে সরকারকে সচেতন হতে হবে।’’
দাতা সংস্থার অনুদান আসতে পারে উল্লেখ করে ইব্রাহীম খালেদ বলেন, ‘‘জাপানি অর্থ সহয়তা সংস্থা (জাইকা) এখনো তাদের ঋণচুক্তি বাতিল করেনি। অন্যদিকে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) তাদের অর্থ সহয়তাও দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এখন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) আবারো চিন্তা ভাবনা করতে পারে কারণ তাদের মূলমন্ত্র হচ্ছে জাপান। জাপান চাইলে তারাও ঋণ সহয়তা দিবে। এভাবে নিজেরা শুরু করলে ঐ পাশ্চাত্য দেশগুলোও বসে থাকবে না, যারা আজ এই ঋণ সহয়তা বাতিল করেছে।’’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘‘পদ্মাসেতু নির্মাণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর হাত দেয়া যাবে না, এমন কথা যারা বলেন তারা বৃদ্ধ বয়সে অর্থনীতিবিদ হয়েছেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘তিন মাসের খাদ্য আমদানির জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখতে হবে এমন মতামত যারা দেন তারা সেকালের বস্তাপঁচা মতামত দিচ্ছেন। দেশ এখন আর সে জায়গায় নেই। এখন দেশে ১৫ লাখ টন খাদ্য মজুদ আছে। তাই তিন মাসের কথা চিন্তা করার কোন প্রয়োজন নেই।’’
বার্তা২৪ ডটনেট/এএইচআর/এমএ

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



