জীবনে ব্যর্থতা আসবেই। তবে ব্যর্থতাকে কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করতে হবে। ব্যর্থ হয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। গুগলে আগে বিভিন্ন ভার্সিটির সবচেয়ে ভাল ছাত্রদের নিয়োগ দেয়া হত। প্রথমদিকে সাফল্য আসলেও পরে দেখা গেল আশানুরূপ কাজ দেখাতে পারছে না তারা। এর পিছনের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে তারা দেখলেন যে সব ছাত্ররা জীবনে কোনদিন খারাপ ফল করেনি, তারা কোন কারণে ব্যর্থ হলে হতাশ হয়ে পড়ছে, ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। কিন্তু বাস্তবে তো হতাশ হলে চলবে না। যত ব্যর্থতা আসুক সামনে এগিয়ে যেতে হবে। এরপর থেকে তারা নিয়োগ দেয়ার সময় শুধু ভাল ছাত্রদের না, যারা বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় ভাল করছে তাদেরকেও নিয়োগ দিতে শুরু করল। দেশের বাইরের এত বেশি ইউনিভার্সিটি থেকে নিয়োগ মনে হয় গুগল ছাড়া আর কেউ দেয় না।
মেডিকেলের ছাত্র-ছাত্রীদের বেশিরভাগ দেখা যায় স্কুল-কলেজে ভাল ছাত্র ছিল, মেডিকেলে এসে দেখে এটা একটা অন্য জগত, অনেক পড়ালেখা করার পরেও এখানে ফেল করতে হচ্ছে। এতে অনেকে হতাশ হয়ে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে সারাদিন হলে শুয়ে থাকে, ঘুমায় না হলে মুভি দেখে। ধুর! সিয়াম তো পড়ালেখাই করে না, তাও সব পরীক্ষায় পাশ করে। পড়লেও আমাকে দিয়ে কিছু হবে না, তাই পড়ার কোন দরকার নাই!- এই ভাবনাগুলো যে কত ভয়ঙ্কর সেটা বুঝতে বুঝতে তাদের জীবন থেকে অনেক মূল্যবান সময় চলে যায়। এক সময় পিছন ফিরে দেখে তার বন্ধু-বান্ধবরা অনেক দূরে চলে গেলেও সে এখনও আগের জায়গাতেই পড়ে আছে।
২০-২৫ বছর বয়সে ব্রেন সবচেয়ে কর্মক্ষম থাকে, তাই কোন কিছু করতে উৎসাহের কমতি থাকে না, দুনিয়ার কোন কিছুকেই বাধা মনে হয় না। এই সময়েই উচিত প্রচণ্ড পরিশ্রম করে নিজের জ্ঞান বাড়িয়ে নেয়া। ভার্সিটিতে এই সময়টাই প্রচণ্ড অপচয় হয় পড়ালেখা ছাড়া অন্য যে কোন কাজে। ফলশ্রুতিতে হতাশা ভর করে। পরবর্তীতে অনেকে হতাশা কাটিয়ে উঠতে না পেরে আত্মহত্যা করে, অনেকে নেশার জগতে প্রবেশ করে।
কখন কোন কাজটা করা গুরুত্বপূর্ণ সেটা বুঝতে হবে। ভার্সিটি লেভেলে অনেকে বন্ধু-বান্ধব, গিটার, মুভি, ফুটবল নিয়েই সময় কাটিয়ে দেয়। এগুলোর অবশ্যই দরকার আছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে এগুলো হচ্ছে বিনোদন, সারাদিনই যদি বিনোদনের পিছনে চলে যায় তাহলে কাজ করবে কখন? আমার ক্ষুদ্র জীবনে দেখা সেরা ছাত্রটি ছিল আমার এক বড় ভাই। উনি ডাবল স্ট্যান্ড করে বুয়েটে ইলেক্ট্রিক্যালে ভর্তি হয়েছিলেন। বুয়েটে ভর্তি হলে ছেলেপেলেরা সবাই টিউশনি করে। এটা খারাপ না বরং ছাত্র অবস্থাতেই নিজের খরচ চালাতে শিখলে নিজের মাঝে আত্মবিশ্বাস জন্মায়, কিছু করে দেখাবার ক্ষমতা জন্মায়, যা পরবর্তীতে অনেক কাজে লাগে। বন্ধুরা মিলে নতুন কোন কাজ করা, কোন ব্যবসা শুরু করা বা কোন সমাজসেবামূলক কাজ করার মাধ্যমে ছাত্রবস্থাতেই নিজেকে অনন্য মানুষরূপে গড়ে তোলা যায়। কিন্তু এই সময় টাকার লোভে পড়ে যাওয়াটা মারাত্মক দুর্গতি ডেকে আনে জীবনে। যা বলছিলাম, ঐ ভাইয়ের মত এত কনফিডেন্ট আমি কাউকে দেখি নি। উনি যা পড়াতেন তার সম্পর্কে উনি ১০গুণ বেশি জানতেন। এসএসসি, এইচএসসির ছেলেপেলে পড়ানোর জন্য এত জ্ঞান লাগে না। কিন্তু উনি অনার্সের ম্যাথ, কেমিস্ট্রিও পড়তেন যাতে নিজেকে আলাদা করে চেনাতে পারেন। (স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, কলেজের অনার্স-মাস্টার্স করা শিক্ষকরাও তার থেকে অনেক কম জানতেন, অনেক কিছু ভুল পড়াতেন। ভয়ে সেটা তাদের মুখের উপর বলা যেত না।) স্বভাবতই এতে করে তার স্টুডেন্ট সংখ্যা অনেক বেশি ছিল, অনেক টাকা ইনকাম করতেন, সেই সাথে তার অনেক সময় নষ্ট হত। পরবর্তীতে তার নিজের একাডেমিক পড়ালেখায় অনেক ল্যাগিং হয়। নিজের ছাত্ররা যখন তার সাথে ক্লাসে পড়তে আসে তখন তার হুশ হয়। যাইহোক প্রচন্ড প্ররিশ্রম করে সেটা তিনি কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন।
হয়ত জীবনের অনেক সময় চলে গেছে। হয়ত পরীক্ষার ফলাফল ভাল হয়নি। হয়ত বন্ধুরা অনেক ভাল জায়গাতে আছে আমার থেকে, ভাল চাকরি করছে, অনেক টাকা কামাচ্ছে। এসব দেখে হতাশ হয়ে বসে থাকা যাবে না। কর্মবিমূখতাই আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। যে কোন পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়াতে হবে, প্রচণ্ড পরিশ্রমের মাধ্যমে ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠার মানসিক শক্তি থাকতে হবে নিজের মাঝে। মনে রাখতে হবে জীবন কখনও ব্যর্থ হয় না। কেউ যখন হাল ছেড়ে দেয়, শুধুমাত্র তখনই সে ব্যর্থ হয়।