somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি অদ্ভুদ গাছের গল্প

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেই নুহু নবীর আমলের কথা, সবে মাত্র কলেজ পেরিয়েছি । বাড়ির পাশের চাচাতো ভাইয়ের টং দোকানে বসে ধুমছে আড্ডা দেই তখন । সাধারণত হালকা বা ছোটখাটো কোন বিষয়ে আড্ডা দেওয়ার মত নাদান আমরা না, আমাদের আড্ডার বিষয় বস্তু খুবই উঁচুমানের , এই যেমন সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙ্গে গেল, আমেরিকার আগ্রাসীনীতির অবসান কবে অথবা চীন বা ভারতের সুপার পাওয়ার হবার অন্তরায় কি কি ? দোলনা থেকে কবরে এক পা দেওয়া বিভিন্ন বয়সি আড্ডা প্রিয়রা আড্ডা দিচ্ছি, আমাদের আড্ডার মধ্যমণি মধ্যবয়সী চাচাত ভাই , জ্ঞানী মানুষের মত তার মাথার মাঝখানটায় ফকফকা সুবিশাল একটা টাক, কিছুক্ষণ পর-পর মাথার চারপাশ থেকে চুল টেনে তা ঢাকার চেষ্টা করেন । টাকের উপর আমার একটা ছোটখাটো গবেষণা আছে , সেটা এখানে শেয়ার করছি । সাধারণত দুই ধরনের টাক হয় আমাদের সমাজে, কারো কারো টাক দেখতে খুবই তেলতেলে এবং পিচ্ছিল, এই ধরনের টাকওয়ালারা খুবই জ্ঞানী হয়। এদের সাধারণত মধ্যরাতে টকশোতে দেখা যায় । আরেক ধরনের টাক আছে দেখতে খসখসা ,মনে হয় বাটাল দিয়ে খুটিয়েছে মাথার মাঝখানে। এই কিসিমের টাক সাধারণত চিন্তা ভাবনায় এবং অভাব অনটনে হয় । এরা সাধারণত আমজনতা, জ্ঞানের পরিধি আট-দশটা সাধারণ মানুষের মতই । আমার চাচাতো ভাইয়ের টাকটা অদ্ভুত কারণে তেলতেলে এবং পিচ্ছিল । তিনি আমেরিকার আগ্রাসীনীতির ঘোর বিরোধী, পারেতো ঝাঁঝালো ভাষায় আমেরিকাকে ভস্মীভূত করেন ।

তখন চৈত্রকাল , চৈত্রের খরায় মাঠ ঘাট ফেটে চৌচির । ঐ দিকে আমরাও টং দোকানে বসে টক-শো করছি, ‘ দেশে এত প্রাকৃতিক সম্পদ থাকার পরও কেন দেশ আগাচ্ছে না ?’ এই হল আমাদের আজকের টক-শো-এর বিষয় বস্তু । আণ্ডা বাচ্চা সবাই যার যার বক্তব্য পেশ করছে , চৈত্রের উওপ্ততা আমাদের টকশোতেও ছড়িয়ে পরেছে ! হঠাৎ লক্ষ্য করলাম দোকানের পিছনের দিকে গোটখোল গাছটা (গাছটার ভাল নাম আমার জানা নাই) ভেঙ্গে পরে আছে । বেশ কয়েকদিন আগে ঝর বৃষ্টি হয়েছিল , হয়ত তখন ভেঙ্গেছিল গাছটা । অদ্ভুত কারণে গাছের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে পানি ঝরছে , দুই একজন দাড়িয়ে দাড়িয়ে এটা অবলোকন করছে।

আরও কয়েকদিন কেটে গেল । চৈত্রের খরায় গাছ-পালা অঙ্গার অথচ গাছ দিয়ে এখনও পানি ঝরছে , এটা হতে পারে না। কথায় আছে ‘আ-কথা বাতাসের আগে ছড়ায়’ তবে গাছ দিয়ে পানি ঝরায় খবরটি বাতাসের আগে না বরং ঝরের বেগে ছড়িয়ে পরল চারদিকে । এটা সাধারণ কোন গাছ নয় অসাধারণ গাছ । দলে দলে মানুষ দেখতে আসতে শুরু করল , সবারই এক প্রশ্ন – ‘এর রহস্যের কি?’ আমি গাছের পাশের দাড়িয়ে থাকতাম উৎসুক জনতার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে অশেষ নেকি হাসিলের জন্য !! এই ধরনের ক্ষেত্রে সাধারণত দার্শনিকের মত উত্তর দিতে হয়, আমি গাছের পাশে দাড়িয়ে থেকে দার্শনিকের মত উপরের দিকে নির্দেশ করে বলতাম “সবই লীলা খেলা” !

লীলা খেলা যাতে বন্ধ নয়া হয়ে যায় সেজন্য আমি সুযোগ বুঝে গাছে উঠে পানি ঢেলে আসতাম লোক চক্ষুর অন্তরালে । আমার চাচাত ভাই বলত দেখ ‘মানুষ কত বোকা’, আমি বলতাম ‘দেখি ব্যাপারটা কত দূর যায়, কিছু বইলেন না !’ এবার আর মানুষ শুধু দেখতে এসেই সন্তুষ্ট না, লোটা, খালি বোতল এবং মানত নিয়ে আসা শুরু করল । দূর দূরান্ত থেকে বোরকা পরে আসা শুরু করল । আমি যদি লাল কাপর মাথা বেধে গাছের পাশে বসে থাকতাম তবে নিশ্চিত সবাই আমাকে গাছ বাবা বানিয়ে দিত ।

এটা আমাদের দেশের একটা চিত্র, মানুষের এই কুসংস্কার বা অন্ধ বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই দেশে আনাচে কানাচে ভণ্ড বাবারা তাদের কর্ম সম্পাদান করছে । আর মানুষও সচেতনতার অভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছে , একদিন গভীর রাতে একজন আমাকে ফোন দিয়ে বলল ‘আমি জিনের বাদশা।’ আমিতো মহা খুশী, আমার মত মানুষের কাছে স্বয়ং জিনের বাদশার ফোন, ভাবা যায় !! তবে এটা ছ্যাচড়া বাদশা, টাকা চায় । আমি বললাম ‘হে জিনের বাদশা, আপনি সালতানাতের শাহেনশা , টাকা পয়সার অভাব নাই, উল্টো আপনি আমাকে টাকা পয়সা দিয়ে লাল বানিয়ে দেন !’ জিনের বাদশার আমার কথা পছন্দ হল না, তিনি আমার লাইনটা কেটে দিলেন । যাইহোক এখনও অনেক মানুষ আছেন, জিনের বাদশার ফোন পেয়ে টাকা পাঠিয়ে দেন, দরকার সচেতনতার । সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে কুসংস্কার আপনা আপনি উঠে যাবে, এতে যেমন আমরা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হব তেমনি দেশ এইয়ে যাবে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:২৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×