
আমার অফিস-রুম থেকে বাইরের দৃশ্য!
মাস পেরিয়ে গেলো এরিজোনা ছেড়ে ওয়েষ্ট ভার্জিনিয়া এসে বাসা বেঁধেছি! ওয়েষ্ট ভার্জিনিয়া নিয়ে একটি বিখ্যাত গান আছে "টেক মি হোম, কান্ট্রি রোডস", গানের-মতই সুন্দর এই স্টেইট! যাইহোক আমেরিকাতে-এ নিয়ে আমার চতুর্থ নাম্বার স্টেইট, জাজাবরের মত স্থান পরিবর্তন করেই চলছি! আমার অবস্থা হল "হইয়া আমি দেশান্তরী দেশ বিদেশে ভিড়াই তরী,রে"! যাত্রাটি শুরু হয়েছিল সেই কোরিয়া থেকে, কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরলাম বছর দুয়েকের জন্য, তারপর আবার উড়াল দিলাম ডেনমার্কের উদ্দেশে, উদ্দেশে লেখা পড়া শেষ করে সব কিছু উল্টাইয়া ফেলব! উল্টাইয়া না ফেললেও পিএইচডি টা শেষ করলাম!
তারপর এলাম আমেরিকার আলাবামা-তে পোষ্টডক হিসেবে! একাডেমিতে যারা আছেন তারা জানেন পোষ্ট-ডক পজিশনগুলো টেম্পোরারি, চাকরি আজ আছেতো কাল নাই! আলাবামা থাকলাম বছর দুয়েক, বছর দুয়েক পর প্রফেসর বলল মালপানি শেষ, পথ দেখো! আমি পরলাম বিপদে, সেখান থেকে চলে গেলাম আমেরিকার উত্তর-পশ্চিম রাজ্য ওরিগনে! ওরিগন মাস ছয়েক ভালই চলছিল, তারপরই শুরু হল গেঞ্জাম। প্রফেসর জানিয়ে দিল প্রজেক্টের মেয়াদ শেষ, তুমি পথ দেখো! আমি আবারো পড়লাম বিপদে, মনে মনে ভাবি যেখানে পা দেই সেখানে কুফা লাগে! তারপর ভাবলাম আর পোষ্টডক্টই করব না, ইন্ডাস্ট্রিতে ট্রাই করি! ইন্ডাস্ট্রিতে যাওয়ার যে খুব ইচ্ছে ছিল তেমন না, আমেরিকার চাকরির বাজার ভয়াবহ চলছিল তাই কোথাও চান্স পেলাম না! বাধ্য হয়ে ভাবলাম আমার আবুল ভাইও-ই ভাল, মানে আবারও পোষ্টডক্টে চলে যাই! এরিজোনায় এলাম ২০২৩ সালে, পোষ্টডক্ট হিসেবে, এখানে এসে আরাম পেলাম, বস ভাল!
এরিজোনায় আমার একাডেমিক লাইফের সব চেয়ে ভাল একটি বস পেলাম, অনেক কিছু শিখলাম, আমার বস মানে প্রফেসরের সাথে বেশ ভাল সম্পর্ক হয়ে গেল! আমরা প্রায় আড্ডা দিতাম, আড্ডা বিষয় বস্তু শিক্ষা, গবেষনা, আর ট্রাভেল ইত্যাদি নিয়ে! প্রায় শুক্রবারে বারে যেতাম, আমি মদ-তারি খাই না, তবে আমার প্রফেসর এবং কলিগদের সঙ্গ দেবার জন্য কোক খেতাম। আমার প্রফেসর অনেক সময় ফ্যামিলি-সহ তার বাসায় দাওয়াত দিত, ভদ্রলোক ইউরোপিয়ান এবং বেশ ভাল! বছর খানেক পার হবার পর আমাকে বলল তোমার ফ্যাকাল্টি পজিশনে যাওয়া উচিৎ, আমিও সেটা চাচ্ছিলাম যে আমেরিকার কোন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর হতে পারলে মালপানি কামানো যাবে! জায়গায় জায়গায় দৌড়ানো লাগবে নাহ! তবে সমস্যা হল এই পজিশনগুলো খুবই কমপিটিটিভ, শত শত কোয়ালিফাইড পোলাপান এপ্লাই করে এই পজিশনগুলোতে তাই চান্স পাওয়া কঠিন! তার উপর আমেরিকার একাডেমিক চাকরির বাজার বেশ ভাল না এখন, লোক তেমন নিচ্ছে নাহ! বস অভয় দিয়ে বললেন তোমার চান্স হাই, তাছাড়া আমার প্রজেক্টের যে টাকা আছে তুমি ২-৩ বছর টানা ট্রাই করতে থাকো আমার টাকা শেষ হবার আগ পর্যন্ত!
গত বছর থেকে আমি ধুমাইয়া এপ্লাই করতে লাগলাম, আর ধুমাইয়া রিজেক্ট হতে থাকলাম! অনেক পজিশন আবার লোক নেয়া বন্ধও করে দিচ্ছিল। যাইহোক আমার ২-৩ বছর এপ্লাই করতে হল নাহ, এ-বছর ওয়েষ্ট ভার্জিনিয়ার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে এসিসট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে সুযোগ পেলাম, মানে চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শূনছ অবস্থ!
আবার তাই বউ পোলাপান নিয়ে চলে এলাম ওয়েষ্ট ভার্জিনিয়া! ফ্যাকাল্টি পজিশনে প্রথম উপলব্ধি হল, এতদিন বিভিন্ন বসের অধীনে কাজ করেছি, এখন আমার কোন সরাসরি বস নেই যে ডে টু ডে মনিটর করবে! তাই নিজেই নিজেকে কিছু কাজ এসাইন করছি, তার উপর এই সেমিস্টারে চারটি কোর্স পড়াচ্ছি, সাথে কয়েকজন স্টুডেন্টকে ফ্রি পেয়েছি আমার প্রজেক্টে কাজ করাচ্ছি! কিছু গ্রান্ট লিখছি মালপানির জন্য, যদি পাই ভাল কোয়ালিফাইড স্টুডেন্ট এবং রিসার্চার হায়ার করব! এতদিন একাডেমিক লাইফের একটি দিক দেখেছি আর এখন অন্য পাশটাও দেখতে পাচ্ছি! স্টুডেন্টদের প্রায় ইমেইল পাই আজ সে ক্লাসে আসবে না, কাল একজন অসুস্থ, কেউ বলে তার গাড়ি নষ্ট, বিভিন্ন কাহিনী! যাইহোক, দিস ইজ লাইফ!
এরিজোনাকে বলা হয় আমেরিকার মরুভূমি, সেখানে সামারের তাপমাত্রা থাকে প্রতিদিন গড়ে ১০০ ফারেনহাইট, ভাবছিলাম ওয়েষ্ট-ভার্জিনিয়ায় কিছুটা ঠান্ডা হবে! তবে এখানেও গরম আছে তবে এরিজোনার মত নাহ! আবার একেবারে কমও না! ওয়েষ্ট ভার্জিনিয়া অনেক গ্রিন, গাছপালা আর পাহাড়ে ঘেরা প্রান্তর, দেখতে ভাল লাগে! শনি-রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আমি প্রায় বিভিন্ন জায়গায় বেরিয়ে পরি, গতকাল গিয়েছিলাম এক জলপ্রপাত দেখতে, পাহাড় ঘেরা অসাধারন প্রকৃতি, তবে বেশী ছবি তোলা হয়নি তাই শেয়ার করা গেল নাহ!
অনেক-দিন ধরে ব্লগে কিছু পোষ্ট করা হয়না, ভাবলাম কিছু ভুং-বাং পোষ্ট করি!
টেক মি হোম, কান্ট্রি রোডস:
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:২০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


